এই সমস্ত সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায় যদি আমরা নিয়মিত
কিছু ঘরোয়া উপায়ে চুল পরিচর্যা করে থাকি।শীতকালীন চুলের বিভিন্ন সমস্যা ও চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখার জন্য কিছু
গুরুত্বপূর্ণ উপায় আজ আমরা আলোচনা করব।
শীতকালীন সমস্যা
শুষ্ক চুলঃ শীতে আর্দ্রতার অভাবে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। চুলের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ও রং হারিয়ে ফেলে। কালো চুল অনেকসময়ই লালচে বর্ণ ধারণ করে।
চুল পড়াঃ শীতকালীন শুষ্ক আবহাওয়ার
জন্য এবং অন্যান্য বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে চুল পড়তে শুরু করে।
খুসকিঃ পরিবেশে ধুলো ময়লা
বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মাথার ত্বকের তৈলগ্রন্থি সঠিক পরিমানে তেল নিঃসরণ করতে না পারলে
খুসকি বৃদ্ধ পায়। এছাড়া ঠাণ্ডার প্রকোপে অনেকেই সঠিকভাবে চুল পরিস্কার করেন না। খুসকি
হওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ।
জট বাধাঃ শীতকালীন শুষ্কতার
জন্য চুলে স্ট্যাটিক ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হয়। ফলে এই সময় চুলে সহজে জট বেঁধে যায়। এছাড়া
এই একই কারণে চুল সমান ভাবে আঁচড়ানো যায় না।
ডগা ফাটাঃ শীতকালে
অযত্নের কারণেই চুলের ডগা ফাটার সমস্যাও দেখতে পাওয়া যায়।
চুলকানিঃ অপরিষ্কার থাকার জন্য,
অতিরিক্ত ধুলো ময়লার সংস্পর্শে আসার জন্য, এই সময় মাথার ত্বকে বিভিন্ন ধরণের ত্বকের
সমস্যা – চুলকানি সৃষ্টি হয়।
চুলের যত্নঃ
১) চুলের যত্নে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে বাইরে থেকে চুলের
যত্ন করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই সুখাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে। দিনে
অন্তত ২/৩ লিটার জল খাওয়া আবশ্যক।
২) নিয়মিত চুল শ্যাম্পু করে পরিষ্কার রাখা দরকার। রোজ সম্ভব
না হলেও অন্তত সপ্তাহে ২/৩ দিন শ্যাম্পু করা অত্যন্ত জরুরী। স্নানের সময় হালকা উষ্ণ
জল ব্যবহার করা ভালো।
৩) শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে বা অন্তত ২ ঘণ্টা আগে নারকোল
তেল ( Virgin Coconut Oil) বা অলিভ তেল
(Virgin Olive Oil) অল্প উষ্ণ করে মাথার ত্বকে ভালো করে মালিশ করে নেওয়া দরকার।
৪) উষ্ণতেলের মালিশ চুলে মসৃণতা ও ঔজ্জ্বল্য দান করে। চুলকে
রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৫) শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কোনো ভালো মানের কন্ডিশনার লাগানো
দরকার।
৬) ভিজে চুল জোর করে আঁচড়ানো উচিত নয়। এতে চুলের ডগা ফাটার
সাথে সাথে চুল ছিঁড়ে চুল পড়ার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
৭) চুল শুকানোর জন্য ব্লোয়ার ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করাই
ভালো।অতিরিক্ত ব্লোয়ার ব্যবহারে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে লালচে বর্ণের হয়ে যায়।
৮) প্রতি পনেরো
দিনে একবার হেনা করলে চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পায়।এক্ষেত্রে হেনা করার সঠিক পদ্ধতি
অবলম্বন করতে হবে।হেনা করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
৯) চুলে রাসায়নিক দ্রব্যাদি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা ভালো।
১০) শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার চুলের প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যবহার
করতে হবে।
১১) চুল পড়া রোধে অ্যালোভেরা জেল, অলিভ অয়েল ও ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা
গরম করে নিতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তাতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল
ভেঙে মিশিয়ে চুলে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
১২) খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আধা কাপ অলিভ অয়েল হালকা
গরম করে এর সঙ্গে একটি পাতিলেবুর রস
মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে। ৪৫ মিনিট রেখে হালকা কোনো
শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার
এভাবে চুলের যত্ন নিলে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া বিভিন্ন মেডিকেটেড শ্যাম্পু
ব্যবহার করেও এই সমস্যা দূর করা যায়।
১৩) ভিজে চুল মোছার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে। বেশী জোরে ঘষে চুল মুছলে চুলের ক্ষতি
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।ভিজে চুল আঁচড়ানো চুলের প্রভূত ক্ষতি করে।
১৪) শীতকালীন শাকসব্জি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য একান্ত
প্রয়োজন।বিট, গাজর, বিনস, শিম, বরবটি, নানারকম শাক, মটরশুঁটি,বাঁধাকপি,
ফুলকপি, ইত্যাদি
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার।
১৫) বিভিন্ন ফল যেমন আপেল, আঙুর,পেয়ারা, পেঁপে, কমলালেবু, নাসপাতি প্রভৃতি প্রতিদিন
খেলে চুলের স্বাস্থ্য বজায় থাকবে।
১৬) বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় মাথা কাপড় বা টুপি দিয়ে ঢেকে রাখলে, চুল ধুলো ময়লার
থেকে রক্ষা পাবে।
চুল ছোট হোক বা বড় নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্যা করা একান্তই দরকার। সামান্য কিছু বিষয়
নিয়মিত খেয়াল রাখতে পারলেই চুল হয়ে ওঠে সুন্দর ও মসৃণ।
কলমে - পা র মি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন