যাজ্ঞবল্ক্য-গার্গী সংবাদঃ মিথ বনাম সত্য - কমলেন্দু সূত্রধর

বেদ-উপনিষদের বাণী চিরন্তন, এর আবেদন শাশ্বত। কালপ্রবাহে এর ক্ষয় নেই, লয় নেই। উপনিষদের বাণীতেই ভারতবর্ষের চিরন্তন আত্মাটি বাঙময় হয়ে উঠেছে। ভারতীয় দর্শন, ধর্ম ও সংস্কৃতির আকর-গ্রন্থ এই উপনিষদ। উপনিষদে বর্ণিত ও ব্যাখ্যাকৃত তত্ত্বজ্ঞানই সনাতনী শাস্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশগুলির মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে যে সমস্ত ধর্ম ভারতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, তা এই উপনিষদের ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। বৌদ্ধ, জৈন, বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত প্রভৃতি সকল ধর্ম-সম্প্রদায়ই যে উপনিষদের দ্বারা প্রভাবিত তাতে সন্দেহ নেই। যে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা শুধু বৈষ্ণব নয়, সমগ্র হিন্দুজাতির শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ বলে বিবেচিত ও সম্মানিত, তা উপনিষদের সারমাত্র বলে মনে করা হয়। একটি প্রসিদ্ধ শ্লোক আছে যার অর্থ, বহু উপনিষদ-রূপ গাভীর দুগ্ধ দোহন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সারাংশ দ্বারা শ্রীমদ্ভাগবত গীতা-রূপ ক্ষীর প্রস্তুত করেছেন।

আমাদের প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ সংস্কৃতে লিপিবদ্ধ। বেদ, উপনিষদ, গীতা সংস্কৃতে রচিত। সংস্কৃত ভাষায় এসকল গ্রন্থের যে ব্যাপক আলোচনা ও ভাষ্য রচিত হয়েছে, বাংলা ভাষায় তার সিকিভাগও রচিত হয়নি। ফলে সংস্কৃত অনভিজ্ঞ বাঙালির কাছে এই বিপুল জ্ঞানভাণ্ডারের দ্বার একরকম অবরুদ্ধই হয়ে রয়েছে বলা যায়। দুঃখের ব্যাপার এই যে, ভাষার এই দুর্ভেদ্যতা সিংহভাগ বাঙালির রুচির কাছে বেদ উপনিষদের মতো আকরগ্রন্থকে ব্রাত্য রেখেছে বলা যায়। সত্যি বলতে, অধিকাংশ বাঙালি তথা ভারতীয়দের স্বীয় ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায়। একজন সাধারণ হিন্দু বাঙালিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, “বেদ, উপনিষদ পড়েছেন?” বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উত্তর ঋণাত্মকই হবে। যে ধর্ম ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক, সেই ধর্ম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও আমাদের নেই। আমরা নিজেদের ঐতিহ্যকে জানিনা, চিনিনা, চেনার চেষ্টাও করিনা। নিজ ঐতিহ্যের প্রতি এই বিমাতৃসুলভ মনোভাব থেকেই বেদ-উপনিষদ ইত্যাদি জ্ঞান-গ্রন্থকে অবজ্ঞা করার মানসিকতার উৎপত্তি।

আর এই অবজ্ঞার সুযোগ নিয়েই এক শ্রেণীর লেখক-লেখিকার নিজ নিজ কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সমানে বেদাদি গ্রন্থের বিকৃতকরণ ও অপব্যাখ্যা করার একটা চল বেশ অনেক দিন ধরেই বিদ্যমান। প্রাচীন Text ভালো করে না পড়ে এবং ইতিউতি খাবলে খুবলে উদ্ধৃত করে, তাঁর সাথে ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ গল্প উপন্যাস বানিয়ে পাঠকদের গেলানো প্রয়াস বাংলা তথা ভারতবর্ষে নতুন নয়। উপনিষদও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। সম্প্রতি ইন্টারনেটের দৌলতে একটি নিবন্ধ পড়ার সুযোগ হয়েছে। নিবন্ধের মূল উপজীব্য বিষয় বিদেহরাজ জনকের যজ্ঞভূমিতে হওয়া গার্গী বাচক্‌নবী ও যাজ্ঞবল্ক্যের তর্ক। বিদগ্ধ পাঠক মাত্রই অবগত থাকার কথা যে, জনক রাজসভার এই তর্কের মাধ্যমে কী গভীর, অসামান্য ব্রহ্মতত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছিল। যাজ্ঞবল্ক্য স্বীয় পাণ্ডিত্য, জ্ঞানবত্তা, ব্রহ্মবিদ্যার অসাধারণ পরিচয় দিয়ে সভাস্থ সকলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ভাবা যায়না, আজ থেকে তিন-চারহাজার বছর পূর্বে ভারতবর্ষের জ্ঞানচর্চার বিকাশ কোন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। দেশের পণ্ডিতগণ, কি পুরুষ কি নারী, সকলেই কতটাই না চিন্তাশীল ছিলেন, তা ভেবে আশ্চর্য হতে হয়।

কিন্তু না, উক্ত নিবন্ধে ব্রহ্মবিদ্যা নিয়ে আলোচনাই করা হয়নি। কেই বা পড়ে ওইসব ‘ব্রহ্মবিদ্যা’ নামক ছাইপাঁশ? নিবন্ধের লেখক বরং আমদানি করলেন বিচিত্র তত্ত্ব ও তথ্য। তিনি গার্গী ও যাজ্ঞবল্ক্যের তর্কে আমদানি করলেন চিরাচরিত ‘নারী বনাম পুরুষ’ দ্বৈতের। সুপণ্ডিত যাজ্ঞবল্ক্যকে তিনি বানিয়ে দিলেন পুরুষতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে। উক্ত অধ্যায়ে, গার্গী প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন, আর যাজ্ঞবল্ক্য নাকি তাঁকে ‘মাথা খসে যাবে’ হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দেন, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘silenced’; এটাই তাঁর মূল বক্তব্য। তিনি এই আঙ্গিকে বিষয়টি দেখাতে চাইলেন যে, গার্গী যেহেতু নারী, তাই তিনি সাধারণভাবেই ‘Victimized’ এবং যাজ্ঞবল্ক্য প্রাচীন ভারতের পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূ, যিনি নারীর বিদ্যা অর্জনের স্পৃহা হুমকি দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন। যাজ্ঞবল্ক্যের বলা ‘মাথা খসে যাবে’ এই শব্দগুলিকে একটি বিশেষ আব্রাহ্যামীয় religion-এর (সচেতন ভাবেই ‘ধর্ম’ শব্দটি ব্যবহার করলাম না) ‘শর তন সে জুদা’ আপ্তবাক্যটির সাথে প্রায় সমতুল্য করার চেষ্টাও বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বর্তমান প্রবন্ধটি লেখার তাগিদ এই ঘটনা থেকেই। একটা সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত বিষয়ের উপর জোরজবরদস্তি করে ‘ক বনাম খ’ দ্বৈত চাপিয়ে দিলে বিষয়টির মূলভাবই বিচ্যুত হয়। অবশ্য, উক্ত নিবন্ধকারই শুধু নন, গার্গীকে ‘Victim’ ও যাজ্ঞবল্ক্যকে ‘Villain’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা Academic জগতে বেশ বিখ্যাত, নানা Journal-এ ইতিমধ্যেই বহু উদ্ধৃত। এমনকি, শ্রদ্ধেয়া সুকুমারী ভট্টাচার্য এবং রাহুল সাংকৃত্যায়ণও এই ভ্রান্ত মতের সমর্থক। ফেসবুকেও বেশ কিছু পোস্টে দেখলাম রীতিমত ‘কাল্পনিক’ সাহিত্য-ধর্মী লেখা, যাজ্ঞবল্ক্য কেমন করে গার্গীকে প্রশ্ন করতে দিলেন না, চুপ করিয়ে দিলেন, তাঁরই এক বিচিত্র আখ্যান।

যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। যাজ্ঞবল্ক্য আপাদমস্তক পুরুষতান্ত্রিক ‘দুষ্টু’ লোক এবং নারী গার্গী বেশি প্রশ্ন করবেন, এ তাঁর গাত্রদাহের কারণ- এমনটা দাবী করার আগে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, কোথায় এবং কোন প্রসঙ্গে ঘটনাগুলি ঘটছে, সেখানে আর কারা উপস্থিত ছিলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক’ যাজ্ঞবল্ক্য কেনই বা প্রথমেই গার্গীকে বাঁধা দিলেন না, ঘটনার আগে-পরে কি ঘটছে; এইসব। সুতরাং সবার আগে, আলোচ্য বৃহদারণ্যক উপনিষদের ওই অংশটি অবিকৃত ভাবে একবার পড়া যাক।

বৃহদারণ্যক উপনিষদের তৃতীয়াধ্যায়ের প্রথম ব্রাহ্মণ মতে, একদা বিদেহরাজ জনক বহুদক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞ করেছিলেন। সেই যজ্ঞে কুরু পাঞ্চালের অনেক ব্রাহ্মণ উপস্থিত ছিলেন। এই সকল ব্রাহ্মণের মধ্যে কে সর্বাপেক্ষা বিদ্বান, বৈদেহ জনক তা জানতে চাইলেন। বিদ্বানতম ব্রাহ্মণের পুরষ্কার হিসেবে তিনি এক হাজার গরু প্রদান করতে চাইলেন, যাদের প্রতিটির শিং দুটি দশ দশ পাদ [1]সোনা দিয়ে বাঁধানো [বৃহদারণ্যক ৩.১.১]। জনক ঘোষণা করলেন,

পূজ্যপাদ ব্রাহ্মণগণ, আপনাদের মধ্যে যিনি ‘ব্রহ্মিষ্ঠ[2], তিনি এই গরুগুলো নিয়ে যেতে পারেন।”

সে যুগে এমন প্রতিযোগিতা ছিল বিদ্যাচর্চার অঙ্গ। তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে মেধার উন্মেষ ও প্রকাশ ঘটত এবং সেই মেধা পুরস্কৃত হত দরাজ হস্তে।

কেনোপনিষদের ঋষি খুব সুন্দর একটা কথা বলেছিলেন,

যস্যামতং তস্য মতং মতং যস্য ন বেদ সঃ।

অবিজ্ঞাতং বিজ্ঞানতাং বিজ্ঞাতমবিজানতাম্‌।।” [কেন ২.৩]

যিনি বলেন যে, তিনি ব্রহ্মকে জানেন না, তিনিই ব্রহ্মকে জানেন; যিনি বলেন তিনি ব্রহ্মকে জানেন, তিনিই আসলে ব্রহ্মাকে জানেন না। যাঁরা বলেন যে তাঁরা জানেন না, এ তত্ত্ব তাঁদেরই জানা, যাঁরা বলেন যে তাঁরা জানেন, এ তত্ত্ব তাঁদেরই অজানা। এই সূত্র ধরেই হয়তো কোনো ব্রাহ্মণই আগ বাড়িয়ে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞ বলতে সাহস করলেন না। কেউই কিছু বলছেন না দেখে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য কৌতুক করে নিজ শিষ্যকে আদেশ করলেন, “সৌম্য সামশ্রব[3], এই গাভীগুলো নিয়ে যাও তো।” সামশ্রব গাভীগুলো নিয়ে যাজ্ঞবল্ক্যের আশ্রমে প্রস্থান করলেন।

কিন্তু যাজ্ঞবল্ক্যের এহেন ব্যবহারে অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ রুষ্ট হলেন। তাঁরা সমস্বরে যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করলেন,

আপনি কী ভাবে, কোন প্রমাণে নিজেকে শ্রেষ্ঠতম ব্রহ্মবিদ বলে পরিচয় দিচ্ছেন? সভাস্থিত সকলের মধ্যে একমাত্র আপনি নিজেই ব্রহ্মিষ্ঠ, কিসের ভিত্তিতে এমন দাবী করছেন আপনি?”

জনকের যজ্ঞহোতৃ অশ্বলও জিজ্ঞেস করলেন,

যাজ্ঞবল্ক্য, তুমি কি নিজেকেই ব্রহ্মিষ্ঠ বলে মনে করছ?”

যাজ্ঞবল্ক্য নিপুণ ভাবে এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন না, নির্বিকার, নিরহংকার স্বরে তিনি বললেন,

আপনারা ব্রহ্মিষ্ঠ, আপনাদেরকে আমি প্রণাম জানাই। কিন্তু আমার যে গরুগুলো দরকার।”

কথায় বলে ‘বিদ্যাং দদাতি বিনয়ম্‌’, বিদ্যা বিনয় প্রদান করে; বিদ্বান যাজ্ঞবল্ক্য বিনয় করেই যেন নিজেকে শ্রেষ্ঠ বললেন না। কিন্তু তাঁর কৌতুকবোধ অসামান্য। তাঁর উক্তির ভাবখানি যেন এরকম, আমি শ্রেষ্ঠ এই দাবী আমি করছিনা। শ্রেষ্ঠেরও শ্রেষ্ঠ সব সময়ই বর্তমান, সেই শ্রেষ্ঠতমকে প্রণাম জানাই, শ্রেষ্ঠের আদর্শকে প্রণাম জানাই। কিন্তু আপনাদের মধ্যে যে আমি শ্রেষ্ঠ নই, সেটা নাহয় আপনারাই প্রমাণ করুন। আপনাদের সাথে তর্কযুদ্ধে আমি প্রস্তুত। অশ্বল যেন যাজ্ঞবল্ক্যের কৌতুকটা ধরতে পারলেন এবং তর্কযুদ্ধের সূচনা তিনিই করলেন।

যাজ্ঞবল্ক্যকে তিনি প্রশ্ন করলেন,

হে যাজ্ঞবল্ক্য, সবকিছুই যেহেতু মৃত্যুর অধীন, তখন কী উপায়ে একজন যজমান মৃত্যুর হাত থেকে আত্যন্তিক মুক্তি লাভ করবে?”

যাজ্ঞবল্ক্য তখন কর্ম, জ্ঞান ইত্যাদির ভাবনায় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করলেন। অশ্বলের সমস্ত জড়-বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরেও তিনি ব্রহ্মস্থাপন করতে লাগলেন। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে অশ্বল শেষে প্রশ্ন করা থেকে বিরত হলেন – “...ততো হ হোতাশ্বল উপররাম[4]।।” [বৃহদারণ্যক ৩.১.১০]

এই ‘উপররাম’ শব্দটিকে খেয়াল রাখতে অনুরোধ করব পাঠক-পাঠিকাগণকে, এই শব্দটি অন্যান্য প্রশ্নকর্তাদের উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হবে এবং পরবর্তীতে গার্গী বাচক্‌নবীর ক্ষেত্রেও একই শব্দ আবার ব্যবহৃত হতে দেখা যাবে।

এরপর জরৎকারু বংশীয় আর্তভাগ গ্রহ, অতিগ্রহ বিষয়ক প্রশ্ন করলেন যাজ্ঞবল্ক্য। তাঁকেও সব উত্তর দিলেন যাজ্ঞবল্ক্য। তাঁর শেষ প্রশ্ন ছিল, যখন মৃত ব্যক্তির বাক, দেহ ইত্যাদি প্রকৃতিতে বিলীন হয়, তখন তিনি কোথায় থাকেন, তাঁর কী গতি হয়? যাজ্ঞবল্ক্য বললেন,

তোমার হাত আমাকে দাও। আমরা দুজনে এই রহস্য জানব, কিন্তু এ জনবহুল স্থানে বিচার্য নয়।”

যে বিষয় বস্তুজগতের অভিজ্ঞতার নয়, যাজ্ঞবল্ক্য তা সর্বসমক্ষে আলোচনা করলেন না। তার কারণ, যারা এ আলোচনার উপযুক্ত নন, তাদের মনে এই ধরনের আলোচনা সন্দেহের জন্ম দিতে পারে। উপনিষদ - ব্রহ্মবিদ্যা সবার জন্য নয়। আধুনিক রাজনৈতিক সাম্যবাদ ‘সবাই সমান’ বলে হইচই করে, কিন্তু মেধায় সব মানুষ কখনই সমান নয়। শিক্ষাদান সব সময়েই আধার সাপেক্ষ। সব শিক্ষা সবার জন্য নয়। সেজন্যই এই রহস্য শিক্ষা। তখন তাঁরা অন্যত্র আলোচনা করলেন। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে আর্তভাগও বিরত হলেন – “ততো হ জারৎকারব আর্তভাগ উপররাম।।” [বৃহদারণ্যক ৩.২.১৩]

এরপর ভুজ্যু লাহ্যায়নি প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। যাজ্ঞবল্ক্য যথারীতি সব উত্তর দিলেন। সমস্ত প্রশ্নের সুউত্তর পেয়ে ভুজ্যু লাহ্যায়নিও প্রশ্ন করা থেকে ‘উপররাম’ বা বিরত হলেন [বৃহদারণ্যক ৩.৩.২]। তারপর প্রশ্ন করলেন উষস্ত চাক্রায়ণ। তিনিও সব উত্তর পেয়ে ‘উপররাম’ হলেন। [বৃহদারণ্যক ৩.৪.২]

এরপর প্রশ্ন করলেন কৌষীতকেয় কহোল[5]। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন, ব্রাহ্মণকে পাণ্ডিত্য পরিত্যাগ করে বালকভাবে অবস্থান করতে হবে,

“...ব্রাহ্মণঃ পাণ্ডিত্যম্ নির্বিদ্য বাল্যেন তিষ্ঠাসেৎ...।”

তারপর বাল্যভাব এবং পাণ্ডিত্য ত্যাগ করে মুনি হবেন। প্রকৃত ব্রাহ্মণ হতে গেলে শিশু বা বালকের অদূষিত পবিত্রভাব মানুষকে আবার ফিরে পেতে হয়। তারপর অমৌন এবং মৌনভাব ত্যাগ করে ব্রাহ্মণ হবেন। কহোল প্রশ্ন করেছেন, কীভাবে ব্রাহ্মণ হন? যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, এভাবেই হন, “যেন স্যাৎ তেন ঈদৃশঃ এব।”

অতঃপর, তত হ কহোলঃ কৌষীতকেয়ঃ উপররাম - কহোল বিরত হলেন।[বৃহদারণ্যক ৩.৫.১]

কহোলের পর যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করতে উঠে দাঁড়ালেন গার্গী বাচক্‌নবী। গর্গ বংশীয় ঋষি বচক্‌নুর কন্যা তিনি, তাই তাঁর নাম গার্গী বাচক্‌নবী। লক্ষণীয়, জনকের রাজসভায় কিন্তু আলাদা করে কোনো ‘Ladies seat’ ছিলনা; যেমন অন্যান্য ব্রহ্মবিদ ঋষি-মুনিরা সভায় উপস্থিত, একই ভাবে কিন্তু গার্গীও সেখানে উপস্থিত। তিনি একজন নারী বলে তাঁর সাথে কিন্তু পুরুষদের থেকে আলাদা কোনো পৃথকীকরণ করা হয়নি। গার্গী একজন নারী, নারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিদ্যাচর্চা করেছেন, বা নারী বলে কিছু না জেনেই তিনি জনকের এই ব্রহ্মোদ্য সভায় চলে এসেছেন, বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটা শব্দতেও এরকম অপমানজনক ইঙ্গিত করা হয়না। বস্তুত, ব্রহ্মবিদ হিসেবে গার্গী অন্যদের থেকে কোনো ভাবেই আলাদা নন; অন্যান্যদের সাথে তিনিও সসম্মানে সভা অলংকৃত করেছেন।

যাই হোক, গার্গী প্রশ্ন করা শুরু করলেন। নানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর গার্গী তাঁর শেষ প্রশ্ন করলেন,

কস্মিন নু খলু ব্রহ্মলোকা ওতাঃ চ প্রোতাঃ চ;

এই ব্রহ্মলোক কীসে ওতপ্রোত?”

যাজ্ঞবল্ক্য তখন গার্গীকে সতর্ক করলেন,

মা অতিপ্রাক্ষীঃ মা তে মূর্ধা ব্যপপ্তৎ;

অতিপ্রশ্ন’ করোনা, তোমার মস্তক যেন খসে না পড়ে।

অনতিপ্রশ্ন্যাম্‌ বৈ দেবতাম্‌ অতিপৃচ্ছসি;

যে দেবতার বিষয়ে ‘অতিপ্রশ্ন’ করা উচিত নয়, তাঁর বিষয়েই তুমি অতিপ্রশ্ন করছ।”

তখন গার্গী বাচক্‌নবী বিরত হলেন; ততঃ হ গার্গী বাচক্‌নবী উপররাম। [বৃহদারণ্যক ৩.৬.১] ‘উপররাম’, দেখা যাচ্ছে এই শব্দটি উপরে যেমন সমস্ত পুরুষ প্রশ্নকর্তাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি গার্গীর উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হল।

এই সেই অংশ। একে যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন না, তায় আবার মুণ্ডু খসানোর ‘হুমকি’। আর যায় কোথায়? এই অংশের অপব্যাখ্যাকে হাতিয়ার করেই যাজ্ঞবল্ক্য আপামর বাঙালির কাছে ‘পুরুষতান্ত্রিক’ গালি খেয়ে গেলেন। এই অংশকেই আলাদা করে খাবলে নিয়ে স্বকপোলকল্পিত বিচিত্র অর্থ করা হয়, উদাহরণস্বরূপ-

যাজ্ঞবল্ক্য হেরে যাচ্ছিলেন, তাই গার্গীকে চুপ করিয়ে দিলেন।

পুরুষ হয়ে নারীর কাছে হারা যাজ্ঞবন্ধ্যের আঁতে লাগছিল।

যাজ্ঞবল্ক্য গার্গীকে মুণ্ডু কাটার হুমকি দিলেন ইত্যাদি।

এই অংশ নিয়ে গপ্পো ফাঁদতে গিয়ে কোনও কোনও লেখককে অতি আবেগপ্রবণ হয়েও পড়েন। এমনই একজনের লেখার নমুনাঃ

চমকে উঠলেন যাজ্ঞবল্ক্য। এ কী প্রশ্ন করেছে মেয়ে? এতকাল নিজের অধীত সব বিদ্যা, বোধ দিয়ে তিনি সর্বোচ্চ ব্রহ্মকে জেনেছেন। সেই ব্রহ্মলোক কীসে অধিষ্ঠিত, এ প্রশ্ন তো তার নিজের মাথাতেই আসেনি। সব কিছু ব্রহ্মেই শুরু, ব্রহ্মেই লীন। সেই ব্রহ্মলোক কীসে অধিষ্ঠিত, এ প্রশ্ন হয় নাকি? এর উত্তর জানা সম্ভব নাকি? ভরা সভাগৃহে যাজ্ঞবল্ক্য ধরাশায়ী। গার্গীর কাছে চূড়ান্ত পর্যুদস্ত। মানতে পারছেন না।”

নাহ। যাজ্ঞবল্ক্য চমকাননি, কারও কাছে ‘পদর্যুস্ত’ও হননি। তবে, যাজ্ঞবল্ক্যের ভাবনাচিন্তার নিয়ন্ত্রণ কোনো এক বিষম ব্রহ্মজ্ঞানের বলে উপরোক্ত ফেসবুক লেখকের আয়ত্তে চলে এসেছে, সেটা বুঝতে পেরে নিজেই চমকে গিয়েছিলাম বৈকি। এ এক ভয়ংকর কূপমণ্ডুক যুক্তিবাদ, আক্ষরিক অর্থেই এখানে যুক্তিটাই বাদ পরেছে। শুরুতেই দেখা যাচ্ছে, যিনি ‘উপররাম’ হচ্ছেন, তিনি একজন পুরুষ। প্রথমে অশ্বল, তারপর এক এক করে আর্তভাগ, ভুজ্যু, উষস্ত, কহোল, উদ্দালক -  এরা সবাই ‘উপররাম’ হচ্ছেন, নিজে থেকেই চুপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু গার্গীর ‘উপররাম’ হওয়াকে ব্যাখ্যা করা হল ‘বলপুর্বক থামিয়ে দেওয়া’ হিসেবে। কেন? শুধুমাত্র নারী বলে? যাজ্ঞবল্ক্যের প্রতিটি উত্তরের শেষে, ‘উপররাম’ শব্দ আছে। অন্যদের ক্ষেত্রে যেমন তার অর্থ চুপ করে যাওয়া বা বিরত হওয়া, গার্গীর ক্ষেত্রেও তাই।

যাই হোক, এগোনো যাক। গার্গী বাচক্‌নবী বিরত বা ‘উপররাম’ হলে পর প্রশ্ন শুরু করেন আরুণি উদ্দালক[6]। উদ্দালক তাঁকে সূত্রাত্মা অন্তর্যামী সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। এবং কি আশ্চর্য! উদ্দালকও যাজ্ঞবল্ক্যকে ‘হুমকি’ দিলেন,

তুমি যদি সূত্র ও সেই অন্তর্যামীকে না জেনেই ব্রহ্মজ্ঞের প্রাপ্য গরুগুলি নিয়ে যাও, তবে ‘তোমার মস্তক খসে পরবে’ – মূর্ধা তে বিপতিষ্যতি। [বৃহদারণ্যক ৩.৭.১]”

অর্থাৎ ‘মাথা খসে যাবে’ কথাটি যদি হুমকিই হয়, তাহলে যাজ্ঞবল্ক্য নিজেও তা শুনেছেন। যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন,

তোমার আত্মা; ইনিই অন্তর্যামী ও অমৃত, ইনি ভিন্ন বাকি সবই বিনাশী –

এষঃ তে আত্মান্তর্যাম্যমৃতোঽতোঽন্যদার্তং।”

উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট আরুণি উদ্দালকও বিরত বা ‘উপররাম’ হলেন। [বৃহদারণ্যক ৩.৭.২৩]

আরুণি উদ্দালকের প্রশ্নপর্ব শেষ হলে, আবার গার্গী যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করতে চাইলেন। এখানেই প্রশ্ন আসে, ‘ঘোর পুরুষতান্ত্রিক’ যাজ্ঞবল্ক্য যদি গার্গীকে বলপূর্বক থামিয়েই দেন, তাহলে গার্গী আবার প্রশ্ন করতে চাইছেন কেন? যাজ্ঞবল্ক্যই বা গার্গীকে থামিয়ে দিচ্ছেন না কেন? কেনই বা যাজ্ঞবল্ক্য এবারও গার্গীকে ‘কটু’ কথা বললেন না?

যাইহোক, গার্গী প্রথমেই সকল ব্রাহ্মণের উদ্দেশ্যে একটি ঘোষণা করলেন,

উপস্থিত ব্রাহ্মণগণ, আমি এঁকে দুটি মাত্র প্রশ্ন করব। ইনি যদি এই দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তবে মনে করবেন, আপনারা কেউই ব্রহ্মবিচারে তাঁকে পরাস্ত করতে পারবেন না।”

ব্রাহ্মণরা গার্গীকে প্রশ্ন করতে অনুরোধ করলেন। [বৃহদারণ্যক ৩.৮.১]

লক্ষণীয়, ব্রাহ্মণরা গার্গীকে বললেন প্রশ্ন করতে কারণ, তাঁরা মেনে নিচ্ছেন যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে গার্গী তাঁদের মধ্যে যোগ্যতম ব্রাহ্মণ! বোঝাই যায়, গার্গী নিজেও এই কথাটা ভাবেননি যে তাঁকে হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ যদি তাই হতো, তাহলে তিনি ফের যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করতে চাইতেন না এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণরাও তাঁকে বিনা প্রশ্নে তাঁকে নির্বাচিত করতেন না।

এবারে, গার্গী প্রশ্ন করলেন যাজ্ঞবল্ক্যকে। এবার তাঁর প্রশ্ন করার ধরণটা লক্ষ করার মতো। জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন দুটিকে গার্গী ক্ষত্রিয়যুবকদের শত্রুঘাতী দুটি বাণের সাথে তুলনা করছেন;

যথা কাশ্যো বা বৈদেহো বোগ্রপুত্র উজ্জং ধনুরধিজ্যং কৃত্বা দ্বৌ বাণবন্তৌ...[বৃহদারণ্যক ৩.৮.২]।

তিনি যেন ভাবছিলেন যে এই বাণদ্বয়ের যাজ্ঞবল্ক্য নিহত হবেন, তাঁর ব্রহ্মিষ্ঠের দাবী ব্যর্থ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হল না। যাজ্ঞবল্ক্য দুটি প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিলেন। এবারেও গার্গী প্রথম প্রশ্ন করলেন যে, কীসে সমুদয় বস্তু ওতপ্রোত ভাবে বর্তমান? যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন, আকাশে। গার্গী আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আকাশ কীসে ওতপ্রোত ভাবে বর্তমান? যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, অক্ষরব্রহ্মে, এবং এরই সাথে সেই অক্ষরপুরুষের ভাবাত্মক ও অভাবাত্মক লক্ষণ বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করলেন। যাজ্ঞবল্ক্য গার্গীর শেষ প্রশ্নের মীমাংসা করলেন এই ভাবে,

হে গার্গী, এই অক্ষরকে দেখা যায়না, কিন্তু তিনি দর্শন করেন; তাঁকে শোনা যায় না, কিন্তু তিনি শ্রবণ করেন। তাঁকে মনন করা যায় না, কিন্তু তিনি মনন করেন। তাঁকে জানা যায়না, কিন্তু তিনি জানেন। ইনি ভিন্ন অন্য কেউ দ্রষ্টা নেই, ইনি ভিন্ন অন্য কেউ শ্রোতা নেই, ইনি ভিন্ন অন্য কোনো মন্তা নেই, ইনি ভিন্ন অন্য কোনো বিজ্ঞাতা নেই। হে গার্গী, এই অক্ষরেই আকাশ ওতপ্রোত ভাবে বর্তমান রয়েছে,

এতস্মিন্‌ নু খলু অক্ষরে গার্গি আকাশঃ ওতঃ চ প্রোতঃ চ ইতি। [বৃহদারণ্যক ৩.৮.১১]”

এবারে আর মুণ্ডু খসার কথা নেই।

গার্গী উত্তর পেয়ে প্রীত হলেন, বললেন,

শ্রদ্ধেয় ব্রাহ্মণগণ, এঁকে যদি নমষ্কার করেই মুক্তি পান, তাহলেই যথেষ্ট হবে। ব্রহ্মবিচারে আপনারা কেউ এঁকে পরাস্ত করতে পারবেন না,

ন বৈ জাতু যুষ্মাকমিমং কশ্চিদ ব্রহ্মোদ্যং জেতেতি।”

এই বলে গার্গী আবার বিরত হলেন, ততঃ হ বাচকন্‌বী উপররাম। [বৃহদারণ্যক ৩.৮.১২]”

এরপর প্রশ্ন শুরু করলেন বিদগ্ধ শাকল্য। শাকল্যের প্রশ্ন শেষ হলে এবার যাজ্ঞবল্ক্যই শাকল্যকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। বললেন,

যিনি সব কিছু অতিক্রম করে বর্তমান, আমি উপনিষদ উক্ত সেই পুরুষের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছি। আপনি যদি বলতে না পারেন, আপনার মাথা খসে পড়বে,

...মূর্ধা তে বিপতিষ্যতি।”

পুরুষতন্ত্রের ধ্বজাধারী হয়ে যাজ্ঞবল্ক্য কিনা একজন পুরুষকেই মাথা খসে পড়ার হুমকি দিলেন! শাকল্য যাজ্ঞবল্ক্যের উত্তর দিতে পারলেন না, তাঁর অতঃপর তাঁর মাথা খসে পরল, তস্য হ মূর্ধা বিপপাত। [বৃহদারণ্যক ৩.৯.২৬] যাক, শেষে তাহলে একজন পুরুষের মুণ্ডুই খসল।

এখানে প্রশ্ন আসে, ‘মুণ্ডু খসা’ মানে যদি হুমকি হয়, গার্গীকে যদি যাজ্ঞবল্ক্য হুমকি দিয়ে থাকেন, তাহলে শাকল্যর মুণ্ডু খসা কী অর্থে দেখা হবে? সত্যি সত্যিই তাঁর মুণ্ডু খসে পড়ে গেল? আর যাজ্ঞবল্ক্য গার্গীকে মাথা খসার হুমকি দিয়ে যেমন নারীবিদ্বেষী হয়েছেন, একই যুক্তিতে এবার শাকল্যের মুণ্ডু খসিয়ে তিনি পুরুষবিদ্বেষীও হয়ে গেলেন। মানে যাজ্ঞবল্ক্য একই সাথে নারীবিদ্বেষী এবং পুরুষবিদ্বেষী দুটোই। বলে রাখা ভালো, এই একই বৃহদারণ্যক উপনিষদে ‘নারীবিদ্বেষী’ যাজ্ঞবল্ক্যই আবার নিজের স্ত্রী মৈত্রেয়ীর সাথে গভীর ব্রহ্ম আলোচনা করেছেন।

এদিকে, বৃহদারণ্যক উপনিষদেই এই অধ্যায়ের অনেক আগে, আর একটি মাথা কাটার কথা আমরা পাচ্ছি। চিকিতানপুত্র ব্রহ্মদত্ত যজ্ঞে সোমরস পান করার সময় বলেছিলেন,

অয়াস্য আঙ্গিরস যদি ভিন্নভাবে উদ্গান[7] করে থাকেন, তবে রাজা(সোম) আমার মাথা কেটে ফেলুন -

রাজা মূর্ধানম্ বিপাতয়তাৎ [বৃহদারণ্যক ১.৩.২৪]।”

বৃহদারণ্যক উপনিষদ ছেড়ে আর এক প্রাচীন উপনিষদ দেখা যাক। ছান্দোগ্য উপনিষদেও শালাবত শিলক চৈকিতায়ন দালভ্যকে বলেছিলেন,

তোমার সাম প্রতিষ্ঠাবিহীন। এখন যদি কেউ বলে (তোমার কথা সত্য না হয় তবে) ‘তোমার মস্তক খসে পড়বে’, তবে তোমার মস্তক নিশ্চয়ই খসে পড়বে,

মূর্ধা তে বিপতেৎ ইতি [ছান্দোগ্য ১.৮.৬]।”

প্রবাহণ জৈবলি শালাবত্যকে একই কথা বলেছেন [ছান্দোগ্য ১.৮.৮]।

এছাড়াও, পুর্বোক্ত উষস্তি চাক্রায়ণ কুরুদেশে যজ্ঞস্থলে গিয়ে প্রস্তোতা[8]কে বলছেন,

যে দেবতা প্রস্তাবের অনুগমন করেন, তাঁকে না জেনে যদি প্রস্তাব পাঠ কর, তাহলে তোমার মাথা খসে পড়বে-

মূর্ধা তে বিপতিষ্যতি।” [ছান্দোগ্য ১.১০.৯]

তিনি প্রতিহর্তা[9]কেও একই কথা বলেছেন।[ছান্দোগ্য ১.১০.১১] পরের খণ্ডে, প্রস্তোতা সেই ‘মাথা খসা’ স্মরণ করিয়ে উষস্তির কাছেই উত্তর চেয়েছেন।[ছান্দোগ্য ১.১১.৪] উষস্তিও উদ্গাতা ও প্রতিহর্তাকে উত্তর দিয়ে বলেছেন, তোমরা যদি দেবতাকে না জেনে যজ্ঞকর্ম করতে তাহলে তোমাদের মাথা খসে পড়বে। [ছান্দোগ্য ১.১১.৫-৯]

প্রশ্ন হচ্ছে, উপনিষদে এত মাথা কাটাকাটি কেন? কী তার তাৎপর্য?

এই প্রসঙ্গে ঋগবেদের একটি ঋক উল্লেখ করা প্রয়োজন। ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১৫১ তম সুক্তের প্রথম ঋকে বলা হচ্ছে-

শ্রদ্ধয়াগ্নিঃ সমিধ্যতে শ্রদ্ধয়া হূয়তে হবিঃ।

শ্রদ্ধাং ভগস্য মূর্ধনি বচসা বেদয়ামসি।।”

অর্থাৎ, শ্রদ্ধার গুণে অগ্নি প্রজ্বলিত হন। শ্রদ্ধাই প্রকৃত যজ্ঞাহুতি। শ্রদ্ধাই সৌভাগ্যের মস্তক, এ আমি স্পষ্ট বাক্যে জানাচ্ছি।

মস্তক ‘শ্রদ্ধা’র প্রতীক, সম্মানের প্রতীক। শুক্ল যজুর্বেদের ১৪শ অধ্যায়ের ২১ তম মন্ত্রের আমরা পাচ্ছি-

মূর্ধাসি রাড় ধ্রুবাহসি ধরুণা ধসি ধরণী।”

অর্থাৎ, তুমি মস্তকের ন্যায় শ্রেষ্ঠ, শোভমান, স্থির, ধারণের কারণ, ধারক ও ভুমিরূপা।

এছাড়াও, শুক্ল যজুর্বেদেই বলা হচ্ছে-

অয়মগ্নিঃ... মূর্ধা কবী রয়ীণাম।। [শুক্ল ১৫.২১]

অর্থাৎ, এই অগ্নি ধনের মস্তক তুল্য অর্থাৎ, শ্রেষ্ঠধনস্বরূপ।

মস্তক শ্রেষ্ঠত্বেরও প্রতীক। সেই মস্তকই ‘খসে পড়ছে’। যুক্তি দিয়ে ভাবলে এবার কি মনে হচ্ছে না যে ‘মাথা খসা’ অর্থে আসলে শ্রদ্ধার পতন, সম্মানের পতনকে বোঝানো হচ্ছে? একজন বিদ্বান, বুদ্ধিমান, আত্মসম্মান সম্পন্ন মানুষের কাছে সম্মানহানী কিন্তু মৃত্যুরই সমান। অর্থাৎ, ‘মাথা খসা’ শব্দবন্ধটি রূপক মাত্র। সমস্ত ভাষাতেই রূপকের ব্যবহার আছে, যা কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এই রূপককে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ না করাটাই কাম্য। আক্ষরিক অর্থ নয়, রূপকের ক্ষেত্রে তাঁর ভাবার্থটাই প্রধান। ‘মাথা খসে পড়া’ তেমনই একটি রূপক, কথার লব্‌জ; আরও সোজাসুজি বললে এটি একটি বাগধারা বা idiom বিশেষ।

বাংলায় একটা বাগধারা আছে - ‘আমার মাথা খাও’, সাহিত্যে ও পুরোনো বাংলা সিনেমায় হামেশাই শোনা যায়। ধরুন, কোনও স্ত্রী স্বামীকে বা স্বামী স্ত্রীকে বলল, ‘আমার মাথা খাও।’ তাহলে তার মানে, স্ত্রী/স্বামী স্বামীকে/স্ত্রীকে বলছেন, “ওহে নরমাংসভোজী, তুমি বটি দিয়ে আমার মস্তক ছিন্ন করে তেলমশলা সহযোগে সুপক্ক করে ভোজন কর।”এটা ধরা হবে না, তাই না?

সংস্কৃত ভাষার এই ‘মাথা খসে পড়া’ বাগধারাটিকে আমরা বাঙ্গালিরা কিন্তু এখনও ব্যবহার করি। কোনো লজ্জাজনক কাজে আমাদের সম্মানহানী হলে আমরাও বলি, “লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল।” এই ‘মাথা কাটা যাওয়া’ মানে নিশ্চয়ই এটা নয় যে, কেউ একজন ‘জয় মা কালী’ বলে আমাদের মাথা ঘ্যাচাং ফু করে দিল! ‘মাথা’ সম্মানের প্রতীক; তাই ‘মাথা হেট হওয়া/নত হওয়া/কাটা যাওয়া’ অর্থে সম্মান নষ্ট হওয়াকে ইঙ্গিত করে। বোঝাই যাচ্ছে, যাজ্ঞবল্ক্যও বেদবেত্তা গার্গীর ভরাসভায় সম্মানহানী নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তাই তাঁকে সতর্ক করেছিলেন এই বলে, “হে গার্গী, লজ্জায় যেন তোমার মাথা কাটা না যায়।”

অর্থাৎ, দেখা গেল ‘মাথা খসে যাবে’ এই রূপক উপনিষদে একাধিক বার ব্যবহৃত হয়েছে এবং নারীপুরুষ নির্বিশেষে উভয়ের প্রতি ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যবহারের দিক দিয়ে অন্তত পরিষ্কার, ‘মাথা খসা’ এই বাগধারার মধ্যে কোনও লিঙ্গবিদ্বেষের   মাত্রা নেই; নারী বা পুরুষ- কারও কন্ঠরোধ করার জন্য এই বাগধারা বলা হয়েছে, এমন কোনও দৃষ্টান্ত নেই।

এবার প্রশ্ন আসে, কেন লজ্জা হবে গার্গীর? এমন কি করলেন তিনি যাতে তাঁর সম্মানহানীর সম্ভাবনা দেখা গেল? কারণ গার্গী ‘অতিপ্রশ্ন’ করেছিলেন। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা যায় ঠিকই। কিন্তু পরমব্রহ্মকে নিয়ে প্রশ্নের একটা সীমা আছে। প্রশ্ন শব্দ নির্ভর, বাক্‌ নির্ভর। কিন্তু ব্রহ্ম শব্দাতিত, শব্দে তাঁকে বাঁধা যায়না। আরুণি উদ্দালকের সঙ্গে তর্কে যাজ্ঞবল্ক্য নিজে বলছেন,

যো বাচি তিষ্ঠন্বাচোঽন্তরো যং বাক ন বেদ

- ইনি বাকে অবস্থিত, অথচ বাকের থেকে পৃথক, বাক এঁকে জানেনা। [বৃহদারণ্যক ৩.৭. ১৭]”

যিনি বাকের আয়ত্তে নন, তাঁকে বাকের মাধ্যমে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়। শব্দের সীমাবদ্ধতা বেদ অনেক আগেই বলেছে; উপনিষদের অন্যতম বাণী, উপলব্ধি কখনও ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ব্রহ্মকেও কেবল উপলব্ধী করা যায়, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

 তাছাড়া, গার্গীর প্রশ্নের মূলে একটি পুর্বকল্পিত ধারণা আছে, যা স্থুল বস্তু তা সূক্ষ্মের দ্বারা ব্যাপ্ত; সুক্ষ্ম আবার সুক্ষ্মতরের দ্বারা ব্যাপ্ত; স্থুল-সুক্ষ্মের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক অর্থাৎ, সুক্ষ্মের কারণ হল স্থুল, সুক্ষ্ম না থাকলে, স্থুলেরও অস্তিত্ব থাকেনা। উদাহরণস্বরূপ, ঘট মাটি দ্বারা ব্যাপ্ত, মাটি না থাকলে ঘটের অস্তিত্বও থাকত না। একই ভাবে পৃথিবী জলের দ্বারা ব্যাপ্ত, জল বায়ুতে ব্যাপ্ত, বায়ু আবার অন্তরীক্ষে ব্যাপ্ত। যেহেতু ব্রহ্মলোকের আগে অবধি সবই পাঞ্চভৌতিক, তাই তাদের মধ্যে এই কার্য কারণের সম্পর্ক বিদ্যমান। ঠিক এই ভাবে, ‘ব্রহ্মলোক কীসে ওতপ্রোত বা ব্যাপ্ত?’ প্রশ্নটা এই অর্থই পরিবহন করে যেন ব্রহ্ম/ব্রহ্মলোক কোনো পাঞ্চভৌতিক স্থুল বস্তুবিশেষ, যা সূক্ষ্মতর কোনো বস্তু দ্বারা নির্মিত এবং সেই সুক্ষ্মতর বস্তু না থাকলে ব্রহ্মেরই অস্তিত্ব থাকতোনা; ঠিক যেমন মাটি ছাড়া ঘট নির্মান করা যায়না, ঘটের অস্তিত্ব থাকেনা। প্রশ্নটা অনেকটা এরকম যে, “ঈশ্বরই যদি সব সৃষ্টি করেন, তাহলে ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করলেন?”

ঠিক এই কারণেই, গার্গীর এই প্রশ্নটি ‘অতিপ্রশ্ন’; এই প্রশ্ন সীমা অতিক্রম করেছে, কারণ, ব্রহ্মবিষয়ক তর্কে এই প্রশ্নের মাধ্যমে যেন খোদ ব্রহ্মকেই নাকচ করা হচ্ছে। যাজ্ঞবল্ক্য বুঝেছিলেন যে, হয়তো প্রশ্নকর্ত্রী ‘ব্রহ্মলোক’ কথাটির অর্থই অনুধাবন করতে পারছেন না। গার্গী নিজে সেই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ, এহেন গার্গীর কাছে এটা আশা করা যায়না।  ব্রহ্মবিদদের জমায়েতে এইরকম একটা ‘শিশুসূলভ’ অতিপ্রশ্ন করলে, সভাস্থ সকলের কাছে গার্গীর ব্রহ্মজ্ঞানের মর্যাদা আর থাকতোনা। অর্থাৎ, লজ্জায় তাঁর ‘মাথা কাটা’ যেত। যাজ্ঞবল্ক্য ঠিক এই কারণেই তাঁকে সতর্ক করেন। গার্গী নিজেও নিজের এই ছেলেমানুষি বুঝতে পেরেছিলেন, সেই জন্য নিজের থেকেই ‘উপররাম’ হয়েছিলেন। যাজ্ঞবল্ক্য কেন ‘অতিপ্রশ্নের’ উত্তর দিতে চাননি, তিনি বুঝতে পেরেছেন। যাজ্ঞবল্ক্য তখনই  নিষেধের ব্যাখ্যা করলেন না, কিন্তু গার্গী অনায়াসে তা বুঝলেন। এখানেই তাঁর ব্যতিক্রমী মেধা। আর শাকল্য অহংকারী, তাই তিনি পারেননি, তাই সত্যসত্যই তাঁর মাথা কাটা গেছে, তিনি সভায় লজ্জিত হয়েছেন। এখানে নারী বনাম পুরুষের দ্বন্দ্বের অস্তিত্বই নেই, গোটা ঘটনাটাই ঘটেছে মেধাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। 

আর এই জন্যই গার্গীর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায় কারণ, নিজের ভুলকে তিনি সংশোধনও করে নিয়েছিলেন পরের বার প্রশ্ন করার সময়। আমরা দেখতে পাই, আরুণি উদ্দালকের পরে গার্গী আবার প্রশ্ন করলেও ব্রহ্মকে তিনি অতিক্রম করেননি, যাজ্ঞবল্ক্যের ‘অক্ষরব্রহ্মেই সব কিছু ওতপ্রোত’ মীমাংসা করার পর গার্গী আর অতিপ্রশ্ন করেননি। এরই সাথে, খেয়াল করা যাক, দ্বিতীয়বার গার্গী প্রশ্ন করেছেন ‘বলা হয়’(ইতি আচক্ষতে...) বলে, অর্থাৎ ‘আমি নিজে বলছি না, তবে আমি বিদ্বানদের মুখে শুনেছি; তার ভিত্তিতেই প্রশ্ন করছি’। যাজ্ঞবল্ক্যও উত্তর দিয়েছেন, ‘এইরকম লোকে বলে (ইতি আচক্ষতে)’; অর্থাৎ ‘আমি বলছি না, কিন্তু লোকমুখে এটা শোনা যায়’। অর্থাৎ যাজ্ঞবল্ক্য ও গার্গী দুজনেই পূর্বের অবস্থান বজায় রাখলেন যে, তাঁরা ব্রহ্মকে শব্দ-ভাষা মাধ্যমে ব্যক্তযোগ্য বলছেন না, কিন্তু অন্য ব্রাহ্মণদের সামনে (যাঁদের আধ্যাত্মিক গুণ যাজ্ঞবল্ক্য ও গার্গীর সমতুল্য নয়) কেবল তর্ক-আলোচনার স্বার্থেই দুজনে এই কথোপকথন করলেন।

 যাজ্ঞবল্ক্যও তাঁর শেষ উত্তরে ব্যাখ্যা করলেন,

ব্রাহ্মণাঅভিবদন্ত্যস্থুলমনণ্বহ্রস্বমদীর্ঘমলোহিতমস্নেহমচ্ছায়মতমোঽবায়্বনাকাশমসঙ্গমরসমগন্ধমচক্ষুষ্কমশোত্রমবাগমনোঽতেজস্কমপ্রাণমমুখমমাত্রমননন্তরমবাহ্যং

- ব্রাহ্মণরা বলেন, ইনি সেই অক্ষর। তিনি স্থুল নন, অণু নন, হ্রস্ব নন, দীর্ঘ নন, লোহিত নন, স্নেহবস্তুও নন। তিনি ছায়া নন, তমঃ নন, বায়ু নন, আকাশও নন। তিনি সঙ্গহীন, রসহীন, চক্ষুহীন। তিনি মনোবিহীন, বাগিন্দ্রিয়বিহীন। তিনি তেজোরহিত, প্রাণরহিত, মুখরহিত, অন্তররহিত, বাহ্যরহিত। তিনি অপরিমেয়, অশ্রোত্র। [বৃহদারণ্যক ৩.৮.৮]”

গার্গী এই উত্তরে অতিশয় প্রীত হন এবং যাজ্ঞবল্ক্যকেই শ্রেষ্ঠতম ব্রহ্মবিদ হিসেবে স্বীকার করে নেন। যাজ্ঞবল্ক্যও যেন এই উত্তরের মাধ্যমেই গার্গীকে সবিস্তারে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, ব্রহ্ম কোথাও ওতপ্রোত নন, বরঞ্চ সব ব্রহ্মতেই ওতপ্রোত।

এবার ‘উপররাম’ হওয়ার সময়, আপাতত এই অবধিই থাক। আসুন, আমরা সকলে মূল উপনিষদ পড়ি। নিজেদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি নিজেরা জানি, বুঝি ও উপলব্ধি করি।

ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।

 

 

টীকাঃ 

[1] স্বর্ণপরিমাপের একক বিশেষ; এক পলের চার ভাগের এক ভাগ

[2] ব্রহ্মবিদতম।

[3] সামশ্রবস্‌-এর আক্ষরিক অর্থ যিনি সামবেদ অধ্যয়ণ করেন।

[4] বিরত হওয়া।

[5] আরুণি উদ্দালকের আশ্রমে ইনি যাজ্ঞবল্ক্যের সতীর্থ ছিলেন।

[6] ইনি যাজ্ঞবল্ক্যের গুরু। পূর্বোক্ত কৌষীতকেয় কহোলও এর আরেক শিষ্য। এই উদ্দালকই ছান্দোগ্য উপনিষদের সুবিখ্যাত ‘তত্ত্বমসি’ কথাটির প্রণেতা।

[7] বৈদিক যজ্ঞের ঋত্বিক কর্তৃক সামবেদ পাঠ বা সামগান করাকে বলা হয় উদ্গান। যে ঋত্বিক সামগান করেন, তাঁকে বলে উদ্গাতা

[8] ইনি উদ্গাতা নামক ঋত্বিকের একজন সহায়। সামগান আরম্ভ হওয়ার আগে ইনি সামবেদের ‘প্রস্তাব’ অংশটি গান করেন।

[9] উদ্গাতার আরেক সহায়ক। ইনি সামবেদের ‘প্রতিহার’ অংশটি গান করেন।



তথ্যসূত্রঃ-

অতুল চন্দ্র সেনসীতানাথ তত্ত্বভূষণ ও মহেশচন্দ্র ঘোষ. (১৯৯৮). উপনিষদ - অখণ্ড সংস্করণ. কলকাতা: হরফ প্রকাশনী।

ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়. (২০২৩). ভারত রহস্য - ইতিহাস ও জনশ্রুতি (সংস্ক. ১ম). কলকাতা: প্রজ্ঞা পাবলিকেশন।

ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়. (২০২৩). মাথা যাবে খসে - যে বাগধারায় বাঁধা যাজ্ঞবল্ক্য বুদ্ধ জিশু. প্রজ্ঞা পূজাবার্ষিকীপৃ. ৩৬৪-৩৭১।

দুর্গাচরণ সাংখ্যবেদার্থতীর্থ. (১৯৩৫). বৃহদারণ্যোকপনিষদ্‌ (সংস্ক. ২য়). কলকাতা: শ্রীক্ষিরোদচন্দ্র মজুমদার।

স্বামী গম্ভীরানন্দ (সম্পা.). (১৯৪৩). উপনিষৎ গ্রন্থাবলী - তৃতীয় ভাগ (সংস্ক. ২য়). কলকাতা: উদ্বোধন কার্যালয়।

1 মন্তব্যসমূহ

  1. হয়ত একটু অতিকথন মনে হয়েছে। কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উত্থাপিত হয়েছে।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন