মানুষের মাঝ থেকে সহনশীলতা এখন চলেই যাচ্ছে। কিছু থেকে কিছু
হলেই কাচের মত সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। কেউ কাউকে বুঝতে না চাওয়ার প্রবণতা সম্পর্কের
বুনটে আঘাত করছে। ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় করে দেখে সম্পর্কের মাঝের মধুরতাকে বিনাশ
করে ফেলছে। অথচ বুঝতে পারার মানসিকতা, ক্ষমা করার সুচিন্তা সম্পর্কের শিকড়ে যে
রশদ ঢালে তা অনেকের জানাই নেই। একে অপরের পাশে থাকার চেষ্টা একে অপরের জন্যই
দরকারি। একে অপরকে বোঝা, একে অপরকে ক্ষমা করার হৃদয়, একে অপরের উপর নির্ভরতা বাঁচতে জানার নতুন সংজ্ঞা।
আইসক্রিমওয়ালাকে দেখেই পূর্বা ভীষণ উচ্ছ্বসিত হলো। বাচ্চা
মেয়ের মত হাত পা ছুঁড়ে নাকে স্বর উঠিয়ে বললো,
আইসক্রিম খাবো।
‘আইসক্রিম খাবো’বলা, পূর্বার এই
বাচ্চামোটা রজতের ভালোই লাগলো। প্রিয় মানুষের এমন ছোট ছোট চাওয়াগুলো পূরণ করলে
আনন্দই লাগে। বড় বড় কোন চাওয়া নেই,
ছোট্ট ছোট্ট
প্রার্থনা তার। গভীর আর প্রগাঢ় সম্পর্কের মধ্যে অযাচিত কোন চাওয়া থাকে না। অল্পতে
অনেক আনন্দ পায় যে, অনেক সুখী সে। মনে অল্প অল্প চাওয়া যার, মন তার অনেক বড়।
ফুচকার দোকান দেখলেই থেমে যাবে পূর্বা। ফুচকাওয়ালা পূর্বাকে একদিন
না দেখলেই বলে, আপা কই ভাই?
পূর্বার কারণে রজতকে প্রত্যহ যে ফুচকা খেতে হয় আর তাতে করে
রজত-পূর্বার মুখদ্বয় যে ফুচকাওয়ালার কাছে মুখস্থ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত। ফুচকা পেলে পূর্বার আর কিছু
লাগে না। কে বা কারা বলে নারীকে খুশি করতে কাঠ-খড় পোড়াতে হয়! কে বা কারা বলে নারীর
চাওয়া অনেক বেশি! কে বা কারা বলে তাদের চাওয়া পূরণ করার সাধ্য পুরুষের নেই! অল্পে
নারীর সন্তুষ্টি নেই কারা ছড়ায় এ কুবাক্য! অল্পে তুষ্টি পূর্বার হাসিমাখা মুখ
দেখলে রজতের ভীষণ ভালো লাগে। তার ঐ হাসিমাখা মুখ দেখলেই ভীষণ সুখ অনুভব হয়। নির্মল
তুষ্টির হাসিগুলো দেখতে খুব পবিত্র লাগে।
দুজনে রিক্সা চড়ে বাড়ি ফিরছিলো। অটোতে চড়ে দ্রুত বাসাতে
ফিরতে পারতো, কিন্তু রিক্সাতেই চড়েছে৷ কারণ রিক্সাতে
চড়া পূর্বা পছন্দ করে। বাম পাশে বসে দুই হাতে রজতের বাম হাত জড়িয়ে বসে। বড়
নির্ভরতার হাত। দায়িত্ববান হাতের ছোঁয়াতেই প্রতিটি নারী সুখী। রাস্তা সংলগ্ন খোলা
মাঠে মেলা বসেছে। পূর্বা বায়না ধরলো চুড়ি নেবে। বাড়ি ফেরার তাড়া ছিলো রজতের।
অনিচ্ছা সত্বেও মেলাতে গেল। চুড়িই তো চাচ্ছে,
অতি ক্ষুদ্র ও
কম দামী, ক্ষুদ্র আর কম দামী হলেও গুরুত্ব তার
অনেক। অনেক ক্ষুদ্র জিনিসও অনেক সময় দামী হয়ে ওঠে। চুড়ি কিনে পরলো, রজতকে দেখিয়ে বললো, দেখো না কত সুন্দর!
কথাটি বলার সময় পূর্বার মুখে যে উচ্ছ্বল ভাবটা দেখা গেলো
কোটি টাকা দিয়েও তা কেনা যাবে না। পূর্বার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য খুব বেশি চেষ্টা
করতে হয়না। একটু সময় সাথে থাকলেই সে খুশি। হাতটা ধরে একটু হাঁটলেই সে খুশি। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বললেই সে খুশি। কাজল চোখের প্রশংসা করলেই
খুশি। নাকের নোলকের প্রশংসা করলেই খুশি।
কোম্পানিতে চাকরি করে রজত। পরিশ্রম বেশি, বেতন কম। কম বেতন হলেও তাদের তেমন কষ্ট হয় না৷ একটি রুম ভাড়া করে থাকে, ফ্ল্যাট বাড়িও ভাড়া করা লাগেনি। বাড়িতে বিলাসিতার তেমন কিছু নেই। নেই আলমিরা
কিংবা ফ্রিজও। কিন্তু তা যেন তাদের প্রয়োজনও না। যা আছে তাই নিয়েই যেমন থাকার কথা
তারচেয়ে খুব ভালো আছে। যেকোনো অবস্থাতেই এই ভালো থাকার চেষ্টাটা ভীষণ জরুরি। ভালো
থাকার এই সূত্র বা মন্ত্র শিক্ষা দিয়ে হয় না,
পরিশুদ্ধ বোধ
থাকলেই হয়।
পরের দিন বাসায় ফেরার পথে রজত একটা শাড়ি কিনে আনলো। চার মাস
পূর্বে আরো একটা শাড়ি কিনেছিলো সে। প্রতি সপ্তাহে শাড়ি কিনে দিয়েও অনেক স্বামী
স্ত্রীর মন পায় না। চার মাস পর নতুন শাড়ি দেখে যারপরনাই খুশি পূর্বা। ভাঁজ খুলে দেখছে, শরীরের সাথে রেখে রেখে দেখছে আর বলছে,
খুব সুন্দর! কি
সুন্দর, পরার পর দেখবে আমাকে অনেক সুন্দর লাগবে!
রজত বিস্মিত হয় পূর্বার উচ্ছ্বাস দেখে। যত দাম দিয়েই কেনা
হোক না কেন,
স্বামীর শাড়ি কিনে আনা কত স্ত্রীর পছন্দই হয় না। অথচ পূর্বা
তাদের চেয়ে কত ব্যতিক্রম। পাশের বাজারের শাড়িতে যে নারী খুশি সে নারীর যমুনা
ফিউচার পার্কে, বসুন্ধরা শপিংমলে শপিং করতে যাওয়া লাগে
না। স্বামীর পছন্দই তার পছন্দ। স্বামীর পছন্দের গুরুত্ব দিলে স্বামীও যে খুশি হয়, স্বামীর অতি শ্রমের টাকায় কেনা জিনিসকে মূল্য দিলে স্বামীরও যে কত ভালো লাগে
অনেক স্ত্রীই তা জানে না৷
চাঁদ উঠেছে। চন্দ্রালোকে চারিদিক প্লাবিত। জ্যোৎস্নায় ভিজবে
বলে পূর্বা বায়না ধরে। পূর্বার বায়না রক্ষা করা রজতের জন্য খুব কঠিন কোনকালেই হবে
না এটা রজত বুঝে গেছে। ঘরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে জানালায় বসে বসে ওরা জ্যোৎস্না
দেখতে লাগলো। জ্যোৎস্না দেখে খুশি যারা তাদের তাজমহল দেখতে বিদেশ যাওয়া লাগে না।
সাধ্যের মধ্যে সুখ খোঁজে যারা তারাই সুখের সংজ্ঞা জানে, তাদের কাছে সুখ প্রাপ্তির মন্ত্রখানি সহজ। বাড়-বাড়ন্ত চাওয়া থাকে যাদের তাদের
সুখ হয় না, শান্তি হয় না। যাদের চাহিদা বেশি তারা
কোন কিছুতেই সুখী নয়।
বাড়ির নিচের দোকানে গেল রজত। কয়েকজন ব্যক্তি বসে তর্কতর্কি
করছে। একজন বললো, স্বামীর চেয়ে অন্যপুরুষকে প্রাধান্য
দিতেই নারী বেশি পারদর্শী। সব পুরুষ কর্মঠ,
নিজের স্বামী
ছাড়া। সব পুরুষ সুন্দর, নিজের স্বামী ছাড়া। পরের স্বামীর সাথে
তুলনা করে নিজের স্বামীকে অবদমন করাতেই নারীর কৃতিত্ব।
তার পাশের জন বললো,
আসলেই নিজ ঘরে
নারী সুখী নয়, পাশের বাড়ির ভাবীই শুধু সুখী।
অন্য আর একজন বললো,
শাশুড়ির ভূমিকায়
বউয়ের বিরুদ্ধে ছেলের কান ভারি করে,
কিংবা বউয়ের
ভূমিকায় পতিদেবতাকে পাতিনেতা বানিয়ে কুটনৈতিক চাল চেলেও নারী সুখ খোঁজে।
একজন অবিবাহিত ছেলে ছিল,
সে বললো, বখাটে পোলাপানের টালটু-পালটুতে অনেক নারী সুখী।
রজত বুঝতে পারলো,
নারী কিসে সুখী
এই নিয়েই আজ দোকানে তর্কতর্কি চলছে। এসব নিজেদের অদক্ষতার পরিচয় ছাড়া কিছু না। বাড়িতে নিজ স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারছে না নিজেদের কারণেই, দোকানে বসে স্ত্রীদের ছোট করে উপস্থাপন করছে।
আর একজন বললো,
নারী স্ট্রাগল
করে সুখী হতে চায় না, সহজে যেখানে সুখী হওয়া যায় সেখানেই সুখ
খোঁজে।
রজত মুখ খুললো,
বললো, সংসারে নারীকে সম্মান দিন, গুরুত্ব দিন; নারী সুখ ঢেলে দেবে।
পাশ থেকে একজন একথা শুনে ক্ষেপে গেলো, বললো, চড়ুই পাখি দালান-কোঠা ছাড়া থাকতে পারে না।
দালান-কোঠা কত জন গড়তে পারে?
সামর্থ্যের সীমা
তো বুঝতে চায় না।
রজত বললো, দালান-কোঠাতে থাকলেই সুখ হয় না, সেটা বোঝাতে হবে। সম্পদে সুখ খুঁজলে সুখ মিলবে না, সেটা বোঝাতে হবে। যে পুরুষ বাবা-মা,
ভাই-বোন, স্ত্রীকে নিয়ে সৎ ভাবে সুখী হওয়ার চেষ্টা করে সেই পরিবারে সবাই সৌভাগ্যবশত
সুখী হবে।
অন্যজন বললো,
পুরুষের দোষ
খুঁজবেন না। সংসারে পুরুষের ত্যাগ কেউ বোঝে না। পুরুষের ত্যাগ সব বৃথা যায়, কারণ নারী জানেই না তারা কিসে সুখী! তারা যে কি চায়!
অবিবাহিত যুবকটা বললো,
একাধিক পুরুষের
মন নিয়ে খেলতে পারলেই নারী সুখী। প্লেবয় পোলাতেই নারী সুখী। পরকীয়াতে আরো সুখী।
অবিবাহিত যুবককে থামিয়ে আর একজন বললো, নারী যা চায় আমি মন দিয়ে চাই সে সব পাক
এবং পাওয়ার পরে
বুঝুক সব কিছু পেলেও কোন লাভ হয় না,
সুখ মেলে না।
কথাতে সায় দিয়ে আর একজন বললো,
সামান্য
লিপস্টিক হারিয়ে গেলেও যে নারী কাঁদে, আমার মনে হয় না তারা কোন কালে সুখী হবে।
অবিবাহিত যুবক বললো,
নারী যার পকেটে
টাকা বেশি তার বুকে সুখ খোঁজে, কিন্তু সেখানেও সুখ পায় না। তখন পরকীয়া
করে। হাজার ছেলের পকেট কেটে খেয়ে টাকা দেখে টাক আর ভুঁড়িওয়ালাকে বিয়ে করে সুখী
হওয়ার ভান করে।
রজত বললো, আমি জানি আপনি অবিবাহিত। আপনি কল্পনা থেকে
আজগুবি কথা বলছেন। তার কাছেই নারী সুখী যার কাছে তার কথার মূল্য আছে। তার কাছেই
নারী সুখী যে তার সব আবদার না হোক কিছু আবদার পূরণ করেই। বিনয়ী স্বামীতে নারী
সুখী। সুস্থ ও কর্মনিষ্ঠ স্বামীতে নারী সুখী।
দূর থেকে একজন বললো,
রাখেন আপনাদের
কথা। নারী কিসে সুখী এই প্রশ্নের উত্তর এখনো পর্যন্ত বের হয়নি, বা বের হওয়ার তারিখও নেই।
রজত না-সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ভালোবাসতে যে জানে, ভালো রাখতে যে জানে, সম্মান দিতে যে জানে তার কাছে নারী আমৃত্যু থাকতেই রাজি। ভালো রাখতে জানতে হবে, ভালোবাসতে জানতে হবে, সম্মান দিতে জানতে হবে, সুখে থাকার সূত্র এটা।
রজত এক কাপ চা খেয়ে চলে এলো। এসে দেখে পূর্বা রান্না করছে।
রজত রান্না দেখতে দেখতে বললো, পৃথিবীর সেরা রাধুনীও তোমার হাতের
রান্নার কাছে নস্যি।
শুনে হেসে দিলো পূর্বা। একটু প্রশংসা করলে নারী কত খুশি হয়!
অথচ এই প্রশংসাটুকুও করে না কেউ। মিথ্যা হলেও যদি বলা হয় তোমাকে আজ খুব সুন্দর
লাগছে; জীর্ণ একটা সম্পর্কের মাঝেও জোয়ার আসে।
রজত বললো, দোকানে সবাই আলাপ করছিলেন নারী কিসে সুখী, তুমি কি আমাকে সত্যটা বলবে?
পূর্বা বলতে চাচ্ছিলো না,
রজতের জোর করাতে একান্ত বাধ্য
হয়ে বললো, একজন দায়িত্বশীল ভালো মনের মানুষের বুকে
মাথা রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার মাঝেই নারীর সুখ।
অবাক হয়ে শুনলো রজত। তারপর বললো, টাকার বালিশে মাথা রাখলে নাকি নারী সুখী হয়!
পূর্বা বললো,
পাতার বস্তাতে
মাথা রেখেও অনেক নারী সুখী। আভিজাত্যেও অনেকে সুখী না। অনেক নারী শপিং করতে পারলেই
সুখী। অনেক নারী গহনাতেই সুখী। অন্য নারীর চেয়ে আমার বেশি এটা জাহির করতে পারলেও
অনেক নারী সুখী। ভালো রেস্তোরাঁতে খেতে পারলেই কেউ কেউ খুব সুখী।
রজত অবাক হয়ে শুনলো কথাগুলো। এমন জানা মানুষ নিয়ে সংসার করা
আসলেই সহজ। রজত বললো, তুমি কিসে সুখী আজকে আমাকে খুলে বলবে?
পূর্বা বললো,
আমি কিসে খুশি
অনেকটাই তোমার জানা। তোমার কাছে তাই আমার কোন চাওয়া নেই। তুমি আমাকে গুরুত্বে
রাখো। স্বামীর থেকে স্ত্রী গুরুত্ব পেলে স্ত্রী সুখী। তুমি আমার কাছে কিছুই লুকাও
না। স্বামীর সত্যতে স্ত্রী সুখী। আমার জন্য তোমার ত্যাগের সীমা নেই। স্বামীর ত্যাগ
স্ত্রীর জন্য, সেই স্ত্রী সুখী না তো কি?
আমাকে বিশ্বাস
করো। স্বামীর বিশ্বাসে স্ত্রী যদি থাকতে পারে স্ত্রী সুখী। মেয়েদের জীবন পরাধীনতার
প্রতিচ্ছবি, পরাধীনতা যেখানে আষ্টেপৃষ্টে সুখ সেখানে
বহুদূর। আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দাও। স্বামীর দেয়া স্বাধীনতায় স্ত্রী সুখী। তোমার
অনুভব জুড়ে থাকি আমি, বুঝতে পারি বলেই আমি সুখী। টাকা, বিত্ত-যশে আমি সুখ খুঁজি না। আমার বাবা আমাকে সেটাই শিখিয়েছে। আমিও আমার
সন্তানকে সেটাই শেখাবো। ও হ্যাঁ, মাতৃত্বের মহিমায় নারী সবচেয়ে সুখী।
বলেই পূর্বা তরকারি রান্নাতে মনোনিবেশ করলো। আহা কত সুন্দর
একটা মন পূর্বার! রজত কথাগুলো শুনে ঘোরের মধ্যে থাকলো। সুন্দর একটা মনের মানুষের
কাছে ভালো থাকার নিশ্চয়তা থাকে। পূর্বাকে পেয়ে সে সুখী, কিন্তু কত বেশি সুখী আজ জানলো।
পরের দিন ওরা বাইরে ঘুরতে গেলো। সময় পেলেই রজত পূর্বাকে নিয়ে
ঘুরতে বের হয়। স্বামীর এই গুণে পূর্বা খুব খুশি হয়। ঘুরতে বের হলেই পরস্পরকে আরো
চেনা যায়, জানা যায়। একে অপরকে একান্ত সময় দেয়াটা
পরিপূর্ণতা পায় ঘুরতে বের হলেই। স্বামী তার হাত ধরে রাখে সারাক্ষণ, বাইরে গেলে শিশুর চেয়েও বেশি আগলে রাখে তাকে। স্বামীর হাতে হাত রেখে হাঁটতে বড্ড ভালো লাগে
তার। ভরসার হাত। এমন ভরসার হাত পেলে কে না সুখী হবে!
ফুলের মালা কিনে রজত পূর্বার চুলে গেঁথে দিলো। আশপাশের
মানুষ দেখছে, তাতে তার কোন দ্বিধা নেই। লোভ নেই লাখ
টাকায়, ফুলে ভরে যার মন, তাকে আগলে রাখতে দ্বিধা কাজ করে না। ছায়ায়-মায়ায় রাখতে মন শুধুই তটস্থ থাকে।
চাওয়া নেই, চেয়ে চেয়ে বিরক্ত করার স্বভাব নেই। একটু
কিছু পেলেই পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ বিস্ময়কর। তার হৃদয় ছাড়া তার কাছ থেকে আর কিছু
দাবি করার নেই। এখানেই তৃপ্তি, পরিতৃপ্তি।
হঠাৎ বৃষ্টি এলো৷ বছরের প্রথম বৃষ্টি। বৃষ্টি দেখে পূর্বার
মন নেচে উঠলো। হাত-পা নেড়ে বায়না ধরলো,
সে বৃষ্টিতে
ভিজবে। বৃষ্টিতে ভিজলে কি হতে পারে রজত জানলেও বাধা দিলো না। শখ পূরণ আগে। পরের
বিপত্তি পরে মোকাবেলা করা যাবে।
বাসায় আসতে আসতে হাঁচি শুরু। রাতে জ্বর। বছরের প্রথম
বৃষ্টিতে ভিজতে নেই। ভিজলেই এমন সর্দি,
জ্বর আসে। একটা
পুরুষ মানুষ কত সুন্দর যত্ন করতে জানে! এমন যত্ন পেলে কেউ কি অসুস্থ থাকতে পারে!
এমন যত্ন করলে বন্ধনে কি বিপত্তি আসে?
অন্তর জুড়ে
ভালোবাসা না থাকলে এই যত্নশিল্প বুকে জন্মে না।
পূর্বা স্বামীর হাত বুকে জড়িয়ে বললো, নারী সুখী স্বামীর এমন যত্নে!রজত বললো,
কই আমি তো জানি
নারী সুখী স্টার জলসায়!
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলে। পূর্বা বললো, আমি কিসে সুখী আর জানতে চাইবে না,
আমি কিসে দুখী, কিসের দুখী? এমন যত্নশিল্পের শিল্পী যার স্বামী তার
আর কষ্ট কিসের?
ভীষণ রকমের ভালো লাগার আবহে ভাসতে থাকলো রজত। প্রাপ্তিরও যে
শেষ আছে পূর্বাকে না পেলে ও বুঝতেও পারতো না। এমন একটা ভালোবাসার মানুষ জীবনে দেবী
রূপে এসে হাজির হবে ও কখনোই ভাবেনি। নজরে রেখে রেখেও শান্তি হয় না, মনে হয় বুকে জড়িয়ে রাখবে। অনেক বেশি সৌভাগ্যবান না হলে জীবনে বিরলপ্রায় এমন
সৌভাগ্যবতী আসে না। মন যেমনটা চায় তেমনটা পেতে হলে মনকেও তেমনি করে তৈরি করতে হয়।
যত্ন জানা যত্নশিল্পীরা রত্নই পায়৷
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন