ভাগ্যিস ! – “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি”

 



বইঃ রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি

লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী

প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

প্রচ্ছদঃ সিরাজুল ইসলাম নিউটন

পৃষ্ঠাঃ ৪৩২

 

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি” বইয়ের পরবর্তী খণ্ড মানে সিক্যুয়েল হল “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’’। এই বই সম্পর্কে এক বাক্যে বক্তব্য শেষ করা যায়।“ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি”। মানে কান্না শুরু করে দেওয়ার মত বই, যে কতক্ষনেএই বই শেষ হবে।চুইংগামের মত চিবিয়ে চিবিয়ে গাল গলা সব তেতো করে ফেলার মত অবস্থা।

“রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি” বইটি সম্পর্কে প্রচুর কৌতূহলদ্দীপক কথা শুনে/পড়ে বইটি পড়ে ফেলি। সত্যিই এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত রহস্য উপন্যাস। তাই যখন সেটি পরের খণ্ডের কৌতূহল জাগিয়ে অসম্পূর্ণভাবে সম্পূর্ণ হল, তখনই উঠে পরে দ্বিতীয় খণ্ডটি যোগাড় করে ফেললাম পড়ার জন্য। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় দম আটকে আসার দশায় পড়া শুরু করলাম। কি হল মুশকান জুবেরির? শেষ অবধি নুরে ছফা তাকে ধরতে পারলেন কিনা? কি ছিল মুশকান জুবেরির রহস্যাবৃত রন্ধন প্রণালী? তার কূলকিনারাহীন বয়েসের রহস্যই বা কি? এসব জানার কৌতূহল যে শেষ অবধি বেহাল করে দেবে তা শুরুতে বুঝিনি। ৪৩২ পৃষ্ঠার বইয়ের প্রথম ১০০ পাতা পড়ার থেকেই চুইংগামের তেতো স্বাদ আসতে শুরু করল।ততক্ষনে অকারণে পৃষ্ঠা বাড়ানোর এবং পরবর্তী আরেকটি খণ্ড প্রকাশ করার বাসনায় লেখক তাল হারিয়ে ফেলেছেন। নতুন কিছু অনাবশ্যক চরিত্রের আমদানি, অকারণ ও অপ্রয়োজনীয় জটিল সম্পর্কের প্রলাপ, যে কোন চরিত্রকে প্রয়োজনমত যুক্তিহীনভাবে যে কোনও জীবিকার সাথে জুড়ে দিয়ে অত্যন্ত বিরক্তিকর করে তুলেছেন। সাথে নরমাংস ভক্ষণকারিণী আরেক নারীকে নিয়ে এসেছেন এবং তার মধ্যে বিকৃতি মুসকানের দ্বিগুন দেখিয়েছেন। এই সমস্ত বিকৃতি ও হিংস্রতা করার কারণ অনন্ত যৌবন ধরে রাখা। আর অপর দিকে ডিবির তথাকথিত দুঁদে অফিসার বারংবার নিজেকে অকর্মণ্য প্রমাণ করে লেখকের প্রতি পাঠকের যাবতীয় বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করেছেন। অবাক লাগে ভাবতে বর্তমানের উন্নত প্রযুক্তির যুগে মুসকান জুবেরির মত একজন অন্য দেশের নাগরিক কি করে পুলিশ প্রশাসনকে বারেবারে কাঁচকলা দেখাতে সক্ষম হয়ে যাচ্ছে ! বইয়ের আয়তন বাড়ানোর লক্ষ্যে গল্পের মূল বক্তব্য পথ হারিয়ে দিকভ্রান্ত পথিকের মত দশায় পরিণত হয়েছে।লেখক সম্ভবত নিজেও দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন যে শেষ করবেন কি ভাবে ভেবে। গল্পের গরু তাই এখানে নারকোল গাছে চড়ে গেছে এবং সেখান থেকে লাফ দিয়ে পড়ে প্রাণত্যাগ করেছে।

রহস্য উপন্যাসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা কাহিনীর টানটান ভাব বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়ার গতিরোধ করে। মুশকান জুবেরির বাড়ির পেছনে পুকুর আছে কিনা বা বাড়ির সামনে নারকোল গাছে কটা নারকোল ফলেছে, তা জানানোর প্রয়োজন তখনই হয় যদি সেই পুকুর বা নারকোলকে ঘিরে রহস্য ঘনিয়ে ওঠে। তা না হলে তা শুধুই বিরক্তির উদ্রেক করে। এই বইয়ের বেলাতেও তাই হয়েছে। প্রথম খণ্ডের অধিকাংশ পাঠক দ্বিতীয় খণ্ডটি এই প্রত্যাশা নিয়েই পড়েছিলেন যে এটিও প্রথমটির মতই রহস্য রোমাঞ্চে ভরপুর হবে। লেখক অতিরিক্ত ঘটনার ফেনালো ঘনঘটায় সেই রহস্যকে জোলো উপন্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন।

পৃথকভাবে এই বইয়ের প্রচ্ছদের কথা বলা প্রয়োজন। প্রচ্ছদ অত্যন্ত আকর্ষণীয়।রহস্য উপন্যাসের জন্য যথোপযুক্ত।  


কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন