বনেদী বাড়ির মেয়ে, যে বাড়িকে সেসময় গোটা কলকাতা তথা বাংলার মধ্যে শিল্প, সঙ্গীত ও সাহিত্যর কেন্দ্রস্থল হিসাবে গণ্য করা হতো। শুধু তাই নয়, সেই বাড়ির সদস্যরাও যাঁর যাঁর মতো প্রখ্যাত, স্বনামধন্য। সেই বাড়ির মেয়ে ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মেয়ে তিনি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রজা ভগ্নী।
সময়টা ঊনবিংশ শতাব্দী। তার আগে থেকেই বাল্যবিবাহ, পুরুষের বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা, স্ত্রীশিক্ষার অবরুদ্ধি
ইত্যাদির যাঁতাকলে পড়ে মেয়েদের অবস্থা ভীষণভাবে সঙ্গীন। সতীদাহ প্রথা রদ করতে
এগিয়ে এসেছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের মতো উন্নত, আধুনিক ও উন্মুক্ত চিন্তাধারার
কিছু মানুষ। পরবর্তীকালে নারীশিক্ষা ও বিধবাবিবাহের জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে
সচেষ্ট হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। স্ত্রীশিক্ষা, নারী স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার নিয়ে সচেতনতার বিস্তার ঘটছিল। আর এতে
অবশ্যম্ভাবীরূপে কয়েকজন কুটিলমনস্কের স্বার্থে ঘা লেগেছিল। কয়েকজন বললে ভুল হবে, সংখ্যাটা ছিল অনেকটাই বেশি। ১৮২৬ সালের কথা। সহমরণ বিতর্কের সময় সতীদাহের
সমর্থকেরা মৃত স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীকে সহমরণে প্রবৃত্ত হওয়ার কারণ দর্শাতে গিয়ে
বলেছিলেন, “স্ত্রীলোক স্বভাবত অল্পবুদ্ধি”। প্রত্যুত্তরে রাজা
রামমোহন রায় সেই নারীর পক্ষ অবলম্বন করে অসামান্য যুক্তিজাল রচনা করেছিলেন, “স্ত্রীলোকের বুদ্ধির পরীক্ষা কোনকালে লইয়াছেন যে অনায়াসেই তাহাদিগকে
অল্পবুদ্ধি কহেন? কারণ বিদ্যাশিক্ষা এবং জ্ঞানশিক্ষা দিলে পরে ব্যক্তি
যদি অনুভব ও গ্রহণ করিতে না পারে, তখন তাহাকে অল্পবুদ্ধি কহা
সম্ভব হয়। আপনারা বিদ্যা জ্ঞানোপদেশ স্ত্রীলোককে প্রায় দেন নাই, তবে তাহারা বুদ্ধিহীন হয় ইহা কিরূপে নিশ্চয় করেন?”
স্ত্রীলোক মাত্রই স্বল্পবুদ্ধি – এই ধারণা আজও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের
মন থেকে সম্পূর্ণভাবে অবলুপ্ত হয়নি। অথচ বৈদিক যুগে নারীরা ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞানে
অসামান্যা, বেদাধ্যয়নে অপ্রতিরোধ্য। পরবর্তীতে স্বার্থান্বেষী
সমাজ নারীশিক্ষাকে পাঠিয়ে দেয় আঁধারের অতলে। বিদ্যাচর্চায় ছেদ পড়ে পুনরারম্ভটা
হয়েছিল বেশ দেরিতেই। নবজাগরণের পর ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি একাধিক স্ত্রীশিক্ষার
জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বাংলার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসে এক
বিপুল পরিবর্তন। শিবনাথ শাস্ত্রীর ন্যায় কিছু ব্যক্তিত্ব মেয়েদের লেখাপড়ার
পাঠ্যসূচিকে বিজ্ঞানমুখী করার অভিপ্রায় গ্রহণ করেন এবং তার ফলস্বরূপ
সাহিত্যচর্চার সঙ্গে গণিত, স্বাস্থ্য, প্রকৃতি বিজ্ঞান ইত্যাদির
চর্চাও হতে থাকে। ১৮৬৩ খ্রীষ্টাব্দ থেকে উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত “বামাবোধিনী
পত্রিকা”য় বঙ্গনারীদের জন্য প্রাণীবিজ্ঞান, শারীরবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ভূগোল সম্বন্ধীয়
নানাবিধ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। “অন্তঃপুর”, “বঙ্গমহিলা”, “পরিচারিকা”, “ভারত-মহিলা” ইত্যাদি পত্রিকাতেও বিচ্ছিন্নভাবে
মহিলাদের দ্বারা রচিত বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছিল, যদিও সবক'টি রচনাই ছিল একদম প্রাথমিক স্তরের।
এলেন, শিখলেন ও জয় করলেনঃ
এহেন সময়ে আবির্ভাব হয় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা স্বর্ণকুমারী
দেবীর। ১৮৫৫ সালের ২৮শে অগাস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সৌদামিনী দেবী, সুকুমারী দেবী ও শরৎকুমারী দেবী ছিলেন তাঁর তিন দিদি। বর্ণকুমারী দেবী তাঁর
ছোট বোন। বড়দিদি সৌদামিনী বেথুন স্কুলের ছাত্রী হলেও স্বর্ণকুমারী দেবী প্রধানত
বাড়িতেই লেখাপড়া শিখেছিলেন। ঠাকুরবাড়ির একজন সদস্যা হওয়ার দরুণ ঠাকুরবাড়ির
সংস্কৃতির স্পর্শে একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, সঙ্গীতকার ও সমাজ সংস্কারক হয়ে ওঠার সাথে সাথে
পারিবারিক পত্রিকা “ভারতী”র দীর্ঘদিনের সম্পাদিকাও ছিলেন তিনি। এর সঙ্গেই তাঁর মনে
তৈরি হয় বিজ্ঞানপ্রীতি। স্বর্ণকুমারী দেবীর পিতা, ভ্রাতা অথবা অন্যান্য
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিজ্ঞানের উপাসক কেউই ছিলেন না, বরং তাঁরা ছিলেন প্রতিভাবান
দার্শনিক, শিল্পী অথবা সাহিত্যিক। তা সত্ত্বেও স্বর্ণকুমারী
দেবীর মনে যে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসুতা জেগে উঠেছিল তার প্রেরণা ছিলেন মুখ্যত দু'জন। পিতা দেবেন্দ্রনাথের কাছে তিনি বাল্যকালে কিছুটা হলেও সরল
জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাঠ পেয়েছিলেন। অন্যজন ছিলেন স্বর্ণকুমারীর মেজদাদা
সত্যেন্দ্রনাথ, তিনিই ছিলেন তাঁর আরেকজন অনুপ্রেরণা। স্বর্ণকুমারী
দেবীর স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় তাঁরা বাড়িতে যে শিক্ষালাভ করতেন, তাঁদের শিক্ষয়িত্রী স্লেটে কিছু লিখে দিতেন। সেই লেখাটিই টুকে লিখতেন তাঁরা।
একদিন দেবেন্দ্রনাথ এ ব্যাপারে জানতে পারেন এবং এই যান্ত্রিক শিক্ষাদান পদ্ধতিটি
তুলে দেন। পরিবর্তে তিনি অযোধ্যানাথ পাকড়াশি নামক একজন দক্ষ শিক্ষককে নিয়োগ করে
মেয়েদের লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থা করেন।
বেশ চলছিল শৈশবশিক্ষা। এরই মাঝে মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়
স্বর্ণকুমারী দেবীর, জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে। তিন সন্তান এবং পারিবারিক
দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সমান তালে চলছিল শিক্ষাগ্রহণও। পাশে পেয়েছিলেন শিক্ষিত ও
অগ্রসরমুখী মনোভাবাপন্ন স্বামী জানকীনাথের উৎসাহ। ১৮৮০ সাল থেকে স্বর্ণকুমারী
দেবীর একের পর এক রচনা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। সারাজীবনে বহু
উপন্যাস, নাটক, কাব্যগ্রন্থ ও সঙ্গীত রচনা
করেছিলেন তিনি। ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের মধ্যে গান রচনার সংখ্যার দিক থেকে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর স্বর্ণকুমারী দেবীর স্থান। তিনি প্রায় তিন শতাধিক গান
রচনা করেছিলেন।
ধ্যানে-জ্ঞানে বিজ্ঞানঃ
না, তাঁর রচনা শুধুমাত্র সঙ্গীত ও সাহিত্যেই থেমে থাকেনি। বিজ্ঞানপ্রীতির ফলশ্রুতি হিসাবে তাঁর প্রথম বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ ‘ভূগর্ভ’ প্রকাশ পায় “ভারতী” পত্রিকায়। এরপর কখনও ভারতী, আবার কখনও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকে স্বর্ণকুমারী দেবীর বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধগুলি, সব মিলিয়ে মোট চব্বিশটি। অবশেষে ঊনবিংশ শতকের তৃতীয়ভাগে পাওয়া যায় বাংলা ভাষায় প্রথমবার কোনো মহিলা লেখক কর্তৃক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ। ১৮৮২ সালে আদি ব্রাহ্মসমাজ প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় ঠাকুরবাড়ির স্বর্ণকুমারী দেবী প্রণীত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুচ্ছ - “পৃথিবী”। এই গ্রন্থে পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি, উৎপত্তি, ভূপ্রকৃতি, ভূগর্ভ ও পৃথিবীর পরিণাম ইত্যাদি বিষয়ে তিনি মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন।
পূর্বেই উল্লিখিত, সেই সময়ে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধগুলির সেভাবে গভীরে
আলোচনা হতো না। স্বর্ণকুমারী দেবী তাঁর রচনায় দিলেন বিজ্ঞানের পূর্ণাঙ্গ
ব্যাখ্যা। তিনি জানতেন, তখনকার দিনে যেসব স্বল্প সংখ্যক লেখিকা বা পাঠিকা
ছিলেন তাঁরা গল্প ও উপন্যাস লিখলে বা পড়লেও বিজ্ঞান বিষয়ক গুরুগম্ভীর রচনার সঙ্গে
নেহাতই অনভ্যস্ত। তাঁদের বোঝানোর জন্য কঠিন পরিভাষাসমৃদ্ধ বক্তব্য হবে নিতান্তই
অনুপযোগী। সেই কারণে স্বর্ণকুমারী দেবী তাঁর বিজ্ঞান আলোচনা তথ্য ভারাক্রান্ত না
করে ভাষার সারল্য দ্বারা অলংকৃত করেছিলেন।
“গণিতশাস্ত্রের সাহায্য ব্যতীত বিজ্ঞানের অন্তরে
প্রবেশ করা অত্যন্ত কঠিন; নানা কারণবশতঃ অঙ্ক-শিক্ষাও সকলের পক্ষে ঘটিয়া উঠে
না। বিজ্ঞান এইরূপ কষ্টসাধ্য বলিয়া ইহা বিশ্ববিদ্যালয়েই একরূপ আবদ্ধ। বিজ্ঞানের
এই দুরূহ পথ সুগম করিবার জন্য ইয়োরোপ ও আমেরিকা দেশে গণিতের সাহায্য ব্যতীত যেরূপ
বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ সকল প্রচার হইতেছে এই পুস্তকখানি সেই প্রকার গ্রন্থের
আদর্শানুসারে রচিত।”
তাঁর রচিত “পৃথিবী” গ্রন্থটির প্রথম পরিচ্ছেদের নাম “সৌরপরিবারবর্ত্তী পৃথিবী”। এতে স্বর্ণকুমারী দেবী সৌর পরিবার, ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম, কেন্দ্রাতিগবল, ধূমকেতু, উল্কাপিণ্ড, জ্যোডিয়াক্যাল লাইট ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সাথেই খন্ডন করেছেন প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যার ভ্রান্ত মতগুলিকে। তিনি লিখেছেন– “প্রাচীন ভারতবর্ষীয় পণ্ডিতদিগের মতে সূর্য্যকে লইয়া সৰ্ব্ব শুদ্ধ নয়টি গ্রহ - রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু । কিন্তু রাহু ও কেতু প্রকৃতপক্ষে কোন জ্যোতিষ্কই নহে, এবং চন্দ্র সূৰ্য্যও গ্রহ নামে বাচ্য হইতে পারে না - সূর্য্য একটি স্থির নক্ষত্র, চন্দ্র পৃথিবীর একটি উপগ্রহ ; এবং চন্দ্র সূর্য্য পূর্ণিমা অমাবস্যার সময় যে স্থলে আসিলে গ্রহণ হয় সেই দুই স্থানকে প্রাচীন পণ্ডিতেরা রাহু ও কেতু নাম দিয়াছেন।”
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের নাম “পৃথিবীর গতিপ্রণালী”। এতে সূর্য, পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগণের গতিতত্ত্বের বিশদ বিশ্লেষণ রয়েছে। পৃথিবীর আয়তন ও
আকৃতি, পৃথিবীর অাহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি, তার উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন এবং নাক্ষত্রিক গবেষণায় টলেমি থেকে কোপার্নিকাস হয়ে
নিউটন পর্যন্ত অগ্রগতি চিত্রের মাধ্যমে সহজবোধ্য ভাষায় বর্ণিত। তৃতীয় অধ্যায়ের
বিষয়বস্তু পৃথিবীর উৎপত্তি সম্বন্ধে কাণ্টের মত, হারসেল, লাপলাস, টমসন এবং হোলটস ইত্যাদির গবেষণার মাধ্যমে
সৃষ্টিরহস্যের সমাধান। সূর্যের উত্তাপ ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা এবং কিভাবে সূর্য
উত্তাপ বিক্ষেপ ও সঙ্কুচিত হয়ে সমভাবে তার উত্তাপ রক্ষণ করছে এর একটি মনোজ্ঞ
আলোচনা রয়েছে এই পরিচ্ছেদে। তবে মনে রাখতে হবে, সবটাই প্রায় দেড়শো বছর আগের
বিজ্ঞানের অগ্রগতি অনুযায়ী।
‘ভূপঞ্জর’ শীর্ষক পরবর্তী চারটি অধ্যায়ে ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ তথ্য অনুসরণে ভূভাগের গঠন, উপাদান ইত্যাদির পাশাপাশি পৃথিবীপৃষ্ঠে উদ্ভিদ, জীবজন্তুর কিভাবে উদ্ভব হল সেই সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন স্বর্ণকুমারী দেবী। সৃষ্টির ক্রমোন্নতির পরিচয় দিয়েছেন নিকৃষ্ট জীব থেকে মানুষের অভিব্যক্তি পর্যন্ত। অষ্টম ও নবম পরিচ্ছেদের বিষয়বস্তু ছিল ভূগর্ভ সম্বন্ধে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর মতামত এবং পৃথিবীর পরিণাম তথা পৃথিবীর মৃত্যু সম্ভাবনা। “পৃথিবী” গ্রন্থটি ছাড়াও বেশ কয়েকটি সারগর্ভ ও মননশীল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ সৃষ্টি হয়েছিল স্বর্ণকুমারী দেবীর কলম থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু'খানি প্রবন্ধ হলো “অন্যান্য গ্রহগণ জীবের নিবাসভূমি কিনা” এবং “মঙ্গলে জীব থাকিতে পারে কিনা”। সাহিত্য ও বিজ্ঞানের জগতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ভারতী পত্রিকার সম্পাদিকা হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশ পাওয়ার সাথেই তাঁর অন্যতম প্রাপ্তি ছিল ১৯২৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “জগত্তারিণী স্বর্ণপদক” দ্বারা সম্মানিত হওয়া। ১৯২৯ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্বও করেছিলেন। ১৯৩২ সালের ৩রা জুলাই অমৃতলোকে যাত্রা করেন তিনি।
আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে প্রবন্ধ রচনা করলেও বিজ্ঞানমনস্কতার সারমর্ম উপলব্ধি করেছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী। তিনি লিখেছিলেন– “বিজ্ঞান-চর্চ্চার দ্বারাই মনুষ্যের বুদ্ধিবৃত্তি মার্জ্জিত হয়, বিজ্ঞানের প্রণালী অনুসারে চিন্তা করিলে বুদ্ধি-বৃত্তি দৃঢ়তা লাভ করে ও কল্পনাসম্ভূত সিদ্ধান্ত হইতে আমরা মুক্তি লাভ করি। এক কথায়, বিজ্ঞানের প্রণালী অনুসারে চিন্তা করিলে যাহাকে আমরা কুসংস্কার বলি তাহার অপনয়ন হয়।” এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের বিশ্বের অনেক অগ্রগতি হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে আমাদের চেতনারও। তাও আমাদের মধ্যে অধিকাংশের মনেই কোনো না কোনোভাবে রয়ে গেছে অবৈজ্ঞানিক নানা যুক্তি, যা বিশ্বাসের আধারে আমরা প্রবাহিত করে চলেছি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আশা রাখি স্বর্ণকুমারী দেবীর মতো যুক্তি দ্বারা পরখ করে নেওয়ার পর আমাদের সকলের আগামীগুলো হয়ে উঠুক আরও দৃঢ়, আরও ঋজু।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন