উৎসব মরসুমে প্রচুর অনিয়মে শরীর মন দু'টোই ক্লান্ত আর অবসন্ন। তাই নিয়ে এলাম একরকমের বাঙ্গালী ঘরানার খাওয়া যা ঘরোয়া কিছু মশলার মেলবন্ধন আর রন্ধনপ্রণালীর বিশেষত্বে মুখের রুচিবদল থেকে শুরু করে শরীর ঠান্ডা রাখতে খুব সাহায্য করবে। ঐতিহ্যকে সামনে রেখে নিজের মুখের স্বাদ এবং ব্যক্তিগত ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিয়ে আজ নিয়ে এসেছি খুব সাধারণ কিছু ঘরোয়া খাবারের রেসিপি।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অবদান শুধুমাত্র বঙ্গীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাঙালির রান্না ঘরেও তাঁদের বহুবিধ অবদান রয়ে গেছে।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন সদস্য ও সদস্যাই এব্যাপারে দক্ষতার নিদর্শন রেখেছেন।এই বিষয়ে ভোজনবিলাসী হওয়ার সাথে সাথে ঠাকুরবাড়ির রন্ধনে পারদরশীতার কথাও আমরা বিভিন্ন বই থেকে জানতে পারি। আজ সেই রান্নার কিছু ছোঁয়াই আমরা নিয়ে এলাম।
১) কাঁচা মরিচের পাঁচমিশালী সব্জি
উপকরণঃ
- কাঁচকলা
- পেঁপে
- কুমড়ো
- পটল
- ঝিঙে
- সজনের ডাঁটা
- বরবটি
- ঘি - ২ চামচ
- সরষের তেল - ১ চামচ
- কালোজিরে - ৩ চামচ
- কাঁচালঙ্কা - ৩ টে
- আদাবাটা- ৪ চামচ
- নুন - স্বাদমতো
- চিনি - স্বাদমতো
- হিং - পরিমাণমতো
- ভাজা মশলা (গোটা লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, গোটা জিরে, ধনে, ১ টা গোটা শুকনো লঙ্কা হাল্কা করে ভেজে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে)
প্রণালীঃ
- উপরের প্রতিটা সব্জি অল্প পরিমাণে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে রান্নার কিছুটা আগে থাকতে নুন আর সামান্য হলুদ এবং খুব অল্প তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। এতে রান্নার সময়ও বাঁচে আর সবজিগুলো সুসিদ্ধ ও সুস্বাদুও হয়।
- কড়াইতে ঘি আর হিং যোগ করে গরম করতে হবে।
- গরম হওয়ার পরে সামান্য কালোজিরে ও একটা কাঁচালঙ্কা ফোড়নে যোগ করতে হবে।
- এরপর মশলা মাখানো সব্জিগুলো একে একে ছাড়তে হবে।
- অল্প ভাজামশলা যোগ করে, হাল্কা আঁচে খুব ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করে ভাজা ভাজা করে নিতে হবে।
- এরপর অল্প নুন ছড়িয়ে কড়াইটি ঢাকা দিয়ে হাল্কা আঁচে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে।
- ভালোভাবে ভাজা ভাজা হয়ে এলে হাল্কা গরমজল দিয়ে সব্জিগুলোকে ঢাকা দিয়ে সিদ্ধ হতে দিতে হবে।
- এইসময় কালোজিরে মিক্সিতে গুঁড়ো করে তার সাথে আদাবাটা, ২ টো কাঁচালঙ্কা আর অল্প দুধ মিশিয়ে মিক্সিতে আরেকবার ঘুরিয়ে একটা বাটামশলা বানিয়ে নিতে হবে।
- এর মধ্যে সব্জিগুলো সুসিদ্ধ হয়ে এলে ঐ বাটামশলাটা দিয়ে হাল্কা নাড়াচাড়া করে চিনি যোগ করে মিনিট ২ হাল্কা আঁচে রেখে দিতে হবে।
- শেষে নুন মিষ্টি টেস্ট করে নামিয়ে নিতে হবে।
২) লাউ পোস্তঃ
উপকরণঃ
- ছোটো ছোটো টুকরো করে রাখা লাউ
- নারকেলের দুধ ( ঐচ্ছিক )
- পোস্ত বাটা
- মটর ডাল বাটা
- কালো জিরে
- কাঁচালঙ্কা
- সরষের তেল
- নুন
- চিনি
প্রণালীঃ
- কড়াইতে তেল গরম হলে অল্প কালোজিরে আর কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে লাউয়ের ডুমো ডুমো টুকরোগুলো আস্তে আস্তে ছাড়তে হবে। এরপর নুন দিয়ে হাল্কা আঁচে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
- এরমধ্যে পোস্ত জল ছাড়া ১ টা কাঁচালঙ্কা দিয়ে আগে বেটে নিতে হবে। পরে একে একে নারকেলের দুধ, নুন, মিষ্টি, কাঁচা সরষের তেল আর সামান্য হলুদ দিয়ে অল্প জল সহকারে আরেকবার বেটে নিতে হবে।
- আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখা মটর ডাল,নুন, মিষ্টি, হলুদ, গুঁড়ো লঙ্কা আর সামান্য হিং দিয়ে ভালো করে বেটে নিতে হবে।
- এবার ডালের মিশ্রণটা অল্প অল্প করে নিয়ে গরম ডোবা তেলে বড়ার আকারে গড়ে ভেজে নিতে হবে। বড়াগুলো যেন ছোটো ছোটো প্রায় গোল গোল চ্যাপ্টা আকারের হয়।
- লাউয়ের টুকরোগুলো নরম হয়ে এলে পোস্তবাটা আর সামান্য জল যোগ করতে হবে।
- হাল্কা আঁচে কষিয়ে বড়াগুলো যোগ করতে হবে।
- এরপর অল্প কাঁচা তেল যোগ করে ঢাকা দিয়ে মিনিট ৪-৫ রেখে দিয়ে নুন মিষ্টি পরীক্ষা করে একটু মাখামাখা অবস্হায় নামাতে হবে।
বি. দ্র. : আগে থাকতে ডাল ভেজাতে ভুলে গেলে শুকনো ডাল মিক্সিতে আগে বেটে তারপর জল যোগ করেও ডালের মিশ্রণটা করে নেওয়া যায়।
বড়া করার সময় না থাকলে বড়ি দিয়েও পদটা রান্না করা যায়।
ঝটপট করতে চাইলে লাউয়ের টুকরোগুলো আগে থাকতে একটু নুন, হলুদ আর তেল দিয়ে ভাপিয়ে নিয়েও রান্নাটা করা যায়।
উপকরণঃ
- রুই বা কাতলা মাছ
- দুধ
- পোস্ত
- কাজু
- কিসমিস (ঐচ্ছিক)
- নারকেলের দুধ
- হলুদ
- কাশ্মিরী গুঁড়ো লঙ্কা
- গোটা গরমমশলা
- গুঁড়ো গরমমশলা
- ঘি - ২ চামচ
- পেঁয়াজ - ৩ টে বড় সাইজের
- আদা রসুন বাটা - ১ টেবিল চামচ
- নুন - স্বাদমতো
- চিনি - স্বাদমতো
- ধনেপাতা বা কাসৌরি মেথি ( ঐচ্ছিক )
- লেবুর রস
- সরষের তেল
প্রণালীঃ
- প্রথমে মাছগুলো লেবুর রস, নুন, হলুদ, লঙ্কার গুঁড়ো আর তেল মাখিয়ে ১৫ মিনিট পর ভেজে নিতে হবে।
- এরপর কড়াইতে অল্প ঘি, সরষের তেল আর গোটা গরমশলা যোগ করে গরম করতে হবে।
- গরম হওয়ার পর পেঁয়াজ ও আদা রসুন বাটা একে একে যোগ করে আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে ভাজা ভাজা করে কষিয়ে নিতে হবে।
- হলুদ, নুন, কাশ্মীরি গুঁড়ো লঙ্কা একে একে যোগ করে ভালো করে কষিয়ে তেল ছাড়া অবধি হাল্কা আঁচে ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে।
- এবার পোস্ত, কাজু, কিসমিস আর নারকেলের দুধ একসাথে করে বেটে নিতে হবে।
- মসলা থেকে তেল ছাড়লে পোস্ত, নারকেল, কাজু, কিসমিস বাটাটা দিয়ে দিতে হবে। এরপর সামান্য দুধ দিয়ে হালকা করে নেড়ে যেতে হবে।
- মিনিট পাঁচেক পর মসলা থেকে তেল ছাড়লে ধনেপাতা বা ঘিয়ে ভাজা গুঁড়ো করা কাসৌরী মেথি আর সামান্য গরমমসলা গুঁড়ো দিয়ে ১ মিনিটের জন্য ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
- মাছগুলো হালকা হাতে এক এক করে দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিতে হবে।
- মিনিট ২ পর মাছগুলো চামচ দিয়ে উল্টিয়ে দিতে হবে।
- শেষে নুন মিষ্টি টেস্ট করে নামিয়ে নিতে হবে।
বি. দ্র. : দুধ দেওয়ার সময় আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে, নয়ত দুধটা কেটে যেতে পারে।
পোস্ত-নারকেল-কাজু-কিসমিস বাটার বদলে চারমগজ বাটাও ব্যবহার করা যায়।
৪) দুধ-মুগ-সব্জি ডালঃ
উপকরণঃ
- মুগডাল ( আগে থাকতে নুন আর হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করে রাখা )
- কাঁচকলা
- পেঁপে
- কুমড়ো
- পটল
- ঝিঙে
- সজনের ডাঁটা
- বরবটি
- ঘি - ২ চামচ
- গোটা জিরে - ৩ চামচ
- কাঁচালঙ্কা - ১ টা
- আদাবাটা - ৩ চামচ
- নুন (স্বাদমতো)
- চিনি (স্বাদমতো)
- হিং
- তেজপাতা
- ভাজা মশলা (গোটা লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, গোলমরিচ, গোটা জিরে, ধনে, ১ টা গোটা শুকনো লঙ্কা হাল্কা করে ভেজে মিক্সিতে বেটে নিতে হবে)
প্রণালীঃ
- উপরের প্রতিটা সব্জি অল্প পরিমাণে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে রান্নার কিছুটা আগে থাকতে নুন আর সামান্য হলুদ এবং খুব অল্প তেল দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। এতে রান্নার সময়ও বাঁচে আর সবজিগুলো সুসিদ্ধ ও সুস্বাদুও হয়।
- কড়াইতে ঘি আর হিং যোগ করে গরম করতে হবে।
- গরম হওয়ার পরে সামান্য কালোজিরে ও একটা কাঁচালঙ্কা ফোড়নে যোগ করতে হবে।
- এরপর মশলা মাখানো সব্জিগুলো একে একে ছাড়তে হবে।
- অল্প ভাজামশলা যোগ করে, হাল্কা আঁচে খুব ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করে ভাজা ভাজা করে নিতে হবে।
- এরপর অল্প নুন ছড়িয়ে কড়াইটি ঢাকা দিয়ে হাল্কা আঁচে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে।
- ভালোভাবে ভাজা ভাজা হয়ে এলে হাল্কা গরমজল দিয়ে সব্জিগুলোকে ঢাকা দিয়ে সিদ্ধ হতে দিতে হবে।
- এইসময় গোটা জিরে মিক্সিতে গুঁড়ো করে তার সাথে আদাবাটা, ১ টা কাঁচালঙ্কা আর অল্প দুধ মিশিয়ে মিক্সিতে আরেকবার ঘুড়িয়ে একটা বাটামশলা বানিয়ে নিতে হবে।
- এরমধ্যে সব্জিগুলো সুসিদ্ধ হয়ে এলে সিদ্ধ করে রাখা ডাল আর বাটামশলাটা দিয়ে হাল্কা নাড়াচাড়া করে চিনি যোগ করে মিনিট ৫-৭ হাল্কা আঁচে রেখে দিতে হবে।
- শেষে নুন মিষ্টি টেস্ট করে নামিয়ে নিতে হবে।
কলমে - সু ত পা সে ন ঘো ষ
চিত্র সৌজন্যঃ গুগল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন