ছবি – আভতার
পরিচালক – জেমস ক্যামেরন
সময় – ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট
এক বিশাল কল্পনার জগত। গভীর জঙ্গল। ঝুলন্ত পাহাড়। জীব জন্তুদের ভাষা। বিকটাকায় উদ্ভিদ ও প্রানীর সমাহার। অন্ধকারাছন্ন স্বপ্নিল এক জগত। ভবিষ্যতের এক সময়, আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর পর। পৃথিবীর অনুরূপ একটি অদ্ভুত গ্রহ “প্যান্ডোরা”। মানুষের মতোই বাহ্যিক আকার কিন্তু লম্বা ও লেজ বিশিষ্ট এখানের ন্যাভি অধিবাসীরা ও তাদের আত্মাবৃক্ষ। সব মিলিয়ে এক অতি মানবীয় জগৎ। এখানে পাওয়া যায় এক শক্তির উৎস যার নাম “অ্যানঅবটেনিয়াম”। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাকৃতিক শক্তির ভাণ্ডার শেষ হয়ে গিয়ে মৃতপ্রায় পৃথিবীকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলতে পারে এই শক্তির উৎসই । তবে পৃথিবীর জন্য এটি আহরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্যান্ডোরা গ্রহের স্হানীয় অধিবাসীরা। ন্যাভিরা নিজেদের গ্রহের ইকো-সিস্টেম বা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। আর নিজেদের গ্রহের শক্তির উৎস অ্যান্অবটেনিয়াম অন্য গ্রহের প্রাণীরা এসে নিয়ে যাক তা চায় না।সেই শক্তি রক্ষার্থের সংগ্রামকেই গল্প বানিয়ে ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র অ্যাভটার পৌঁছে গেছিল বিশ্বের ঘরে ঘরে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন সেই কাল্পনিক জগতের মায়াজালে। কল্পবিশ্বের প্রানীর কল্পনায় পরিচালক ও কাহিনীকার জেমস ক্যামেরুন শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেছিলেন বলে শোনা যায়। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী কৃষ্ণের আদলে ভিন গ্রহের বাসিন্দাদের কল্পনা করে তাদের গায়ের রঙ নীলবর্ণ করেছিলেন। সেখান থেকেই নাম দিয়েছিলেন অ্যাভটার বা অবতার। যার অর্থ পৃথিবীতে মানুষের জন্য দেবতার প্রতিমূর্তি বা দেবতার দূত।
এরপর পুরো ১৩ বছরের প্রতীক্ষার পর সদ্য মুক্তি পেয়েছে অ্যাভটারের দ্বিতীয়
পর্ব – দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার। গল্পের বিশেষ হেরফের হয়নি। সেই “স্কাই পিপল” বা পৃথিবীর
মানুষের সাথে মুখ্য চরিত্রদের নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম। পরিবর্তন হয়েছে
শুধু পটভূমিকার। জঙ্গল বদলে গিয়ে এসেছে অতল নীল সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশী ও তার রহস্যময়
জগতের প্রানী – উদ্ভিদকূল। সঙ্গত কারণেই পূর্বের চরিত্রদের সাথে
জুড়ে গেছে আরও অনেক নতুন চরিত্র।ছোট্ট করে জুড়ে দিয়েছেন কিছু বার্তা। বর্ণ
এবং সভ্যতার কথা বলেছেন পরিচালক।বর্ণের সংকরায়ন ঘটিয়েছেন।
সাধারণ গল্পের মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী বার্তা দিয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণের কথা,
বাবা-মা কী ভাবে তাদের সন্তানকে রক্ষা করেন বা কি
ধরণের শিক্ষা একজন শিশুকে দিতে হয়, সেই
কাহিনীও জুড়ে দিয়েছেন গল্পে।
মুক্তির মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই এই চলচ্চিত্র অগ্রিম
টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে রেকর্ড ভাঙ্গা অঙ্কের ব্যবসা করে নিয়েছে। প্রায় তিন
বছরের কাছাকাছি সময় অতিমারির কারণে বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ আবার ভরে উঠেছে কানায় কানায়।
মাস্কবিহীন পাশাপাশি বসে মাল্টিপ্লেক্সের কনকনে ঠাণ্ডায় জমে যেতে যেতে কফির গ্লাসে
চুমুক দিয়ে চোখে কালো 3D glass পরিহিত দর্শক বুঁদ হয়ে উঠেছেন গভীর জলের রহস্য ঘেরা জগতের আনাচে কানাচে।
হলিউডের প্রথম সম্পূর্ণ 3D ছবির মজা তারিয়ে উপভোগ করতে গিয়ে সবাই বিস্মৃত হন গত তিন বছর কি এক অসহনীয় সময়
সারা বিশ্ব কাটিয়ে এসেছে। গল্প নয় এই চলচ্চিত্র মুগ্ধ করে রাখে অনবদ্য কম্পিউটার
গ্রাফিক্স বা VFX এর ব্যবহারে। যারা হিন্দি
চলচ্চিত্র দেখতে অভ্যস্ত তারা খুব সহজেই এই ছবির চলচ্চিত্রায়নে বলিউড ঘরানার
প্রভাব লক্ষ্য করবেন। বিশেষ করে অন্তিম পর্বের আরোপিত অ্যাকশন দৃশ্যগুলি বড্ড বেশি
একঘেয়ে ও বিরক্তিকর হয়ে যায়। এছাড়াও ভিন গ্রহের বাসিন্দাদের মধ্যে মানবীয় অনুভূতি
ও বুদ্ধিহীনের ন্যায় ক্ষমা প্রদর্শন করে পুনরায় আঘাত পাওয়ার ঘটনাও বড়ই চক্ষুশূল
হতে পারে দর্শকের।তবে ওই লেজুড় হিসাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উহ্য রেখে দেওয়া যে
তৃতীয় পর্বের ইঙ্গিত বহন করে তা বলাই বাহুল্য। চিত্রনাট্য দুর্বল লাগলেও দর্শক তা
বিশেষ পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না কারণ জেমস ক্যামেরুন মানেই অসাধারণ
ভিস্যুয়াল এফেক্টের খেলা। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে চলচ্চিত্রকে যিনি নিয়ে গেছেন
এক অন্য উচ্চতায়। VFX নিয়ে তাই প্রশ্ন তোলার বা খুঁত
খুঁজে বার করার ব্যর্থ চেষ্টা কেউ ভুলেও করবেন না। জেমস ক্যামেরুন যে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা পরিচালক, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ১৩ বছর
যখন তিনি সময় নিয়েছেন ছবির সিক্যুয়েল বানাতে, তখন সেই ছবি যে প্রায় নিখুঁত হবে তা নিয়ে সংশয় থাকেনা। এই ছবি তাই গল্প বলে না, অভিনয় নিয়ে ভাবায় না শুধু
কল্পবিজ্ঞানের জগতের নেশায় বুঁদ করে একরাশ মুগ্ধতার জন্ম দেয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন