তখন বৈদিক যুগ। এক গভীর রাত্রের কথা। রাত্রের সেই নিকষ অন্ধকারের দিকে অপলক ধ্যানদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ঋষি কুশিক । তাঁকে আবৃত করে হিল্লোলিত হচ্ছে গভীর কৃষ্ণ অন্ধকার । সহসা তাঁর অন্তরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল রাত্রির সত্য, ও তার স্বরূপ । তিনি প্রত্যক্ষ করলেন রাত্রি রুপিনী মহা শক্তিকে । চিৎকার করে তিনি বলে উঠলেনঃ-
ওঁ রাত্রীব্যখা দায়তী
পুরুত্রা দেব্যক্ষভিঃ।
বিশ্বা অধি শ্রিয়োহধিত।।
ওর্বপ্রা অমর্ত্যা নিবতো
দেব্যুদ্বতঃ।
জ্যোতিষা বাধতে তমঃ ।।
নিরু স্ব্সারমস্কৃতোবসং
দেব্যায়তী।
অপেদু হাসতে তমঃ।।
সা নো অদ্য যস্যা বয়ং নি
তে যামন্ন বিক্ষ্ণহি।
বৃক্ষে ন বসতিং বয়ঃ ।।
নি গ্রামাসৌ অবিক্ষত নি
পদ্বন্তো নি পক্ষিণঃ ।
নি শ্রেনাস শ্চিদর্থিনঃ
।।
যাবয়া বৃকাং বৃকং যবয়
স্তেনমূর্ম্যে ।
অথা নঃসুতরা ভব ।।
উপ মা পেপিশত্তমঃ কৃষ্ণং
ব্যক্তমস্তিত ।
উষ ঋণেব যাতয়ঃ ।।
উপ তে গায়বাকরং বৃনীষ
দুহিত র্দিবঃ ।
রাত্রি স্তোমং জিগুষে ।। (ঋগ্বেদ-১০/১২৭)
অর্থাৎ,
হে রাত্রি দেবী আপনি সর্ব দেশানুকুলে সর্বত্র বিরাজমানা ।
আপনি যে আসছেন প্রতিটি মুহর্তে আমি তার প্রকাশ পাচ্ছি, রাত্রি দেবী নক্ষত্র সমূহের দ্বারা প্রকাশমানা ,
রাত্রিদেবী সর্বশ্রী সর্ব কল্যাণ রূপ প্রদান করছেন সমগ্র
বিশ্ব চরাচরে।
রাত্রিদেবী আসছেন। নিজের বোন উষাকে আলোকমালায় সুসজ্জিত করলেন, উষা দেখা দিলে রাত্রির আঁধার দূর হয়। যার প্রাসাদে আমরা সুখে দুঃখে গৃহে অবস্থান করি, পাখিরা বৃক্ষে বাস করে সেই রাত্রী দেবী আজ আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। দেবীর কৃপায় গ্রামবাসীরা সুখে ঘুমায়, পশুপাখিরা সুখে ঘুমায়, দ্রুতশ্যেনাদিও সুখে থাকে ।।
মা রাত্রিদেবী, হিংসাদ্বেষ প্রভৃতিকে আমাদের কাছ থেকে দুরে রাখো, তস্করদের ও কাছ থেকে দুরে রাখো । তার পর আমাদের ভবসাগরে ত্বরান্নিত করিয়ে দাও ।।
সকল বস্তুর ওপর ঘন হয়ে আছে কালো অন্ধকার । সেই কালো স্পষ্ট রূপ নিয়ে এসেছে আমার কাছে , ওগো উষা , ওগো রাত্রিদেবী, একে ঘুচিয়ে দাও, যেমন করে ঘুচিয়ে দাও তোমার স্তবকারীদের ঋণ ।
ওগো রাত্রিদেবী,
ওগো দ্যুতিমানের মেয়ে, দুগ্ধবতী গাভীর মতো স্বচ্ছতুমি , তোমার স্তব করছি, প্রসন্ন হও।তোমার প্রসাদে আমরা শত্রু জয় করব,
আমাদের স্তবস্তুতি এবং হবি গ্রহন কর।।
ঋকবেদের ‘ শাকলসংহিতার’ অন্তর্গত উপরের এই রাত্রিসুক্তের রাত্রি দেবীই পরবর্তীতে দেবী কালীকাতে বিবর্তিত হয়েছেন। স্বামী অভেদানন্দ বলেন,
“এই রাত্রি দেবীই পরে
করালবদনা রুপী কালী নামেই প্রসিদ্ধা হইয়াছেন’’।
ঋগ্বেদে যে রাত্রি, সেখান থেকে কালরাত্রি, সেখান থেকে কালী, এরকম একটা মত আছে। সেক্ষেত্রে কার্তিকী অমাবস্যায় এই যে মায়ের পুজো আমরা করি, সে এই উপমহাদেশে অন্তত চার-সাড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো। এছাড়া ঋগ্বেদে নক্ৎ-কৃষ্ণী উল্লিখিত হন। তিনিও কালীর একটি পারসেপশন।
কালী করালী চ মনোজবা চ
সুলোহিতা যা চ
সুধূম্রবর্ণা।
স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচি
চ দেবী
লেলায়মানা ইতি
সপ্তজিহ্বাঃ।। (মুণ্ডক-১/২/৪)
অর্থাৎ : যজ্ঞাগ্নির সেই
লেলিহান শিখা আকাশপানে ওঠে সাত শিখা হয়ে। শৌনক, সেই সাতটি শিখার নাম– কালী, করালী, মনোজবা (মনের মতো দ্রুতগামী), সুলোহিতা, সুধূম্রবর্ণা, স্ফুলিঙ্গিনী আর বড় সৌন্দর্যশালিনী বিশ্বরূচী। এই সাতটি
শিখা হলো অগ্নিদেবের সাতটি জিভ। টলটলে, লকলকে এই জিভ দিয়ে অগ্নিদেব যজ্ঞের আহুতি দেন।
মহাভারতে একাধিক স্থলে ‘কালী’র উল্লেখ পাওয়া যায় এবং পৌরাণিক কালী-দেবীর সাথে মহাভারতে বর্ণিত কালী-দেবীর বেশ মিল লক্ষ্য করা যায়। মহাভারতের সৌপ্তিক পর্বে দেখা যায়– কুরুক্ষেত্রে অন্যতম কৌরব-সেনাপতি আচার্য দ্রোণের মৃত্যুর পরে দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা যখন গভীর রাত্রে পাণ্ডব-শিবিরে প্রবেশ করে নিদ্রিত বীরগণকে হত্যা করছিলেন তখন সেই হন্যমান বীরগণ ভয়ঙ্করী কালী-দেবীকে দেখতে পেয়েছিলেন। এই কালী-দেবী রক্তাস্যনয়না, রক্তমাল্যানুলেপনা, পাশহস্তা এবং ভয়ঙ্করী। কালীর ভীষণ স্বরূপ সংহারের প্রতীক; কালরাত্রিরূপিণী এই দেবী বিগ্রহবর্তী সংহার।
পরবর্তীকালের যোজনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এসব বর্ণনায় কালীর কোনও দেবীত্বের আভাস নাই;
কালী এখানে অত্যন্ত ভীত মনের একটা ভয়ঙ্করী ছায়ামূর্তি
দর্শনের ন্যায়। কবি কালিদাসের সময়েও কালী কোনও প্রধানা দেবী বলে গৃহীতা হননি।
কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’ কাব্যে উমার সাথে মহাদেবের বিবাহ-প্রসঙ্গে বরযাত্রার
বর্ণনায় দেখা যায়, কৈলাস-পর্বতের মাতৃকাগণ বিবাহযাত্রায় মহাদেবের অনুগমন
করেছিলেন; আর–
তাসাঞ্চ পশ্চাৎ
কনকপ্রভাণাং কালী কপালাভরণা চকাশে।
বলাকিনী নীলপয়োদরাজী
দূরং পুরঃক্ষিপ্তশতহ্রদেব।।– (কুমারসম্ভব-৭/৩৯)
অর্থাৎ– কনকপ্রভা
তাঁহাদের (সেই মাতৃকাগণের) পশ্চাতে কপালাভরণা কালী অগ্রে বিদ্যুৎপ্রসারকারিণী
বলাকাসমন্বিতা নীলমেঘরাজির ন্যায় শোভা পাইতেছিলেন।
মাতৃকাগণের পশ্চাৎগামিনী এই কালী-দেবী কালিদাসের যুগেও একজন অপ্রধানা দেবী বলেই মনে হয়। ‘রঘুবংশে’র মধ্যে একটি উপমাতেও এই কালী বা কালিকা-দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন–
জ্যানিনাদমথ গৃহ্নতী
তয়োঃ প্রাদুরাস বহুলক্ষপাচ্ছবিঃ।
তাড়কা চলকপালকুণ্ডলা
কালিকেব নিবিড়া বলাকিনী।।– (রঘুবংশ-১১/১৫)
অর্থাৎ– রাম-লক্ষ্মণের
জ্যা-নিঃস্বন শুনিয়া ভয়ঙ্করী তাড়কা রাক্ষসী যখন আত্মপ্রকাশ করিল তখন সেই ঘনকৃষ্ণ
রাত্রির ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা তাড়কাকে মনে হইতেছিল চঞ্চলকপালকুণ্ডলা বলাকাযুক্তা
কালিকার মত।
আবার, কুলচূড়ামণি তন্ত্রে কালীপুজোয় পঞ্চদশ নিত্যার ধ্যানমন্ত্র
দেওয়া আছে। কালীর এই পঞ্চদশ নিত্যার মধ্যে একজনের নাম বলাকা। পঞ্চদশ নিত্যার নামঃ
কালী, কপালিনী, কুল্লা , কুরুকুল্লা , বিরোধিনী, বিপ্রচিত্তা, উগ্রপ্রভা, দীপ্তা, নীলা, ঘনা, ভীমা, বলাকা, মাত্রা, মুদ্রা ও মিতা। পঞ্চদশ নিত্যার প্রত্যেকের বর্ণনা কালীর
মতই। নিত্যা নাম থেকেও বোঝা যায় যে এঁরা আদিমাতৃকার সমার্থক। অর্থাৎ বলাকা কালীর
রূপভেদ।
এই প্রসঙ্গে আর-একটি তথ্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কবি কালিদাসের ‘কালিদাস’ নামটির ব্যুৎপত্তি কি? ‘কালীর দাস’ এই অর্থে কি কালিদাস? কালিদাসের লেখার মধ্যে কালী তেমন কোনও প্রসিদ্ধ দেবীত্ব লাভ করেন নাই বটে, কিন্তু কালিদাস নামের ব্যুৎপত্তিতে মনে হয়, কালীর দেবীত্ব তখন যত সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্রেই হোক, প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। (ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৬৫)
এখানে উল্লেখ্য, ‘মহাভারতের বর্তমান রূপগ্রহণের আগেই অর্থাৎ আনুমানিক চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে দুর্গার সঙ্গে কালী অভিন্নতা লাভ করে। এরই প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই মার্কণ্ডেয় পুরাণে। শিবের স্ত্রী দুর্গার সঙ্গে কালের (অর্থাৎ শিবের) শক্তিরূপে যাঁকে কল্পনা করা হয়, সেই কালীর অভিন্নতার কল্পনা তাঁকে মাতৃদেবীরূপে স্বীকৃতি দেয়। তিনি শুধুমাত্র অসুর নিধনের ভূমিকায় ভয়ংকরী রণোন্মাদিনী ধ্বংসের দেবী নন– তিনি একাধারে অশুভ শক্তিনাশিনী ও পরমমঙ্গলময়ী ও মাতৃস্বরূপিণী। তাই ভদ্রকালী রূপের মধ্যে দিয়েই দেখা যায় তাঁর পরমমঙ্গলময়ী মাতৃরূপের প্রকাশ।’– (মাতৃকাশক্তি, পৃষ্ঠা-২৩০-৩১)
কালিদাসের পর সংস্কৃত সাহিত্যের স্থানে স্থানে এক রক্তলোলুপা ভয়ঙ্করী দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে তা তখনও ব্রাহ্মণ্যধর্মে জায়গা করে নিতে পারেনি।
অন্যদিকে– ‘খিল হরিবংশে’
মদ্যমাংসপ্রিয়া এক দেবীকে বর্বর, শবর ও পুলিন্দদের দ্বারা পূজিত হতে দেখা যায়। ষষ্ঠ শতকে
সুবন্ধুর ‘বাসবদত্তা’য় দেখি দেবী গঙ্গাতীরে কুসুমপুরে পূজিতা হন,
ইনি শুম্ভ নিশুম্ভ মহাবন দাবজ্বালা, এবং বেতালাভিধানা। এর পরে (৭ম শতকে) বাণভট্টের
‘কাদম্বরী’তেও বনের মধ্যে শবর পূজিত নরমাংস ও রক্তস্নাত দেবীর কথা পাই। আবার
(আনুমানিক ৭ম শতাব্দী) ভবভূতির ‘মালতী মাধব’ নাটকে নরমাংস বলিদানে পূজিতা ভয়ংকরী
শ্মশানবাসিনী এক করালা দেবীর বর্ণনা পাই। বলাই বাহুল্য ইনি কৃষ্ণবর্ণা ও উগ্রা। ৮ম
শতাব্দীর বাক্পতিরাজ গউড়বাহো (গৌড়বধ, গৌড়/মগধসম্রাটের নিধন ছিল কাব্যের বিষয়) প্রাকৃত কাব্যে দেবীকে
শবর পূজিতা পর্ণপত্র পরিহিতা বলা আছে।
এরপরে পৌরাণিক যুগে বৃহদ্ধর্ম পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে– দেবী কালিকা অসুরবধের প্রয়োজনেই ধরাধামে অবতীর্ণা। মার্কণ্ডেয় পুরাণের সাত শত শ্লোক নিয়েই সপ্তশতী ‘চণ্ডী’ গ্রন্থ। আর এই ‘চণ্ডী’র প্রথম অধ্যায়ে ৭০ থেকে ৮৭ সংখ্যক মন্ত্রকেও রাত্রিসূক্ত বলা হয়, কারণ সেখানে দেবীকে কালরাত্রি বলা হয়েছে। এখানেই (উত্তর চরিতে) আছে ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের জন্যে হিমালয়স্থিতা দেবীর কাছে অনুরোধ করলে দেবীর শরীরকোষ থেকে আর এক দেবী সমুদ্ভূতা হলেন। শরীরকোষ থেকে নিসৃতা বলে তিনি ‘কৌশিকী’ নামে পরিচিতা হলেন। এদিকে কৌশিকী দেবী বিনির্গত হওয়ায় পার্বতী নিজেই কৃষ্ণবর্ণা হয়ে হিমাচলবাসিনী ‘কালিকা’ নামে সমাখ্যাতা হলেন। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, এই যুগে ব্রাহ্মণ্য ধর্মে দেবী কালিকা কিঞ্চিৎ প্রতিষ্ঠা ও প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। তাই তাঁকে হিমাচলবাসিনী দেবীর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে। এই কৌশিকীদেবী মূলে কুশিক জাতির পূজিতা দেবী ছিলেন বলে ভান্ডারকরের অভিমত। মার্কণ্ডেয় চণ্ডীতে তাঁকে গৌরবর্ণা অনিন্দ্যসুন্দরী বলা হলেও পদ্মপুরাণ ও কালিকা পুরাণে অন্য কথা বলা আছে। সেখানে বলা আছে, দেবীর দেহ থেকে ঘোর কৃষ্ণবর্ণা যে রাত্রিদেবী বা কালরাত্রি দেবী বার হলেন– তিনিই কৌশিকী। এই কৌশিকী দেবীকে ব্রহ্মা বিন্ধ্যাচলে প্রতিষ্ঠিতা হতে বললেন। এই সব পরস্পরবিরোধী উপাখ্যানগুলো থেকে এই কথাই প্রমাণিত হয় যে, কৌশিকী নামে যে স্বতন্ত্র দেবী ছিলেন, তাঁকে মহাদেবীর সঙ্গে এক করে দেওয়ার এ এক অনলস, পৌরাণিক প্রচেষ্টা।’– (মাতৃকাশক্তি, পৃষ্ঠা-২২৮-২৯)
এখানে ‘কালিকা’র
আবির্ভাব-রহস্য এভাবে দেখা গেলেও একটু পরেই আবার অন্যরূপে দেখা যায়। যেমন,
অসুর শুম্ভ-নিশুম্ভের অনুচর চণ্ড-মুণ্ড এবং তাদের সঙ্গে
অন্যান্য অসুরেরা দেবীর নিকটবর্তী হলে–
ততঃ কোপং
চকারোচ্চৈরম্বিকা তানরীন্ প্রতি।
কোপেন চাস্যা বদনং
মসীবর্ণমভূৎ তদা।।
ভ্রূকুটীকুটিলাৎ তস্যা
ললাটফলকাৎদ্রুতম্ ।
কালী করালবদনা
বিনিষ্ক্রান্তাসিপাশিনী।।– (মার্কণ্ডেয়-চণ্ডী-৭/৫-৬)
অর্থাৎ– তখন অম্বিকা সেই
শত্রুগণের প্রতি অত্যন্ত কোপ করিলেন; তখন কোপের দ্বারা তাঁহার বদন মসীবর্ণ হইল। তাঁহার
ভ্রূকুটীকুটিল ললাটফলক হইতে দ্রুত অসিপাশধারিণী করালবদনা কালী বিনিষ্ক্রান্তা
হইলেন।
বিচিত্রখট্বাঙ্গধরা
নরমালাবিভূষণা।
দ্বীপিচর্মপরীধানা
শুষ্কমাংসাতিভৈরবা।।
অতিবিস্তারবদনা
জিহ্বাললনভীষণা।
নিমগ্নারক্তনয়না
নাদাপূরিতদিঙ্মুখা।।– (মার্কণ্ডেয়-চণ্ডী-৭/৭-৮)
অর্থাৎ– বিচিত্র
নরকঙ্কালধারিণী, নরমালাবিভূষণা, ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা, শুষ্কমাংসা (মাংসহীন অস্থিচর্মময় দেহ),
অতিভৈরবা, অতি বিস্তারবদনা, লোলজিহ্বা-হেতু-ভীষণা, কোটরাগত রক্তবর্ণ-চক্ষুবিশিষ্টা– তাঁহার নাদে দিঙ্মুখ
আপূরিত।
এর পর দেবীর সঙ্গে চণ্ড-মুণ্ডের ভয়ঙ্কর যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া যায়। যেমন– ‘দেবী হইতে বিনিষ্ক্রান্ত হইয়াই সেই কালী-দেবী বেগে দেবশত্রু অসুরগণের সৈন্যমধ্যে অভিপতিতা হইয়া সেখানে মহা-অসুরগণকে বিনাশ করিতে করিতে তাহাদের সৈন্যবলকে ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। সেই দেবী পৃষ্ঠ-রক্ষক, অঙ্কুশ-গ্রাহক, যোদ্ধা ও গলঘণ্টাদিসহ হস্তীগুলিকে হস্তে লইয়া মুখে গ্রাস করিতে লাগিলেন। শুধু হস্তুগুলিকে নয় ঘোড়ার সহিত যোদ্ধাকে, সারথির সহিত রথকে মুখে ফেলিয়া দিয়া দন্তদ্বারা অতি ভীষণভাবে চর্বণ করিতে লাগিলেন। কাহাকেও চুলে ধরিলেন, আবার কাহাকেও গ্রীবায় ধরিলেন; কাহাকেও পায়ের দ্বারা আক্রমণ করিয়া অন্যকে বক্ষের দ্বারা মর্দিত করিলেন। সেই অসুরগণ কর্তৃক নিক্ষিপ্ত শস্ত্রগুলিকে এবং মহাস্ত্রগুলিকে তিনি মুখে গ্রহণ করিলেন এবং রোষে দন্তদ্বারাই মথিত (চূর্ণ) করিলেন। অসুরদলের কতকগুলিকে তিনি মর্দন করিলেন, কতকগুলিকে ভক্ষণ করিলেন, কতকগুলিকে বিতাড়িত করিলেন।
অসুরগণ কেহ কেহ অসিদ্বারা নিহত
হইল, কেহ
কেহ কঙ্কালের দ্বারা তাড়িত হইল, কেহ কেহ দন্তাঘাতে বিনাশ প্রাপ্ত হইল। ক্ষণকালমধ্যে সমস্ত
অসুরসৈন্য নিপতিত দেখিয়া চণ্ড সেই অতিভীষণা কালীর দিকে ধাবিত হইল। সেই মহাসুর চণ্ড
মহাভীম শরবর্ষণের দ্বারা এবং মুণ্ড চক্রসমূহের দ্বারা সেই ভীষণ-নয়নাকে ছাইয়া
ফেলিল। কিন্তু কালমেঘের উদয়ে যেমন অসংখ্য সূর্যবিম্ব শোভা পায় সেইরূপ চক্রসমূহ
তাঁহার মুখগহ্বরে প্রবিষ্ট হইয়া শোভা পাইল। অতঃপর ভৈরবনাদিনী কালী অতিরোষে
ভীষণভাবে অট্টহাস্য করিলেন– তাঁহার করাল বক্ত্রের অন্তঃপাতী ভীষণদর্শন দশনগুলি
উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। তাহার পরে মহাখড়্গ উত্তোলনপূর্বক দেবী হুঙ্কারনাদে (হং শব্দে)
চণ্ডের প্রতি ধাবিত হইলেন, এবং তাহার চুলে ধরিয়া সেই খড়্গের দ্বারাই তাহার শিরশ্ছেদ
করিলেন। চণ্ডকে নিপতিত দেখিয়া মুণ্ড দেবীর প্রতি ধাবিত হইল;
দেবী ক্রোধে তাহাকেও খড়্গরে দ্বারা আহত করিয়া ভূমিতে পাতিত
করিলেন। হতশেষ অসুরসৈন্য চণ্ড-মুণ্ডকে নিহত দেখিয়া ভয়ে চতুর্দিকে পলায়ন করিতে
লাগিল।’– (ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৬৭-৮)
এরপর চণ্ড-মুণ্ডের ছিন্ন
মুণ্ড হাতে নিয়ে দেবী কালিকা চণ্ডীকে তা উপহার দিলেন। দেবী চণ্ডিকা তখন কালীকে
বললেন–
যস্মাৎ চণ্ডঞ্চ মুণ্ডঞ্চ
গৃহীত্বা ত্বমুপাগতা।
চামুণ্ডেতি ততো লোকে
খ্যাতা দেবি ভবিষ্যসি।।– (মার্কণ্ডেয়-চণ্ডী-৭/২৭)
অর্থাৎ– যেহেতু তুমি
চণ্ড ও মুণ্ডকে (তাহাদের ছিন্ন শির) লইয়া আসিয়াছ, সেই কারণে তুমি লোকে (জগতে) চামুণ্ডা নামে খ্যাতা হইবে। পালযুগে
এই চামুণ্ডা মূর্তির প্রভূত উপাসনা হত। বাঙালি সেযুগে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে যেত খুব
সম্ভবত চামুণ্ডার চিত্রাঙ্কিত পতাকা হাতে, শত্রু ভয় পেত। চামুণ্ডার আরেকটি রূপ চর্চিকা বা চর্চা নামেও
পরিচিত (রাজশাহী অঞ্চলে একটি পালযুগের প্রস্তরমূর্তি মিলেছে,
সেটি চর্চার নামাঙ্কিত, ইনি বৃক্ষতলে শবের ওপরে উপবিষ্ট, সে ছবিটি দিলাম)। চর্চা অর্থে চাঁছাছোলা,
অর্থাৎ কঙ্কালসার দেবী (এ ব্যুৎপত্তি সুকুমার সেনের। কিন্তু
ডাক্তার রক্তিম মুখুজ্যে বলছেন এই দেবী তাঁর রক্তলিপ্ত জিহ্বা চর্চন করেন বলেই এই
নাম)।
এরপরে রক্তবীজ বিনাশের সময়ও কালী-দেবী চণ্ডিকাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন। কারণ রক্তবীজের রক্তধারা ভূমিস্পর্শ করলেই তা থেকে শত শত রক্তবীজ জন্মাবে। তাই দেবীচণ্ডী কালীকে বদন বিস্তার করে রক্তবীজের দেহ থেকে নির্গত সমস্ত রক্তবিন্দু মুখব্যাদানের দ্বারা গ্রহণ করতে বললেন– এবং সেই রক্তনির্গত অসুরগণকেও ভক্ষণ করতে বলে শূল দিয়ে তাকে আহত করলেন, কালীও মুখের দ্বারা তাঁর রক্ত লেহন করলেন। কালী-চামুণ্ডার মুখে পতিত শোনিত থেকে যত অসুর সমুদ্গত হয়েছিল তাদেরকেও চামুণ্ডা ভক্ষণ করলেন। চামুণ্ডার এরূপ রক্ত পানের ফলে রক্তবীজ নিরক্ত হয়ে গেল, দেবী তখন সহজেই তাকে হনন করলেন। এভাবেই কালী-চামুণ্ডার রক্তলোলুপতা ও ভয়ঙ্কর ভয়ালরূপ ‘চণ্ডী’তে প্রকাশ পেল।
অষ্টভুজা চামুণ্ডা,একাদশ শতক,পালযুগ,এটি চামুণ্ডার চর্চারূপও বটে।পদতলের শব এখানে শিবে রূপান্তরিত হয়নি ।
এ-প্রসঙ্গে অধ্যাপক শ্রীশশিভূষণ দাশগুপ্তের ভাষ্য অনুযায়ী–
‘রক্তলোলুপা
কালীর এখানে যে ভয়ঙ্করী রণোন্মাদিনী রূপ দেখিতে পাইলাম অন্যান্য পুরাণে এই জাতীয়
বহু বর্ণনা দেখিতে পাই। উপ-পুরাণগুলিতে ইহার আর কিছু কিছু বিস্তারও দেখিতে পাই।
পরবর্তী কালের পুরাণতন্ত্রাদিতে আমরা কালী ও চামুণ্ডাকে এক করিয়াও পাই,
পৃথক্ করিয়াও পাই। উভয় দেবীর ধ্যানেও পার্থক্য আছে।
চামুণ্ডা চতুর্ভুজা নন, দ্বিভুজা; আলুলায়িত-কুন্তলা নন, ‘পিঙ্গলমূর্ধ্বজা’ (জটাধারিণী?);
উলঙ্গিনী নন, শার্দূলচর্মাবৃতা; (কোন কোন পুরাণে গজচর্মাম্বরা); সর্বস্থলের বর্ণনাতেই দেখি, চামুণ্ডা-দেবী নির্মাংসা এবং কৃশোদরী,
তাঁহার চক্ষু কোটরাগত। কোন স্থলেই কালিকার এইরূপ বর্ণনা
দেখিতে পাই না। সংস্কৃত সঙ্কলন-গ্রন্থগুলিতে কালিকার বর্ণনায় মাঝে মাঝে দেখিতে পাই
যে কালিকা অজিনাবৃতা। ‘সদুক্তিকর্ণামৃতে’ ধৃত উমাপতি ধরের একটি শ্লোকেও কালীকে
অজিনাবৃতাই দেখিতে পাই। ইহা পরবর্তী কালের মিশ্রণের ফলে ঘটিয়াছে বলিয়া মনে করি।
চামুণ্ডার বর্ণনায় একটা জিনিস প্রায় সর্বত্রই লক্ষ্য করি, চামুণ্ডা অতি ক্ষুধায় কৃশোদরী। কবিগণ কর্তৃক কালীর বর্ণনায়ও
স্থানে স্থানে কালীকে ক্ষুধার্তারূপে দেখি। ভাসোক কবি কালীকে ‘ক্ষুৎক্ষামা’ বলিয়া
বর্ণনা করিয়াছেন।’– (ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৬৯) কিন্তু শশিভূষণের পর্যবেক্ষণে কিঞ্চিৎ ভ্রান্তি দেখা যায় যেমন, চতুর্ভূজা চামুণ্ডা
মূর্তি পালযুগে পাওয়া গেছে। অষ্টভূজা চামুণ্ডা মূর্তিও পাওয়া গেছে। চামুণ্ডা
কদাচিৎ দ্বিভূজা, প্রায়শঃ তাঁর বাহুসংখ্যা বেশি। তবে
মিলও প্রচুর। সর্বাধিক মিল দুজনেই লোলজিহ্বা, এবং দুজনেই শব>শিবকে পদতলে রাখেন। পালযুগের চামুণ্ডা মূর্তি দেখলে শব থেকে
শিবে রূপান্তরের রূপরেখাটি বোঝা যায়।
পুরাণ, উপপুরাণ ও তন্ত্রাদির মধ্যে কালী বা কালিকার যে বিস্তার ও
বিবর্তন দেখা যায়, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো কালীর শিবের
সঙ্গে যোগ। শিব কালীর পদে স্থিতা, কালীর এক পা শিবের বুকে ন্যস্ত। সাধকের দিক থেকে এ তত্ত্বকে
নানাভাবে গভীরার্থক বলে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি উপাদান মুখ্যভাবে এই
শিবারূঢ়া দেবীর বিবর্তনে সাহায্য করেছে বলে শ্রীদাশগুপ্তের ধারণা–
‘প্রথমতঃ,
সাংখ্যের নির্গুণ পুরুষ ও ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতির তত্ত্ব।
দ্বিতীয়তঃ, তন্ত্রের ‘বিপরীতরতাতুরা’ তত্ত্ব। তৃতীয়তঃ, নিষ্ক্রিয়া দেবতা শিবের পরাজয়ে বলরূপিণী শক্তিদেবীর
প্রাধান্য এবং প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এ বিষয়ে সর্বাপেক্ষা প্রধান কারণ যাহা মনে হয়
তাহা হইল এই, প্রাচীন বর্ণনায় কালিকা শিবারূঢ়া নন, শবারূঢ়া; অসুরনিধন করিয়া অসুরগণের শব তিনি পদদলিত করিয়াছেন,
সেই কারণেই তিনি শবারূঢ়া বলিয়া বর্ণিতা।– (ভারতের
শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৭০)
দক্ষিণাকালীর প্রচলিত
ধ্যানের মধ্যেও দেখা যায়–
শবরূপ-মহাদেব-হৃদয়োপরি-সংস্থিতাম্
। … … …
মহাকালেন চ সমং
বিপরীতরতাতুরাম্ ।।
পরবর্তীকালের দার্শনিক চিন্তায়
শক্তি-বিহনে শিবের শবত্ব-প্রাপ্তির তত্ত্ব খুবই প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। মনে হয় তখন শিবই
পূর্ববর্তীকালের বর্ণিত শবের স্থান গ্রহণ করেন, শবারূঢ়া দেবীও হয়ে ওঠেন শিবারূঢ়া। অসুরের শবারূঢ়া বলেই যে
দেবী শিবারূঢ়া বলে কীর্তিতা বাংলাদেশের শাক্ত পদাবলীর মধ্যে এই সত্যটির প্রত্যক্ষ
প্রভাব দেখা যায়। তাই শ্রীদাশগুপ্তের উল্লেখকৃত সাধক রামপ্রসাদের গানে দেখতে পাই,
বলা হয়েছে–
শিব নয় মায়ের পদতলে।
ওটা মিথ্যা লোকে বলে।।
দৈত্য বেটা ভূমে পড়ে,
মা দাঁড়ায়ে তার উপরে,
মায়ের পাদস্পর্শে
দানবদেহ
শিবরূপ হয় রণস্থলে।।
মায়ের পাদস্পর্শে দানবদেহও
শিবরূপতা প্রাপ্ত হয়– কথাটার আসল অর্থ হলো, এ কথার মধ্যে দিয়েই শক্তিতত্ত্বের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার
প্রয়াস। এ ছাড়াও তন্ত্রে শিবের বুকে কালীর প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বহুরকম দার্শনিক
ব্যাখ্যা দেখা যায়। যেমন, মহানির্বাণতন্ত্রে বলা হয়েছে–
কলনাৎ সর্বভূতানাং
মহাকালঃ প্রকীর্তিতঃ।
মহাকালস্য কলনাৎ
ত্বমাদ্যা কালিকা পরা।।
কালসংগ্রহণাৎ কালী
সর্বেষামাদিরূপিণী।
কালত্বাদাদিভূতত্বাদাদ্যা
কালীতি গীয়সে।। –(মহানির্বাণতন্ত্র)
অর্থাৎ– তিনি মহাকাল,
তিনি সর্বপ্রাণীকে কলন অর্থাৎ গ্রাস করেন বলিয়াই মহাকাল;
দেবী আবার এই মহাকালকে কলন অর্থাৎ গ্রাস করেন,
এই নিমিত্ত তিনি আদ্যা পরম ‘কালিকা’। কালকে গ্রাস করেন
বলিয়াই দেবী কালী। তিনি সকলের আদি, সকলের কালস্বরূপা এবং আদিভূতা, এই নিমিত্তই লোকে দেবীকে আদ্যাকালী বলিয়া কীর্তন করে।
কালীর পায়ের তলায় শিবকে
নিয়ে নানা চমৎকার কবিকল্পনা। কমলাকান্ত লিখেছিলেন, মায়ের রাঙা পদযুগল ছাড়া তো আর কিছুই নেই,
কিন্তু সেও বাবা ভোলানাথ দখল করেছেন,
তাই সাহস-ভাঙা হলাম। কবিওয়ালা ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন
শিব সম্পর্কে, “সদা চক্ষু মুদে রয়, ওই পদদ্বয় ছাড়ে না”। রামপ্রসাদের ভাষায়,
“যেমন শিব জেনেছেন কালীর মর্ম,
অন্য কে বা জানে তেমন”। ঝিনুকে যেমন বালি ঢুকে গিয়ে মুক্তো
জন্মায়, তেমন এই মাতৃকা-উপাসক জাতির পরিসরে পুরুষতান্ত্রিক ধর্মের রুদ্র আর বিষ্ণু এসে
কালী-শিব, রাধা-কৃষ্ণের কল্পনার জন্ম দিয়েছেন। সে অত্যাশ্চর্য রকমের সুন্দর।
বিভিন্ন পুরাণ-তন্ত্রাদির মধ্যে
‘কালীতন্ত্র’-ধৃত কালীর বর্ণনাই কালীর ধ্যানরূপে কৃষ্ণানন্দের তন্ত্রসারে গৃহীত
হয়েছে। তন্ত্রসারে বর্ণিত কালীর এ রূপই এখন সাধারণভাবে বাংলা অঞ্চলের মাতৃপূজায়
গৃহীত। তন্ত্রসারের বর্ণনা অনুযায়ী দেবী কালীর রূপ হলো–
‘দেবী
করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা, দক্ষিণা, দিব্যা, মুণ্ডমালাবিভূষিতা। বামহস্ত-যুগলের অধোহস্তে সদ্যশ্ছিন্ন শির,
আর ঊর্ধ্বহস্তে খড়্গ; দক্ষিণের অধোহস্তে অভয়, ঊর্ধ্বহস্তে বর। দেবী মহামেঘের বর্ণের ন্যায় শ্যামবর্ণা
(এইজন্যই কালী-দেবী শ্যামা নামে খ্যাতা) এবং দিগম্বরী; তাঁহার কণ্ঠলগ্ন মুণ্ডমালা হইতে ক্ষরিত রুধিরের দ্বারা
দেবীর দেহ চর্চিত; আর দুইটি শবশিশু তাঁহার কর্ণভূষণ। তিনি ঘোরদ্রংষ্ট্রা,
করালাস্যা, পীনোন্নতপয়োধরা; শবসমূহের করদ্বারা নির্মিত কাঞ্চী পরিহিতা হইয়া দেবী
হসন্মুখী। ওষ্ঠের প্রান্তদ্বয় হইতে গলিত রক্তধারা-দ্বারা দেবী বিস্ফুরিতাননা;
তিনি ঘোরনাদিনী, মহারৌদ্রী– শ্মশানগৃহবাসিনী। বালসূর্যমণ্ডলের ন্যায় দেবীর
ত্রিনেত্র; তিনি উন্নতদন্তা, তাঁহার কেশদাম দক্ষিণব্যাপী ও আলুলায়িত। তিনি শবরূপ
মহাদেবের হৃদয়োপরি সংস্থিতা; তিনি চতুর্দিকে ঘোররবকারী শিবাকুলের দ্বারা সমন্বিতা। তিনি
মহাকালের সহিত ‘বিপরীতরতাতুরা’, সুখপ্রসন্নবদনা এবং ‘স্মেরাননসরোরুহা’।– (ভারতের
শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৭১)। মহানির্বাণতন্ত্রে মহাদেব ব্যাখ্যা দেন যে কালীর কালো রঙ,
কারণ শ্বেতপীতাদিবর্ণ সবই কালোতে এসে লয় পায়। সেরকম সর্বভূত
এসে কালীতে মেশে (শশিভূষণ ৭২)। এই ব্যাখ্যাটি সুন্দর।
কৃষ্ণানন্দ
আগমবাগীশ-সঙ্কলিত এই সুপ্রসিদ্ধ ‘তন্ত্রসার’ গ্রন্থে কালীপূজার বিধান সংগৃহীত
হয়েছে। বাংলা অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ‘কালী’ আছেন। তন্ত্রসারে বিভিন্ন প্রকার কালীর
সাধনার পদ্ধতি দেখা যায়। এখানে কালী– বা শ্যামা-পূজার বিধি ছাড়াও তারা,
ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, বগলা প্রভৃতি মহাবিদ্যাগণের সাধনবিধিও সঙ্কলিত হয়েছে। কৃষ্ণানন্দকে
ষোড়শ শতকের লোক বলে ধরা হয়। কৃষ্ণানন্দ ছাড়া তান্ত্রিক সাধনা ক্রিয়াকলাপবিধি
সম্বন্ধে গ্রন্থরচয়িতারূপে ব্রহ্মানন্দ ও সর্বানন্দের প্রসিদ্ধি রয়েছে।
ব্রহ্মানন্দ আনুমানিক খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম বা মধ্যভাগে জন্মগ্রহণ
করেছিলেন। তাঁর রচিত ‘শাক্তানন্দতরঙ্গিণী’তে শাক্তদের আচার-অনুষ্ঠান বিশেষভাবে
ব্যাখ্যাত হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘তারারহস্যে’ তারার উপাসনা বিবৃত হয়েছে।
ব্রহ্মানন্দের শিষ্য পূর্ণানন্দ পরমহংস ষোড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের লোক। তাঁর রচিত
‘শ্যামারহস্যে’ কালীর উপাসকের আচার-অনুষ্ঠান বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়াও আরও একজন
গ্রন্থকার গৌড়ীয় শঙ্কর (শঙ্কর আগমাচার্য, ১৬৩০) তার উপাসনার আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে রচনা করেন–
‘তারারহস্যবৃত্তিকা’।
বর্তমানে নিত্য
কালীপূজার প্রথা রয়েছে বা বিশেষ কোন উপলক্ষে ‘মানসিক’-করা কালীপূজার ব্যবস্থা হয়।
এ ছাড়া দীপালি-উৎসবের বা দীপাবলির দিনে যে সাংবাৎসরিক কালী বা শ্যামাপূজার জনপ্রিয়
প্রচলন রয়েছে তার সর্বপ্রথম বিধিব্যবস্থা পাওয়া যায় কাশীনাথ (১৭৬৮) রচিত
‘কালীসপর্যাবিধি’ গ্রন্থে। শ্রীদাশগুপ্তের ভাষ্য অনুযায়ী, এ গ্রন্থে কাশীনাথ যেভাবে কালীপূজার সপক্ষে যুক্তি-তর্কের
অবতারণা করেছেন তাতে মনে হয়, তখন ‘বাংলাদেশে’ এই সাংবাৎসরিক দীপাবলির দিনে কালীপূজা বা
শ্যামাপূজা যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল না। কালীপূজা বিষয়ে প্রচলিত প্রবাদ আছে যে,
নবদ্বীপের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রই এই পূজার প্রবর্তন করেন এবং
তিনি আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রজাদের মধ্যে যারা কালীপূজা করতে অস্বীকৃত হবে
তাদেরকে কঠোর দণ্ড ভোগ করতে হবে। এ আদেশের ফলে প্রতি বছর দশ হাজার করে কালীমূর্তি
পূজিত হতো বলে জানা যায়। কথিত আছে, পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র সহস্র সহস্র মন
নৈবেদ্য, সহস্র সহস্র বস্ত্র ও সেই পরিমাণ বিভিন্ন উপচার সহযোগে কালীপূজা করেছিলেন। এছাড়া
রটন্তী চতুর্দশীর রাত্রিতে (মাঘের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে) কালীপূজার কথা
‘স্মৃতিসমুচ্চয়’ গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই দেবীকে অবলম্বন করেই বাংলায় তন্ত্র-সাধনা
যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে শ্রীশশিভূষণ দাশগুপ্তের বর্ণনায়–
‘এই
দেবী-পূজার ইতিহাসটাই বাংলাদেশের শাক্তধর্মের ক্ষেত্রে প্রধান কথা নহে;
প্রধান জিনিস হইল দেবীকে অবলম্বন করিয়া বাংলার তন্ত্র-সাধনা,
এই তন্ত্র-সাধনা মুখ্যভাবে যুক্ত হইয়া গিয়াছিল কালী-সাধনা
এবং দশমহাবিদ্যার সাধনার সঙ্গে, এবং খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতক হইতে আমরা কালী এবং অন্যান্য
দশমহাবিদ্যার সাধনা অবলম্বনে বিখ্যাত শক্তি-সাধকগণের কথা জানিতে পারি। আমরা পূর্বে
কালীপূজার বিধান রচয়িতৃরূপে কৃষ্ণানন্দ, ব্রহ্মানন্দ, পূর্ণানন্দ প্রভৃতির উল্লেখ করিয়াছি;
ইঁহারা সাধকও ছিলেন। অন্যান্য সাধকগণের মধ্যে ষোড়শ শতকের
সর্বানন্দ ঠাকুর অতিশয় প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। ত্রিপুরা জেলার মেহার গ্রামে
তাঁহার আবির্ভাব হয়। তিনি শবরূপী ভৃত্য পূর্ণানন্দের দেহের উপরে বসিয়া সাধনায়
সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন এবং দশমহাবিদ্যার সাক্ষাৎ লাভ করিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া
প্রসিদ্ধি আছে। তান্ত্রিক সাধনার ক্ষেত্রে তাঁহার বংশধর তান্ত্রিক সাধকগণ
‘সর্ববিদ্যা’র বংশ বলিয়া খ্যাত। তন্ত্র-সাধনার ক্ষেত্রে ‘অর্ধকালী’রও প্রসিদ্ধি
আছে। প্রায় তিন শত বৎসর পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত মুক্তাগাছার সমীপবর্তী
পণ্ডিতবাড়ি গ্রামে দ্বিজদেব-নামক সাধকের গৃহে ইনি কন্যারূপে আবির্ভূতা হন। তাঁহার
নাম ছিল জয়দুর্গা, তিনি স্বয়ং মহেশ্বরী বলিয়া প্রবাদ। তাঁহার দেহের অর্ধেক
কৃষ্ণবর্ণ ও অর্ধেক গৌরবর্ণ ছিল বলিয়া তাঁহার অর্ধকালী নাম হইয়াছিল। গোঁসাই
ভট্টাচার্য নামে খ্যাত রত্নগর্ভ-নামক সাধক ঢাকা জেলার মায়ৈসারের দিগম্বরীতলায়
বীরাচারে সিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া প্রসিদ্ধি আছে। কথিত হয়,
ইনি প্রসিদ্ধ ‘বারভূঞা’র মধ্যে চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের গুরু
ছিলেন। প্রায় শত বর্ষ পূর্বে বীরভূম জেলার তারপীঠের নিকট আটলাগ্রামে সাধক
বামাক্ষেপার জন্ম হয়; তারাপীঠ তাঁহার সাধনা ও সিদ্ধির স্থান।’– (ভারতের
শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, পৃষ্ঠা-৭৬)
আর অশোক রায়ের বর্ণনায়–
‘সাহিত্যে ও সাধনার শাক্তধারায় জোয়ার আসে অষ্টাদশ শতকে। সাধক রামপ্রসাদ সেন বাংলা
ভাষায় শাক্ত পদাবলীর সূচনা করেন। তাঁর পরে, কমলাকান্ত ও গোবিন্দ চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়াও
প্রায় একশত বছর ধরে বীরভূম জেলার তারাপীঠের সাধক বামাখ্যাপার নাম বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। তারপরে দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী মন্দিরের সাধক পূজারি
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব ও তাঁর শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী অভেদানন্দ প্রমুখেরা শাক্ত-সাধনাকে সারা বিশ্বের
দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যোগীপুরুষ শ্রীঅরবিন্দ শক্তি সাধনার গূঢ় তত্ত্ব ও
রহস্যকে তাঁর ‘অখণ্ড মহাযোগে’র সঙ্গে সংযুক্ত করে এক সূক্ষ্ম ও ব্যাপক দার্শনিক
রূপদান করেন। এ ছাড়াও এই সময়কালে বহু সাধক-সাহিত্যিক গায়ক (কালীকেন্দ্রিক)
শাক্তসাধনাকে চরমোৎকর্ষতার স্তরে উত্তরিত করেন। শ্যামাসংগীত গেয়ে বাঙালির মনজয় ও
জনপ্রিয় হয়েছিলেন দুই ভাই শ্রীপান্নালাল ও ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য আর দুর্গাকেন্দ্রিক
শাক্তধারাতে সাম্প্রতিক কালের শ্রেষ্ঠ সাধকেরা হলেন শ্রীশ্রীসত্যদেব,
স্বামী জগদীশ্বরানন্দ ও মহানামব্রত ব্রহ্মচারী,
এঁরা ‘চণ্ডী’ গ্রন্থের নবরূপকার।’– (মাতৃকাশক্তি,
পৃষ্ঠা-২৩৯)
বাংলা অঞ্চলে মাতৃপূজার যে
ইতিহাস তাতে দেখা যায় যে, দুর্গাপূজা কালীপূজা অপেক্ষা প্রাচীনতর কালে এদেশে
প্রবর্তিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, পূজাকে অবলম্বন করে ধর্মোৎসবের ব্যাপকতায় দুর্গাপূজা এখনও
বাঙালি হিন্দুর সর্বপ্রধান পূজা। দুর্গাপূজা সাংবৎসরিক উৎসব-বিশেষ মাত্র।
সাংবৎসরিক পূজা ছাড়া দুর্গার কোনও নিত্যপূজার প্রচলন তেমন কোন অঞ্চলে দেখা যায় না।
রোগে, শোকে, দৈব-দুর্বিপাকে সংকল্পপূর্বক চণ্ডীপাঠ বা দুর্গানাম জপের ব্যবস্থা
শান্তি-স্বস্ত্যয়নের অঙ্গরূপে দেখা যায়। কিন্তু এসব ছাড়া সাধনার ক্ষেত্রে দুর্গার
তেমন কোনও প্রাধান্য দেখা যায় না। শারদীয়া দুর্গাপূজার পর থেকে শুরু করে বসন্তকাল
পর্যন্ত দেবীকে নানারূপে পূজা করা হয়ে থাকে। লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, অন্নপূর্ণাপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা, সরস্বতীপূজা– সর্বশেষ বসন্তকালে দেবীর বাসন্তী মূর্তির
পূজা– এর মধ্যে এক কালীপূজা ছাড়া আর সবই সাংবৎসরিক পূজা। শক্তি-সাধনার ক্ষেত্রে
আমাদের দেশে প্রাধান্য লাভ করলেন সাধারণভাবে কালী– বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে
দশমহাবিদ্যার অন্য কোনও রূপ।
শুধু এটুকুই নয়,
বাংলা শক্তি-সাধনার ক্ষেত্রে কালী-প্রাধান্যের ভিতরে আরও
অনেক তথ্য নিহিত আছে বলে পণ্ডিতদের অভিমত। অতএব, শ্রীশশিভূষণ দাশগুপ্তের ভাষ্যে–
‘বিভিন্ন
পুরাণ এবং উপপুরাণের মধ্যে কালীর কথা যেভাবে পাওয়া যায় তাহাতে মনে হয়,
প্রথমতঃ এই উপপুরাণকারগণ নানাভাবে দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছেন
কালী এবং পার্বতী-দেবী (তাঁহার উমা, দুর্গা, গৌরী, চণ্ডী সর্বরূপে) অভিন্না এবং এই করিয়া কালী-দেবীকে প্রথমে
মহাদেবীরূপে স্বীকৃতা এবং প্রতিষ্ঠিতা করিয়া লইতে হইয়াছে। ইহার পরে দ্বিতীয় রকমের
চেষ্টা দেখিতে পাই, কালীই যে মূল দেবী এবং পার্বতী দেবী তাঁহার উমা,
গৌরী, দুর্গা, চণ্ডী প্রভৃতি সর্বরূপেই এই সর্বমূলা কালী-দেবী হইতেই
প্রসৃতা, সেই মূলা দেবীরই রূপভেদ মাত্র। এইভাবেই কালিকা বা কালী-দেবীকে প্রধানা করিয়া
উমা, গৌরী,
দুর্গা, চণ্ডী রূপধারিণী দেবীকে মূল হইতে প্রসৃতা দেবী করিয়া
তুলিবার চেষ্টা হইয়াছে।’– (ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য,
পৃষ্ঠা-৮০-৮১)
আদিযুগের চর্চা/চর্চিকা
উপাসনা পালযুগ থেকে সেনযুগে অব্যবহিতভাবে চললেও এরপর মধ্যযুগে আর পাই না। তুর্কি
আক্রমণ এর একটা কারণ হতে পারে।
কলা যা যাঃ সমুদ্ভূতাঃ
পূজিতাস্তাশ্চ ভারতে।
পূজিতা গ্রামদেব্যশ্চ
গ্রামে চ নগরে মুনে।।
অর্থাৎ– ভারতবর্ষের যত
নগরে এবং গ্রামে যত দেবী রয়েছেন তাঁরাও বিধিপূর্বক মহাদেবীরূপেই পূজিতা হয়ে থাকেন–
কারণ, মূলে তাঁরা আদ্যাদেবী থেকে কিছু পৃথক নন, তাঁরাও সবাই একই মহাদেবীর বিশেষ বিশেষ কলামাত্র।
“মা কালী লাকানিয়ান দর্শনের রিয়েল, কান্ট যাকে বলেছেন অজ্ঞেয় বস্তুর নিজস্বতা (unknowable
things in themselves), বার্ক যাকে
সাব্লাইম বলেছেন, হেগেল যাকে বলেছেন গাইস্ট (Geist),
আর ফ্রয়েড বলেন ইড বা আনকনশাস। এক কথায় মানবিক ভাষা,
যুক্তি, দর্শনের সীমাবদ্ধতার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা রহস্যময় দিগন্ত।
মার্ক্স একেই বলেছিলেন আত্মাহীন জগতের আত্মা, হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, মানব অস্তিত্বের কেন্দ্রস্থলে থাকা বিরাট শূন্যতা-ক্ষতের
মরমিয়া ওষুধ। মা কালী আমাদের আশ্রয়।
কলমে - ক ম লে ন্দু সূ ত্র ধ র
তথ্যসুত্রঃ-
১। ভারতের শক্তিসাধনা ও শাক্তসাহিত্যঃ শশিভূষণ দাশগুপ্ত
২। প্রবন্ধ সংকলন তৃতীয় খণ্ড, সুকুমার সেন।
৩। প্রবন্ধ সংকলন চতুর্থ খণ্ড, সুকুমার সেন।
৪। বাঙ্গালীর ইতিহাসঃ আদি পর্বঃ নীহার রঞ্জন রায়।
৫। বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ- রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
৬। শক্তি-সাধনা-১২ : শক্তিদেবী কালী ও তাঁর পূজার ইতিহাস
৮। বাঙালির তন্ত্রধর্মের বিবর্তনের একটি রূপরেখা
৯। কালী পূজার বিবর্তন- তুষারকুমার মুখোপাধ্যায়
১১। কৃষ্ণচন্দ্রের উৎসাহেই দীপাবলি উৎসব
১২। উপাসনার প্রধান প্রতীক মা কালীর বিভিন্ন রূপ- তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
১৩। মা কালীর উৎসরণঃ কালীর মূর্তিরূপের উৎস ও বিবর্তন- ডঃ তমাল দাশগুপ্ত
১৪। মা কালীর উত্থান- ডঃ তমাল দাশগুপ্ত
চিত্র সৌজন্যঃ ইন্টারনেট
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন