ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপাচার (অন্তিম পর্ব)

অত্যন্ত সাধারণ ও সহজলভ্য ঘরোয়া সামগ্রী ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনার প্রথম পর্ব আমরা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছি। আজ নিয়ে এলাম এই বিষয়ের দ্বিতীয় তথা অন্তিম পর্ব নিয়ে।


বেসন : 

  • ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে বেসনের ব্যবহার বহুযুগ ধরে চলে আসছে। কি কি ভাবে বেসন ব্যবহার করা যেতে পারে, আসুন আমরা জেনে নিই। 
  • ত্বক উজ্জ্বল করতে বেসন খুবই উপযোগী। ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ৪ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ এবং পরিমাণমতো বাদাম তেল মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ভালো করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করা যেতে পারে। 
  • ত্বকের কালচে ভাবও দূর করে বেসন। ৪ চা চামচ বেসনের সঙ্গে ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ চা চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এবার এটি মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে কিছুক্ষণ রাখার পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ৪-৫ বার এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • শুষ্ক ত্বকে বলিরেখার প্রাদুর্ভাব পড়ে বেশি। এক্ষেত্রে ১ চা-চামচ বেসনের পেস্টের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি মুখে ১৫ মিনিট রাখার পর ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে এক দিন করে ব্যবহার করা যায়। 
  • তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা অত্যধিক তেলতেলে ভাব, আর এই তেলা ভাবে আকৃষ্ট হয়ে ধুলোবালি ত্বকে এসে জমা হয়। ত্বকের তৈলাক্ততা এবং ময়লা দূরীকরণের জন্য ৩ চা চামচ বেসনের সঙ্গে ২ চা চামচ কাঁচা দুধ অথবা ২ চা চামচ টক দই মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ত্বক কোমল করার জন্য ১ চা-চামচ বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ দই মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। 
  • রোদে পোড়াভাব দূর করতে পরিমাণমতো বেসন, গোলাপজল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে সেই অংশে লাগিয়ে রাখতে হবে। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ব্রণের কালো দাগ দূর করতেও কাজে লাগে বেসন। বেসনের সাথে শশা এবং লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ হালকা হয়ে যাবে। 
  • স্ক্রাবিং ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নয়তো মরা কোষ ত্বকের উপর জমে এক আস্তরণ তৈরি করে যার ফলে ত্বকের উপর লাগানো কোনো উপকরণই ত্বকের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে ত্বকের উপকার সাধন করতে পারে না। বেসন ব্যবহার করেই বানিয়ে ফেলা যায় চমৎকার স্ক্রাবার। কফি পাউডার, চালের গুঁড়ো এবং বেসনের সাথে পরিমাণমতো কাঁচা দুধ নিয়ে সেই মিশ্রনটিকে ভালোমতো মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে তুলে দিলেই হয়ে যাবে স্ক্রাবিং।


হলুদ : 

  • ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। ত্বক তৈলাক্ত হলে হলুদের সঙ্গে দুধ, বেসন, মধু অথবা লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। শুষ্ক হলে মধুর পরিবর্তে টক দই ব্যবহার করতে হবে। এবার জেনে নেবো কোন কোন পদ্ধতিতে হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। 
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ১ চা চামচ হলুদের রস, ১ চা চামচ দুধ, ১ চা চামচ বেসন ও আধা চা চামচ চন্দনগুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। পনেরো মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ত্বক উজ্জ্বল করার অন্যতম উপায় - কাঁচা হলুদ ও মুসুর ডাল একসঙ্গে বেটে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ত্বককে কোমল ও মসৃণ করতে কাঁচা দুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে এলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও দুধের সরের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে। এই পদ্ধতিতে বলিরেখাও দূর হয়। 
  • ব্রণর সমস্যা দূরীকরণে কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • ব্রণর দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা বেটে দাগের উপর লাগাতে হবে। এছাড়াও টম্যাটোর রস, কাঁচা হলুদ ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তবে ব্রণর দাগ তো একদিন যায় না। নিয়মিত ব্যবহারে উপকার মিলবে। 
  • রোদে পোড়া দাগ দূর করতে মসুর ডালবাটা, কাঁচা হলুদ বাটা ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে।

তবে হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন : 

  • হলুদ দিয়ে ত্বক পরিচর্যার পর কখনও রোদে বেরোনো উচিত নয়, তাহলে ত্বক পুড়ে যাবে। সম্ভব হলে রাতে হলুদ ব্যবহার করতে হবে। 
  • কাঁচা হলুদ কখনও সরাসরি ব্যবহার করা ঠিক নয়, এর সঙ্গে কিছু মিশিয়ে লাগাতে হবে। 
  • হলুদের প্যাক লাগানোর পর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই তা ধুয়ে ফেলা শ্রেয়। বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখলে ত্বকে গাঢ় হলুদ দাগ ফুটে উঠতে পারে। আবার র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। 
  • সপ্তাহে দু'দিনের বেশি হলুদের প্যাক ব্যবহার না করাই ভালো। 
  • ত্বকে সমানভাবে হলুদ ব্যবহার করতে হবে। একস্থানে বেশি, অন্যস্থানে কম - এমনটা যেন না হয়। হলুদ লাগানোর পর অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। 
  • হলুদ লাগানোর পর ১০ ঘণ্টার মধ্যে ত্বকে সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বকে র‍্যাশসহ জ্বালাপোড়া তৈরি হতে পারে। 
  • হলুদে অনেকেরই অ্যালার্জি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে হলুদ মুখে ব্যবহার না করে আগে হাতে বা ঘাড়ে দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। 

কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী

চিত্রঃ সংগৃহীত 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন