পোকামাকড়ের উপদ্রব কার বাড়িতে নেই! বছরভর ঘরে ঘরে এটি খুব সাধারণ একটি
সমস্যা। কোথায় জামাকাপড় পোকায় কাটছে, ঘরে পিঁপড়ে আরশোলা টিকিটিকি
বেড়েছে, ইঁদুরের উৎপাতে জীবন অস্থির, মশা মাছির ভনভনানি তো আছেই, সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা যাকে
বলে! পোকামাকড়ের আনাগোনা যে শুধু অপরিষ্কার পরিবেশের সৃষ্টি করে বা আমাদের মধ্যে
বিরক্তির উদ্রেক ঘটায় তাই নয়, নানারকম অসুখ বিসুখও ছড়ায়।
পোকার উপদ্রব কীভাবে কমানো যেতে পারে সেই বিষয়ে রইলো সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি।
১) মশা-মাছির উপদ্রব যে সবথেকে বিপজ্জনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের দূরে
রাখতে কয়েক টুকরো কর্পূর আধ কাপ জলে ভিজিয়ে ঘরের এক কোণে রেখে দিতে হবে। অনেক কমে
যাবে এদের উৎপাত। একভাগ আদার রসের সঙ্গে পাঁচভাগ জল মিশিয়ে স্প্রে করলে মশা আসবে
না। যেখানে মাছির সমস্যা বেশি সেখানে ইউক্যালিপটাস তেলে ভেজানো তুলো রেখে দিলে
মাছিও আসবে না।
২) পিঁপড়ের সমস্যাও বেশ চোখে পড়ার মতো। এরা সেভাবে ক্ষতিকর না হলেও
রান্নাঘরে চিনির কৌটোয় এদের যাতায়াতের বহর জ্বালাতনের শেষ রাখে না। বাড়িতে অতিথি
এলে তাঁর জন্য চা বানিয়ে তাড়াহুড়োর মধ্যে চিনি যোগ করলে ভাসমান দু'চারটে পিঁপড়ের দেহ তাঁর চায়ের শোভা বৃদ্ধি করতে পারে যা মোটেও শোভনীয় নয়।
তার জন্য তিন-চারখানা লবঙ্গ চিনির কৌটোর মধ্যে রেখে দিলে এই সমস্যা থেকে রেহাই
পাওয়া যায়।
৩) চিনির কৌটো ছাড়া বাড়িতে পিঁপড়ের সমাগম বেশি হলে কাজে লাগে লেবুর রস।
পিঁপড়ে সাধারণত লাইন ধরে চলাফেরা করে। তাই পিঁপড়ের লাইনে লেবুর রস ছিটিয়ে দিলে
ক'দিনের মধ্যেই সমস্যার সুরাহা মিলবে। পিঁপড়ের বাসাতেও
খানিকটা লেবুর রস ঢেলে দেওয়া যায়। টক গন্ধ ও স্বাদের কারণে ওরা পালাতে পথ পাবে
না।
৪) আরশোলা-ভীতি অনেকের মধ্যেই রয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, আরশোলা যতো না ভয়ের বস্তু, তার চেয়েও বেশি অপরিষ্কার
অস্বাস্থ্যকর প্রাণী। কারণ, যে আরশোলা বাথরুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিছুক্ষণ পর হয়তো ডাইনিং টেবিলে সুসজ্জিত ফলের ঝুড়িতে রাখা আপেল কলার উপর
নির্বিবাদে চলে বেড়াবে। আরশোলা তাড়াতে হলে কয়েকটা তেজপাতা গুঁড়ো করে নিয়ে যেসব
জায়গায় আরশোলা আসতে পারে সেখানে সেই গুঁড়ো রেখে দিতে হবে। আরশোলা তেজপাতার গন্ধ
সহ্য করতে পারে না, সুতরাং ঘরমুখো হওয়া থেকে বিরত থাকবে।
৫) ফেলে দেওয়া জিনিসও পোকামাকড় বিদায় করতে ব্যবহার করা যায়। যেমন, শসা কাটার সময়ে দুইপাশ থেকে কিছুটা কেটে ফেলে দেওয়া হয়। এই অংশদু'টি না ফেলে ঘরের কোণায়, কাপবোর্ড ও আলমারির ভিতরে রেখে
দিলে এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান আরশোলাকে শতহস্ত দূরে রাখবে।
৬) ওয়ার্ড্রোবের মধ্যে পোকামাকড়ের উপদ্রব অন্যতম একটি সমস্যা। তার জন্য এক
কাপ নারকেল তেলে কর্পূরের গুঁড়ো মিশিয়ে ওয়ার্ড্রোবের কোনায় দিয়ে দেওয়ার পর
পরিষ্কার একটা কাপড় দিয়ে তাকগুলো ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। খানিক পরেই আবার
জামাকাপড় ঢুকিয়ে রাখতে পারা যাবে। এতে জামাকাপড় পোকায় কাটার সম্ভাবনা থাকবে না।
এছাড়াও আলমারির তাকের মধ্যে পরিষ্কার সাদা কাপড়ে ন্যাপথলিনের বল বা শুকনো লঙ্কা
বা শুকনো নিমপাতা মুড়ে রাখা যায়।
৭) নিমপাতার অনেক গুণ। পোকামাকড় কমানোর আরেকটি উপায় হলো শুকনো নিমপাতার
গুঁড়ো রান্নাঘরের যেকোনো স্থানে ছড়িয়ে রাখা।
৮) এছাড়াও আছে পিপারমিন্ট অয়েল। ২ কাপ জলে ৮ ফোঁটা পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল
অয়েল মিশিয়ে ঘরের কোণাগুলোতে স্প্রে করতে হবে। পিপারমিন্ট তেলের তীব্র গন্ধ
পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না।
৯) টিকটিকির কথা তো না বললেই নয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে টিকটিকি আমাদের কিছু
উপকার করে। বিভিন্নরকম পোকামাকড় উদরস্থ করে আমাদের ঘরদোর কিছুটা হলেও পরিষ্কার
রাখে। কিন্তু সবথেকে বড়ো সমস্যা টিকটিকির মল যা অত্যন্ত বিষাক্ত। তার উপর বাড়িতে
কোনো খুদে সদস্য থাকলে আরো মুশকিল। কতো বাচ্চা হামাগুড়ি দিতে গিয়ে টিকটিকির মল
মুখে ঢুকিয়ে ফেলে যা ভীষণ বিপজ্জনক ব্যাপার। এক্ষেত্রে জানলার এক কোণে রসুনের
কোয়া রেখে দিতে হবে, বিশেষ করে ভেণ্টিলেটরের ভেতরে। টিকটিকি রসুনের গন্ধ
একেবারে পছন্দ করে না, সুতরাং সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ন্যাপথলিনও এই
ব্যাপারে ভালো কাজ দেয়। টিকটিকি দূর করার আরেকটি সহজ পদ্ধতি আছে, তবে এটি সেভাবে দৃষ্টিনন্দন নয়। বাড়িতে ডিমের ফাঁকা খোলা ঝুলিয়ে রাখলে এর
গন্ধ টিকটিকিকে দূরে রাখে।
১০) শুধুমাত্র ঘরেই নয়, যাঁরা টবে গাছ লাগান তাঁরাও
পোকামাকড়ের সমস্যায় জর্জরিত থাকেন। গাছে যদি কেঁচো, শামুক, পিঁপড়ে, নেমাটোড ও পোকার আক্রমণ হয়
তাহলে গাছ ধীরে ধীরে মরে যায়। তার জন্য টবের মাটি তৈরি করার সময় ১ কেজি পরিমাণ নিম
খৈল মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে কেঁচো, শামুক ও পিঁপড়ে হবে না।
পরবর্তীতে ১ বা ২ চামচ নিম খৈল ১৫ দিন পর পর টবের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে কেঁচো, শামুক ও পিঁপড়ে দূর হবে। এছাড়াও শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো করে টবের চারপাশে ছড়িয়ে
দিলে এসব অনাহূত অতিথিরা কাছে ঘেঁষবে না।
১১) ঘরের মধ্যে বা টবের মাটিতে ছাড়াও অনেকসময় সরাসরি গাছেও পিঁপড়ে আক্রমণ
করে। তখন জলে লেবুর রস মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে সপ্তাহে
অন্তত দু'দিন স্প্রে করতে হবে।
পোকামাকড় দূরে রাখতে ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি ব্যবহার করা যায় বাজারচলতি
নানারকমের কীটনাশক। আরশোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের চক, ইঁদুরের জন্য লাল গমের দানার মতো লানির্যাট ওষুধ, জাঁতাকল, বাক্সকল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য
পোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় মারার
স্প্রে। বাড়িতে আরশোলা, ইঁদুর, মশা, মাছি, পিঁপড়ে এদের উপদ্রব একদিনে হয় না। এসবের হাত থেকে
রক্ষা পেতে অবশ্যই প্রতিটি ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ির ডাস্টবিন হতে
হবে ঢাকা দেওয়া। তাহলে পোকামাকড় দূরে থাকবে, বাড়িও হয়ে উঠবে প্রকৃতপক্ষে
ঝকঝকে তকতকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন