সিরিজ রিভিউ
অনামিকা
আনন্দ। হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের এক কিংবদন্তী নাম। যার নামেই নাকি ছবি হিট হয়ে যায়।
বিখ্যাত সুন্দরী অভিনেত্রীর জন্য উন্মাদ দর্শকবৃন্দ। কিন্তু ক্যামেরার পিছনে তাঁর বাস্তব
জীবন কেমন, সে খোঁজ ক’জন রাখেন!বাস্তব জীবনে কি ঘটে তাঁর সাথে? মধ্য বয়েসে যখন ধীরে
ধীরে অভিনয় জগত থেকে বিদায় নেবার ঘণ্টা ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন এই নামকরা অভিনেত্রী, ঠিক
সেই সময়েই এক পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পরেই অকস্মাৎ উধাও হয়ে যান
তিনি। পুলিশের উপরমহলেও হইচই পরে যায় এই অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করতে। কি হল তাঁর?
কোথায় গেলেন তিনি? অপহরণ? নাকি স্বইচ্ছায় হারিয়ে যাওয়া? সমগ্র সিরিজ জুড়ে এই রহস্যেরই
সমাধান খোঁজা হয়েছে।অনামিকা আনন্দের ভূমিকায় মাধুরী দীক্ষিত নিখুঁত নিপুণ অভিনয় করে
গেছেন। কিংবা বলা যায় নিজেকেই স্বমহিমায় পেশ করেছেন। তাঁর উপস্থিতি এখনও একই রকম মুগ্ধতা
ছড়ায়। বিপুল ঐশ্বর্য প্রতিপত্তির মধ্যেও একজন গৃহহিংসার শিকার নারীর অসহায়তা ফুটিয়ে
তুলেছেন অনবদ্য প্রতিভায়।
বিখ্যাত
স্ত্রীর অকর্মণ্য, অপদার্থ কিন্তু অত্যাচারী স্বামী নিখিল মোরে ( সঞ্জয় কাপুর)। যিনি
স্ত্রীর উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হয়েও স্বামীত্বের অধিকার ফলাতে পিছপা হননা।বিখ্যাত
স্ত্রীর উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল স্বামী বন্ধ দরজার আড়ালে নিজের গায়ের জোর প্রমাণ
করেন। গার্হস্থ্যহিংসা যে সমাজের প্রতিটি স্তরেই বিদ্যমান তার প্রমাণ স্বরূপ অনামিকার
শরীরে কালশিটের দাগ রয়ে যায়, যে দাগ মেকআপের আড়ালে তাঁকে লুকাতে হয়। কিন্তু নিখিল মোরে
কি বেকার বসে থাকেন? কি করেন তিনি? স্বামীর ভূমিকায় সঞ্জয় কাপুর চলনসই অভিনয় করেছেন।
অনামিকার
মা (সুহাসিনি মুলে), যিনি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিশোরী মেয়েকে টাকা রোজগারের মেশিন
বানিয়ে ফেলতে দ্বিধাবোধ করেন না। সারা জীবন মেয়ের উপার্জনে আয়েস করে থেকে, মেয়ের জীবনের
প্রতিটি মুহূর্তে অধিকার ফলিয়ে যান। স্বার্থসিদ্ধির রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম
দেখতে পেয়ে নির্দ্বিধায় মেয়ের গোপন কথা ফাঁস
করে দেবার হুমকি দেন।মায়ের ভূমিকায় সুহাসিনি মুলে নিজের যোগ্য অভিনয় করেছেন।
সমগ্র
ঘটনার রহস্য অনুসন্ধানে নিযুক্ত এসিপি শোভা ত্রিবেদী (রাজশ্রী দেশপান্ডে)। পুরুষ শাসিত কর্মজীবনেও দাপটে
নিজের কর্তব্যে অটল থাকেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের ঝড় সামলেও কর্মজগতকে অবহেলা না করে,
অসম্ভব চাপ সামলেও শেষ অবধি সন্ধান পান প্রকৃত ঘটনার।
অনামিকার
ছেলে ও মেয়ে। মায়ের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির বিড়ম্বনা সামলাতে সামলাতে নিজেদের ব্যক্তি
সত্বার ধন্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পরে ভুল করতে থাকে। শেষে কি তারা নিজেদের খুঁজে পাবে? কি
হবে তাঁদের ভবিষ্যতের?
আট
পর্বের পুরো সিরিজ জুড়েই এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। বলিউডের অত্যন্ত পরিচিত
ঘটনাবলীর সমাহারে নির্মিত চেনা ছকের কাহিনীর মধ্যেও দক্ষতার সঙ্গে এক অসাধারণ রহস্য
তৈরি করেছেন পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ার ও করিশ্মা কোহলি।অতীত ও বর্তমানের ঘটনার ভিতর রহস্য
যত উন্মোচিত হয় ততই দর্শক উৎসুক হয়ে ওঠেন এরপর কি হবে জানার জন্য।এই সিরিজ এমন একজন বিখ্যাত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের গল্প বলে যিনি বহিরবিশ্বের কাছে খ্যাতির শিখরে
থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন,
একটি আপাত নিখুঁত জীবন যাপন করেন কিন্তু সময়ের বিপর্যয় থেকে
বাঁচতে পারেন না।ইদানিং কালের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের
জন্য তৈরি হওয়া সিরিজ বা সিনেমার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় অত্যাবশ্যকিয় করে দেওয়া হয়েছে।
প্রচুর অশ্লীল শব্দের ব্যবহার, সমকামিত্ব, পরকীয়া প্রভৃতি যা এই সিরিজেও বর্তমান। যদিও
বেশ কিছু অনাবশ্যকভাবেই ব্যবহৃত। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হওয়া সিরিজটি থ্রিলার হিসাবে
একবার দেখার জন্য মন্দ নয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন