আমার সাথে লীনার প্রথম আলাপ এক বন্ধুর
বিয়েতে। লীনার রূপ প্রথম দেখাতেই আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। ওর মেদহীন শরীরে নীল
রঙের শাড়িটা পদ্ম পাতার উপরে থাকা জলের ফোঁটার মতো টলমল টলমল করছিল। এমন সুন্দরীকে
করায়ত্ত করার মজাই আলাদা। স্কুল-কলেজে সবাই আমাকে 'লেডি কিলার সৌভিক' বলে ডাকত।
তাই এই নামের সম্মান রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেলাম লীনার দিকে। লীনা বড়লোক বাবার
একমাত্র মেয়ে। বাবা তিন বছর আগে মারা গেছে আর মা মারা গেছে শৈশবেই। এখন লীনা
সম্পূর্ণ একা থাকে আর সবচেয়ে বড়ো কথা সে তার বাবার কোম্পানির একমাত্র মালকিন।
বন্ধুর কাছ থেকে এইসব তথ্য আগেই হাতিয়ে নিয়েছিলাম।কারণ শিকার করার আগে শিকারীর
হাতে সব তথ্য থাকা বাঞ্ছনীয়।লীনা ড্রিংকস কাউন্টারের সামনে একাই দাঁড়িয়ে ছিল।
আমি ওর কাছে গিয়েও যেন উপেক্ষা করলাম ওকে। সুন্দরীদের বশ করার এটাই কৌশল।
সুন্দরীরা জীবনে প্রচুর পাত্তা পায়। তাই তাদের দৃষ্টি আর মন ধাবিত হয়
অবহেলা করা মানুষটির দিকেই।কিছুক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন দেখলাম লীনা
বারংবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। তখন ওর দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
"আপনার হাত খালি কেন?" লীনা যেন এইবার একটু খুশি হল। আমাকে হাসিমুখে
উত্তর দিল, "কিছুক্ষণ আগেই খাবার খেলাম। এখন আমি বেরিয়ে যাব। তাই আর কিছু
খাব না।"
লীনার গলার স্বর যেন কোন সাধারণ মেয়ের কন্ঠস্বর নয়। সে কথা বললে মনে হয় ঝর্ণার
জল বয়ে যাচ্ছে কুলকুল শব্দে।আমি লীনার দিকে ফিরে একটু হাসলাম। তারপর বললাম,
"আমি সৌভিক আর আপনার নাম?" লীনা পাল্টা উত্তর দিল। এইভাবে আমাদের
কথাবার্তা এমন জমে উঠল যে কখন আমরা 'আপনি' থেকে 'তুমিতে' অবতরণ করেছি, সেটা অনুভবই
করতে পারলাম না। এইসময় লীনার ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা ধরতেই লীনার মুখটা কেমন যেন
ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ফোনটা রাখার পর আমি চিন্তিত মুখে জিজ্ঞাসা করলাম,
"কোনো সমস্যা?"
লীনা এখন অনেকটাই আমার হাতে। তাই উত্তর দিতে দ্বিধা করল না, "আসলে আমার
ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতে পারবে না। ওর ছেলে অসুস্থ।"আমি যেন হাতে চাঁদ
পেলাম। বন্ধুকে বলে একটা গাড়ি ভাগ্যিস জোগাড় করে রেখেছিলাম। তাই লীনাকে সঙ্গে
সঙ্গে বললাম, "আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি। আমার কাছে গাড়ি আছে।"লীনা
জিভ কেটে বলল, "এ মা! ছি ছি! তুমি কেন আমার জন্য কষ্ট করবে?"আমি এবার
আমার কথার চাতুরিকে কাজে লাগালাম। একটু কথায় ভাঁজ মেরে বললাম, "কেউ বিপদে
পড়লে যদি তার উপকার করার জন্য আমাকে কষ্ট করতে হয়। তবে সেই কষ্ট করতে আমি
হাজারবার রাজি আছি।"লীনার মনটা যেন আমার কথাতে একটু গলে গেল। কিছু না বলে
একটা স্মিত হাসি উপহার দিয়ে আমাকে অনুসরণ করে আমার গাড়িতে এসে বসল। আমি আর কথা
বাড়ালাম না। লীনার কাছ থেকে ওর ঠিকানাটা জেনে নিয়ে ফোনে গুলজার সাহেবের গান
চালিয়ে দিলাম। লীনার কাছ থেকে আগেই ওর পছন্দের গায়কের নাম জেনে নিয়েছিলাম। গান
শুনতে শুনতে লীনা চোখটা বন্ধ করে দিল। লীনার এমন শান্তভাবে চোখ বন্ধ করা দেখে
আমার ভীষণ শান্তি হল। লীনা তবে আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে নইলে এমন করে একজন
অপরিচিত ব্যক্তির গাড়িতে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারত না। অবশেষে লীনার বাড়ির সামনে
গাড়িটা এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমে লীনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "এতদূর এলে
একটু কফি খেয়ে যাও।" আমার মনেও তখন বাড়ির ভিতরে যাওয়ার ষোলোআনা ইচ্ছা
রয়েছে। কিন্তু কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তেই হয়। আমি বললাম, "এত রাতে তোমার
বাড়ি যাব না। এই কফির নিমন্ত্রণ তোলা রইল।"লীনা হেসে বলল, "মনে
রাখবে কিন্তু আমার বাড়িতে তোমার নিমন্ত্রণ রইল।"
এই কথাটা বলে লীনা চলে যাচ্ছিল । আমি বুঝলাম এটাই মোক্ষম সময়। তাই সেইসময়ে বললাম,
"তোমার ফোন নাম্বারটা পাওয়া যাবে? এই নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য একটা
যোগাযোগ মাধ্যম তো দরকার।"
লীনা একটুও কুন্ঠাবোধ না করে আমাকে ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিল। এরপর দু-তিনদিন
লীনাকে ওই নাম্বারে কোন ফোন করলাম না। কারণ কোন সুযোগ পেলেই অমন সঙ্গে সঙ্গে তার
সদ্ব্যবহার করলে চলে না। একটু দুরত্ব, একটু বিরহ দরকার প্রেমে। অবশেষে চারদিনের
মাথায় দুপুরবেলায় লীনাকে ফোন করলাম। লীনার প্রিয় লেখকের সাহিত্যসভা অনুষ্ঠিত
হতে চলেছে কলকাতায়। সেই খবরটা দেওয়ার আছিলায় লীনাকে ডেকে নিলাম দেখা করার জন্য।
লীনা প্রথমে বাধা দিলেও অবশেষে রাজি হয়ে গেল। বিকেলবেলা লীনার সাথে আমার দেখা
হল। আজকে লীনা পড়েছে একটা লাল রঙের চুড়িদার। আগের দিনের থেকেও বেশি সুন্দরী
দেখাচ্ছে ওকে। হয়ত এই গোধূলি বেলার আলোয় লীনার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেছে।
সে যাইহোক সাহিত্যসভার কচকচি সহ্য করার পর লীনাকে নিয়ে গেলাম প্রিন্সেপ ঘাটে।
প্রিন্সেপ ঘাটের সামনে একটা বেঞ্চে বসে চা খাচ্ছিলাম এমন সময় লীনা জিজ্ঞাসা করল,
"আচ্ছা! তুমি কি করো?"এই প্রশ্নটার জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম।
অনেকখানি কুন্ঠা আর গ্লানি নিয়ে উত্তর দিলাম, "ওই একটা ছোট প্রাইভেট
কোম্পানিতে কাজ করি।" লীনার যেন আমার কষ্ট দেখে মায়া হল। আমাকে বলল,
"সে তো ভালো কথা। ওমন লজ্জা পেয়ে বলছ কেন?"আমিও মুখটা কাঁচুমাচু করে
উত্তর দিলাম, "আমি আমার চাকরি নিয়ে একদম খুশি নই, লীনা। এমবিএ করার পর এই
চাকরি করার কোন ইচ্ছা আমার নেই। মাঝেমাঝে নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হয়। তবু সংসারে মা
আর বোনের কথা ভেবে কাজ করি।"
লীনা আমার কথাগুলো শুনে আরো গলে গেল। আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, "এমন
ভেবোনা তুমি। সবাই ছোট থেকেই একদিন বড়ো হয়। তুমি পারবে। আমার কোম্পানিতে
ম্যানেজরের পদ খালি আছে। তুমি যদি চাও ইন্টারভিউ দিতে পার। আমি তোমাকে রেফার
করব।"
কথাটা শুনেই লীনাকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। লীনা দেখলাম সরে গেল না। আমার আলিঙ্গনে
নিজেকে আরো বিলীন করে দিল।লীনার রেফারেন্সে ওর কোম্পানিতে চাকরি পেতে বিশেষ
অসুবিধা হল না। মাসখানেক মন দিয়ে কাজ করলাম। লীনার সাথে কাজ ছাড়া অন্য কোন
বিষয়ে আলোচনাই করতাম না। অবশেষে একদিন লীনা নিজেই আসল আমার কেবিনে। আমার
ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে বলল, "এইসব কাজ ছাড়ো। তোমার যে আমার বাড়িতে
নিমন্ত্রণ ছিল। সেটা কি ভুলে গেলে?"আমি গোবেচারা মুখ নিয়ে বললাম, "না
না। ওসব থাক। পরে হবে।"
লীনা কোন কথাই শুনল না। আমাকে জোরজবরদস্তি গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসাল।লীনার বাড়িটা বেশ সুন্দর। তিনতলা মস্ত রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। এমন একটা বাড়ির
মালিক হিসাবে নিজেকে ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল। এইসব ভাবতে ভাবতে দরজা পেরিয়ে
লীনার বাড়ির ভিতরে ঢুকতে যাব এমনসময়ে একটা বিদঘুটে শব্দে আমার চিন্তার রেশটা
কেটে গেল। মেঝের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা সাদা মোটা বিড়াল আমার দিকে বিশ্রিভাবে
তাকিয়ে মুখ থেকে ঘরঘর শব্দ বার করছে। লীনা বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে বলল,
"সুজয়, এমনটা করে না। ও আমাদের গেস্ট।"
বিড়ালটা দেখলাম লীনার কথা শুনে চুপ করে গেল। মালিকের মন জয় করার একটা উপায় হল
তার পোষ্যের মন জয় করা। আমিও সেটাই করলাম। একটু নীচু হয়ে বিড়ালটার গায়ে হাত
দিতে যাব এমনসময় বিড়ালটা তার
ক্ষুরধার নখ বার করে আমার হাতে আঁচড় দিয়ে দিল। আমি চিৎকার করে উঠলাম। লীনা
সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে আমার হাতটা চেপে ধরল। বিড়ালটা তবে আমার ক্ষতি করতে গিয়ে
আমার উপকার করে দিয়েছে। লীনার এমন সাহচর্য পাওয়ার সৌভাগ্য ক'জনেরই বা হয়।
এভাবে লীনার বাড়িতে আমার যাতায়াত চলতেই থাকল। সেই সাথে বাড়তে লাগল লীনার সাথে
আমার ঘনিষ্ঠতা। তবে কাঁটার মতো আমাদের মাঝে লেগেছিল সুজয় মানে লীনার পোষা
বিড়ালটা। সবসময় আমাদের মাঝে ঘুরে বেড়াত। আমি চাইলেও যেন লীনাকে একা পেতাম না।
অনেকবার আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে সুজয় একটা বিড়াল ছাড়া অন্য কিছু
নয়। তাকে উপেক্ষা করাই যায়। কিন্তু তবুও সুজয়কে নিয়ে আমার অস্বস্তি যেন দিনকে
দিন বেড়েই যাচ্ছিল।
এর মধ্যে একদিন লীনা অনুরোধ করল, "তুমি তো পাকাপাকি আমার বাড়িতে এসে থাকতে
পার। এই এত্ত বড়ো বাড়িতে আমি আর সুজয় থাকি। একা একা আমার আর ভালো লাগে
না।"
লীনার এমন অনুরোধ কি উপেক্ষা করা যায়? সেইদিনই ব্যাগ পত্তর নিয়ে চলে এলাম লীনার
বাড়ি। আমার জন্য আলাদা একটা রুমের ব্যবস্থা করেছে লীনা। কিন্তু আমার নজর তো ওর
বেডরুমের দিকে।অবশেষে লীনার বেডরুমে প্রবেশ করার সুযোগটাও পেয়ে গেলাম। সেদিন বাইরে ঝমঝম করে
বৃষ্টি পড়ছিল আর বৃষ্টি পড়লে সবার মনে যে প্রেম জেগে ওঠে সেটা কে না জানে! লীনা
বারান্দার বেঞ্চে বসে গল্পের বই পড়ছিল। আমি পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার স্পর্শে লীনা যেন মোমের মতো গলে গেল। আমি এবার লীনাকে কোলে তুলে
নিলাম। আমাদের গন্তব্য এখন ওর বেডরুম। অবশেষে দরজা পেরিয়ে লীনার বেডরুমে ঢুকতে
যাব এমনসময় ঝনাৎ করে একটা
বিকট ধ্বনিতে বাইরের বৃষ্টির শব্দও ম্লান হয়ে
গেল। লীনা আমার
কোল থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল। শব্দের উৎস লক্ষ্য করে আমরা ছুটে গেলাম ডাইনিং রুমে।
সেখানে টেবিলের উপর সুজয় বসে আছে। তার পা থেকে টপটপ করে রক্ত বেরোচ্ছে আর নীচে পড়ে আছে
টেবিলে রাখা কাচের কাপ-ডিশ আর প্লেট। সেইরাতে আমাদের আর মিলন হল না। লীনা সুজয়কে
নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি মনে মনে ভাবলাম, "না! না! এভাবে আমার পথের
কাঁটাকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ওকে সরিয়ে ফেলতেই হবে।"সুজয়কে সরিয়ে
ফেলার পরিকল্পনা করতে আরো দু-দিন সময় লেগে গেল। নিজের হাতে মারলে লীনার আমার উপর
সন্দেহ করতে
পারে। তাই লীনার বাড়িতে যে কাজ করে তাকে হাজার খানেক টাকা দিলাম সুজয়কে মারার
জন্য। যেদিন সুজয়কে মারার কথা সেদিন আমি চলে গেলাম আমার দেশের বাড়িতে মায়ের
সাথে দেখা করতে। দুদিন দেশের বাড়িতে কাটিয়ে যেদিন লীনার বাড়িতে ফিরে এলাম,
সেদিন দেখি লীনার চোখে জল। আমাকে জড়িয়ে ধরে লীনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, "সুজয়কে
খুঁজে পাচ্ছি না সৌভিক। ও আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিল। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব
না।"আমি মনে মনে হেসে ভাবলাম, "এখন তোমাকে সুজয়কে ছাড়াই বাঁচতে হবে।
কারণ ও আর ফিরবে না। তোমার ইহকাল পরকাল আমিই হব লীনা।" কিন্তু লীনার সামনে
মুখটা কাঁচুমাচু করে বললাম, "তোমার জন্য আমি সব করতে পারি। তুমি দুঃখ পেও
না।আমি তোমার জন্য সুজয়কে খুঁজে নিয়ে আসব।"
এইভাবে একটা সপ্তাহ কেটে গেল সুজয়ের সন্ধানে। সুজয় আর এল না। ইতিমধ্যে
ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করতে লীনা চলে গেল মুম্বাইতে। অবশেষে দু-দিনের ট্রিপ শেষ
করে লীনা ফোন করে আমাকে জানাল রবিবার বিকালবেলা সে কলকাতায় ফিরছে। আমার মনে তো
ভীষণ পুলক। বাজার থেকে ফুল এনে ঘর সাজালাম। সুগন্ধি মোমবাতি লাগিয়ে দিলাম ঘরের
কোণায় কোণায়। লীনার জন্য পুরো বাড়িটা সাজিয়ে দিলাম। আজকে লীনা আর আমার মধ্যে
কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। আজ রাতে লীনার সাথে আমার মিলন হবেই হবে।
ঠিক হল যে আজকে লীনাকে আমিই এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসব। তাই বিকেলবেলা ওর ফোনটা
পেতেই গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রবিবারের রাস্তায় এমনিতেই বেশি ভিড় নেই।
হাইওয়ের উপরে আমার গাড়িটা একেবারে উড়োজাহাজের মতো যাচ্ছিল। আমার মনে এখন হাজার
স্বপ্নের ভিড়। আজকে লীনাকে ভোগ করার পর লীনার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে আমার নামটা
নমিনি হিসাবে লিখে দিতে বলব। তারপর আস্তে আস্তে ওর সম্পত্তি আর কোম্পানিটা আমার
নামে লিখিয়ে নিলেই আমার কাজ শেষ। তারপর লীনাকে আমার পথ থেকে সরিয়ে দিলেই হল।
এভাবে কত মেয়েকেই তো সরিয়ে দিয়েছি। তবে লীনার ক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশি লাগল।
সে সময় লাগুক। লীনার মতো এমন ডানাকাটা পরী তো অন্য কেউ ছিল না। কথাগুলো ভাবতে
ভাবতে গাড়ির স্পিডটা কখন বেড়ে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ একটা বিড়াল আছড়ে
পড়ল আমার গাড়ির কাচের উপর। আছড়ে পড়ার পর বিড়ালটা তার তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে আমার
গাড়ির কাচে এমনভাবে আঁচড়াতে শুরু করল যেন সামনের সবকিছুকে ও ছিঁড়ে ফেলতে চায়।
আমি সামনের কিছুই আর দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমার সম্পূর্ণ নজর বিড়ালটার দিকে।
গাড়ির উপর আমার নিয়ন্ত্রণ আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে আসছিল। এইসময়ে ডিভাইডারে
গিয়ে ধাক্কা মারল আমার গাড়িটা। আমার মাথাটা সজোরে ঝাঁপিয়ে পড়ল স্টিয়ারিং- এর
উপর। তারপর সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল।
কতক্ষণ ওভাবে পড়েছিলাম মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন চারিদিকে অনেক আলো। আমি
চারিদিকটা ভালো করে দেখলাম। এ কি ! আমি লীনার বাড়ির দরজার সামনে শুয়ে আছি কেন?
আমার মাথাটা তখনও দপদপ করছে। কিন্তু শরীরটা অনেকখানি হালকা হয়ে গেছে। আমি সোজা
হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। বুকের উপর ভর দিয়ে দরজার সামনে
লাগানো আয়নার কাছে গেলাম।
এ কি! আয়নাতে এ কার প্রতিবিম্ব?
আমার শরীর নয়। আয়নাতে ফুটে উঠেছে একটা বিড়ালের ছবি। একটা সাদা মোটা বিড়াল।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলাম এমনসময় দরজাটা খুলে একটা
অচেনা লোক বাড়ির ভিতর প্রবেশ করল। আমি প্রতিবাদ করতে চাইলাম কিন্তু মুখ থেকে শুধু
ঘরঘর করে রাগান্বিত শব্দ নির্গত হল। লোকটা আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। এবার লোকটার
পাশে লীনা ঘরে এসে ঢুকল। সে আমাকে দেখে বলল, "সৌভিক, অমন করে না। ও আমাদের
গেস্ট।"
আমি লীনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এসব কি বলছে লীনা?
লোকটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আদর করতে গেল। আমি সরে গেলাম।
এইসব কি ঘটছে আমার সাথে? এইসব কিছু তো আমি আগেও দেখেছি। সেইসময়ে মনে পড়ে গেল
লীনার কোম্পানির এক কর্মচারীর কথা, "আপনার আগে ম্যানেজার পদে সুজয় নামে একটা
ছেলে কাজ করত। আপনার মতো বয়স। খুব কাজের ছেলে ছিল। কিন্তু কোথায় যে হঠাৎ করে
হারিয়ে গেল!"
কলমে - সুকৃতি দাস
besh valo laglo..........
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন