সুযোগ একবারই আসে - দেবাজীব সরকার

 



"অতিরিক্ত গতির বলি এক"

সকালের পেপারে খবরটা পড়ে খবরের পাশের ছবিটার দিকে তাকালো রথীজিৎ। হ্যাঁ, নাম্বার প্লেটটা কিছুটা দুমড়ে মুচড়ে গেলেও নাম্বারটা বোঝা যাচ্ছে। নাম্বারটা দেখে বুঝলো, এই চারচাকা গাড়িটাই গতকাল সার্ভিসিংয়ে এসেছিলো।

 

মালিকের নাম ছিল অমিতাভ সেন। একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির রিজিওনাল হেড। গতি অমিতাভর খুব প্রিয় নেশা।

 

কলেজের থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়ই রথীজিতের ফার্স্ট ইয়ারের সৃজিতার সঙ্গে প্রেম। রথীজিৎ গ্র্যাজুয়েশনের পর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে শুরু করে, তিন বছরের কোর্স।

 

রথীজিতের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বছরে সৃজিতা একদিন এসে জানায় "রথী, আমার একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে, বাড়ি থেকে জোরাজুরি করছে আর তুমি তো এখনো চাকরি পাওনি যে তোমার কথা বাড়িতে বলবো। প্লিজ, কিছু মনে কোরো না।" রথীজিৎ ব্যাকুল হয়ে বলে- "আর তো কয়েকটা মাস, তারপর ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ থেকে চাকরি পেয়ে যাবো।"

 

-"দেখো, রথী, সুযোগ একবারই আসে আর সেটা কাজে লাগানো উচিৎ। এই সম্বন্ধটা হাতছাড়া করতে পারবো না।"

 

-"তাহলে আমাদের এতদিনের সম্পর্কের, আমার ভালোবাসার কোনো দাম নেই?এতদিন তোমার ভালোবাসাটা খেলা ছিলো?"

 

-"রাগ কোরো না রথী, বাই।"

 

রথীজিৎ, সৃজিতার বন্ধুদের থেকে ঠিকানা জোগাড় করে বিয়ের পর সৃজিতার শ্বশুরবাড়ির কাছে কয়েক ঘন্টা দাঁড়িয়ে একবার চোখের দেখা দেখেছিল সৃজিতাকে। গাড়িতে করে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে সুখী সৃজিতা। অতীত বিচ্ছেদের সামান্যতম কষ্টও নেই চোখে-মুখে।

 

ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ থেকেই চাকরি বিখ্যাত গাড়ি কোম্পানির ডালহৌসির সার্ভিসিং সেন্টারে। একদিন অমিতাভ সেনের গাড়িটা সার্ভিসিংয়ের জন্য আসতেই রথীজিৎ নিজেকে বুঝিয়েছিল, সুযোগ একবারই আসে আর সেটাকে কাজে লাগানো উচিৎ। ব্রেক প্যাডে নিজের তিন বছরের শিক্ষাটা কাজে লাগিয়েছিলো। সৃজিতার বিধবা রূপটা কল্পনা করে একটা ভীষণ তৃপ্তি অনুভব করলো রথীজিৎ, তারপর অফিস যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করলো।

 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন