বই-রবীন্দ্রনাথ
এখানে কখনও খেতে আসেন নি
লেখক- মোহাম্মদ
নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনী-বাতিঘর
পৃষ্ঠা-২৭২
প্রকাশকাল - ফেব্রুয়ারি ২০১৫
প্রচ্ছদ - সিরাজুল ইসলাম নিউটন
বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে - “মানুষের মন জয় করতে হলে আগে তার পেট জয় করতে হয়”। লেখক এই প্রবাদকে স্মরণ করেই সম্ভবত এই বই রচনা করেছেন।এই বইয়ের ক্ষেত্রে এই কথাটি সর্বৈব সত্য। কিভাবে?
বাংলাদেশের
এক ছোট্ট গ্রাম সুন্দরপুর। নামের সাথেই সামঞ্জস্য রেখে ছবির মত সুন্দর এই গ্রাম। শহর
থেকে খানিকটা দূরে গড়ে উঠেছে এই উপনগরী স্বরূপ গ্রাম। দূর – দূরান্ত থেকে পর্যটক, ভ্রমনবিলাসী
মানুষ এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে বেড়াতে আসেন।আর আসেন এই গ্রামের এক বিখ্যাত
রেস্তোরাঁর অত্যন্ত সুস্বাদু খাবারের স্বাদ গ্রহন করতে। এই রেস্তোরাঁর খাবারের স্বাদ
একবার পেলে নাকি তার জন্য বারবার আসতে হয়।এতই নেশা ধরানো সেই খাবারের স্বাদ।রেস্তোরাঁর
নামকরণ যেমন চমকপ্রদ তেমনি রহস্যাবৃত। নাম – “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন
নি।“ কেন এই নাম? তার পশ্চাৎ কাহিনী
কি? তাও রহস্যে ঘেরা। রহস্যে আবৃত এই রেস্তোরাঁর খাবারের উপকরণসমূহ। সাথে আছেন জীবন্ত
রহস্যময়ী অতীব সুন্দরী রেস্তোরাঁর মালকিন মুসকান জুবেরি।গ্রামের জমিদারবাড়িতে
একাই থাকেন তিনি। তিনি কে? কি তাঁর প্রকৃত পরিচয়? কি তাঁর অতীত? এই সব কিছুই ধোঁয়াশাবৃত। কেউ কোনো
বিষয়েই সঠিক কিছুই জানে না। পুলিশ প্রশাসনের উপরমহল থেকে শুরু করে সমাজের মাথারাও তাঁর
অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কেউ তাই কোনও রহস্য উন্মোচনের চেষ্টাও করেন না।
এই
পরিস্থিতিতে এক আগন্তুকের আগমন। নুরে ছফা। তিনি এসেছেন এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে।
কেন তিনি উদ্যোগী হলেন এই জটিল রহস্য উন্মোচনে?কে তিনি? এসে তিনি সহকারী করে নিলেন গ্রামের এক সাধারণ মানুষ
অতি উৎসাহী আতর আলীকে।এরপর কি হল? কী কী রহস্য তাঁরা ভেদ করলেন? কি পরিণতি হল শেষে?
এই সমস্ত রহস্যের সমাধান শেষ অবধি কি করা গেল? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে এই বই পড়তেই
হয়।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন রহস্য উপন্যাস ঘরানার লেখকরূপে এক পরিচিত
নাম। তাঁর রচিত “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি” বইটি ২০১৫ সালের
২৪শে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় সাথে সাথে বাংলাদেশ এবং কলকাতায় সমানভাবে
জনপ্রিয়তা লাভ করে। বইটির নতুনত্ব বইয়ের নামকরণে। এই অদ্ভুত নামের কারণ জানতে
আগ্রহী পাঠক বইটি পড়তে শুরু করেন। এবং রহস্যের ঠাসা বুনটে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
একজন ভারতীয় পাঠক হিসাবে নিজাম উদ্দিনের লেখা এই বই আমার প্রথম পড়া। মনস্তাত্বিক,
রহস্য-রোমাঞ্চ বিষয়ভিত্তিক এই বই এতই মনগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক, যে এক নিঃশ্বাসে পড়ে
ফেলতে হয়। প্রথম খণ্ড পড়ার পর দ্বিগুন উৎসাহে দ্বিতীয় খণ্ডটিও শেষ করে ফেলি। এরপরে
লেখকের অন্যান্য বই পড়তে শুরু করে দিই। এইখানেই সম্ভবত এই বইয়ের সফলতা। একজন
সম্পূর্ণ নতুন পাঠককে শুধু সেই বইটিই নয়, লেখকের অন্যান্য বই পড়তেও আগ্রহী করে
তোলে। লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন একটি
সাক্ষাৎকারে এই বই প্রসঙ্গে বলেছিলেন – “বইয়ের চাইতে
শক্তিশালী খাবার এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি!” যথার্থ বলেছিলেন। এই
বই অত্যন্ত সুস্বাদু ও রহস্যমণ্ডিত।
কলমে - পা র মি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন