চিত্রসৌজন্যঃ গুগল
আমাদের সকলের বাড়িতেই খবরের কাগজ রয়েছে।
এবার লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এই খবরের কাগজ বেশ কয়েকবছর পুরোনো হলেই কেমন
হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে। শুধুমাত্র সংবাদপত্রই বা কেন, লাইব্রেরী থেকে পুরোনো কোনো বই নিলে দেখা
যায় সেই বইয়ের পৃষ্ঠাও হলদেটে রঙের। কিন্তু কেন এমন হয়?
সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক সুসান রিচার্ডসন তাঁর এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন — "আসলে ব্যাপারটি ঠিক এমন নয় যে বইয়ের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। বরং কাগজ এমন কিছু উপাদানে তৈরি যা সময়ের সাথে সাথে রঙ পরিবর্তন করে। অন্তত তারা যখন অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে।"
খবরের কাগজ অথবা এমনি কাগজ মূলত তৈরি হয় কাঠ থেকে। এই কাঠে প্রাথমিকভাবে দু'খানি উপাদান বর্তমান থাকে — সেলুলোজ ও লিগনিন। সেলুলোজ বর্ণহীন হওয়ার কারণে এটি আলোর খুব ভাল প্রতিফলন ঘটায় যার কারণে আমরা যেকোন কাগজকে সাদা বর্ণের দেখি।
তাহলে হলুদ দেখি কখন?
সবটাই রসায়নের খেলা, জারণ বিজারণ। দীর্ঘদিন হয়ে গেলে কাগজে উপস্থিত সেলুলোজ ও লিগনিন সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বায়ুর মধ্যে থাকা অক্সিজেনের দ্বারা জারিত হয়। আর তার ফলেই কাগজ হলদেটে রং ধারণ করে।
কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করবেন, বইয়ের তুলনায় কিন্তু খবরের কাগজ বেশি দ্রুত হলুদাভ হয়ে যায়। এর কারণ?
কারণ অত্যন্ত সরল। যে কাগজে লিগনিনের পরিমাণ বেশি থাকে সেই কাগজ তাড়াতাড়ি হলুদ হয়। বইয়ের জন্য কাগজ তৈরির সময় ব্লিচিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদকেরা লিগনিন দূরীকরণে সবচেয়ে বেশি নজর প্রদান করেন। যতবেশি লিগনিন দূর করা সম্ভব কাগজ তত বেশিদিন সাদা থাকবে। কিন্তু সাধারণ সংবাদপত্র তুলনামূলক স্বল্প দামের কাগজে তৈরি হওয়ায় তাতে লিগনিন বেশি থাকে। ফলস্বরূপ বইয়ের কাগজের চেয়ে খবরের কাগজ দ্রুত হলুদ হয়ে যায়।
তবে লিগনিনকে কিন্তু কাগজের জন্য ক্ষতিকর ভাববেন না। লিগনিন উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরের দেওয়ালকে কাঠিন্য ও দৃঢ়তা প্রদান করে এবং একইভাবে শপিং ব্যাগ অথবা আপনার অনলাইন অর্ডারের কার্ডবোর্ড বাক্সের কার্ডবোর্ডেরও অতিরিক্ত দৃঢ়তা আনতে সাহায্য করে। বইয়ের পাতা অথবা সংবাদপত্রের তো অতখানি কাঠিন্যের প্রয়োজন নেই। তাই সেখানে লিগনিন অপসারণের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় থাকে। এবার আশা করি বুঝতে পারলেন পুরোনো কাগজের হলুদাভ বর্ণ ধারণ করার কারণ।
কলমে - ন ব নী তা দ ত্ত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন