-- জী
'কোয়াক কোয়াক'!
"এই মুন দি ওটা কী পাখির আওয়াজ রে?
জলের কাছে থাকে একটা পাখি।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি, তা নামটা বল না?
পান পায়রা।
ও, পায়রা আবার পান! কী করে হয় বল না?
আরে তোর এত কেন এর উত্তর দিতে পারব না! তাড়াতাড়ি চল!"
এখন ইন্টারনেটের যুগ, মানুষ এক নিমিষেই কত কিছু জানতে পারছে, কিন্তু আমাদের ছোট বেলায় এত কিছু ছিল না। আমাদের গ্রাম বাংলাতে তখন কত্ত নাম না জানা সুন্দর সুন্দর সব পাখি দেখতে পাওয়া যেত, তাদের কত রকমের রঙ, কত ধরনের ডাক! কিন্তু এখন অনেকের নাম জানলেও দেখতে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আবার কিছু বিলুপ্তির পথে। সেই ন্যুনতম বিপন্ন একটি পাখি হল 'ডাহুক'।
ডাহুক পাখিঃ
ইংরেজি নাম - 'হোয়াইট ব্রেস্টেড ওয়াটার হেন’, (White-breasted waterhen)
বৈজ্ঞানিক নাম - আমাররনিস ফোনিকুরাস
(Amaurornis phoenicurus) [ ডাহুকের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ লাললেজী কালো পাখি (গ্রিক: amauros = কালচে, ornis = পাখি; লাতিন: phoenicurus = লাল লেজের গির্দি ]
গোত্র - রেলিডি (Rallidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
গণ - আমুরর্নিস (Amaurornis) গণের অন্তর্গত।
পর্ব - কর্ডাটা ( Chordata )।
শ্রেণি - পক্ষী [ এভিস (Aves) ]।
বর্গ - গ্রুইফর্মিস ( Gruiformes )।
প্রজাতি - এ.ফনিকিউরাস ( A. phoenicurus )।
বিভিন্ন নাম - জায়গা বিশেষে স্থানীয়ভাবে এই পাখিটির বিভিন্ন রকম নাম আছে।
যেমন -
১. মালয় ভাষায় - 'রুয়াক - রুয়াক ' ( Ruak - Ruak )
২. সংহলি ভাষায় - ' কোরাওয়াক্কা' ( Korawakka )
৩. অসমিয়া - 'দাউক' / 'ডাউক' ( Dauk )
৪. বোরো ভাষায় - 'গুর-গু-আ' ( Gur-gu-aa )
৫. কারবি ভাষায় - 'ভো - কুরওয়াক' ( Vo - Kurwak)
৬. ওড়িশি ভাষায় - 'দাহুকা' ( Daahuka' )
৭. মারাঠি ভাষায় - 'পাণকোম্বডি' ( Pankombadi ) বা 'কুয়াক কোম্বডি' ( Kuak Kombadi )
৮. বাংলাতে - ডাহুক, পানপায়রা, ধলাবুক বলে।
বর্ণনা : প্রাপ্ত বয়স্ক ডাহুকগুলির উপরের অংশ এবং পার্শ্বদেশ গাঢ় ধূসর রঙের হয়। মুখ, ঘাড় এবং বুক সাদা রঙের হয়। দারুচিনি রঙ দেখা যায় নীচের পেট এবং লেজের মধ্যে। ডাহুক পাখির আঙুলগুলি দীর্ঘ হয়। লেজটি আকারে ছোট হয়। ঠোঁট বা চঞ্চু এবং পা হলুদ রঙের হয়। পায়ের নখগুলো লম্বা লম্বা হওয়ায় এরা খুব সহজেই পদ্ম ও শাপলা পাতায় দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
ডাহুক খুব সতর্ক পাখি এবং আত্মগোপনে এরা খুব পারদর্শীতা। উলুখাগড়া বা গুল্মঝোপের মধ্যে দিয়ে যাতে সহজে যেতে পারে সেইজন্য ডাহুক নিজের শরীরকে চেপ্টা করে নেয়।
লিঙ্গ অনুযায়ী পার্থক্য : তেমন পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র ডাহুকী ডাহুকের চেয়ে আকারে কিছুটা ছোট হয়।
বাসা বাঁধা ও প্রজনন : মাঠে, জলের ধারে, ঝোপ - জঙ্গলে, বাঁশঝাড়ে বাসা বাঁধে। আষাঢ় - শ্রাবণ মাস ডিম পাড়ার সময়। একসাথে প্রায় ৫-৭ টি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে প্রায় - ১৮-২০ দিন।
ছোট ছানা : এরা বড় ডাহুকের তুলনায় নিস্তেজ হয়। এদের রঙ কালো হয়।
খাদ্য : ডাহুক পাখি জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, জলজ কচি উদ্ভিদ, ধান ইত্যাদি খায়। অনেকে ডাহুক পোষে ( ভারতে বেঅইনি, অন্য দেশে পোষা হয় ), সেই সব পোষা ডাহুক চাল, ভাত খায়।
প্রচলিত আছে যে, ডাহুক পাখি সঙ্গীর খোঁজ না পেলে রাতদিন ডাকতে থাকে। একসময় সেই চিরবিরোহী ডাহুক গলায় রক্ত উঠে মারা যায়। সেই রক্তের ফোঁটা ডিমের মধ্যে পড়লে তবে ডিম ফোটে।
আবার অনেকে বলে মানুষকে বিপদের সংকেত দেওয়ার জন্য ডাকাডাকি করে।
সত্যতা : আসলে এইসব কিছুই নয়। প্রজজনের সময় সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার জন্য ওরা ডাকাডাকি করে।
কলমে - সো মা লা ই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন