ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূরীকরণের উপায়

 

আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে ফ্রিজ অন্যতম। বর্তমানের ব্যস্ত সময়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে ফ্রিজ আমাদের সময় ও পরিশ্রম দুইই বাঁচায়। পরিবারের স্বামী স্ত্রী দু'জনেই চাকরি করলে পরেরদিনের খাবার বানিয়ে রাখা থেকে শুরু করে রোজ রোজ বাজারে শাকসবজি কিনতে যাওয়ার হ্যাপা থেকে ফ্রিজ আমাদের মুক্তি দেয়। কিন্তু অনেকসময়ই এরকম হয় যে ফ্রিজ খুললেই তার ভেতর থেকে ভ্যাপসা একটা গন্ধ বেরোয়, কিংবা কয়েকদিনের জন্য দূরে কোথাও বেড়িয়ে আসার পর ফ্রিজ খুললে কটু গন্ধ বেরিয়ে আসে। এই সমস্যার সমাধানের পদ্ধতিই হলো আজকের নিবেদনের বিষয়বস্তু।

 

ফ্রিজের ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করার অত্যন্ত সহজ ও ঘরোয়া কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। অতিরিক্ত উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না, ঘরে উপস্থিত সামগ্রী ব্যবহার করেই এই সমস্যার সমাধান করা যায়। সেই পদ্ধতিগুলি এখানে বিবৃত করা হলো। যাঁর যে পদ্ধতি সুবিধাজনক বলে মনে হবে তিনি সেটি অনুসরণ করতে পারেন।

১) ফ্রিজ থেকে কটু গন্ধ দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় পাতিলেবুর ব্যবহার। একটি পাতিলেবু নিয়ে টুকরো করে কেটে ফ্রিজের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে রেখে দিতে হবে। বেশি ভালো হয়, যদি সবসময় পাতিলেবুর টুকরো ফ্রিজের মধ্যে এখানে সেখানে রেখে দেওয়া যায়। তাহলে আর দুর্গন্ধই হয় না। শুকিয়ে গেলে সেগুলি সরিয়ে নতুন পাতিলেবুর টুকরো রাখতে হবে।

২) এই সমস্যার ক্ষেত্রে ভিনিগারও সমানভাবে কার্যকর। এক কাপ অথবা এক বাটি হোয়াইট ভিনিগার ফ্রিজের ভেতর রেখে দিলে ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ বিদায় নেবে।

৩) ছোট এক বাটি বেকিং সোডা নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তারপর দরজা বন্ধ করে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করলেই সুন্দরভাবে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

৪) কফির স্বাদ তো সকলের কাছেই দুর্দান্ত। এক কাপ কফি পান করে অনেকেই তাঁদের সকালটা শুরু করেন। এই কফির কিন্তু আরেকটা গুনও রয়েছে। দুর্গন্ধ শুষে নেওয়ার ক্ষেত্রে কফি খুব ভালো কাজ দেয়। বাটিতে করে সামান্য কফির গুঁড়ো একদিনের জন্য ফ্রিজে রেখে দিলেই হবে।

৫) যেকোনো বাজে গন্ধ দূর করতে এসেনশিয়াল অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। তবে দামের দিক থেকে এর পাল্লা ভারি। তাহলেও বেশি পরিমাণে একেবারেই প্রয়োজন পড়ে না। এসেনশিয়াল অয়েলে কয়েকটা কটন বল ভিজিয়ে একদিনের জন্য ফ্রিজে রাখলে সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

৬) শীতকালে ফ্রিজের কটু গন্ধ দূর করতে কমলালেবুর খোসা দারুণ কাজে আসে। এর জন্য কমলালেবুর খোসা ফ্রিজের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে অন্য কমলালেবু থেকে ছাড়ানো টাটকা খোসা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

৭) খবরের কাগজও এই সমস্যায় কাজ দেয়, তবে এটি অন্যান্যগুলির তুলনায় কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কয়েক সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে খবরের কাগজ রেখে দিলে এটি সমস্ত ধরণের দুর্গন্ধ শোষণ করে নেয়। অধিক পরিমাণে খবরের কাগজ না রাখাই ভালো। লক্ষ্য রাখতে হবে ফল ও সবজি যাতে খবরের কাগজের সংস্পর্শে না থাকে।

৮) কেক বা বিস্কুট বানানো ছাড়াও ভ্যানিলা এসেন্সের অন্য একটি উপযোগিতা রয়েছে, ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করা। ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে ভেজানো এক টুকরো তুলো ফ্রিজের এক কোনায় রেখে দিলেই সমস্যার সমাধান।




ফ্রিজের কটু গন্ধ দূর করার জন্য এরকম অনেকই সহজ উপায় রয়েছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার অন্য একটি বিষয়ে, যাতে ফ্রিজের মধ্যে দুর্গন্ধই না হয়। সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে।

১) প্রত্যেকদিন সম্ভব না হলেও কিছুদিন অন্তর ফ্রিজ পরিষ্কার করা উচিত। পরিষ্কারের আগে ভেতরের সব জিনিসপত্র বার করে ফ্রিজ খালি করে ফেলতে হবে। এবার ফ্রিজের সুইচ বন্ধ করে এটি পরিষ্কার করা শুরু করতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পরিষ্কার করা শুরু করলে আরো ভালো। এতে ফ্রিজের মধ্যেকার বরফগুলি গলে যায় এবং বরফ রাখার ট্রে বার করে নিয়ে মেজে ফেলা যায়। ফ্রিজের ভেতর পরিষ্কার করার জন্য জলে অল্প বেকিং সোডা মিশিয়ে কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করলে দুর্গন্ধ হয় না।

২) ফ্রিজের মধ্যেকার জিনিসপত্র নজরে রাখা প্রয়োজন। নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস সঠিক সময়ে বার করে ফেলে দিতে হবে। এর ফলে ফ্রিজ দুর্গন্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

৩) রান্না করা কোনও খাবার ফ্রিজে রাখলে সেটি বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে হবে। তাতে সেই খাবারটি ভালো থাকবে, অন্যান্য খাবারের গন্ধের সঙ্গে মিশে অদ্ভুত কটু গন্ধের সৃষ্টি করবে না এবং ফ্রিজের অন্যান্য জিনিসপত্রও নষ্ট হবে না।

৪) ফ্রিজের ভেতরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরী। অন্যথায় এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু জন্মায় যা বাজে গন্ধ তৈরি করতে পারে।

৫) ফ্রিজে দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য বাসী খাবার অনেকাংশ দায়ী। তাই বাসী খুব বেশিদিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত নয়। অল্প পরিমাণ খাবার ফ্রিজে রাখতে হবে। এতে খাবার নষ্ট হবে না এবং ফ্রিজে কোন দুর্গন্ধও সৃষ্টি হবে না।

৬) শাকপাতা ফ্রিজে রাখার সময় আঁটি খুলে রাখতে হবে এবং কাঁচালঙ্কা রাখার আগে ডাঁটি ছাড়িয়ে রাখতে হবে। নয়তো পচে গিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করবে।

ফ্রিজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিস পরিষ্কার ও যত্নে রাখা আমাদের কর্তব্য। সেই কাজটি করতে গিয়ে খুব বেশি পরিশ্রমেরও প্রয়োজন পড়ে না। সহজলভ্য ঘরোয়া উপাচার দ্বারাই ফ্রিজকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব। ফ্রিজ পরিচ্ছন্ন থাকলে খাদ্যসামগ্রীও স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত থাকবে।


কলমে - গীতশ্রী ঘোষাল 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন