- এই এটা একটু লাগিয়ে দাওনা গো...
অষ্টমীর সকালে সদ্য স্নান সেরে সিক্ত শরীরে সুমনার ডাক। বিছানা কামড়ে তখনও পড়ে আছে স্বপ্নিল। পাশে বাবার মতোই ঘুমকাতুরে ওদের একমাত্র কন্যা বছর আড়াই-তিনের তবাশ্মি। প্রায় মাস ছয়েক পর মণিপুরের পরিস্থিতি কিছুটা থিতু হতে কাল রাত্রেই ফিরেছে সে।
- কী? চোখ বুজেই উত্তরটা দেয় স্বপ্নিল।
- আরে চোখটা খুললে তবে তো দেখবে! ঝাঁঝিয়ে ওঠে সুমনা।
পিটপিট করে চায় সে। আলমারির দরজায় লাগানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর সুন্দরী স্ত্রী আলগোছে লালপেড়ে ছাইরঙা সুরাট সিল্কটা জড়িয়ে ব্রেসিয়ারের স্ট্র্যাপটা আটকানোর নিষ্ফল চেষ্টায় রত।
একতলা ফ্ল্যাটে সকালের মৃদু সূর্য রশ্মি উল্টোদিকে বেডরুমের বড় জানলা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সুমনার উজ্জ্বল স্বর্ণবর্ণা সারা শরীর যেন চকচক করছে। খোলা পিঠের সুমনাকে দেখে দুষ্টুবুদ্ধিটা কিলবিলিয়ে ওঠে স্বপ্নিলের মাথায়।
ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সে। সুমনার ভিজে চুল থেকে আসা কন্ডিশনারের গন্ধের মাদকতায় তার চোখে তখন ঘোর লেগে গিয়েছে। শিড়দাঁড়ার মাঝ বরাবর আঙুল সঞ্চালন করে ও। সুমনা প্রথমে চোখ বোজে, মেয়ের কথা মনে করে আটকাতে চায়, কিন্তু পারে না। স্বপ্নিলের হাত জোড়া তখন দু-বাহুর নিচ দিয়ে সুমনার কাশ্মীরি আপেলের মতো দুই স্তন করায়ত্ত করেছে, সুমনা নিজেকে এলিয়ে দেয় স্বপ্নিলের বুকে। দেশি খেঁজুরের মতো তার দুই স্তনবৃন্ত পিষ্ট হয় আঙুলের ফাঁকে। যেন এক নৈস্বর্গিক অনুভূতি।
কিছুক্ষণের মধ্যে অদ্ভুত একটা কিছু টের পায় স্বপ্নিল। সুমনার বুকের একপাশে কিছু একটা যেন ঠেকছে ফোলা মত। নিজের দিকে ফিরিয়ে ভালো করে দেখে ও। না সত্যিই ফোলা রয়েছে কিছুটা...।
- কবে থেকে হয়েছে এটা?
- সেই ভাবে তো দেখিই নি।
- ব্যথা আছে?
- না, গো...
মনটা খচখচ করে ওঠে স্বপ্নিলের...
ফ্যামিলি ডাক্তার দেখেশুনে অঙ্কোলজিস্ট ডঃ মৌমিতা চৌধুরীকে রেফার করাই সমীচীন বোধ করলেন। উনি পরীক্ষা করে সময় নষ্ট না করে বায়োপসি করার পরামর্শ দিলেন।
সন্দেহটা ঠিকই করেছিলেন উনি - ব্রেস্ট ক্যান্সার। রিপোর্ট দেখে উনি বললেন, ঘাবড়াবেন না, তবে এক্ষেত্রে একটু বেশি ছড়িয়ে গিয়েছে তাই কেমো দিয়ে MRM করার ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না, MRM করে তারপরে কেমো দিতে হবে।
- MRM মানে?
- MRM মানে Modified Radical Mastectomy, সহজ করে বললে আপনার স্তন বাদ দিতে হবে। অবশ্য অঙ্কোপ্লাস্টিক প্রসিডিউরের মাধ্যমে আপনার স্তন পুনঃস্থাপন করা সম্ভব। যদিও সেটা সময় সাপেক্ষ আর খরচ সাপেক্ষও।খরচপাতির কথা যদিও মাথায় উঠেছে তখন।
দীপাবলির দিন হাসপাতাল থেকে ফিরল সুমনা। দুটো স্তনই বাদ গিয়েছে তার। পোশাক
বদলাতে ওয়াড্রবটা খুলে শ্বেতপদ্মের ন্যায় চিকন অন্তর্বাসটা হাতে নিয়ে ডুকরে
কেঁদে ওঠে সে। কাঁপা কাঁপা গলায় স্বপ্নিলকে বলে,
- তুমি আর আমায় ভালোবাসবে না বলো! চুনুমুনু তো তোমার খুব পছন্দের ছিল... অশ্মি হওয়ার পর স্ট্রেচ মার্ক অবধি পড়তে দাওনি।
থামিয়ে দেয় স্বপ্নিল, পছন্দ ছিল কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি নয়।
নিজের দুই হাত সুমনার শূন্য বুকে রাখে ও। সুমনা চোখ বোজে, স্বপ্নিলের স্পর্শে সে অনুভব করে সেই এক অনুভূতি, যে অনুভূতি তার বহুদিনের চেনা...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন