প্রাণ বাঁচাতে - সুচন্দ্রা বসু

 


কেতকীর বয়ফ্রেন্ড শিমূল মাঝি কেতকীর সিদ্ধান্তের জন্য গর্বিত। যদিও বিধবা কেতকীর  তেরো বছর বয়সী মেয়ে এই বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে বিব্রত বোধ করে।

বনগাঁর বাসিন্দা বছর চল্লিশের কেতকীর স্বামী আর পাঁচজনের মতো কোন মানুষ নয়। স্বামীর বাসস্থান বনগাঁ এলাকার সাজানো একটি পার্ক। সেখানে তিনি স্বামীকে চারবেলা দেখতে যান। আসলে পার্কটির কিছু গাছ কেটে বনগাঁয় হাইরোড হবে বলে পরিকল্পনা করে প্রশাসন। সেখানকার বাসিন্দারা চাইছিলেন না হাইরোড তৈরির জন্য এই পার্কের সব গাছ কাটা যাক। তাই তারা নানাভাবে আন্দোলন শুরু করেছিল। এই আন্দোলনকে নতুন মাত্রায় এগিয়ে নিয়ে যায় কেতকীর এই সিদ্ধান্ত।

কেতকী নিজেই স্থির করেন পার্কের একটি গাছকে তিনি বিয়ে করবেন। পার্কের ভিতরে এই গাছটার পাশে রাখা বেঞ্চে বসে শিমূল কেতকী দু'জনে গল্প করে সময় কাটাতেন বিকেলবেলায়। শিমূলের আপত্তি সত্ত্বেও তাদের বন্ধুত্বের সাক্ষী পলাশ গাছকে তিনি স্বামী হিসাবে বরণ করে নিয়েছিলেন। শুধু বিয়ে করাই নয়, কেতকী নিজের পদবী পরিবর্তন করে পদবীর জায়গায় পলাশ করে নিয়েছিলেন।

কেতকী পলাশ বিয়ের অনুষ্ঠান করে সকলকে চমকে দেন। সেখানকার বহু মানুষজন বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিল। নিমন্ত্রিতরা কেতকীর সিদ্ধান্তে হতবাক। তারা কেতকীর কাছে এর কারণ জানতে চায়। তিনি বলেন, কোন এক সৈনিক মহিলা মেক্সিকোর সবুজ বাঁচানোর লড়াইয়ে একটি গাছকে বিয়ে করেছিলেন। প্রকাশিত এই খবর তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর আশা এই বিয়ে সবুজ বাঁচানোর আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন বিশ্বজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সময় হয়েছে বলেই তাঁর দাবি। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার করেন গাছের প্রাণ আছে। গাছের প্রাণ যখন আছে তাকে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়? বিয়ে করে প্রাণ বাঁচানো ছাড়া আর তো উপায় ছিল না। তিনি অনুভব করেন বাঁচার জন্য কি উদ্ভিদ জগৎ ও মনুষ্যজাতি একে অপরের পরিপূরক নয়?

বনগাঁবাসীরা তাঁর প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন