লোভনীয় ফুচকা



                                                            ফুচকা 


ফুচকা! আহা! সুস্বাদু! অতুলনীয়!

মাঝখানটা ভেঙে ঝাল ঝাল আলুর পুর দিয়ে তেঁতুল জল সহযোগে সটান উদরস্থ করে ফেলুন। এ যে স্বর্গীয় স্বাদ!

ফুচকার কিন্তু নামও একাধিক। স্থানভেদে ভিন্ন-- গোলগাপ্পা, ফুলকি, টিক্কি, ফুচকা, গুপচুপ, বাতাসি, পাকাড়া, পানিপুরি, পাকোরি ইত্যাদি। এর ভেতরে দেওয়ার পুরেরও রকমভেদ আছে। আলুসেদ্ধর পুর, ঘুগনির পুর, আলু ঘুগনির পুর, এছাড়াও হরেকরকম। ঠিক তেমনভাবে ফুচকার সঙ্গী হয় কখনও তেঁতুল জল, আবার কখনও পুদিনার জল। এর পাশাপাশি দই ফুচকার নামও বিশেষভাবে উল্লেখ্য।


কিন্তু এই ফুচকা এলো কোথা থেকে! জানলে অবাক হবেন যে এর আবিষ্কর্তা মহাভারতের দ্রৌপদী। তাহলে ভেবে দেখুন কতো প্রাচীন খাবার এটি। এবারে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এর প্রচলন হয়েছিল।


মহাভারতের সময়কাল। দ্রৌপদী তখন সদ্যবিবাহিতা। একদিন শাশুড়িমা কুন্তী যাচাই করতে চাইলেন যে অল্প কিছু উপকরণ দিয়ে তাঁর পুত্রবধূ দ্রৌপদী কতটা ভাল খাবার বানাতে পারেন। তাই তিনি একটু আলুর তরকারি ও ময়দামাখা দিয়ে দ্রৌপদীকে বললেন এমন কিছু খাবার বানাতে যা পঞ্চপাণ্ডবকে সমানভাবে তৃপ্ত করে। সম্ভবত কুন্তী চেয়েছিলেন স্বল্প উপকরণের মধ্যে বৌমার রন্ধনশিল্পের পরীক্ষা নিতে অথবা দেখতে চেয়েছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কার প্রতি দ্রৌপদী পক্ষপাতিত্ব করেন। সেই ময়দামাখাকে সমানভাবে ভাগ করে ভেজে তুলে তার মধ্যে আলুর পুর দিয়ে দ্রৌপদী ফুচকা বা ফুলকা আবিষ্কার করে ফেললেন। বৌমার রন্ধন পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে কুন্তীর আশীর্বাদে সেদিনের সেই খাবারটি অমরত্ব লাভ করে।


তবে অনেকেই এর ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে ভারতবর্ষে আলুর আগমন হয় পর্তুগীজদের হাত ধরে। তাহলে দ্রৌপদী কিভাবে ফুচকাতে আলুর পুর দিলেন?


তার ব্যাখ্যাটা একটু অন্যরকম। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে আলুর উৎস ভারত, সেখান থেকে ইউরোপীয়দের দ্বারা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এটি। কারুর মতে আলুর উৎস পেরু। মহাভারতের সময়কালে ভারতবর্ষের সীমানা তো বর্তমানের মতো ছিল না, অনেক বড়ো ছিল ভারত ভূখণ্ড। সেই হিসাবে সময়কালও মিলে যায় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আমলের সঙ্গে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আলুর ব্যবহার অসম্ভব কিছু নয়। বলতে গেলে সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলুর চাষ হতো।


তবে ফুচকা অত্যন্ত প্রিয় খাদ্য হলেও অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বাইরের রাস্তায় বিক্রি হওয়া ফুচকা খেতে চান না। ভাবেন,' ইসস! যদি বাড়িতে বানাতে পারতাম। ' তাঁদের কথা চিন্তা করেই আমরা আজ জানালাম বাড়িতে ফুচকা তৈরির প্রণালী। খুবই সহজ আর সুস্বাদু।


ফুচকা তৈরির পদ্ধতি 


ফুচকা উপকরণঃ


সুজি – ২ কাপ

ময়দা – আধা কাপ।

জল – আধা কাপ


( বি.দ্র. ময়দা মাখার সময় নুন বা বেকিং পাউডার বা খাবার সোডা একেবারেই দেওয়া চলবে না।)


আলুর পুরের উপকরণঃ


আলু সেদ্ধ – ৫০০ গ্রাম

ঘুগনি মটর – ১০০ গ্রাম

ধনেপাতা – ২৫ গ্রাম ( মিহি করে কুচোনো)

ভাজা মশলা – ২ চামচ

বিট নুন – আধা চামচ

লঙ্কাগুঁড়ো – আধা চামচ

কাঁচালঙ্কা কুচি – এক চামচ


তেঁতুল জলের উপকরণঃ


পাকা তেঁতুলের ক্বাথ – এক কাপ

সয়া সস – ১ চামচ

বিটনুন – ২ চামচ

গন্ধরাজ লেবুর রস – ১৫ মিলি

ভাজা মশলা – ২ চামচ

লেবু পাতা – ৫/৬ টা

জল – ১ লিটার


পদ্ধতিঃ

  • আলুর পুরের সমস্ত উপকরণ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  • তেঁতুলের জলের সমস্ত উপকরণ মেশানোর জন্য আলাদা একটি পাত্র ব্যবহার করুন।
  • ফুচকার জন্য ময়দা ও সুজিকে একসাথে অল্প অল্প জল মিশিয়ে শক্ত করে মাখুন।
  • আধা ঘণ্টা ঢাকা দিয়ে রাখুন। তারপর আবার ভালো করে মাখতে হবে।
  • সুজি মাখা মসৃণ মণ্ডে পরিণত হওয়া অবধি মাখতে থাকুন। আধা ঘণ্টা আবার ঢাকা দিয়ে রেখে দিন।



  • এরপর লেচি কেটে বড় বড় রুটির আকারে বেলে, ছোট গোলাকার আকৃতির কুকি কাটার অথবা কোনো ছোট মুখওয়ালা বোতলের ঢাকা দিয়ে গোল গোল আকৃতির ফুচকা কেটে নিন।
  • কেটে নেওয়া ফুচকাগুলো থালায় করে ৫/৭ মিনিট হাওয়ায় শুকোনোর জন্য রাখুন।
  • কড়াইতে তেল ভালোভাবে গরম হলে একসাথে ৪-৫ টি করে ফুচকা ভাজতে দিন। দুই দিক ভালো করে লাল হওয়া অবধি ভেজে তুলে নিয়ে থালায় রাখুন।



  • প্রয়োজনে কৌটো বা পলিথিন ব্যাগের মধ্যে করে সপ্তাহখানেক রাখা যায় ।


পরিবেশন পদ্ধতিঃ


বানানো তো শেষ। এবার ভাজা ফুচকা আঙ্গুলের একটু চাপ দিয়ে ভেঙ্গে নিয়ে তারমধ্যে আলুর পুর ও তেঁতুলের জল দিয়ে মুখের মধ্যে পুরে দিন। স্বর্গীয় অনুভূতি! কি, ঠিক বলেছি তো? 


স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। ভালো থাকুন।

                                        _______________________________


কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী



ফুচকার ইতিহাস:

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া

চিত্র সৌজন্যঃ নিজস্ব, গুগল 

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন