দ্বীপের নাম তিওমান - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়


tioman island views


প্রায় দু’বছর অতিমারির দাপটে প্রায় পুরো পৃথিবী গৃহবন্দী থাকার পর কিছুদিন আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।একটানা ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থেকে প্রায় সবাই ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।শারীরিক অসুস্থতা, সামাজিকতাহীনতা সবার মধ্যেই অল্প বিস্তর জন্ম দিয়েছিল মানসিক বিপর্যস্ততারও। জীবাণুর আক্রমণ অল্প বিস্তর নিয়ন্ত্রণে আসার পর জন-জীবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সব দেশের সরকারই সক্রিয়। তাই ধীরে ধীরে প্রাথমিক পর্যায়ে উন্মুক্ত করা হয়েছিল দেশের ভিতরে যাতায়াত। দেশের মধ্যেই এক শহর থেকে অন্য শহরে, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাতায়াতের যে বিধিনিষেধ ছিল, তাও শিথিল করা হয়েছিল।  সুযোগ পেয়ে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরাই শুধু যে বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে পরেছিলেন তা নয়, ঘরকুনোর দলও সমানভাবে পাল্লা দিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য দমবন্ধ পরিবেশ থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার তাগিদে। 

আমরাও ব্যতিক্রম নয়।ঘর থেকে বেরোনোর সুযোগ পেয়ে ঠিক করা হল বেশি দূরে নয়, সপ্তাহান্তের ছুটির দিনে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসা দরকার। অতএব খুঁজে বার করা হল একটু অজানা একটু নিরিবিলি এক জায়গার। আমরা মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের উপকণ্ঠে এক শহরের বাসিন্দা। মালয়েশিয়াতে ছোট বড় বেশ কিছু দ্বীপ বর্তমান। স্থানীয় বাসিন্দারা সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করতে সপ্তাহান্তে এইসব জায়গায় ছুটি কাটিয়ে আসেন। এইরকমই এক দ্বীপের নাম “তিওমান”


মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলে চীন সাগরে অসংখ্য সৈকত দ্বারা বেষ্টিত একটি দ্বীপ। মালয়েশিয়ার অন্তর্গত পাহাং ডিভিশনের রম্পিং জেলায় অবস্থিত এই দ্বীপটি বিভিন্ন প্রকারের প্রবাল, স্পঞ্জ ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এই দ্বীপে সাতটি গ্রাম আছে। ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা এই দ্বীপ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দ্বীপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। 


বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠলে সবারই মন আনন্দে নেচে ওঠে, আবার সেই বেড়ানো যদি হয় হাঁসফাঁসের দু’বছরের গৃহবন্দী দশার পর, তাহলে শুধু নেচে ওঠে না রীতিমত লাফালাফি শুরু করে দেয়। আমরাও ব্যতিক্রম নই। তল্পিতপ্লা বেঁধে সময় মত তৈরি হয়ে নিলাম যাওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা শুরু করা হল। বাড়ি থেকে গাড়িতে করে রওনা দিলাম জেটির উদ্দেশ্যে। জহোরের মারশিং জেটি থেকে ফেরি চেপে সমুদ্রপথে দ্বীপে যেতে হবে। সারাদিনে দু’বার জোয়ারের সময় ফেরী পারাপার করা যায়। নিজেদের সুবিধা মত সময়ে ফেরীর টিকিট কেটে যাত্রা করা যায়। 

আমাদের বাড়ি থেকে জেটি সব মিলিয়ে পাঁচ ঘণ্টার পথ। তাই সকালের ফেরী ধরা সম্ভব ছিল না। অতএব সকালের জল খাবার খেয়ে আমরা রওনা দিলাম বিকালের ফেরী ধরার উদ্দেশ্যে। সঙ্গে নিলাম বেশি পরিমাণে জল ও খাবার। সকাল ন’টায় রওনা দিয়ে আমরা দুপুর ২টো নাগাদ আমরা জেটিতে পৌঁছালাম। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। রোদের তাপে গাড়ি চালানোর কষ্ট থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। বেশ মেঘলা দিন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভেজা ভেজা আবহাওয়ায় গাড়ি চলতে শুরু করল। ঘণ্টা খানেকের পথ চলার পরেই শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। রাস্তা দেখা দুষ্কর, গাড়ির হেডলাইটের আলোতে সাবধানে পথ চলতে গিয়ে গতি ধীর হয়ে গেল।এই অবস্থায় সমুদ্রপথে ফেরীপার হওয়া কতটা নিরাপদ তা ভেবে মন শঙ্কিত। সেইভাবেই দু’-তিনবার পেট্রল পাম্পে অল্প বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চললাম। শহর ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে খানিকদূর এগিয়ে যেতেই শুরু হল জঙ্গলের রাস্তা। রাস্তার দুধারে ঘন জঙ্গল, মাঝে পিচঢালা দিগন্ত বিস্তৃত রাস্তা। সাথে মুষলধারে বৃষ্টি। 

পাঁচ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে পৌঁছালাম জেটিতে। সকালবেলা এবং সন্ধ্যাবেলা এক ঘণ্টা পর পর খান তিনেক ফেরী থাকে। ঠিক ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ফেরী এসে উপস্থিত হলে আমরা উঠে নিজস্ব সিটে বসলাম। একদল পর্যটককে এপারে পৌঁছে দিয়ে আরেকদল পর্যটক সমেত ফেরী যাত্রা করল তিওমানের উদ্দেশ্যে।  দু’ঘণ্টার আরামদায়ক জলযাত্রা শেষে পড়ন্ত বিকালে পৌঁছালাম তিওমান দ্বীপে। দ্বীপে পা দিয়েই চোখে পড়ল মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। দ্বীপের প্রায় সত্তর শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত ঘন সবুজ বনানীকে ঘিরে রেখেছে মাঝারি উচ্চতার পর্বতমালা। সমুদ্রের নীল শান্ত জল বালিয়াড়িতে এসে যেন থমকে দাঁড়াচ্ছে। যতদূর চোখ যায় সৈকত জুড়ে নারকোল গাছেরা মাথা দুলিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানাতে ব্যস্ত। কোথাও একটাও অট্টালিকা তো নয়ই, দোতলা বাড়িও নজরে এলো না। কংক্রিটের প্রবেশ যেন নিষিদ্ধ। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে সংরক্ষিত করার লক্ষ্যে এখানে বিশেষ সরকারী নিয়ম চালু করার সাথে সাথে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও যে সেই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ও আগ্রহী, তা তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। তারা বিশিষ্ট হোটেল এখানে নেই, আছে কাঠের তৈরি ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর সদৃশ থাকার ব্যবস্থা, যা কটেজ বলেই পরিচিত।  সমুদ্রের ধারে এবং পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে এই রকম কটেজে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা। আমাদের কটেজের মালিক স্বয়ং মোটর চালিত ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে জেটিতে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের সঙ্গে নিয়ে চললেন আমাদের ঘরের দিকে। 

পাহাড়ের কোলে গাছ গাছালিতে ঘেরা জায়গায় মাটি থেকে অন্তত দশ ফুট উঁচুতে তৈরি ছোট ছোট কাঠের বাড়ি। সুন্দর পরিষ্কার ছিমছাম ভাবে গোছানো। প্রত্যেক ঘরের লাগোয়া এক চিলতে বারান্দাতে চা – খাবার খাওয়ার জন্য, গল্পগুজব করার জন্য ছোট্ট দুটি  বেতের চেয়ার ও একটি টেবিল।দেখেই মন ভরে গেল। কটেজের মালিক বয়স্ক চিনা ভদ্রলোক চা খেতে ডাকলেন। খাওয়ার জায়গা আলাদা। ঘরে খাবার খাওয়ার নিয়ম নেই। চা খেতে খেতে গল্প শুনলাম। মোট সাতটি গ্রাম নিয়ে এই দ্বীপ।২০০৮ এর জনগণনা অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ৪৩২ জন । দ্বীপে কোনও স্কুল কলেজ ফ্যাক্টরি কিছুই নেই। পড়াশোনা বা জীবিকা অর্জনের জন্য বাসিন্দাদের সমুদ্র পার হয়ে শহরে যেতে হয়। তাই অনেকের নিজস্ব ছোট ছোট ফেরী আছে।

প্রাচীন রূপকথা অনুযায়ী এক ড্রাগন রাজকুমারী নিজের প্রেমিকের সাথে দেখা করার জন্য এই দ্বীপের উপর দিয়ে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সময় এখানে বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছুক্ষন থাকেন। দ্বীপের শান্ত,নিরিবিলি, সবুজ ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ তাঁকে এতটাই আকর্ষিত করে যে উনি প্রেমিক দর্শনের যাত্রা বাতিল করে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীকালে এই দ্বীপকে পর্যটকদের বিশ্রাম স্থান বানিয়ে তোলেন। 

গল্প শুনতে শুনতে আবিষ্কার করলাম  – ফোন একেবারে অচল। নেট তো দূরের ব্যাপার ফোনে ঠিকভাবে সিগনালও নেই। জিজ্ঞাসা করে জানলাম এখানে কয়েকটি জায়গা ব্যাতিত ফোন কাজ করেনা। ভাবতে অবাক লাগে আজকের দিনেও এমন জায়গা আছে যেখানে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে চাহিদার বস্তুটি অপ্রাপ্য। জানিনা কেন মন বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল। বাঁধন মুক্তির স্বাদ পেলাম যেন।সারাক্ষন একটা অপছন্দের প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করে বেড়ানোর থেকে মুক্তি। ফোনটা বন্ধ করে স্থায়ীভাবে ব্যাগবন্দী করে ফেলে মুচকি হেসে নিলাম।এক অনাস্বাদিত স্বাধীনতা ভোগের আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠল মন। 

 

চা পান ও জলখাবারের পর্বের শেষে পড়ন্ত বিকালে দ্বীপের আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে গেলাম। সামনেই বিস্তৃত ঘন নীল জলরাশি। সমুদ্র সৈকতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত চেয়ার, দোলনা পড়ে রয়েছে। বসে পড়লাম। জনহীন দ্বীপে শুধুই আমরা কয়েকজন। দূরে দূরে টিমটিমে কিছু আলোর বিন্দু জানান দিচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের। ঠাণ্ডা সামুদ্রিক হাওয়া সেবন করে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য দোকানের খোঁজে বের হলাম। কিন্তু এবার বেশ ধাক্কাই খেতে হল। অতিমারির প্রকোপেই হোক বা জনহীনতার কারনেই হোক এখানের দোকানপাট সন্ধ্যে সাতটার মধ্যেই নাকি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা জানতাম না। তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। হোটেলে শুধুমাত্র সকালের এবং বিকালের জলখাবার পাওয়া যায়। অন্য খাবারে ব্যবস্থা নেই। অতএব নিজেদের ঘরে ফিরে সঙ্গে নিয়ে আসা খাবার দিয়েই রাতের খাবারের পর্ব মেটানো হল। 

বাইরে ততক্ষনে রাত ন’টাতেই  নিশুতি রাত, ঝিঁঝিঁপোকার ডাকের সাথে অজানা আরও বিবিধ আওয়াজে গা ছমছমে  পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে। পাতার ওপর দিয়ে ইঁদুর বা বেজির হেঁটে যাওয়ার খসখস, রাতপাখির চাপাকণ্ঠের চিকচিক ডাক, বাদুড়ের কর্কশ চ্যাঁচানি শুনতে শুনতে আর জানলার কাঁচের ফাঁক দিয়ে গোল থালার আকৃতির পূর্ণিমার চাঁদের আলোকবৃত্ত দেখতে দেখতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ একটা অপরিচিত আওয়াজে ঘুম ভাঙল।মনে হল খুব দূরে কেউ গুঙিয়ে কাঁদছে। মন দিয়ে শুনলাম। বুঝলাম মানুষ না, কোনও বন্য প্রাণীর ডাক। কি প্রাণী সেই মুহূর্তে না বুঝলেও পরেরদিন সকালে জানলাম পাহাড় জঙ্গলে শিয়াল, হায়না আছে অনেক। এই ধরণের কান্নার আওয়াজ তাদেরই ডাক শুনে মনে হয়। 

পরেরদিন সকালে দ্বীপ ভ্রমণে বের হলাম। বেশি বড় নয়, তাই পায়ে হেঁটেই ঘুরে ফেলা যায়। দেখলাম সারা গ্রামে একটি হাসপাতাল, একটি গির্জা, দুটি মুদির দোকান, দুটি রেস্তোরাঁ। হাতে গুনে কুড়ি- বাইশটা বাড়ি। হাসিখুশি মানুষ জন। কিছু পর্যটকের দেখাও মিলল। সাধারণত একদিন – দু’দিনের জন্যই এখানে বেড়াতে আসেন সবাই। ঘুরে ঘুরে দেখলাম সমুদ্রের ধার ঘিরে রাখা নারকোল গাছের সারি এবং মাটিতে অফুরন্ত নারকোলের অবহেলায় গড়াগড়ি যাওয়া।নারকোল প্রায় প্রত্যেক বাঙালির মতই আমার  কাছে অত্যন্ত লোভনীয় ও উপাদেয় ফল হবার দরুন সেগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে দেখতে শুরু করলাম। কেন এত নারকোল মাটিতে গড়াচ্ছে, কেন কেউ তুলে নিয়ে যায়নি! একটা দু’টো নারকোল দেখতে গিয়েই দেখতে পেলাম প্রতিটি নারকোলের গায়ে গোলাকৃতি ফুটো এবং ভেতরে জল বা শাঁস কিছুই নেই। কেউ নিপুণ দক্ষতায় পুরো শাঁস চেঁচে নিয়েছে। কিন্তু এইভাবে কষ্ট করে ফুটো করে কেন? ভাবতে ভাবতেই এগোতে লাগলাম। নারকোল গাছের গায়ে সতর্কতাবাণী চোখে পড়ল – “ মাথা বাঁচিয়ে চলুন। যে কোনও সময় মাথায় নারকোল পড়তে পারে” । বোঝ কাণ্ড! অর্থাৎ আমাদের গ্রাম বাংলার চির পরিচিত নারকোল গাছ ঝাড়ানোর ব্যস্ততা বা প্রয়োজনীয়তা নেই কারো।




ভাবতে ভাবতে গড়ানো এবং গাছের দোদুল্যমান নারকোলের দিকে করুণ দৃষ্টিপাত করতে করতে আরও একটু এগিয়ে যেতেই এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য চোখে পড়ল। সমুদ্রের ধারেই দু’টো লম্বা পাইন গাছের রঙ কুচকুচে কালো হয়ে আছে। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে চমকিত হলাম। গাছ ভর্তি বাদুড় উল্টো হয়ে ঝুলছে। বুঝলাম নারকোল ফুটো হওয়ার রহস্য। বাদুড় নারকোল খেয়ে ফেলে। 



হেঁটে হেঁটে পুরো গ্রাম ঘুরতে সময় লাগল সাকুল্যে ঘণ্টা দুয়েক। সরু এবড়োখেবড়ো পায়ে চলার পাহাড়ি রাস্তা, সাইকেল ও বাইক কোনওমতে যেতে পারে।পায়ে পায়ে হেঁটে চলল গোসাপ, হাঁসের পরিবার,সদলবলে বেজিগুচ্ছ, থমকে দাঁড়িয়ে এক মুহূর্ত তাকিয়ে নিল কাঠবিড়ালি দম্পতি যাদের একজন কুচকুচে কালো আর একজন বাদামী ।এক অনাবিল সরলতা উপচে পড়া নিষ্কলুষ নির্বিষ পৃথিবী। সময় যেখানে নিজের ছাপ এখনও ফেলতে পারেনি। প্রকৃতি নিজের খেয়ালে অবাধ খেলায় মত্ত।   

  Where to eat Seafood food in Pulau Tioman: The Best Restaurants and Bars

মধ্যাহ্নভোজনের জন্য এক রেস্তোরাঁয় পাত পাতলাম। কাঁকড়া, চিংড়ি মাছ সহযোগে ভাত খাওয়া হল। রান্না খুব একটা উপাদেয় নাহলেও স্বাদহীন নয়। খেতে খেতে ঠিক করা হল বিকালে সমুদ্র তলদেশ ভ্রমণ করতে যাব। এই দ্বীপের সমুদ্রতলবর্তী প্রবাল পৃথিবী বিখ্যাত। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। দুপুরে অল্প বিশ্রাম নিয়ে বিকালে সমুদ্রের ধারেই ডাইভিং ও স্নকলিং করানোর প্রশিক্ষিত এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে টিকিট কাটা হল। একটি টিকিটের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার টাকা। 


Amigo Dive Centre Tioman

সাজ সরঞ্জামে নিজেদের সাজিয়ে সাথে একজন প্রশিক্ষক নিয়ে আমরা ডুব দিলাম নীল জলরাশির গভীরের সাজানো সাম্রাজ্যের দর্শন করতে। তারপরের অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব। অতল জলরাশির মধ্যে জেগে উঠল এক রঙিন পৃথিবী যা আমাদের কল্পনার বাইরে। প্রবালদলের হাতছানি,অজস্র নাম না জানা মাছেদের আদর গায়ে মেখে আমরা ঘুরে এলাম সমুদ্রের তলার সেই অচেনা রহস্যময় জগত থেকে। সমুদ্র থেকে উঠে এলাম, সূর্যদেব তখন অস্তমিত। গোধূলির আলো এখানে  রাঙা হয়না, আলো যেন নীলচে। সেই আলো গায়ে মেখে আরও কিছুক্ষন সমুদ্রের বেলাভূমিতে বসে রইলাম। সবারই মন একটু খারাপ। পরদিন সকালেই বাড়ি ফেরা। সেই নিয়মনীতির বেড়াজাল, সেই ফোন আর আন্তর্জালের জঞ্জালে আবদ্ধ, সেই কংক্রিটের জঙ্গলে ছুটে চলা জীবন শুরু। তাই শেষ মুহূর্তে শুষে নিতে চাইলাম বিশুদ্ধ প্রকৃতির রূপ রঙ রস। 

রাতে অনেক রাত অবধি বারান্দায় বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার সাথে সাথে রাতের নিস্তব্ধতা ও নিঃশব্দতার ফিসফিসিয়ে আলোচনা শুনলাম। বৃষ্টি নামলো হঠাৎ। ভিজিয়ে দিল কটেজের দেওয়াল বারান্দা। আমরাও ভিজলাম। তবু ঘুমাতে যেতে ইচ্ছা করলো না। যেন ঘুমালেই সকাল হয়ে যাবে আর বাড়ি যাবার তাড়া পড়ে যাবে। যতক্ষণ পারলাম তাই প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরে বসে রইলাম। 

পরদিন সকালের জলখাবার খেয়েই রওনা দেবার পালা। ফেরী ধরে শহরে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম।ঘন জঙ্গল ভেদ করে এগিয়ে চলার রাস্তায় বানরদল ছাড়াও দেখা হল গোসাপ, রঙিন পুচ্ছের গর্বে গর্বিত ময়ূর ও শাবক সমেত হাতি- মায়ের সাথে। কেউ বিশেষ পাত্তা দিল না।তাদের নিজেদের পৃথিবীতে তাদের মত থাকতে দিয়ে আমরা ধীরে ধীরে সভ্য সমাজে প্রবেশ করলাম।               

 


কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় 

চিত্র সৌজন্যঃ নিজস্ব 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন