রাতের আকাশে সুন্দর ফুটফুটে চাঁদ আর তার স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না। চাঁদের দিকে তাকিয়ে কবির কলমে ছন্দে ছন্দে জেগে ওঠে পাতার পর পাতা কবিতা, পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো এক প্রেমিকের মনে ভেসে ওঠে তার প্রেয়সীর সৌন্দর্য্য। সবই চাঁদের মহিমা।
এ নাহয় গেলো কাব্যিক কথা। এবার একটু বৈজ্ঞানিক ভাবে ভাবা যাক। ছোটবেলার বিজ্ঞান বই মনে আছে? পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যবর্তী দূরত্ব। কতো ছিল বলুন তো?
এই মুহূর্তে মনে পড়ছে
না?
কোনো ব্যাপার নয়। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। পৃথিবী এবং চাঁদের
মধ্যবর্তী দূরত্ব ছিল প্রায় তিন লক্ষ চুরাশি হাজার কিলোমিটার।
মানুষ বরাবরই কৌতূহলী,
উদ্যমী, আগ্রহী। জাগতিক ও মহাজাগতিক বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে গ্রহ উপগ্রহ
নিয়ে তার কৌতূহল প্রচুর। সেই কারণেই পৃথিবী থেকে চাঁদের এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সে
চালিয়ে গেছে যুগের পর যুগ চেষ্টা। আবিষ্কার হয়েছে মহাকাশযান,
অতিক্রান্ত হয়েছে এই পথ।
এবার যদি বলি,
মহাকাশযান ছাড়াই পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছনো সম্ভব!
তার জন্য বিশেষ কিছুর প্রয়োজনও
নেই। একখানা বড়ো সাইজের কাগজ হলেই চলবে। তাহলেই কোনো ঝামেলা ঝঞ্ঝাট ছাড়াই পৌঁছে যাওয়া যাবে সকলের বহু আকাঙ্খিত
চাঁদে।
বিশ্বাস হচ্ছে না?
মহাকাশযান ছাড়া পৃথিবী
থেকে চাঁদে পৌঁছনো অবশ্যই সম্ভব! তবে কাগজে কলমে, হিসেব নিকেষের দ্বারা। ব্যাখ্যা করে বলছি।
প্রথমে একখানি কাগজ নিন। এবার এটিকে ৪৩ বার ভাঁজ করুন। এর ফলে এটি এতটাই পুরু হবে যে তা চাঁদে গিয়ে ঠেকবে অর্থাৎ আপনি কাগজটির উপর দিয়ে সটান হেঁটে পৃথিবী থেকে চাঁদে চলে যেতে পারবেন।
না, ম্যাজিক নয়। তার জন্য একটু অঙ্ক কষতে হবে, তবে খুবই সহজ অঙ্ক।
একটি কাগজের পুরুত্ব আনুমানিকভাবে গড়ে 0.1 মিলিমিটার হয়ে থাকে।
যখন এটিকে প্রথমবার ভাঁজ
করবেন তখন পুরুত্ব হবে
0.1
× 2 = 0.2 মিলিমিটার।
এরপর আবার ভাঁজ করলে পুরুত্ব
হবে
0.2
× 2 = 0.4 মিলিমিটার।
অর্থাৎ প্রতিবার ভাঁজ করলে
এর পুরুত্ব দ্বিগুণ করে বাড়ছে। সুতরাং বলা যেতে পারে এটি গুণোত্তর ধারা অনুসরণ করছে।
a, ar, ar^2,
ar^3, ar^4, .......,ar^n−1
এখানে a
= 0.1 mm, r=2
পূর্বে উল্লেখ করেছি পৃথিবী
থেকে চাঁদের দূরত্ব, যা প্রায় তিন লক্ষ চুরাশি হাজার কিলোমিটার অর্থাৎ 38400 km। মিলিমিটারে
প্রকাশ করলে এর মান আসে 3.84
× 10^11 mm.
ধরা যাক এই দূরত্ব যেতে
হলে আমাদের কাগজটিকে n বার ভাঁজ করতে হবে। গুণোত্তর ধারার nতম পদের সূত্রটি হলো ar^n−1। সুতরাং আমরা নিম্নোক্ত সমীকরণ দাঁড় করাতে পারি..
ar^n−1 =
3.84
× 10^11
বা,
0.1 × 2^n−1 = 3.84 × 10^11
বা,
2^n−1 = 3.84 × 10^12
বা,
log2(2)^n−1 = log2(3.84×10^12)
বা,
n−1 = 41.8
বা,
n = 42.8 ≈ 43
দেখলেন তো,
মাত্র তেতাল্লিশ বার ভাঁজ করতে পারলেই আপনি চাঁদে পৌঁছে যেতে পারবেন। কোনো মহাকাশযানের প্রয়োজন
পড়বে না!
আরও ভাঁজ করতে থাকলে?
৫১তম ভাঁজে আপনি সূর্যে
পৌঁছে যাবেন।
৮১বার ভাঁজ করলে কাগজের
পুরুত্ব হবে ১,২৭,৭৮৬ আলোকবর্ষ যা প্রায় অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সমান।
৯০বার ভাঁজ করলে কাগজটি
১৩১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ পরিমাণ পুরু হয়ে যাবে।
আর ১০৩ তম ভাঁজে আপনি অতিক্রম
করে যাবেন অবলোকনযোগ্য মহাবিশ্ব (Observable Universe)।
এসব পড়ে কী মনে হচ্ছে?
পৃথিবী থেকে চাঁদ, সূর্য কোনকিছুতে যাওয়াই তো কোনো ব্যাপার নয়! শুধু কাগজ ভাঁজ
করলেই হলো। তাহলে মহাকাশযান আর কোন কাজে লাগবে!
অবশ্যই কাজে লাগবে। কারণ
এভাবে কাগজ ভাঁজ করে চাঁদে যাওয়া বাস্তবে সম্ভব নয়,
কাগজে কলমেই সম্ভব।
কিন্তু কেন?
কারণটি হলো বাস্তবে এতবার
কাগজ ভাঁজ করাই সম্ভব নয়। একটি মিথ প্রচলিত ছিল যে একটি কাগজকে কখনও ৮ বারের বেশি
ভাঁজ করা যায় না। তবে ২০০২ সালে ব্রিটনি গ্যালিভান নাম্নী এক স্কুলছাত্রী একটি কাগজকে
১২ বার ভাঁজ করে মিথটি ভুল প্রমাণিত করেন। আজ পর্যন্ত কেউই এর চেয়ে বেশী সংখ্যক বার কাগজ ভাঁজ করতে পারেনি। তাই আজও
ব্রিটনি গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারিণী হয়ে আছেন।
কিন্তু সে তো ৪৩ হতে বহু
দূরে!
তাহলে আপনারাই চেষ্টা করে
দেখুন। মনে রাখবেন, কাগজটিকে কেবলমাত্র ৪৩ বার ভাঁজ করতে হবে। তাহলেই মহাকাশযান ছাড়া সটান পৌঁছে যাওয়া
যাবে চাঁদে।
কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন