এই তপু দি দেখেছো আমাদের ৪ নম্বর গলিতে একটা নতুন বাড়ি হয়েছে ?
হ্যাঁ দেখেছি, তো কী হয়েছে অনু?
রীনা আর রোহন বাবুর না
কী ১০ বছর বিয়ে হয়েছে।
হ্যাঁ তো? এত ভনিতা না করে আসল কথা বল না। ওদের কোনো ছেলেপুলে নেই, মানে এখনও হয় নি।
ওমা তাই না কী রে?
তা তুই বউটার সাথে আলাপ
জমিয়েছিস?
হ্যাঁ একটু একটু জমিয়েছি।
তাতেই কত্ত দুঃখ করছিলো। আমিও একটু সমবেদনা দিলাম আর কী!
তপু দি আর কিছু বলল না।
নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
কিছুদিন পর পাড়ার পূজা
মন্ডপে
এই রীনা এইদিকে এসো একটু
গল্প করি।
হ্যাঁ যাই।
আচ্ছা শুনলাম তোমার না কী
১০ বছর বিয়ে হয়েছে!
হ্যাঁ।
বাচ্চা নেই না! আহ্ রে!
বড্ড কষ্ট! আচ্ছা অপারেশন করিয়েছো? এখন
অনেক রকম উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা বের হয়েছে। ভালো ডাক্তার দেখিয়েছো তো? ডাক্তার ভালো হলে অসম্ভবও সম্ভব হয়!
হ্যাঁ দিদি ভালো ডাক্তার
দেখিয়েছি। বলেছে এখনও আশা আছে। দেখা যাক কী হয়!
রীনা বলতে পারছে না যে ওর
সমস্যা নেই। যা সমস্যা ওর স্বামীর! সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শেখে নি
স্বামীর বদনাম করতে!
কিছুদিন পর পাড়ার কলতলাতে
এই চম্পা দি কাল রীনাকে ওর
স্বামী খুব মারছিলো না? তুমি তো সামনে থাকো শুনতে
পাবে ভালো। আমি ছাদে ছিলাম। মনে হল ওদের বাড়ির দিক দিয়েই আওয়াজ আসছিলো!
হ্যাঁ রে রুপু ঠিকই
শুনেছিস। আসলে বাঁজা মেয়েকে নিয়ে কে সুখী হবে বল? দাদারও
তো ইচ্ছা করে ছোট্ট বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে! তাই বিরক্ত হয়ে মেরেছে মনে হয়!
কে জানে বাপু! আমার
ভদ্রলোকটিকে তেমন সুবিধার মনে হয় না। আচ্ছা চললাম, তোমরা
গল্প করো, ছেলেটার আবার অঙ্ক টিউশন
আছে।
দু’বছর পর
রীনাদের বাড়ির একটা ছোট্ট
ঘরে মেস ভাড়া দেওয়া হয়েছিলো। একটা ছেলে আজ একবছর হল আছে। এদিকে রীনা গর্ভবতী।
ছেলেটা পড়াশোনাতে বেশ ভালো। গ্রামের ছেলে, শহরে
উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছে। রীনারাই খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
পাড়াতে আবার গুঞ্জন
তপু দি রীনার বাচ্চা হবে
শুনলে?
হ্যাঁ রে শুনলাম। শুনে
খুব ভালো লাগলো। আহ্! বেচারা মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছিলো বল?
হ্যাঁ সে না হয় হল, কিন্তু!
কিন্তু কী? এই তোকে না ভনিতা করতে মানা করেছি? আরে বাপু যা হয়েছে সোজাসুজি বল না?
ঐ বাচ্চাটা রোহন বাবুর নয়।
কী সব উলটো পালটা বকছিস? তুই দেখতে গিয়েছিলি না কী? আজব তো!
আরে শোনোই না, এত রেগো না গো। সবাই বলছিলো, ঐ যে ওদের
বাড়ির মেসে যে ছেলেটা এসেছে না বাচ্চাটা না কী ওর! ছেলেটার সাথে রীনার খুব দহরম
মহরম। পাশের বাড়ির পূর্ণা বউদি দেখেছিলো একদিন। রীনাদের জানালা ওদের সোজাসুজি যে!
তারপর রোহন বাবু অফিস চলে গেলে ঐ ছেলেটার সাথে স্কুটি শিখতে যায় একদম গা ঘেঁষে
ঘেঁষে!
চুপ কর মুখপুড়ি। আর শুনতে
ভালো লাগছে না ঐসব কথা। এতদিন ছেলেপুলে হয় নি বলে এক অপবাদ, আর এখন আর এক অপবাদ! মানুষ সুযোগ পেলেই হল!
তুই এখন বাড়ি যা, আমার মেলা কাজ পড়ে আছে।
তপতী সেনের অতীত
তপুদির রাগার কারণ আছে।
ওরও রীনার মতোই এক ইতিহাস আছে। যেটা এই পাড়ার কেউ জানে না, ঘটনাটা ঘটেছিলো গ্রামে। তারপরই ওরা শহরে চলে
আসে, তখন দীপান গর্ভে।
তপুদির মতে, এই জন্য সমাজই দায়ী। ও তো চায় নি ঐরকম করতে, কিন্তু ঘরে বাইরে এত গঞ্জনা আর সহ্য হল না।
একদিন সুরেনের দূর সম্পর্কের ভাইয়ের সাথেই অঘটন ঘটে গেলো! তপতী সেন পেলো সন্তানের
সুখ! এক অপবাদ ঘুচে আর এক অপবাদের স্বীকার হল!
তপতী সেনের ডাইরি লেখার অভ্যাস
আছে। সে ঐখানে নিজের মনের সব কথা লিখে রেখেছে। লিখলে মনে শান্তি আসে। আত্ম
সমালোচনা করা যায়। তাতেই নিজেকে স্বচ্ছতার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে।
রীনার সম্পর্কে সুতপার
মতামত
সুতপা পাড়ার P.N.P.C তে থাকে না। জল আনতে গিয়ে টুকরো টুকরো যতটুকু
ভেসে আসে ঐটাই শোনে। গম্ভীর ব্যাপার হলে একটু ভাবে, তবে
মুখে কিছু বলে না। আর না হলে কলতলার কথা কলতলাতেই শেষ করে চলে আসে। বাড়িতে
ঐসব বলে ফালতু সময় নষ্ট করে না।
তা সুতপার এক আত্মীয়ারও
সন্তান হয় নি। অনেক চেষ্টা করেছে,
কিন্তু
হয় নি। আত্মীয়ার স্বামীরই সমস্যা ছিলো। সেই আত্মীয়াটি ভাগ্যবতী। কারণ, প্রথম প্রথম কথা শুনলেও এখন কেউ কিছু বলে না।
বরং বেশি ভালোবাসা পায় সকলের কাছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুব ভালোবাসে। কারণ, সবাই বুঝেছে ওর দোষ নেই। আর বেশি বললে কী
অঘটন ঘটে যাবে বলা যায় না। বাড়ির অন্য ছেলেপুলেগুলোও খুব স্নেহ করে। সেই আত্মীয়া
এখন গৃহকর্ত্রী। পরিবারের সবার যত্ন করে। পরিবারকে একসাথে আদর, স্নেহ দিয়ে জুড়ে রাখে।
সুতপা ভাবে, পরিবারের লোক ভালো হলে এইসব কিছুই ঘটবে না। হ্যাঁ
কিছু ব্যাতিক্রম আছে, যাদের যতই আদর দাও স্বভাব
দোষে অঘটন ঘটিয়েই ছাড়ে। কিন্তু বৃহৎ অংশের মানুষ অপবাদ, ক্ষোভ থেকে অঘটন ঘটিয়ে দেয়। সুতপার মতে, সময় থাকতেই সমস্যা বুঝে যদি সমাধান করা হয়
তবে বহু অঘটন আটকানো যাবে!
কিছুদিন পর রীনার ছেলের
অন্নপ্রাসনে
রুই মাছের কালিয়াটা হেব্বি
হয়েছে না চম্পা দি?
হ্যাঁ রে রুপু খুব ভালো
বানিয়েছে।
শুনলে রীনাদের
ন্যাকামি?
কী বল তো?
আরে, ওরা বলে বেড়াচ্ছে বাচ্চাটা টেস্টটিউব বেবি!
ও মা তাই? তা বেশ!
কী বেশ?
না মানে ভেবে দেখ, যদি ওটা না বলে তবে ভবিষ্যতে খারাপ হবে, বিশেষ করে বাচ্চাটার। ও তো কোনো দোষ করে নি
বল?
হ্যাঁ তা ঠিক।
যাক গে, ওদের ব্যাপার ওরা বুঝুক গে। আমাদের একটু
ফ্রিতে বিনোদন হল আর কী! মেয়েটারও সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা আছে, অনেক কাজ আছে। চল তাড়াতাড়ি খেয়ে বাড়ি চলে যাই।
হ্যাঁ চল।
এই
হল সমাজের 'অপবাদ' এর
নমুনা!
বি:দ্র: এই গল্পের সাথে
কারও মিল থাকলে সেটি কাকতলীয়। কোনো ব্যক্তি, জাতি
বা ধর্মকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখা হয় নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন