ভালোবাসার ভিন্ন মূল্য - রানা জামান

মোবাইল ফোনে মিসড কল হতে পারে, ভুল ডিজিট টিপে দেবার কারণে অন্য নম্বরে কল চলে যেতে পারে। কিন্তু ক্রস কানেকশন? এটাও হয়ে যায় মাঝেমধ্যে। গায়ে না লাগালে বিন্দাস জীবন; আর প্রলুব্ধ হলে ভালো বা খারাপের যে কোনো একটা ঘটতে পারে। অর্থাৎ ঘটে যেতে থাকবে ঘটনা।

নাদিয়ার জীবনে তেমনই ঘটনা ঘটে চলেছে। ভাবনার অতীত!

নাদিয়া কল করেছিলো মাকে। সংযোগ হবার পরে হ্যালো বলতে গিয়ে থেমে গেলো নাদিয়া। মার হ্যালোর জবাব না দিয়ে অন্য আরেকটা কথোপকথন শুনছে।

-মাস্ক সমস্যা! মাস্ক পরলে দম নিতে বা ফেলতে সমস্যা হয়! মাস্ক না পরলে করোনা ভাইরাস! এখন আবার আরো শক্তিশালী ওমিক্রন ভ্যারাইটি!

অজান্তেই নাদিয়া হেসে দিলে বন্ধ হয়ে গেলো ওদিকের কথোপকথন। নাদিয়া ঠোঁট উল্টে মার সাথে সংযোগ স্থাপন করে কথা বললো। অদরকারি বাঁধা-ধরা কথাবার্তা।

-কেমন আছো মা?

-কী করছো?

-নাস্তা দেরি করে খাও কেনো?

-বাবাকে বাজারে না পাঠিয়ে ভাইয়াকে পাঠালেই পারো!

-আমার লেখাপড়া চলছে!

-অনলাইনে ক্লাসের চাপ কম থাকলেও এসাইনমেন্টের চাপ বিস্তর!

-পরীক্ষা কিভাবে হবে এখনো জানায়নি।

-অটোপ্রমোশন না হলেই ভালো।

মার সাথে কথা শেষ হবার সাথে সাথে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে রিং হলো। ও অপরিচিত নম্বরের কল গ্রহণ করে না। পরপর তিনবার রিং এলেও ও ধরলো না।

ম্যাসেজ টোন এলে নাদিয়া খুলে দেখলো একটা অনুরোধ:

-একটু আগে ক্রসকানেকসনের আমি। কলটা ধরুন। প্লিজ!


কী এক অমোঘ টানে ঐ নম্বর থেকে কলটা এলে নাদিয়া ধরে পড়ে গেলো আটকা। একেবারে জিগারের আঠায়! বাড়তে থাকলো কলের সংখ্যা এবং আলাপের সময়। ওর নাম ইস্তিয়াক। কোনো এক অজানা কারণে ইস্তিয়াকের ফোন নম্বরে গুরুত্ব দেয়নি নাদিয়া।

ইস্তিয়াক ভিডিও কল করলে নাদিয়া ওর পেছনের দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, জায়গাটা কোথায় ইস্তি?

ইস্তিয়াক টি-শার্টের কলার নেড়ে বললো, ফুকেট।

অবাক হয়ে নাদিয়া বললো, অনেক সুন্দর ফুকেট! বাংলাদেশের কোথায় এটা? আগামী সপ্তাহে ওখানে বেড়াতে যাবো।

ফুকেত বাংলাদেশে না, থাইল্যান্ডে।

কী বলছো তুমি! কবে তুমি থাইল্যান্ড গেলে?

আমি থাইল্যান্ডে থাকি।

বাহ! আমার থাইল্যান্ডে যাবার খুব শখ।

আমি ভিসা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি আগামী সপ্তাহে চলে এসো।

একা আসবো?

সমস্যা কী! আমি হার্মফুল না!

থাইল্যান্ড প্রবাসী জামাই পাবার প্রত্যাশায় মা-বাবা নাদিয়াকে থাইল্যান্ড যাবার অনুমতি দিলেন। নাদিয়ার ভাগ্য দেখে ওর বান্ধবীরা করতে থাকলো ইস্ ইস্!

আজ নাদিয়া থাইল্যান্ড যাচ্ছে। পরিবার ও বান্ধবীরা ওকে বিদায় জানাতে এসেছে। নাদিয়া ছাগলছানার মতো ছটফট করছে। তখন ইস্তিয়াক ফোন করে একটা প্যাকেট নিয়ে আসতে বললো যা ওর এক আত্মীয় দিয়ে যাবে বিমানবন্দরে। লোকটা বিমানবন্দরেই ছিলো। সাথে সাথে এসে হাজির। প্যাকেট খুলে দেখালো:

কুমড়োবড়ি।

প্যাকেট নিয়ে নাদিয়া চলে এলো থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডে তিনদিন অনেক আনন্দে কাটলো নাদিয়ার। আশ্চর্য হয়েছে নাদিয়া, সুযোগ পেয়েও ইস্তিয়াক ওকে স্পর্শ না করায়। বেশ কেনাকাটা করে নাদিয়া ফিরে এলো বাংলাদেশে। থাইল্যান্ড বিমানবন্দরে একটা ফলের প্যাকেট আনতে হলো নাদিয়াকে।

নাদিয়া বুঝতে পারলো ইস্তিয়াককে ও খুব ভালোবাসে। ও খুব ভালো ও পরিশীলিত। আনুষ্ঠানিকভাবে 'ভালোবাসি' কথাটা না বললেও ভিডিও ও ননভিডিও কলে প্রেমের কথাই চলে। তিনমাস পরে ফের থাইল্যান্ড যাবার সুযোগ পেলো নাদিয়া। পূর্বের মতো এবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চ্যাপার প্যাকেট পেলো নিয়ে যাবার জন্য। ফেরার সময় একটা ঔষধের প্যাকেট আনতে হলো ওকে।


বার্ষিক পরিক্ষার পরে লম্বা ছুটি নাদিয়ার। চলে এলো ছুটি কাটাতে থাইল্যান্ডে। মা-বাবা সাথে আসতে চাইলে আনন্দ নষ্ট হবে ভেবে নাদিয়া রাজি হলো না। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো ইস্তিয়াক এবারও। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে গেলো পাতায়া। চারতারা হোটেলে একক কক্ষ পেলো নাদিয়া। ইস্তিয়াক পাশের কক্ষে। এবার পাঁচদিনের ভ্রমণ। পাতায়া চষে বেড়ানোর পরে একরাতের জন্য চলে গেলো ফুকেট। পঞ্চম দিন ওখান থেকে বিমানবন্দরে যাবার প্রস্তুতি চলছে নাদিয়ার।

লাগেজ নিয়ে কক্ষ থেকে বের হলে নাদিয়ার হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে ইস্তিয়াক বললো, তুমি লাগেজ নিচ্ছো কেন! অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়ে আসবে। চলো আমরা লবিতে যাই।

লাগেজ তোলার পরে ওরা বসলো জিপে। বিমানবন্দরে পৌঁছে নাদিয়াকে ইমিগ্রেশনে ঢুকিয়ে ইস্তিয়াক চলে গেলো বিদায় নিয়ে। ডিউটি-ফ্রি শপ থেকে কিছু কেনাকাটা করে বিমানে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়ালে মাইকে নাদিয়ার ডাক পড়লো এবং বিমানবন্দর কাস্টমসের এক কর্মকর্তা ওকে নিতে এলো। নাদিয়া কাস্টমস অফিসে গিয়ে ওর লাগেজ দেখতে পেয়ে হতবাক। লাগেজ খোলা এবং কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে সাদা পলিথিনের প্যাকেট।

নাদিয়া এসব প্যাকেটের বিষয়ে কিছু জানে না বললে ও এতোদিন থাইল্যান্ডে কোথায় কার সাথে ছিলো জানতে চাইলে নাম বলে মোবাইল ফোন থেকে ইস্তিয়াকের ছবি দেখালো। ছবি দেখে এক কাস্টমস অফিসার বললেন, এর নাম ইস্তিয়াক না, জাফর! ও কুখ্যাত বাংলাদেশি স্মাগলার হায়দার পাঠানের ভাতিজা!












Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন