ভারতের প্রথম মহিলা গবেষক ও রসায়নবিদ - ডঃ অসীমা চ‍্যাটার্জী


 " সীমার মাঝে, অসীম, তুমি

                     বাজাও আপন সুর।

        আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ

                     তাই এত মধুর। "

                            ( - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গীতাঞ্জলি )


সত্যিই তাই! মানুষের আয়ু সীমিত। সবাইকে একদিন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তার মধ‍্যেও কিছু কিছু মানুষ এমন সব কাজ করে যান যা সকলকে আশ্চর্যচকিত করে দেয়! তাঁরা জানেন জীবন সীমিত, সাথে এটাও জানেন একমাত্র কাজই পারে 'সীমার মাঝে, অসীম' করে তুলতে! তাঁরা নিজেদের সৃষ্টি নিয়ে ব‍্যস্ত থাকেন। তাঁদের সেই সৃষ্টির মধুরতা আমাদের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, সমাজের উপকার সাধন করে

আমরা এই সংখ‍্যায় এমনই একজন মহীয়সী নারীর কথা বলব। তিনি আর অন‍্য কেউ নন, আমাদের সকলের প্রিয় ভারতের প্রথম মহিলা গবেষক ও রসায়নবিদ ডঃ অসীমা চ‍্যাটার্জী, যিনি ছিলেন । উদ্ভিজ্জ রসায়নের তিন তারকা বিজ্ঞানী শেষাদ্রি-গোবিন্দাচারি-বেঙ্কটরমনের সঙ্গে এক নিশ্বাসে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম।জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়নের প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক পল কারনার তাঁর ল্যাবরেটরি লগবুক ও ওয়র্কিং-নোটে সস্নেহে উল্লেখ করে যান সুদূর ভারত থেকে আসা তাঁর শান্ত ও মেধাবী ছাত্রীটির কথা। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের হলুদ হয়ে যাওয়া পুরনো নথি জানান দেয়, এঁরই হাত ধরে সেই ১৯৪০ সালে সূচনা হয়েছিল কলেজের রসায়নবিদ্যা বিভাগের।আমাদের চারপাশের চিরচেনা গাছপালার মধ্যে লুকিয়ে থাকা আয়ুর্বেদিক সম্পদকে পুনরাবিষ্কার করেছিলেন ডঃ অসীমা চট্টোপাধ্যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের স্বদেশি চেতনাজাত ভারতীয় জ্ঞানচর্চার এক প্রবল প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।

চশমা পরা শ‍্যামলা মেয়ের জয় জয়কার

 

  অসীমা চট্টোপাধ্যায় ( ফটো সংগ্রহ : ইন্ডিয়ান অ্যাকাদেমি অফ সায়েন্স )

 

জন্ম সাল ও তারিখ  ১৯১৭ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর।

জন্ম স্থান  কলকাতা। 

আদি নিবাস হুগলির হরিপালের। 

পিতা চিকিৎসক ইন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। 

মাতা কমলা দেবী। 

ভাই প্রখ্যাত চিকিৎসক সরসী রঞ্জন মুখোপাধ্যায়৷ [১]

স্বামী ড. বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়। 

কন‍্যাঅসীমাদেবীর এক কন্যা বর্তমান। নাম জুলি।

শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানে। 

 

প্রথম জীবনে পিতা ও পরবর্তীকালে তাঁর স্বামী অসীমা দেবীকে পড়াশোনাগবেষণায় খুবই উৎসাহ দিয়েছিলেন। তাঁর পিতাও একজন নামকরা চিকিৎসক ছিলেন এবং স্বামী ছিলেন নামকরা প্রফেসর। 

শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন

অসীমা দেবীর মা শ্রীমতী কমলা চ‍্যাটার্জী মেয়েদের পড়াশোনার ব‍্যাপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন। একেই অসীমা দেবী ছিলেন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে, সেইজন‍্য অনেকরকম বাধানিষেধ ছিল। পরিবারের লোকজন যখন শুনলেন যে তিনি ছেলেদের সাথে একই কলেজে পড়বেন, তখন তাঁরা যথারীতি এর বিরোধিতা করলেন। কিন্তু মা কমলা দেবীর জন‍্য সেইসব বিরোধিতা অসীমা দেবীর কলেজে পড়া থেকে আটকে রাখতে পারেনি। 

তিনি বেথুন কলেজিয়েট থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন। আই.এসসি. ( I.Sc.) পাশ করেন বেথুন কলেজ থেকে।  বেথুনে ইন্টারমিডিয়েট-এর পালা শেষ করে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক (১৯৩৬ সাল)  সেখান থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে এলেন অসীমা। ১৯৩৮ সালে রাজাবাজার সাইন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করলেন রৌপ্যপদক নিয়ে। অবশ্য তার আগেই মিলে গিয়েছে পথ, মনে-মনে ঠিক করে ফেলেছেন, ফাইটো-অ্যালকলয়েড বা উদ্ভিজ্জ উপক্ষারই হবে তাঁর গবেষণার কেন্দ্রীয় বিষয়। তারপর আর অন্য কোনও দিকে ফিরে তাকাননি তিনি।

মেয়েকে সব দিক থেকে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে কোনও দিকে খামতি রাখেননি বাবা-মা৷ প্রাচীন সাহিত্য পড়ে জ্ঞান লাভের জন্য সংস্কৃত শিখিয়েছিলেন মেয়েকে৷ উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে ১৪ বছর তালিম নিয়েছিলেন অসীমা চট্টোপাধ্যায়৷

১৯৪০ -এ লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান ছিলেন তিনিই৷ তিনিই প্রথম মহিলা যিনি রসায়ন শাস্ত্রে কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডিএসসি' ডিগ্রি পান ১৯৪৪ সালে৷ ওই বছরই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সাম্মানিক শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন৷

তিনি গবেষণা করেছেন ইউনির্ভাসিটি অব উইসকন্সিন , ম্যাডিসন ও ক্যালটেক থেকে৷ দেশে ফিরে ১৯৫৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ছিলেন প্রফেসর হিসেবে৷

কৃতিত্ব

অধ‍্যাপিকা অসীমা চ‍্যাটার্জীর গবেষণাকাল প্রায় ৬০ বছর বিস্তৃত ছিল। মৌলিক গবেষণার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি সর্বদা দেশীয় উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ফাইটোক‍েমিক‍্যালকে ড্রাগ ও ড্রাগ-ইন্টারমেডিয়েটস হিসাবে ব‍্যবহারের উপর জোর দিতেন। 

তিনি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন তাঁর ভিঙ্কা অ্যালকলয়েডের (নয়নতারা গাছ থেকে প্রাপ্ত উপক্ষার) ওপর গবেষণার জন্য , যেটি কর্কট রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়৷ মৃগী রোগের ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন শুশুনি শাক থেকে এবং ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন ছাতিম , কুটকি , চিরতা প্রভৃতি গাছ থেকে৷ তাঁর অক্লান্ত গবেষণার ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি কেমোট্যাক্সোনমি ও ওষধি-ক্ষেত্রে তার প্রয়োগের নানা নয়া উপায় ও উপকরণ। ইন্ডোল অ্যালকলয়েডস বিষয়ে মৌলিক গবেষণায় তিনি কাজ করেছেন রাওলফিয়া, আলস্টনিয়া, কপসিয়া, রাজিয়া ও ভিঙ্কা গোত্রের ওষধিগুণসম্পন্ন গাছগাছড়া নিয়ে। রুটাসিয়া, আম্বিলিফেরা, কম্পোজিটা ও ইউফর্বিয়াসি গোত্রের উদ্ভিদের মধ্যেকার কোমারিনস ও টার্পিনয়েডস নিয়েও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। দু’ধরনের জলজ ফার্ন, মার্সিলিয়া মাইনিউটা ও মার্সিলিয়া রাজস্থানেনসিস-এর থেকে অ্যালকলয়েড নিষ্কাশন করে মৃগী রোগের চিকিৎসায় তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা প্রমাণ করেছেন অসীমাদেবী। স্নায়ুরোগ ও উচ্চরক্তচাপজনিত অসুস্থতার উপশমে রাওলফিয়া অ্যালকলয়েডের উপকারিতা প্রমাণ করেছেন তিনি।

ক্যান্সার নিরাময় বিষয়ে বিশ্বপ্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী লাইনাস পাওলিং একসময় সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিলেন৷ নিয়ম করে ভিটামিন সি খাবার খাওয়ার খুব সহজ পরামর্শ ছিল তাঁর৷ বিতর্কও হয়েছিল এ বিষয়ে৷ ১৯৭৯ সালে তিনি ‘ক্যান্সার অ্যান্ড ভিটামিন সি’ শীর্ষক একটি বই লিখেছিলেন৷ ক্যান্সার নিরাময় বিষয়ে কাজ করেছিলেন অসীমা চট্টোপাধ্যায়ও৷ ১৯৫৩ সালের ৭ জুলাই তিনি চিঠি লিখে সর্পগন্ধার অ্যালকালয়েড বা উপক্ষারের এক্স-রে বিশ্লেষণগত ফলাফল বিষয়ে পরামর্শ চান পাওলিং-এর কাছে৷

ভারতীয় বনৌষধি নিয়ে গবেষণা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছিল৷তাঁরই প্রচেষ্টায় সল্টলেকে গড়ে ওঠে 'আয়ুর্বেদ গবেষণা কেন্দ্র'

গবেষণাপত্র,পর্যালোচনা নিবন্ধ, গ্রন্থ

তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রায় ৪০০ টি গবেষণাপত্র এবং নামী সিরিয়াল ভলিউমে একাধিক পর্যালোচনা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসীমা চট্টোপাধ্যায় ডক্টরেট করার পর প্রকাশিত হ ভারতীয় ভেষজ নিয়ে তাঁর বহুচর্চিত গবেষণাপত্র “Indol-Alkaloids and Coumarin of Indian Medicinal Plants”।

অধ‍্যাপক সত‍্যেন্দ্রনাথ বোসের (এফআরএস) অনুরোধে তিনি মাধ‍্যমিক বিদ‍্যালয়ের ছাত্রদের জন‍্য রসায়নের উপর বাংলায় 'সারাই মাধ‍্যমিক রসায়ন' বই লিখেছিলেন। এই বইটি 'বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ' প্রকাশ করেছিল। 

ভারতীয় বনৌষধি নিয়ে গবেষণা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও সম্মান এনে দিয়েছিল৷ তিনি 'ভারতের বনৌষধি' ( মূল সংকলক - ডক্টর কেপি. বিশ্বাস ) সম্পাদনা করেছিলেন এবং এটি পুনরায় লিখেছিলেন। এটি মোট ৬ টি খন্ডে ( খন্ড  ১-৫, ১৯৭৩; খন্ড ৬, ১৯৭৭ ) প্রকাশিত হয়েছিল 'কলকাতা ইউনিভার্সিটি প্রেস' থেকে। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংকলনটি ভারতের ঔষধি গাছ সম্পর্কে লেখা। 

অসীমা চট্টোপাধ্যায় সত্যেশচন্দ্র পাকড়াশির সঙ্গে যৌথভাবে রচনা করেন ‘দ্য ট্রিটিজ অব ইন্ডিয়ান মেডিসিন্যাল প্ল্যান্টস শীর্ষক গ্রন্থ৷

পুরস্কার

১৯৭৫ সালে পান পদ্মভূষণ ( ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান)৷

১৯৭৫ সালে 'বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স' তাঁকে বিজ্ঞানে অবদানের জন‍্য 'বর্ষসেরা মহিলা' হিসাবে সম্মান দেন। 

'ইন্ডিয়ান ক‍্যামিক‍্যাল সোসাইটি' এর তরফ থেকে স‍্যার পি.সি.রায় (১৯৭৪) এবং পি.কে.বোস (১৯৮৮) লেকচারশিপ পান। 

'হরি ওম আশ্রম ট্রাস্ট' (১৯৮২) এর তরফ থেকে স‍্যার সি.ভি.রমণ পুরস্কার পান। এটি দেয় 'ইউনিভারসিটি গ্রান্টস কমিশন' 

'ইন্ডিয়ান ন‍্যাশনাল সায়েন্স অকাডেমি' এর তরফ থেকে প্রফেসর শিশির কুমার মিত্র লেকচারশিপ (১৯৮৪) পান। 

'ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ‍্যাসোসিয়েশন'-এর তরফ থেকে ড.জি.পি. চ‍্যাটার্জী লেকচারশিপ (১৯৯৪)  এবং স‍্যার আশুতোষ মুখার্জী গোল্ড মেডেল (১৯৮৯) পান। 

গোয়া ফাউন্ডেশন, কুরুক্ষেত্র ইউনিভারসিটি -এর তরফ থেকে গোয়া পুরস্কার (১৯৯২) পান। 

ইন্দিরা গান্ধী প্রিয়দর্শিনী পুরস্কার, অল ইন্ডিয়া ইউনিট কনফারেন্স (১৯৯৪)। 

'সেন্ট্রাল কাউনসিল ফর রিসার্চ ইন আয়ুর্ভেদ এন্ড সিদ্ধা' (গভরমেন্ট অফ ইন্ডিয়া ) -এর তরফ থেকে সিলভার জুবিলি পুরস্কার (১৯৯৫) পান। 

'কলকাতা ইউনিভারসিটি' -এর তরফ থেকে পান ইমিনেন্ট টিচার পুরস্কার (১৯৯৬)। 

'বিশ্ব ভারতী ইউনিভারসিটা' -এর তরফ থেকে পান রথীন্দ্র পুরস্কার (১৯৯৭)। 


গুণীজনের সঙ্গ :

শিক্ষা এবং কর্মসূত্রে পেয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ,ডঃ মেঘনাদ সাহা প্রমুখ ভারতসেরা বিজ্ঞানীদের সাহচর্যশিক্ষকরূপে পেয়েছেন অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র বসু, অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র, ভারতীয় জৈব-রসায়নচর্চার অন্যতম পুরোধাপুরুষ অধ্যাপক জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখদের। স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠ শেষ করেই গবেষণা শুরু করেন অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার বসুর তত্ত্বাবধানে, যাঁর হাত ধরে এ-দেশে আধুনিক উদ্ভিজ্জ রসায়নচর্চার সূত্রপাত। কিন্তু স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই মনে-মনে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন ভবিষ্যতের গবেষণার বিষয় সংক্রান্ত বিষয়ে। দেশজ প্রকৃতির মধ্যেই যে বিপুল ভেষজ সম্পদ ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলির প্রতি তাঁকে আকৃষ্ট ও শ্রদ্ধাশীল করে তোলে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের তীব্র স্বদেশিয়ানা – তাঁর কাছেই তিনি পান নিজের মাটির দিকে ফিরে তাকানোর মূল্যবোধ।

প্রথম আমেরিকা যাত্রা ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে আমৃত্যু সংযোগ

১৯৪৭-এ তিনি প্রথমবার আমেরিকা যান গবেষণার কাজে৷ এ সময় তিনি দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন গভর্নেস সহ তাঁর এগারো মাসের কন্যা জুলিকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকায় গিয়ে৷ সেখানেই তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্পর্শে আসেন ৷দেশে ফিরেও আমৃত্যু জড়িয়েছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে৷


 প্রফেসর অসীমা চ‍্যাটার্জী, তাঁর কন‍্যাকে নিয়ে। ১৯৪৮ সালে। রামকৃষ্ণ বেদান্ত সেন্টার, লস অ‍্যাঞ্জেলেস। কালীপূজার রাতে। চিত্রসূত্র : ইন্ডিয়ান অ্যাকাদেমি অফ সায়েন্স।

 

রামকৃষ্ণ মিশনের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন

অসীমা দেবীর বাবা মারা যাওয়ার চার মাসের মধ্যেই স্বামী মারা যান। এইসময় তিনি ভিতর থেকে খুবই ভেঙে পড়েন। কলেজে থাকাকালীন জোরালো হার্ট অ‍্যাটাকও হয়। হসপিটালে ভর্তি করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে স্বামী অভেয়ানন্দজী ( যিনি ভারত মহারাজ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন ) এবং স্বামী রঙ্গনাথননন্দজী মহারাজ অসীমা দেবীকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহায্য করেন।

 বিশেষ সম্মান

গুগল ডুডলে প্রয়াত বিজ্ঞানী অসীমা চট্টোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

 ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে বিজ্ঞানী অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে ডুডলে শ্রদ্ধা জানানো হয় গুগল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে

 ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস

 ১৯৭৫ সালে 'ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস'-এ প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী হিসাবে সাধারণ সভাপতি নির্বাচিত হন।১৯৭৫ সালে জানুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে ৬২-তম বিজ্ঞান কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেইখানেই মিসেস চ‍্যাটার্জী একটি বক্তৃতা দেন, 'ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ'। তাঁর বাকপটুতা ও দূরদর্শিতা উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করেছিল।  

রাজ‍্যসভার সদস্য

অসীমা দেবী রাজ‍্যসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ থেকে মে ১৯৯০ পযর্ন্ত। ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন

চিরবিদায়  ( ২০০৬ )

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, 'শূণ‍্য কলসির আওয়াজ বেশি'। সেই কলসি ভর্তি হয়ে গেলে আর আওয়াজ হয় না, তখন সেটা শান্ত হয়ে যায়। যেসব ব‍্যক্তিরা প্রকৃত জ্ঞানী হন তাঁরা ভর্তি কলসির মতো হন, শান্ত! অধ‍্যাপিকা অসীমা চ‍্যাটার্জী ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। তিনি জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত শিখে গেছেন। তিনি মনে করতেন, কোনো কিছু শিখতে গেলে কখনও লজ্জা করা উচিত নয়। তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও শিখতেন।তিনি কোনো রকম পুরস্কার বা ফলের আশা না করেই সারাজীবন নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন। তিনিই ছিলেন প্রকৃত 'কর্মযোগী'!

২০০৬ সালের ২২ শে নভেম্বর ৯০ বছর বয়সে ইহলোক ছেড়ে পরলোকের পথে যাত্রা করেন 'কর্মযোগী' অধ‍্যাপিকা অসীমা চ‍্যাটার্জী।তাঁর প্রতি আমাদের সকলের বিনম্র শ্রদ্ধা রইল। 


১  সরসী রঞ্জন মুখোপাধ‍্যায় তাঁর কাজের কৃতিত্ত্বের জন‍্য ১৯৬৮ সালে 'শান্তি স্বরূপ ভাটনগর' পুরস্কার পেয়েছিলেন। 


কলমে - সো মা  লা ই


চিত্রসূত্রঃ

https://medium.com/sci-illustrate-stories/asima-chatterjee-1ca581dc542f

অন্তরজাল 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন