অপেক্ষা শব্দটার আকৃতি ছোট্ট হলেও, এর ব্যবহার যারা করেছেন তারাই জানেন এর কষ্ট কতখানি।
অপেক্ষা অনেক রকমের হয়
যেমন ধরুন পুজো আসছে তার অপেক্ষা,
পরীক্ষার
ফল প্রকাশের অপেক্ষা, একজন মুমূর্ষু রুগীর সুস্থ
হওয়ার অপেক্ষা ইত্যাদি। এই সমস্ত অপেক্ষার উপরেও রয়েছে এক অজানা , সময়সাপেক্ষ , অনিশ্চিত
অপেক্ষা যা আজ আমার গল্পের বিষয়।
পলাশডাঙ্গার মধ্যবিত্ত সিংহরায় পরিবার। রায় পরিবার শুনে হয়তো আপনাদের মনে হতেই পারে বেশ সম্ভ্রান্ত উচ্চবংশ। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। সিংহরায় পরিবারের এককালীন বিরাট দাপট ছিল কিন্তু কালের নিয়ম সবসময় সবার সমান যায় না, তাই সেই আভিজাত্য আজ আর ওনাদের নেই। রাঘব সিংহরায় হলেন এই পরিবারের বড় সন্তান । দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়েই ওনার সংসার। এককালীন আয়েশে জীবনযাপনে অভ্যস্ত রাঘববাবু এখন সাধারণ ভাবেই দিনপাত করেন। তবে তাদের রীতিনীতির একচুলও পরিবর্তন ঘটেনি। যা আজ রিমঝিমের অপেক্ষার কারন।
রিমঝিম আমার গল্পের নায়িকা। হাসিখুশি, শিশুসুলভ , বেশ ছিমছাম চেহারার অধিকারিণী আমাদের নায়িকা। অধিক সুন্দরী না হলেও খুব খারাপও কিন্তু বলা যায় না। বৃষ্টি , বুবাই আর রিমঝিম এই তিন ভাইবোন । তিনজন্ই তিন রকম। সবচেয়ে ছোট বোন হল রিমঝিম, ছোট হওয়ার কোনো সুবিধা ছাড়ত না রিমঝিম। সে খাবারের বড় টুকরোটিই হোক বা পড়াশুনায় ফাঁকি, সবেতেই এক কাঁটা উপরে। দাদা পড়াশুনায় খুবই চৌখস, দিদিও কম যায়না, খালি রিমঝিমই লবডঙ্কা। এই নিয়ে অবশ্য তাকে কম শুনতে হয়না, পাড়ার লোক থেকে শুরু করে স্কুলের স্যাররা, কেউই ওকে কথা শোনাতে ছাড়ে না। এসব গা ঝাড়া করে বেশ ভালোই দিন চলছিল রিমঝিমের ।
বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে, আজ রিমঝিম ২১ বছরের যুবতী। পড়াশুনো শেষ করে এখন চাকরির জন্য পড়াশুনো করছে। দাদা একজন সরকারি কলেজের প্রফেসর। মধ্যবিত্তের তকমা ছেড়ে ওদের সংসার আবার আভিজাত্যের মুখ দেখছে। বেশ ভালোই চলছিল ওদের । এবার বাড়ির বড় মেয়ে বৃষ্টির বিয়ের পালা । বিবাহযোগ্যা মেয়ে বাড়িতে থাকলে যা হয় বিভিন্ন ধরনের সম্মন্ধ হাজির হবে না কেন? সিংহরায় বাড়ি সুন্দরী সুশীল সুশিক্ষিতা মেয়ে সুপাত্রের অভাব হয়নি। বৃষ্টির ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন হল। বিয়েও হয়ে গেল। বাঙালী নিয়ম অনুযায়ী কনের বোন গেল কনেকে রাখতে কনের শ্বশুরবাড়ি।
ঋষি , সম্রাটের দূর সম্পর্কের ভাই। সম্রাট হল বৃষ্টির স্বামী। সম্রাটের বাড়ি এসেই ঋষি রিমঝিমের দেখা। শুধুই দেখা । এরপর রিমঝিম নিজের বাড়ি আর ঋষিও নিজের মতোই....
হঠাৎ রিমঝিমের ফোনে ঋষির
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট.... কিছুটা অবাকই হয়েছিল রিমঝিম । এর আগে কোনো ছেলের সঙ্গে রিমঝিম
কথা বলেনি , এখন সে কি করবে? পরিবারের রীতি , নীতির কথা ভেবে প্রথমে আপত্তি হলেও মন বিগলিত
রিমঝিম রাজি হয়েই গেল। দিনের পর দিন মাসের পর মাস তারা কথা বলতেই লাগলো। একটা সময়
পর এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। এখন তারা একটা দিনও কথা
না বলে থাকতে পারেনা। তবে রিমঝিমের সতর্ক মন কখনই ভালোবাসার কথা ভাবতে পারেনি, না ভাবারই কথা। এত সুদর্শন ছেলে কী কখনও ওর মতো মেয়েকে ভালোবাসবে? এই কথা ভেবেই ভালোবাসার সমস্ত ইচ্ছে গুলো মনে
মনেই রেখে দিত রিমঝিম। তবে এদিকে ঋষিও তার ভালোবাসার কথা জানাতে পারতো না, ভদ্র মেয়ে , এদিকে
রিলেটিভ যদি বাড়ির সবাইকে বলে দেয়।
একদিন সমস্ত বাঁধার কথা মাথা থেকে সরিয়ে উজাড় করে মনের সব কথা ঋষি রিমঝিমকে বলে ফেলল আর রিমঝিমও যেন এই কথাগুলো শোনার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। এরপর ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়া সবই চলছিল। বাড়ির সবার চোখের আড়ালে রাত্রি জেগে কথা বলা।এখানেই অপেক্ষা শব্দটার অনুভূতি ঋষি রিমঝিমের বোধগম্য বেশ ভালোই হয়েছিল । যাইহোক প্রেমে দূরত্ব ভালোবাসার গভীরতা বাড়ায় - এই ধারনাতেই ওরা দিন পার করতো।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ,ওদের ভালোবাসা প্রকাশের পর প্রথম দেখা। টিউশনের নাম করে ওরা বেশ ভালোই দিনটিকে পালন করে আর একসাথে সারাজীবন কাটানোর পরিশ্রুতিবদ্ধ হয়। সেদিনের ভালোবাসায় ওরা ভুলেই যায় ওদের পরিবারের কথা।
ঋষি ভালো পরিবারের সন্তান
হলেও নিজের পায়ে এখনো ঠিকমতো দাঁড়ায়নি। এদিকে দুজনের বয়সের ফারাক
মাত্র কয়েক মাস। কি করবে কি যে হবে পুরো দিশেহারা। তবুও মনে হাজার আশা । হয়তো ঋষি
প্রতিষ্ঠিত হয়ে রিমঝিমকে বিয়ে করবে । এবার আসল অপেক্ষা শুরু।
চোর যতই সাবধানে চুরি করুক হয়তো কিছু প্রমান রেখে যায়, ঠিক তেমনই রিমঝিমও একদিন এত সতর্কতা সত্ত্বেও বাড়ির সবার কাছে ধরা পড়ে যায় । সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ঋষি রিমঝিমের ।এক একটা দিন যেন এক এক বছরের সমান মনে হয়। অপেক্ষারত দুই প্রেমিক-প্রেমিকা বিলীন হয়ে যায় দুঃখের বেড়াজালে। কয়েকমাস কাটার পর বাড়ির লোক ভাবে হয়তো রিমঝিম সবকিছু ভুলে গেছে। তাই সন্দেহের তির সরে আসে রিমঝিমের উপর থেকে। আবার নতুন চেষ্টা শুরু দুজনের । দুজনেই একটা চাকরীর খোঁজ চলছে যদি কোনোদিন পরিবারের লোক রাজি হয়, যদি কোনোদিন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুটি মন ।
ঋষি রিমঝিম কি এক হতে পারবে?
সাত পাক সানাই এর আওয়াজে
চার হাত এক হয়ে যাবে। বধু বেশে রিমঝিম দাঁড়াবে ঋষির সামনে , শুভদৃষ্টি, মালাবদল
, সিঁদুরের লাল রঙ রাঙিয়ে
দেবে ওদের জীবন? নাকি ওদের অপেক্ষা
অপেক্ষায় রয়ে যাবে? দুটি মন দুই নদীর স্রোতে
তলিয়ে যাবে? সবই অজানা, অনিশ্চিত।
আমি চাই অপেক্ষার প্রহরের অবসান হয়ে হোক এক নতুন জীবনের শুরু বারবার হোক ভালোবাসার জয়। তখন আবার আমি কলম ধরবো হবে শুরু এক নতুন অধ্যায়।
“অপেক্ষারত মন দুটি যেন যায় মিলে ,
আবেগ আপ্লুত রাত রোজ জেগে
নিলে
ভগবানও মানবে হার
ভালোবাসার কাছে
তোমারা দুজন সঙ্গে থাকো হাতে হাত রেখে।“
প্রিয়া মহন্ত
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন