শৃঙ্খলা - অরূপ কুমার পাল

 

শীতের সকাল।কুয়াশার অন্ধকার সবকিছু কে ঢেকে রেখেছে। শ্যামলের দোকানটা বুনো ঝোপের মত লাগছে।শ্যামল একটু দেরিতেই দোকান খোলে।ঠাণ্ডা আমার শরীরের শিরা উপশিরায় ঢুকে সমস্ত গ্রন্থিগুলোকে কোন অন্ধকার অতলে তলিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে নিজেও ঠাহর করতে পারছি না। তবু ওরা দাঁড়িয়ে আছে।দলেদলে,পালেপালে-খাবারের আশায়।ঠাণ্ডা,অন্ধকার ওদের দমাতে পারেনি।খিদের দাপট ওদের আরও জোটবদ্ধ করেছে।


ইতিউতি পদচারণা,গুনগুনে আলাপ ওদের শরীরকে গরম রাখছে।আমার মত অনাহূত ওদের ছত্রভঙ্গ করতে পারছেনা।আমিও ক্ষুধার্ত।আমারও খাবার দরকার। দাঁড়িয়ে আছি রসদের আশায়।কখন শ্যামল দোকান খুলবে!আমার কেনার সামর্থ্য রয়েছে।কিন্তু ওদের নেই।তবু ওরা মরীয়া হয়ে উঠছেনা। এক পা দু পা করে এগিয়ে আসছে।আবার পিছিয়ে যাচ্ছে।মাঝেমাঝে আমার দিকে আড়চোখে দেখছে। আমি একা অসহায়।ওরা দলবদ্ধ।কিন্তু আমাকে ওরা গ্রাহ্যই করল না।কুয়াশা কাটতে শ্যামল আসে।দোকান খোলে।আমি মুদিখানার ফর্দটা শ্যামলের হাতে ধরিয়ে দিই।শ্যামল ওদের দিকে মুঠোমুঠো ছোলা,মটরের দানা দোকানের সামনের উঠোনে ছড়িয়ে দেয়।ওরা ধেয়ে আসে খাবারের দিকে।ওরা অপরের খাবার কেড়ে খায়না।শুধু নিজেরটুকু সংগ্রহ করে অপরকে সুযোগ করে দেয়। একসময় খাওয়া শেষ হয়। পড়ে থাকে ঝকঝকে উঠোন। তারপর নীল আকাশের বুকে ডানা মেলে উড়ে যায় সংঘবদ্ধ সুশৃঙ্খল একঝাঁক উজ্জ্বল পায়রা।  

 

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন