শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রকারের ফলের রস


 


সারা বছরই শিশুদের ফলের রস খাওয়ানো যায়। একটু বড় হলে ফলের টুকরো কামড়ে খেতে পারলেও, ছয় – সাত মাসের শিশুর পক্ষে চিবিয়ে ফল খাওয়া সম্ভব হয়না। তাই পুষ্টির জন্য তখন তাদের দিনে একবার অল্প পরিমানে ফলের রস খাওয়ানো সুবিধাজনক হয়। বিভিন্ন ফলের রস বিভিন্ন ভাবে বানানো যায়। আজ কিছু ফলের রস বানানোর প্রণালী দেওয়া হল ।

 

লেবুর রসঃ ছয় মাসের পর থেকে শিশু বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক পর্যায়ে লেবুর রস খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। লেবুর মধ্যে মুসাম্বির রসই শিশুর জন্য উপযোগী হয়। তবে ভালো মানের মিষ্টি কমলালেবুর রসও শিশুকে খাওয়ানো যায়। 

উপকরণঃ

  • মুসাম্বি / কমলালেবু – ১ টা
  • হালকা উষ্ণ জল – ৫০ মিলি  
  • মধু – ১ চামচ ( আবশ্যক নয় )

প্রণালীঃ 

  • লেবু ধুয়ে পরিষ্কার করে খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে কোয়া বার করে নিতে হবে। 
  • হাত দিয়ে বা রস বার করার Squeezer দিয়ে রস বার করে নিতে হবে। 
  • জল মিশিয়ে দিতে হবে। যদি রস স্বাভাবিকভাবে মিষ্টি না হয় তাহলে এক চামচ মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে।  

বেদানার রসঃ আট মাসের পর থেকে শিশুকে বেদানার রস দেওয়া যেতে পারে।

উপকরণঃ 

  • বেদানা – ১ টা 
  • হালকা উষ্ণ জল – ৫০ মিলি

প্রনালীঃ 

  • খোসা ছাড়িয়ে বেদানার দানা পৃথক করে নিতে হবে। 
  • ব্লেন্ডারে খুব ভালো করে বেটে নিতে হবে। 
  • ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে রস বার করে নিতে হবে। 
  • উষ্ণ জল মিশিয়ে নিতে হবে।

আঙুরের রসঃ

এক বছরের পর থেকে শিশুকে আঙুরের রস খাওয়ানো যায়।

উপকরণঃ

  • আঙুর – ২০০ গ্রাম 
  • হালকা উষ্ণ জল – ৫০ মিলি  
  • মধু – ২ চামচ 
  • ঠাণ্ডা জল – ২০০ মিলি 
  • নুন – এক চিমটি

প্রনালীঃ 

  • আঙুর অন্তত ৩০ মিনিট ২ কাপ জলে এক চিমটি নুন দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।তারপর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। 
  • আঙুরের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের শাঁস বার করে নিতে হবে। বীজ থাকলে তা বাদ দিতে হবে। 
  • ব্লেন্ডারে সব আঙুরের সমস্ত শাঁস দিয়ে ভালো করে বেটে নিতে হবে।   
  • ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে মধু সহযোগে খাওয়াতে হবে।


তরমুজের রসঃ

শিশুদের জন্য গরমকালে তরমুজে রসের থেকে উপকারী অন্য আর কিছ হতে পারেনা। তরমুজের রস শিশুর শরীরে জলীয় উপাদানের ঘাটতি পূরণ করার সাথে সাথে শরীর শীতল রাখতেও সাহায্য করে। 

উপকরণঃ

  • তরমুজ – ২৫০ গ্রাম 
  • জল – ৫০ মিলি 
  • পাতিলেবুর রস – কয়েক ফোঁটা ( প্রয়োজন মত)

প্রণালীঃ 

  • তরমুজের খোসা ছাড়িয়ে লাল অংশ থেকে বীজ বার করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • ছোট ছোট টুকরোর তরমুজ মিক্সিতে ভালো করে বেটে নিয়ে ছাঁকনিতে ছেঁকে রস বার করে নিতে হবে।
  • যদি পাতলা করার দরকার পরে তাহলে জল যোগ করা যেতে পারে। তবে সাধারণত তরমুজের রসে জল বা চিনি যোগ করার দরকার পরে না।টাটকা এই রস শিশুকে খাওয়াতে হবে। 
  • কিশোর বয়স্কদের জন্য এই রসে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে দিলে স্বাদ বৃদ্ধি পাবে।   

 



আমের রসঃ 

পাকা আম এমনিই সবাই খেতে পছন্দ করে। তবে দাঁত বেরোনোর আগে শিশুকে টুকরো আম খাওয়াতে অনেক সময়ই অসুবিধা হয়। তাই রস করে খাওয়ালে আমের পুষ্টি শিশুর শরীরে পুষ্টির যোগান সম্পূর্ণ করে।

উপকরণঃ 

  • আম – ১০০ গ্রাম 
  • মধু – ১ চামচ 
  • অল্প উষ্ণ জল – ৫০ মিলি 
  • বিটনুন – প্রয়োজন অনুযায়ী

প্রণালীঃ 

  • আম ধুয়ে অন্তত এক ঘণ্টা ঠাণ্ডা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। 
  • খোসা ছাড়িয়ে আমের ছোট টুকরো করে নিয়ে মিক্সিতে দিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হবে। 
  • ক্কাথ ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে অল্প জল মিশিয়ে রস তৈরি করতে হবে। 
  • যদি আম মিষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে এক চামচ মধু যোগ করে দিতে হবে। নতুবা দেওয়ার দরকার নেই। 
  • কিশোর বয়স্কদের জন্য অল্প বিটনুন যোগ করে দিতে হবে।


 
আনারসের রসঃ

গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে আনারসের রস যে কোনও শিশুর জন্য অত্যন্ত উপাদেয়।ফাইবার সমৃদ্ধ আনারসের রস শিশুর পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে এই রস রোজ না খাইয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন খাওয়ানোই উচিত।

 উপকরণঃ 

  • আনারস – ২০০ গ্রাম 
  • উষ্ণ জল – ৫০ মিলি 
  • মধু – ১ চামচ

প্রণালীঃ 

  • আনারস ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • খোসা ছাড়িয়ে আনারসের ছোট টুকরো করে নিয়ে মিক্সিতে দিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হবে। 
  • ক্কাথ ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে অল্প জল মিশিয়ে রস তৈরি করতে হবে। 
  • যদি আনারস মিষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে এক চামচ মধু যোগ করে দিতে হবে। নতুবা দেওয়ার দরকার নেই।

লিচুর রসঃ

গ্রীষ্মকালের ফলের মধ্যে লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। শিশুরা খুব সহজেই এই স্বাদে আকৃষ্ট হয়।

উপকরণঃ 

  • লিচু – ২০০ গ্রাম 
  • উষ্ণ জল – ৫০ মিলি 

প্রণালীঃ 

  • লিচু ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে লিচুর টুকরো মিক্সিতে দিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হবে। 
  • ক্কাথ ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে রস তৈরি করতে হবে। 
  • প্রয়োজনে অল্প জল মেশানো যায়। তবে সাধারণত জল মেশানোর দরকার পড়েনা।


 
বীট রসঃ

বীট অত্যন্ত উপকারী সব্জি হওয়ার সাথে সাথে শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় একটি খাবারও। সাধারণত বীট শিশুকে সেদ্ধ করে চটকে খাওয়ানো হয়। তবে সপ্তাহে এক বা দু’দিন খুব সামান্য পরিমানে কাঁচা বীটের রসও শিশুকে পান করানো যায়।  

উপকরণঃ

  • বীট – ৫০ গ্রাম 
  • পাতিলেবুর রস – ১/২ চামচ 
  • মধু – ১ চামচ 
  • উষ্ণ জল – ৫০ মিলি

প্রণালীঃ 

  • বীটের খোসা ছাড়িয়ে, জলে ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। 
  • মিক্সিতে বেটে ক্কাথ বানাতে হবে। 
  • ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে রস বার করে নিতে হবে। এর মধ্যে জল, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।


গাজরের রসঃ

বীটের মত গাজরের রসও শিশুর পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ । গাজরের রস দু’ভাবে করা যায়।এটিও সপ্তাহে এক বা দু’দিন খাওয়ানো ভালো।

উপকরণঃ

  • গাজর – ৫০ গ্রাম 
  • উষ্ণ জল – ৫০ মিলি 
  • বীটনুন – ১ চিমটি 
  • লেবুর রস – ১ চামচ 

প্রণালীঃ 

  • গাজর ধুয়ে পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। 
  • মিক্সিতে বেটে ছেঁকে নিয়ে লেবু ও বীটনুন মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে। 
  • এছাড়া সেদ্ধ করে চটকে রস তৈরি করে অল্প জল মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। 
  • কিশোর বয়স্কদের রসে অল্প আদার রস মিশিয়ে দিলে স্বাদ বৃদ্ধি পাবে।

 

এছাড়া একই পদ্ধতি অনুসরণ করে শশা,স্ট্রবেরি,সফেদা, খেজুর,নাসপাতি, সেদ্ধ পালং শাক প্রভৃতির রস খাওয়ানো যেতে পারে। একের বেশী ফল মিশিয়েও রস তৈরি করে খাওয়ানো যায়। কিশোর কিশোরীদের রসে অল্প পরিমানে দারচিনি গুঁড়ো, চিয়া সীড বা বেসিল সীড যোগ করে খেতে দিলে তা অধিক পুষ্টিকর হবে।   

 

কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন