এক ঐতিহাসিক জয়ের কাহিনী - 83


 

২০২১-এর ডিসেম্বরের শেষে মুক্তি পাওয়া "83" মুভিটা দেখে এলাম। সেইমতো পৌঁছে গিয়েছিলাম সিনেমা হলে....না হল নয়, ২ ঘন্টা ৪৩ মিনিটের সিনেমা নয়, আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম লর্ডসের মাঠে।

 ১৯৮৩ সালে অনেকটা ছোট ছিলাম, তেমনভাবে মনে পড়ার কথা নয়। তবে বাবা, দাদা, জামাইবাবুদের মুখে গল্প শুনে শুনে আর বেশ কিছু ফুটেজ দেখে মনের মধ্যে একটা পরিষ্কার সমকালীন ছবি ভাসতো। আজ 83 দেখে আপ্লুত হলাম, ভেসে গিয়েছিলাম আবেগে, কপিল দেব, কিরমানি, শ্রীকান্ত, বল্লু, অমরনাথ সকলের সাথে। একবারের জন্যও মনে হয়নি যে সিনেমা দেখছি!! ঠিক যেমন প্রতি চার ছক্কা বা ক্যাচ-এর জন্য স্টেডিয়াম বারবার করতালিতে ফেটে পড়ে, ঠিক তেমনই আজও সিনেমা হলটি ফেটে পড়ছিলো বারবার হাততালির আওয়াজে। সিটি আর চিৎকার শুনে বা আমিও যেভাবে বারবার আনন্দে চিৎকার করেছি হাততালি দিয়েছি, তাতে মনে হচ্ছিলো যে আমিও হয়তো সেই লর্ডসের মাঠে বাকি ভারতীয়দের মধ্যেই বসে আছি আর আমার টিম ইন্ডিয়ার জন্য গলা ফাটাচ্ছি। যেহেতু ক্রিকেট একটি টিম গেম, তাই কোনো একজনের ওপর সারাক্ষণ গুরুত্ব না দিয়ে সকলকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সকলের দলবদ্ধ দায়িত্বকে গুরুত্বপূর্ণ দেখিয়ে নির্দেশনার ক্ষেত্রে যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন কবীর খান তা সত্যিই প্রশংসনীয়। 

যাঁরা এখনও দেখেননি তাঁদের অনুরোধ জানাবো, অবশ্যই দেখে ফেলুন 83 আর জেনে নিন কতটা অপমান ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গিয়েও একজন টিম ম্যানেজার "পি আর মানসিং" মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিকভাবে তাঁর দলকে এগিয়ে নিয়ে যান আর দলের ক্যাপ্টেন "কপিল দেব" কিভাবে ঝুঁকি নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদল করে মদনলালের হাতে বল তুলে দেন, যেখানে ভিভিয়ান রিচার্ডস তিনটে বাউন্ডারি মারেন তাঁরই করা বলে!! মদনলাল বারবার অনুরোধ করেন কপিল দেবের কাছে যে তাঁকে আর একটা সুযোগের দেওয়ার জন্য যাতে ওয়েস্ট  ইন্ডিজকে সুযোগ্য জবাব দেওয়া যায়!

ব্যস, এর পরেই আসে সেই স্বর্ণাভ মুহূর্ত যখন মদনলালের করা বলে ব্যাট হাঁকিয়ে ভিভিয়ান রিচার্ডসের বল হাওয়ায় ভেসে যায় ঠিক তখনই মিড উইকেটে পিছনে দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ ধরেন কপিল দেব আর ইতিহাসের পাতায় উঠে যায় ভারতীয় ক্রিকেট টিমের নাম। ফাইনাল খেলার আগে বিভিন্ন প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের তির্যক ব্যাঙ্গাত্মক প্রশ্নের জবাবে কপিল দেবের উত্তর ছিলো একটাই — "We are here to win" আর তিনি সেটা কার্যত করে দেখিয়েছিলেন।

সিনেমার মধ্যে অরিজিনালিটিটা আনার জন্য বহুক্ষেত্রে আসল দৃশ্যগুলিকেও তুলে ধরা হয়েছে, ভীষণভাবে ভালো লাগলো নির্দেশকের এই নিখুঁত কাজ। আরও অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায় কবির খান নির্দেশিত 83 থেকে যা তৎকালীন সময়ে এক কঠিন রাজনৈতিক পরিবেশকেও এই খেলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিলো। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিধস্ত অঞ্চলে প্রতিটি ঘরে ঘরে টেলিভিশন লাগিয়ে এই ওয়ার্ল্ড কাপটি সম্প্রচার করার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীজি, আর তাঁর এই তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বুদ্ধিতেই সেই অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসে।

অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে গেলে, সকলের অভিনয়ই যথাযথ। রণবীর সিং থেকে শুরু করে পঙ্কজ ত্রিপাঠী এবং অন্যান্য সহশিল্পীরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় স্বপ্রভিত। সিনেমাটি দেখে অনেকদিন পর বেশ ভালোলাগা কাজ করলো। ভবিষ্যতেও এমন চলচ্চিত্র প্রত্যক্ষ করার আশা রাখি।



কলমে - বি জ য়া  চ ক্র ব র্তী


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন