জন্মক্ষণ থেকে শুরু করে ছয়মাস বয়স অবধি শিশুর আহারে শুধুমাত্র
স্তনদুগ্ধ পান করানো বাধ্যতামূলক হওয়ায় শিশুর বাবা – মায়েদের মনে শঙ্কা শিশুর পুষ্টির
বিষয়ে শঙ্কা তৈরি
হয়। তাই
শিশুর বয়েস ছয়মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে তাকে ফলের রস খাওয়ানো শুরু করে দেন অনেক বাবা-
মায়েরাই। বহু যুগ ধরেই ফলের রসকে স্বাস্থ্যকর মনে করে এসেছি আমরা। শিশু
চিকিৎসকরা কিন্তু বলছেন, এক বছরের
আগে ফলের রস খাওয়ানোর কোনও প্রয়োজনই নেই। ফলের রস থেকে কোনও পুষ্টিই শিশুরা
পায় না।
- রস দেওয়ার জন্য বোতলের বদলে বাটি / কাপ ও চামচ ব্যবহার করতে হবে। অল্প অল্প পরিমানে খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
- ফলের রস হজমের সুবিধার জন্য প্রথমে ফলের রসের সাথে হালকা উষ্ণ জল মিশিয়ে পান করাতে হবে। কারণ প্রাথমিকভাবে শিশু ফলের রস হজমে সক্ষম কিনা তা জানা দরকার। তাই শুরুতে ৪ ভাগের ১ ভাগ রস ও ৩ ভাগ জল মিশিয়ে নিতে হবে। ধীরে ধীরে হজমক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে জলের পরিমাণ কমিয়ে ফলের রসের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
- প্রথমে একটি একক ফল বা সবজির রস দিয়ে শুরু করতে হবে যাতে শিশুর অভ্যস্ত হয়ে যায়। ১৫ দিন অন্তর ফল বা সব্জি বদল করে রস পান করানো উচিত।
- রস পান করানোর পর শিশুকে পর্যবেক্ষণ করা দরকার কোনও অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। যদি এই জাতীয় কোনও অ্যালার্জি লক্ষ্য করা যায় তবে অবিলম্বে রস পান বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
- ফলের রস খাওয়ানো শুরু করার পর অনেক শিশুরই সর্দি, কাশি, বমি, আমাশয়, শরীরে লাল র্যাশ প্রভৃতি অ্যালার্জি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লক্ষ্য রাখা দরকার কোন ফল বা সব্জি থেকে এই অ্যালার্জি হচ্ছে। তা পরবর্তীকালে পুনরায় না দেওয়াই ভালো।
- সবসময় ফল / শাকসব্জি ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। রস বানানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে হালকা উষ্ণ জলে এক চিমটে নুন দিয়ে ফল বা সব্জি ভিজিয়ে রেখে তারপর তা ব্যবহার করা উচিত। এতে এর মধ্যে থাকা বিষাক্ত কীটপতঙ্গ বা কীটনাশকের প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
- সাধারণ স্থানীয় খাবার যেমন মুসাম্বি, কমলালেবু, কলা, আপেল, নাশপাতি, গাজর প্রভৃতি দিয়ে শুরু করতে হবে।
- বাজারজাত ফলের রস শিশুকে না দেওয়াই উচিত। যথাসম্ভব ঘরোয়াভাবে তৈরি রসই শিশুকে খাওয়ানো উচিত।
- জল বা শক্ত খাবারের বিকল্প হিসাবে ফলের রসের ব্যবহার করা উচিত হবে না। ফলের রস দিনে একবার দেওয়াই যথেষ্ট।
- একবছরের পর থেকে শিশুকে ফলের রসের পরিবর্তে ছোট ছোট ফলের টুকরো চিবিয়ে খাওয়ানো শেখানো দরকার। এইভাবে খেলে ফলের পুষ্টিগুণ শিশুর শরীরে গৃহীত হবে।
- ৮ মাসের পর থেকে একাধিক ফলের সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকারের সব্জিও সেদ্ধ করে খাওয়ানো যাবে। তবে প্রথমে স্বল্প পরিমানে শুরু করতে হবে।
বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর রসের একটি তালিকা:
- আপেল সেদ্ধ
- নরম কচি নারকোল এবং নারকোলের জল
- আঙুরের রস (কাঁচা)
- তরমুজের রস (কাঁচা)
- সিদ্ধ গাজরের রস
- কমলালেবুর রস (কাঁচা)
- সিদ্ধ টমেটোর রস
- সবেদার রস (কাঁচা)
- সিদ্ধ নাশপাতির রস
- সিদ্ধ পিচের রস
- পাকা পেঁপের রস
- সিদ্ধ কাঁচা পেঁপে
- কলার রস বা কলা চটকে মণ্ড করে খাওয়ানো (পাকা কলা)
- সিদ্ধ কাঁচা কলা
- লিচুর রস (কাঁচা)
- সিদ্ধ আলু
- সিদ্ধ পেয়ারা
- বেদানার রস (কাঁচা, বীজ বাদ দিয়ে)
- শশার রস ( কাঁচা)
- আমের রস (কাঁচা)
- সিদ্ধ পালংশাকের জল
কোন বয়সে কত পরিমাণ এবং কিভাবে খাওয়াতে হবে :
২
বছরের পর থেকে শিশুকে ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল চিবিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করানো উচিত।
যদি শিশুর সর্দিকাশি প্রভৃতি ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা থাকে তবে ফলের রসের ক্ষেত্রে সামান্য
পরিমাণ উষ্ণ জল মিশিয়ে পান করাতে হবে। চিনি বা নুন যোগ না করাই উচিত। কিছু ফল অনেক
সময় টক হয় যেমন বিভিন্ন ধরণের লেবু। সেক্ষেত্রে মিষ্টতার জন্য মধু ব্যবহার করাই শ্রেয়।
শিশুর
আহারের ক্ষেত্রে সবসময় একটা কথা মনে রাখা উচিত। যখনই কোনো নতুন খাবার খাওয়ানো শুরু
করা হয়, তারপর শিশুটির শারীরিক অবস্থা কেমন থাকে তার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। সামান্যতম
শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেই শিশু চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা বাঞ্ছনীয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন