স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরাঙ্গনারা

 


ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরাঙ্গনারা 

স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী – নারীর স্বাধীনতায় সংগ্রাম, শব্দের মাত্র এদিক ওদিক। কিন্তু দু'টি সম্পূর্ণ ভিন্ন সংগ্রামের পথ। তবুও একটা সময়ের পর পথদু'টি এসে মিলেছিল। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে পরাভূত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষদের অংশগ্রহণ অজানা নয়। কিন্তু নারীরা? তাদের তো নিজেদের জীবনের উপরেই কোনো অধিকার ছিল না, দেশের উপর অধিকার দেখিয়ে স্বাধীনতার জন্য তারা আন্দোলনে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে! এমন ভাবনা তো অলীক কল্পনামাত্র!

 

ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত নারীর জীবনের অন্ধকারময় অধ্যায়ের আলোচনা বড়োই পীড়াদায়ক। এই সময়কালের পূর্বেও নারীরা বহু নিয়ম নীতির নাগপাশে বন্দিনী জীবন যাপন করতো। কিন্তু আমাদের প্রবন্ধের বিষয়বস্তু স্বাধীনতার সময়কালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে আলোচনার গণ্ডি সীমাবদ্ধ রাখা হলো। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সমাজের কাছে নারীর নিজস্ব বলতে কিছুই ছিল না। নিজের সম্পত্তি, নিজের সংসার, নিজের জীবন থেকে শুরু করে নিজের স্বামী, কোনোকিছুর উপরেই কোনো অধিকার ছিল না তাদের। এরই মধ্যে চলে আসছিল বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা,  স্ত্রীশিক্ষার অবরুদ্ধি ইত্যাদি।

 

তখনকার দিনে বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল সর্বব্যাপী। সমাজে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল মেয়েদের পাঁচবছর থেকে দশবছর বয়সের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া বাধ্যতামূলক, নতুবা সেই পরিবারকে একঘরে করে রাখা হবে। এই ব্যবস্থাকে নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন করতে না পারে তার জন্য একে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে নাম দেওয়া হয়েছিল গৌরীদান। এরই সঙ্গে লেগে থাকতো পুরুষদের বহুবিবাহ। কুলীন ব্রাহ্মণদের বহুবিবাহের কারণে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সারাজীবনে হয়তো দু'চারবার সাক্ষাৎ হতো। সেই নারীর সারাটা জীবন কেটে যেত পিতৃগৃহে অথবা ভ্রাতৃগৃহে। কুলীন ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্যান্য পুরুষদের স্ত্রীদেরও দুর্গতির অন্ত ছিল না। সংসারের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেও মিলত না দু'বেলা ভরপেট আহার। স্ত্রীর অবগতিতে স্বামী ব্যভিচারে মত্ত থাকলেও করা যেত না প্রতিবাদ। মুসলিম সমাজেও এর অন্যথা ছিল না। পর্দাপ্রথা তো ছিলই, অনুষঙ্গ হিসাবে নিয়ম ছিল নারীরা ঘরের বাইরে বার হতে পারবে না। হিন্দুঘরে গঙ্গাস্নানে যেতে হলেও মেয়েদের পালকিসমেত চুবিয়ে আনা হতো। এতকিছুর সঙ্গে অন্যতম সংযোজন, অশিক্ষা। সমাজের উঁচু তলা থেকে নীচু তলা সকল মানুষদের মনে অত্যন্ত সুচারুভাবে ধারণা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল যে পড়াশোনা শিখলে মেয়েরা বিধবা হবে। অতএব তারা হয়ে রইলো অজ্ঞ, মূর্খ, নিরক্ষর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন।

 

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নারীদের জীবনে মুক্তির আস্বাদ দিতে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। নারীরা তো নিজেরাই নিজেদের সমস্যায় জর্জরিত। এই আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের মতো উন্নত, আধুনিক ও উন্মুক্ত চিন্তাধারার কিছু মানুষ। পরবর্তীকালে নারীশিক্ষা ও বিধবাবিবাহের জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সচেষ্ট হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ঊনবিংশ শতাব্দী অতিবাহিত হলো স্ত্রীশিক্ষা, নারী স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার নিয়ে সচেতনতা বিস্তার করতে এবং এই সংক্রান্ত নানাবিধ আন্দোলন করতে। নারী আন্দোলনের প্রবর্তক মনীষীগণ উপলব্ধি করলেন, নিজেদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে অগ্রণী হতে গেলে নারীদের প্রয়োজন যথাযথ শিক্ষার, জ্ঞানের। দিকে দিকে প্রতিষ্ঠিত হলো স্কুল ও কলেজ। বাড়ির মেয়েদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে শুরু হলো আরেকপ্রস্থ সংগ্রাম। অবশেষে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ক্রিশ্চান মিশনারীর উদ্যোগে সাধারণ ঘরের মেয়েরা ধীরে ধীরে শিক্ষার আলোর অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করলো। নারীশিক্ষা বিস্তারের পূর্বেও মেয়েরা ছেলেদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল। এবারে সেই সঙ্গে সংযোজিত হলো সংগ্রামের সংঘবদ্ধ রূপ, পরিকল্পনা হলো আরো সুচারু।

 

বিংশ শতকের সূচনা থেকে বিপ্লবী কাজকর্মের সূচনা হলেও নারীরা প্রত্যক্ষভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তবে প্রত্যক্ষভাবে বিদেশি দ্রব্য বর্জন, পিকেটিং, অনশন, আইন অমান্য ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করতো তারা। এছাড়াও বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র, চিঠিপত্র, খবরাখবর প্রদান, বিপ্লবী কাজকর্মে অর্থ ও নিজেদের গয়না দান করে তারা বৈপ্লবিক কাজে সহায়তা করতো।

ননীবালা দেবী

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মুক্তিযুদ্ধে বিশিষ্ট এক নারী ছিলেন ননীবালা দেবী, পরাধীন ভারতের প্রথম মহিলা রাজবন্দী। তিনি কখনো চন্দননগরে কখনো রিষড়াতে গৃহকর্তৃ সেজে ঘরভাড়া নিয়ে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। ১৯১৫ সালের কথা, তখন আমাদের দেশে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন চলছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ কলকাতার শ্রমজীবী সমবায় নামে এক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি করতে যায় আর এই প্রতিষ্ঠানের বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেফতার হন। তাঁর গ্রেফতারের সময় মাউজার পিস্তল কোথায় রেখে গেছেন সে কথা তিনি দলকে জানিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু সেই সময় পিস্তলটা খুব জরুরি ছিল। পিস্তলের খোঁজ দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ননীবালা দেবী।

 

ননীবালা দেবী ছিলেন বাল্যবিধবা, মাত্র ষোলো বছর বয়সে বিধবা হয়েছিলেন। দেশের স্বার্থে সমাজের নিয়মের গণ্ডি উপেক্ষা করে সধবার সাজে মাথায় সিঁদুর পরে একগলা ঘোমটা দিয়ে রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেলে বিপ্লবী রামচন্দ্রের সাথে দেখা করে পুলিশের চোখ এড়িয়ে পিস্তলের খোঁজ নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেই সময়ে এক বাল্যবিধবা মহিলার ক্ষেত্রে এমনভাবে সিঁদুর পরাটা ছিল মৃত্যুসম। পরবর্তীতে পুলিশ জানতে পেরে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। জেলে আটকে রেখে জেরা করা থেকে শুরু করে জোর করে মাটিতে ফেলে শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে গোপনাঙ্গে লঙ্কাবাটা প্রবেশ করানো, তার সঙ্গে একনাগাড়ে লাথি মেরে যাওয়া চলতেই থাকতো। তাঁর দলের বিপ্লবী কার্যকলাপের খবর পাওয়ার জন্য তাঁকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মুখ থেকে একটা কথাও কেউ বের করতে পারেনি।

 

সাহসী হওয়ার সঙ্গে ননীবালা দেবীর মমত্ববোধও কম কিছু ছিল না। এই প্রসঙ্গেই আসে দুকড়িবালা দেবীর নাম। ননীবালা দেবী শুনেছিলেন এই নামে এক বিপ্লবী একই জেলে তৃতীয় শ্রেণীর শাস্তি পাচ্ছেন। তখন ননীবালা দেবীর অনশন আন্দোলন চলছে, পুলিশরা তাঁকে খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি দাবি জানালেন বামুনের মেয়ের হাতের রান্না না হলে অনশন ভাঙ্গবেন না। বামুনের মেয়ে বলতে প্রকারান্তরে দুকড়িবালা দেবীর কথাই বুঝিয়েছিলেন। দুকড়িবালা দেবীর শাস্তি লাঘব করতে তাঁকে নিজের জন্য রান্না করিয়ে ঊনিশদিন পর অনশন ভাঙ্গেন।


দুকড়িবালা দেবী

দেশের কাজে দুকড়িবালা দেবীর এগিয়ে আসা বোনপো নিবারণ ঘটকের প্রভাবে। বিপ্লবী দলে 'মাসীমা' নামে তিনি পরিচিত ছিলেন। ননীবালা দেবীর মতো দুকড়িবালা দেবীও নিজের বাড়িতে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। একবার গাড়োয়ানের ছদ্মবেশে বিপ্লবী হরিদাস দত্ত ন'বাক্স কার্তুজ আর পঞ্চাশটি মাউজার পিস্তল চুরি করেছিলেন। চুরি করা সাতটি পিস্তল দুকড়িবালা দেবীর কাছেই রাখা ছিল। পুলিশ জানতে পেরে দুকড়িবালার বাড়ি ঘিরে ফেলে তাঁকে পাকড়াও করে। শিশুসন্তানকে রেখে দুকড়িবালা দেবী দু'বছরের জন্য তৃ্তীয় শ্রেনীর কয়েদি হয়ে জেলে গিয়েছিলেন। বরাদ্দ হিসাবে ছিল অখাদ্য খাবার ও চটের মত মোটা জামাকাপড়। এর সঙ্গে যৌন নির্যাতন, মলদ্বারে রুল প্রবেশ করানো, চোখে পিন ফুটিয়ে দেওয়া, আঙ্গুলের নখ টেনে তুলে নেওয়ার মত অমানুষিক অত্যাচার করা হত তৃ্তীয় শ্রেণীর কয়েদিদের সঙ্গে। দিনে কুড়ি কিলো করে ডাল ভাঙ্গতে হতো তাঁদের।


সুশীলা মিত্র

নিজগৃহে বিপ্লবীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গে আসে অপর এক নারী বিপ্লবী সুশীলা মিত্রর নাম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের জন্য অন্নসংস্থানের ব্যবস্থাও তিনি করতেন। দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করলেও তাঁর ঘরে যুগান্তর দলের বিপ্লবী সত্যেন বসু, শচী বসুর জন্য জায়গার অভাব হত না। আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯৩২ সালের ২৬শে জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার সময় বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন আড়াই মাস, তিন বছর ও পাঁচ বছরের তিন সন্তানকে। তবু বন্ডে সই করে মুক্তি পেতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এই বন্ডে সই করা নারী পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো বিপ্লবীর কাছেই ছিল অপমানজনক। চামেলী গুপ্ত অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আন্দোলনের কাজে গ্রেফতার হওয়ার পর সরকার থেকে বন্ড লিখতে বললেও রাজী হননি, ছাড়াও পাননি। জেলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং সেখানে পুত্রসন্তানও জন্মেছিল তাঁর। কিন্তু ধীরে ধীরে শরীর আরও খারাপ হলে সরকার যখন বিনাশর্তে মুক্তি দিয়েছিল, অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল তখন। কয়েকদিন পরে চামেলী ও তাঁর শিশুপুত্র দু'জনেই মারা যায়। একইভাবে মেদিনীপুরের কুসুম বাগদী তাঁর দশমাসের শিশুকে ছেড়ে আইন অমান্য আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে জেলে এসেছিলেন। তবু বন্ড লিখে সন্তানকে কাছে পেতে চাননি কুসুম। জেলের দরজা থেকে দুধের শিশুকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

বাসন্তী দেবী 


আইন অমান্য আন্দোলনে একের পর এক নারীরা নিজমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকলেও প্রথমদিকে এই আন্দোলনে মেয়েরা খুব একটা এগিয়ে আসেনি। সেই সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী বাসন্তী দেবী আইন অমান্য আন্দোলনের উদ্দেশ্যে মেয়েদের সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার সঙ্গে স্বামীর কাছ থেকে পেলেন রাজনৈতিক শিক্ষাও। মেয়েদের দিয়ে চরকার প্রচলন করেছিলেন তিনি। খাদির কাপড় নিয়ে বড়বাজারে হরতাল ঘোষণা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাঁকে 'মা' সম্বোধন করতেন।

কল্যাণী দাস                                  বীণা দাস 


আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম দুই কর্ণধার ছিলেন কটকের র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাসের দুই কন্যা কল্যানী দাস ও বীণা দাস। কল্যানী দাস বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়াকালীন ‘ছাত্রীসংঘ’ গঠন করেছিলেন। তিনি ছিলেন এই সংঘের সম্পাদিকা। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত থেকে শুরু করে নিজের বোন বীণা দাস, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, ইলা সেন, সুলতা কর, কমলা দাশগুপ্তর মত আন্দোলনকারীরা এই সংঘে যোগ দিয়েছিলেন। এখানে মেয়েদের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে সাঁতার শিক্ষা, সাইকেল চড়া, ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষণ ইত্যাদি দেওয়া হত। পরবর্তীতে ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যুক্ত হয়ে কল্যানী দাস তিন মাসের জন্য বোম্বে জেলে যান। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে কলকাতায় এসে পঞ্চাশের মন্বন্তরের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। কল্যাণীর উপযুক্ত ভগ্নী ছিলেন বীণা দাস। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন বয়কট করার জন্য বেথুন কলেজের ছাত্রীদের নিয়ে তিনি অত্যধিক সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৩০ সালে ডালহৌসির অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য ছোট ছোট দলের নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেপ্তার হন। বীণা দাস ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী ছিলেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাবর্তনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের মাথা লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে গুলি চালান। কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল গুলি। এই হত্যা প্রচেষ্টা চালানোর কারণে নয়বছর তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। শত অত্যাচার সত্ত্বেও সংগঠনের কোনও খবর তাঁর মুখ থেকে বার করা যায়নি।

 

এক অন্যরকম পটচিত্রের কথা চিন্তা করা যাক। অন্ধকার গলিতে আলো আঁধারির মধ্যে এক বারবণিতার বাসস্থান। দোর্দন্ডপ্রতাপ পুলিশ অফিসারদের কাছে সেই রমণী প্রিয়তমা। এক নিমেষে কাজের চাপ থেকে মনটাকে হালকা করে মেজাজ ফুরফুরে করে দিতে পারে সে। কিন্তু বাইরে থেকে তাকে দেখে যেমনটা মনে হয়, সে কিন্তু আদপেই তা নয়। দেহপসারিনীর আড়ালে সে একজন গুপ্তচর। এমন টানটান উত্তেজনায় ভরপুর চলচ্চিত্র আমরা কতো দেখেছি! কিন্তু না, এটা কোনো চলচ্চিত্রের কাহিনী নয়। মেদিনীপুরের এক নারীর জীবনকাহিনী। নাম তাঁর সত্যবতী। তাঁর বৈধব্যের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষীরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাঁকে দেহপসারিনী করে তুলেছিল। এই অবাঞ্ছিত জীবনকে মেনে নিতে বাধ্য হলেও মনের ভেতর গর্জে উঠেছিল পরাধীনতার প্রতিবাদের সুর। তাঁর কাছে যৌনক্ষুধা মেটাতে আসা পুলিশ অফিসারদের কাছ থেকে গোপন খবর জেনে নিয়ে বিপ্লবীদের জানিয়ে দিতেন সত্যবতী। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই পালিয়ে যেত বিপ্লবীরা। বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে বারংবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ততদিনে পুলিশ জানতে পেরে গিয়েছিল যে তিনি পুলিশের গোপন খবর বিপ্লবীদের জানিয়ে দেন। পুলিশি অত্যাচারে তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কিডনি এবং অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালেও চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। অত্যন্ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে প্রাণত্যাগ করেছিলেন তিনি।

আবাদি বানো বেগম


দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে বাদ যাননি কেউই। পুত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে মায়েরাই বা বাদ যাবেন কেন! এমনই এক মায়ের আকর্ষনীয় ভাষণে আকৃষ্ট হয়ে অভিজাত হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের মেয়েরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। তাঁর নাম আবাদি বানো বেগম। রামপুরের দুই বিপ্লবী মোহাম্মদ আলি জোওহর ও শওকত আলী জোওহর ছিলেন তাঁর দুই পুত্র। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত আবাদি বানো বেগম যোগদান করেছিলেন অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে।

মাতঙ্গিনী হাজরা


গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত অন্যতম নারী বিপ্লবী মাতঙ্গিনী হাজরা। তিনি ছিলেন মেদিনীপুরের দরিদ্র কৃষকঘরের মেয়ে, বাল্যবিধবা। ১৯৪২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বের মেদিনীপুরের তমলুকে প্রায় আটহাজার বিপ্লবীদের শোভাযাত্রার সামনের সারিতে ছিলেন তিয়াত্তর বছরের মাতঙ্গিনী হাজরা। বিশাল পুলিশ বাহিনী বাধা দিয়েছিল তাঁদের, চালিয়েছিল গুলি। জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা ধরে সামনের সারিতে থাকা মাতঙ্গিনী হাজরার হাতে গুলি লাগলেও সেই পতাকা উঁচু করে ধরে রাখা অব্যাহত ছিল, যতক্ষণ না কপালে গুলি নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

 

কমলা দাশগুপ্ত

কল্যানী দাসের ছাত্রীসংঘের প্রসঙ্গ তো পূর্বেই উত্থাপন করা হয়েছে। বেথুন কলেজে পড়তে এসে এই সংঘের সদস্যা হয়েছিলেন কমলা দাশগুপ্ত।  ছাত্রীসংঘে যোগ দিয়ে দীনেশ মজুমদারের কাছে লাঠিখেলা শিখলেন। পরবর্তীতে রসিকলাল দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুগান্তর দলের সদস্য হলেন এবং বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে থাকতে শুরু করলেন। এই হোস্টেলেই তিনি ট্রাঙ্ক ভর্তি করে বোমা লুকিয়ে রাখতেন। এই বোমাগুলি ব্রিটিশদের ওপর আঘাত হানার জন্য ব্যবহৃত হতো। বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি, কিন্তু প্রমাণের অভাবে প্রত্যেক সময় মুক্তি পেয়ে যান। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনবছর কারাবাস করেছিলেন। ছেচল্লিশের  নোয়াখালির দাঙ্গায় ধর্ষিত মহিলাদের বিবাহের ব্যবস্থা করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন কমলা দাশগুপ্ত এবং ছিয়াশি জন ভারতীয় যুবক ধর্ষিত মেয়েদের বিয়ে করতে সম্মত হয়ে চিঠিও লিখেছিল। স্বয়ং গান্ধীজি তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন।

সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন যিনি তাঁর নাম সরোজিনী নাইডু। প্রকৃত নাম সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়। ড. এম জি নাইডুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তিনি হয়ে যান সরোজিনী নাইডু। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯১৫ সালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ভারতের স্বাধীনতার দাবিতে দেশের প্রতিটি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সভা করতেন তিনি। বিহারে নীল চাষিদের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে নারীমুক্তি ও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের জন্য প্রচারমূলক সভা, ১৯১৭ সালে অ্যানি বেসান্তের সভাপতিত্বে মহিলাদের ভোটাধিকারের দাবিতে ভারতীয় মহিলা সমিতিতে যোগ দেওয়া, ১৯২৮ সালে অসহযোগ আন্দোলনের বার্তা নিয়ে আমেরিকা পাড়ি, সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আইন অমান্য আন্দোলনের সভা করতে গিয়ে সাতমাসের জন্য তাঁকে কারাবাস গ্রহণ করতে হয়েছিল। পরবর্তীকালে গান্ধীজির সঙ্গে ডান্ডি অভিযানে গিয়ে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুনরায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে ২১ মাসের জন্য জেলে গিয়েছিলেন তিনি।

সুচেতা কৃপালনী

বাঙালি নারী বিপ্লবীদের আলোচনায় হঠাৎই আসে এক অবাঙালি নারী বিপ্লবীর নাম। সুচেতা কৃপালনী, পাঞ্জাবের মেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি অবাঙালি, হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ কীসের! ছোটবেলা থেকে বিপ্লবীদের যে বীরগাথা আমরা পড়ে এসেছি সেখানে অন্যান্য বাঙালি মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে সমান সারিতে পেয়ে এসেছি সুচেতা কৃপালনীর নাম। ভূমিকম্প, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা ইত্যাদিতে ত্রাণের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বরাবর সাহায্য করেছিলেন তিনি। নিখিল ভারত কংগ্রেসের মহিলা সাব-কমিটির সম্পাদিকা থেকে শুরু করে কংগ্রেসের বৈদেশিক বিভাগেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯৪০ সালে গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদান করে গ্রেফতার হন এবং দেড় বছরের কারাবাস গ্রহণ করেন। সেখান থেকে ফিরে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেন। দু'বছর পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ১৯৪৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

 নেলী সেনগুপ্ত 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি অবাঙালি, ধনী দরিদ্র, হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষজন অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এটা জানেন কি, এক ভারতীয়র সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন খোদ ব্রিটিশদের দেশেরই এক মেয়ে? নাম তাঁর নেলী গ্রে। ১৯০৪ সালে কেমব্রিজে পড়ার সময় চট্টগ্রামের যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং এর পাঁচবছর পর পরস্পরের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর নেলী গ্রে নেলী সেনগুপ্ত হয়ে চট্টগ্রামে আসেন এবং এই দেশকে আপন করে নেন। ১৯২১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে খদ্দরের কাপড় বিক্রি করেছেন। নিজে বিদেশি হয়ে বিদেশি জিনিস কিনতে নিষেধ করেছেন। ১৯৩০ সালে দিল্লিতে গিয়ে সভা করায় সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং বিচারে তাঁর চারমাসের জেলও হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে কলকাতা অধিবেশনের নির্বাচিত সভানেত্রী হয়ে একটি সভা করতে গিয়ে পুনরায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।

ভগিনী নিবেদিতা

 

বিদেশিনীর প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে ভগিনী নিবেদিতার কথা বলতেই হয়। অ্যাংলো-আইরিশ বংশোদ্ভুত এই নারী ভারতবর্ষকে আপন করে নিয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা হিসাবে রামকৃষ্ণ মিশনে ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত। সেখানে প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিনি ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিয়মানুসারে ধর্ম ও রাজনীতির সংশ্রব ঠেকাতে সংঘের কাউকে রাজনীতিতে জড়ানোর নিষেধ থাকায় মিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হয় তাঁকে। ভগিনী নিবেদিতা নারীশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। মেয়েদের জন্য স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করতেন।

বর্তমানে মেয়েরা কোথায় নেই! শিক্ষিকা, সেনাবাহিনী, মহাকাশচারী, সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে কর্পোরেট জগৎ, রেডিও জকি সর্বত্র মেয়েদের বিচরণস্থান। কিন্তু স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের দেশে মেয়েদের রেডিও স্টেশন চালু করার কথা কেউ হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারতো না। বেলা মিত্র সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিলেন। প্রথমে শ্বশুরবাড়ি থেকে, পরে কলকাতার বেহালার কাছে জঙ্গলের মধ্যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গোপন রেডিও স্টেশন খুলেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল গোপনে বিদেশে সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। ১৯৪৫ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আজাদ হিন্দ ফৌজের কয়েকজনের ফাঁসির দিন ধার্য হলে বেলা মিত্রের তৎপরতায় বাইশ জনের মৃত্যুদন্ড রদ করা সম্ভব হয়েছিল।

 

নারীশিক্ষার চাকা তখন পূর্ণমহিমায় গতি নিয়েছে। কবি মনোমোহন ঘোষ ও মালতী ঘোষের মেয়ে এবং শ্রী অরবিন্দ ঘোষের ভাইঝি লতিকা ঘোষ ছিলেন অসামান্য মেধাবী। কলকাতার লরেটো স্কুলের ছাত্রী এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বি.লিট. রিসার্চ ডিগ্রিধারী হয়েও জাতীয়তাবাদী মানসিকতার জন্য বেথুন কলেজে অধ্যাপনার চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন লতিকা দেবী। তাতে কুছপরোয়া নেহী! বিধানচন্দ্র রায়ের পরামর্শে চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যোগ দিয়ে দুঃস্থ মেয়েদের জুনিয়র নার্সিং ও ধাত্রী কাজের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। চিকিৎসকরা এসে ক্লাস নিতেন এবং লতিকা দেবী ইংরাজিতে রিপোর্ট লেখা শেখাতেন। কিন্তু গোপনে চালাতেন বিপ্লবী কার্যকলাপ। মহিলাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। নিখিল ভারত কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে সুভাষচন্দ্র বসুর পরামর্শে লতিকা দেবীর নেতৃত্বে মেয়েরা উপস্থিত হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী হিসাবে মিলিটারি কায়দায় পুরুষের সঙ্গে মার্চ করতে করতে। সেই দৃশ্য বিস্মিত করেছিল সকলকে। উৎসাহ জুগিয়েছিল আরো মেয়েদের।

লক্ষ্মী সায়গল
 

সম্মানীয় পেশা, মোটা অঙ্কের বেতন, আরামদায়ক জীবন – এসব পরিত্যাগ করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত লড়াই, আত্মত্যাগের পথ বেছে নেওয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ। সেই কাজই করেছিলেন লক্ষ্মী সায়গল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের পাঁচটি বিগ্রেডের মধ্যে অন্যতম ঝাঁসির রাণী বিগ্রেড। এটি ছিল এশিয়ার প্রথম নারীবাহিনী। সিঙ্গাপুরে কর্মরত চিকিৎসক লক্ষ্মী স্বামিনাথন তথা লক্ষ্মী সায়গল নেতাজীর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের উজ্জ্বল কর্মজীবন ত্যাগ করে ঝাঁসি বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। পরিচিত হন ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নামে। প্রায় ১৫০০ মহিলা এই বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালের অক্টোবর মাসে এই বাহিনীর সামরিক ট্রেনিং শুরু হয়। ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় জনতার চাপে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

 

মাত্র বারো বছর বয়স থেকে বঙ্গশ্রী, দেশ, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় লিখতে শুরু করা যশোরের মেধাবী ছাত্রী দৌলতউন্নিসা মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। অত্যন্ত অল্প বয়সেই ‘গাইবান্ধা মহিলা সমিতি’র সম্পাদিকা হয়েছিলেন। তাঁর বক্তৃতা অনুপ্রেরণা যোগাতো সকলকে, আর এই কারণেই ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে পুলিশ তাঁদের বসতবাড়ি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। তবুও তাঁকে কেউ থামাতে পারেনি। ফুলছড়ি গ্রামের একটি সভা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। শাস্তি ছিল এমনই যে রাজশাহী, প্রেসিডেন্সি, বহরমপুর জেলে বদল করে করে রাখা হয়েছিল।

 

স্বামী যদি হন সরকারি কলেজের অধ্যাপক, তাঁর বেতন তো দেবে সরকার, অর্থাৎ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। আর এখানেই ছিল কৃষ্ণনগরের নির্মলনলিনী দেবীর আপত্তি। ব্রিটিশ সরকারের টাকায় জীবনধারণ করবেন না বলে স্বামীগৃহ ত্যাগ করে অন্যত্র ঘর ভাড়া করে থাকতেন। মহিলাদের নিয়ে একখানি সংগঠনও তৈরি করেছিলেন। ১৯৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলন করার সময় পুলিশ গ্রেফতার করলে তাঁর সশ্রম কারাদন্ড হয়। তাঁকেও বারবার পরিবর্তন করে কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, আলিপুর, হিজলী সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছিল।

স্বর্ণকুমারী দেবী                 সরলা দেবী চৌধুরাণী 

নারীশিক্ষার মহিমা এমনই, সরলাদেবী চৌধুরানী মাত্র তেরো বছর বয়সে এন্ট্রান্স পাস করে সতেরো বছরে ইংরাজিতে অনার্স সহ বি.এ. পাশ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকার সম্পাদিকা। সেসময়ের প্রথম নারী বুদ্ধিজীবী ছিলেন তিনি। মাতা স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অগ্রজা সাহিত্যিক। তাঁর সময়ের প্রথম রাজনৈতিক নারী নেত্রীর পাশাপাশি তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ। প্রায় শতাধিক দেশাত্মবোধক গান রচিত হয়েছে তাঁর কলমে। ব্রিটিশরাজের বিরূদ্ধে স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার পর এই গানগুলি হয়ে উঠেছিল তাঁর শাণিত অস্ত্র। ‘বন্দেমাতরম’-এর প্রথম দুই পংক্তি রবীন্দ্রনাথ সুরারোপ করলেও গানটির বাকি অংশের সুরবিস্তার করেছিলেন সরলাদেবী। স্বদেশী আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থাপন করেছিলেন তাঁতবস্ত্র প্রচার ও লক্ষ্মীর ভান্ডার। মহিলাদের মধ্যে তরবারি চালনা, লাঠি খেলা ইত্যাদি প্রচলিত করেন তিনি।

বিপ্লব ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ ধীরে ধীরে প্রশস্ত হতে শুরু করে। সশস্ত্র বিপ্লবের প্রথম দুই মহিলা সৈনিক ছিলেন শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী। তাঁরা দু'জন একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। কুমিল্লার আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের লাঠিচার্জ দেখে তাঁদের কিশোরীমন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। পড়াশোনা শেখার সাথে সাধারণ ঘরের মেয়েদের গানবাজনা শেখার পথ থেকে অনেকখানি দূরে সরে গিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন এই দুই কিশোরী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেবেন বলে লাঠি ও ছোরা চালানো শিখলেন। গ্রাম থেকে বারো মাইল দূরে ময়নামতি পাহাড়ে গিয়ে বীরেন্দ্র ভট্টাচার্যের কাছে রিভলবার চালানোর প্রশিক্ষণ নিলেন। ১৯৩১ সালে কুমিল্লায় ছাত্র কনফারেন্স হলে তাঁরা পঞ্চাশ ষাট জন ছাত্রী নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘ছাত্রীসংঘ’। ১৯৩১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে তাঁর বাংলোতে গিয়ে সামনে থেকে গুলি করে মেরেছিলেন তাঁরা। সুনীতির দু'টো গুলি স্টিভেন্সের বুকে লেগেছিল। ফলস্বরূপ তাঁদের শাস্তি হয়েছিল যাবজ্জীবন জেল। শান্তিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং সুনীতিকে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদি করা হয়েছিল। সাতবছর পর গান্ধীজির আবেদনে অন্য কয়েদিদের সঙ্গে মুক্তি পান তাঁরা।

 প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার                                              লীলা নাগ


আন্দোলন চলতে থাকে। নারী বিপ্লবীরা ক্রমে ব্রিটিশ সরকারের মনে ভয় জাগাতে শুরু করে। সরকার থেকে এমনই এক নারী বিপ্লবীর মাথার দাম রাখা হয় তৎকালীন পাঁচশত টাকা। তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। চট্টগ্রামের মেয়ে তিনি, অত্যন্ত মেধাবী। আই.এ. পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ড থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ছাত্রী অবস্থা থেকেই ঢাকার লীলা নাগের “দীপালি সংঘ” এবং কলকাতার কল্যানী দাসের “ছাত্রী সংঘে”র সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩২ সালে বিপ্লবী কল্পনা দত্তের সহায়তায় মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সাজপোশাক পরিবর্তন করে ছদ্মবেশে নানান সময়ে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন। সেসময় পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব নামক ব্রিটিশদের একখানি ক্লাব ছিল যার সামনে লেখা থাকতো ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। ১৯৩২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর বোমা এবং রিভলবারসহ সঙ্গীদের নিয়ে প্রীতিলতা সেখানে আক্রমণ করেছিলেন। কয়েকজনকে নিঃশেষ করতে পারলেও খানিক পরেই পুলিশ সবদিক দিয়ে তাঁদের ঘিরে ফেলে। কৌশলে পুরুষসঙ্গীদের সেখান থেকে বের করে দিয়ে পটাশিয়াম সাইনাইড খেয়ে মাত্র একুশ বছর বয়সে শহীদ হয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর দেহ সৎকার পর্যন্ত করতে দেয়নি।

কল্পনা দত্ত

মাস্টারদা সূর্য সেনের দলের অন্যতম নারীবিপ্লবী ছিলেন কল্পনা দত্ত। তিনি ছিলেন বোমা বাঁধতে পারদর্শী। ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি মাস্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের সাথে গহিরা গ্রামের ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে সমানে সমানে লড়েছিলেন। পরবর্তীকালে ধরা পড়েছিলেন এবং বিচারে রাজশাহী ও হিজলীর জেলে ছ’ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন। ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলার ঘটনায় প্রীতিলতার সহসঙ্গী হিসাবে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু এর একসপ্তাহ পূর্বে পুরুষের ছদ্মবেশে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে গোপনে দেখা করতে গিয়ে ধরা পড়েন। প্রমাণের অভাবে ভ্যাগাব্যান্ড কেসে একমাস পর জেল থেকে ছাড়া পান।

 

এসব তো গেলো ভারতের প্রাক-স্বাধীনতার নারী বিপ্লবীদের কথা, যেসময় ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য দিকে দিকে নির্দিষ্ট সংগঠন গড়ে উঠেছিল। কিন্তু শুরুর দিকে কী হয়েছিল, যখন ইংরেজরা আমাদের দেশে প্রথম ঘাঁটি গেড়ে বসে? তখনও মেয়েরা সমান সাহসিকতার সঙ্গে ব্রিটিশদের মোকাবিলা করেছিল। ফিরে যাওয়া যাক ফ্ল্যাশব্যাকে।

ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ

মণিকর্ণিকা তামবে – চেনা চেনা লাগছে কি? নামটা ঠিক পরিচিত লাগছে না! ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ, এবার লাগছে নিশ্চয়ই! মণিকর্ণিকা তামবে তাঁর জন্মগত নাম। ঝাঁসির মহারাজা গঙ্গাধর রাও নিওয়াকরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাঁর নাম হয় লক্ষ্মীবাঈ। ১৮৫৮ সালের ২৩শে মার্চ ব্রিটিশ সৈন্যরা ঝাঁসি অবরোধ করে। এর পাঁচবছর আগেই গঙ্গাধর রাও মারা গিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যরা ঝাঁসি করায়ত্ব করে নেওয়ার পূর্বে এক রাতে দূর্গের দেয়াল থেকে সন্তানসহ লাফ দিয়ে লক্ষ্মীবাঈ প্রাণরক্ষা করেন। ওইসময় তাঁকে ঘিরে রেখেছিল তাঁর নিজস্ব একটি দল, যার অধিকাংশই ছিল নারী সদস্যা। পরবর্তীতে তিনি অন্যান্য বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে যোগ দেন। ১৮৫৮ সালের ১৭ই জুন ফুলবাগ এলাকার নিকটবর্তী কোটাহ-কি সেরাইয়ে রাজকীয় বাহিনীর সাথে পূর্ণোদ্দমে যুদ্ধ চালিয়ে শহীদ হন রাণী লক্ষ্মীবাঈ। যুদ্ধশেষে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে জেনারেল হিউজ রোজ তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন, "রাণী তাঁর সহজাত সৌন্দর্য্য, চতুরতা এবং অসাধারণ অধ্যবসায়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। এছাড়াও, তিনি বিদ্রোহী সকল নেতা-নেত্রীর তুলনায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিলেন।" ১৮৭৮ সালে কর্ণেল ম্যালসন লিখিত "দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ইন্ডিয়ান মুটিনি" পুস্তকে লক্ষ্মীবাঈয়ের সম্পর্কে উদ্ধৃত করেছিলেন, "তাঁর জনগণ সর্বদাই তাঁকে স্মরণ করবে। তিনি নিষ্ঠুরতাকে বিদ্রোহের পর্যায়ে উন্নীত করার মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি জীবিত আছেন এবং স্বীয় মাতৃভূমির জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।"

রাণী ভেলু নাছিয়ার

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন আরো এক রাণী, রাণী ভেলু নাছিয়ার। শিবগঙ্গা রাজ্যের রানী ছিলেন তিনি। তিনিই প্রথম রাণী যিনি ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তবে ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী প্রথম রাণী হিসাবে লক্ষ্মীবাঈকে গণ্য করা হয়ে থাকে। রাণী ভেলু নাছিয়ার যুদ্ধে ব্যবহৃত সবরকম অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। সামরিক যুদ্ধ কৌশল, যেমন ভালারি, সিলাম্বাম (লাঠি ব্যবহার করে যুদ্ধ) থেকে শুরু করে ঘোড়াচালনা এবং তীরচালনা সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন তিনি। তাঁর স্বামীকে ব্রিটিশ সৈন্য এবং আর্কটের নবাবের পুত্র হত্যা করেছিল। রাণী ভেলু নাছিয়ার ১৭৮০ সালে সফলভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং নিজ রাজ্য পুনরুদ্ধার করেছিলেন।

রাণী অবন্তী বাঈ

রামগড় রাজ্যের রাণী অবন্তী বাঈ ছিলেন অন্যতম নারী বিপ্লবী। রামগড় রাজ্যের শাসক রাজা বিক্রমাদিত্য সিংয়ের স্ত্রী ছিলেন তিনি। অসুস্থতার কারণে বিক্রমাদিত্য রাষ্ট্রের বিষয়গুলি পরিচালনা করতে পারছিলেন না এবং এই সুযোগে তাঁর রাজ্য দখল করার অভিপ্রায়ে ব্রিটিশরা রাণী অবন্তী বাঈকে অযোগ্য শাসক হিসাবে ঘোষণা করে। পরিকল্পনা মাফিক ১৮৫১ সালে ব্রিটিশরা রামগড়ে তাদের নিজস্ব শাসক নিযুক্ত করে। সেই শাসককে অস্বীকার করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন রাণী অবন্তী। চারহাজার সৈন্য নিয়ে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন তিনি এবং নিজে তার নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে তাঁর প্রথম যুদ্ধ হয় ম্যান্ডেলার কাছে কেরী গ্রামে। সেখানে তিনি ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীকালে অবন্তী বাঈ ব্রিটিশদের হাতে পরাজিত হয়েছিলেন এবং ধরা পড়ার তুলনায় নিজেকে চিরতরে শেষ করে দেওয়া শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন।

বেগম হজরত মহল

শুধুমাত্র হিন্দু রাণীরাই নন, সেসময় মুসলিম রমণীরাও ব্রিটিশদের প্রতিরোধ করতে এগিয়ে এসেছিলেন। এমনই একজন ছিলেন বেগম হজরত মহল। তিনি ছিলেন আওধের বেগম এবং ওয়াজেদ আলি শাহের স্ত্রী। ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি আওধের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেন। তাঁর “হজরত বাহিনী” সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। এই বাহিনীর এক সিপাহী শহীদ মক্কা পাসির পত্নী উদাদেবী কলিন ক্যাম্পবেলের বাহিনীকে গাছের উপর থেকে একের পর এক গুলি করে ব্রিটিশদের হত্যা করে গাছেই শহীদ হয়েছিলেন।

 

এরকমই কতো হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নারী বিপ্লবীদের আঁচল রক্তে রাঙা হয়ে রয়েছে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন, সাঁওতাল, মুন্ডা সকল ঘরের মেয়েরা অসমসাহসিকতার সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের উন্নত ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে লড়াই করে গেছে। এঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকের নামই আমরা মনে রেখেছি, হয়তো বা স্বাধীনতা দিবসের দিনটি ছাড়া তাঁদের কথা আমাদের মনেও পড়ে না। এই প্রবন্ধে যে কয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এর চাইতে হাজার গুণে বেশি নারীরা ভারতের স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে আন্দোলনে সামিল হয়েছিল, সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিল। মেয়েরা নিজেরা মরেছে। সাথেই হারিয়েছে তাদের বাবাকে, স্বামীকে, ভাইকে, সন্তানকে যারা ব্রিটিশদের হাতে অত্যাচারিত হয়েছিল অথবা বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। তাদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের জন্যই এই দেশ স্বাধীন হতে পেরেছে, নবপ্রজন্মের শিশু দেখতে পেরেছে নতুন প্রভাতের সূর্যোদয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল বিপ্লবী দেশপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে সম্মান জানাতে এই দেশকে আমরা করে তুলতে পারি আরো সুন্দর, শান্তিপ্রিয়। তবেই তাঁদের আত্মবলিদান সার্থক রূপ পাবে।



কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী


চিত্র সৌজন্যঃ অন্তরজাল 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন