হেমলক - সত্যজিৎ সেন


 

বুকের মধ্যে কিছু প্রিয়মুখ লবণের মত জমে ছিল।

তারা সবই বেদুইন যাযাবর হয়ে চলে গেল। বলে গেল,

দূরের পাহাড় পেরিয়ে তারা যাবে মরুভূমি। বলে গেল,

আমরা না-ফেরা পর্যন্ত কোথাও যেও না। এই ঘর আগলে রেখ,

শীতকালে জঙ্গলের শুকনো পাতা আগুনে জ্বালিও।

আমরা ফিরব, রাত্রে ঘরের মধ্যে প্রদীপের আলো জ্বেলে রেখ।

সেইসব প্রিয়মুখ আর ফিরল না, পৃথিবী আপনমনে ছুটেই চলেছে,

বছর গড়িয়ে গেল নদীর স্রোতের মতন।

প্রতীক্ষায় থেকে থেকে দু'পায়ের নিচে শুধু দীর্ঘ শিকড়ের গোলমাল।

জমানো প্রদীপ শেষ। আলো নেই। রাত্রের অন্ধকার বাদুড়ের ডানা।

জঙ্গল হুড়মুড় করে হেঁটে আসে বাড়ির উঠোনে।

ক্রমশ সে জঙ্গল ঘরের ভিতরে। মহাপ্রলয়ের অন্ধকার

হো হো শব্দে হেসে ওঠে দরজা জানলায়।

একজন একবার পথ ভুলে আসত যদি বিপন্ন আঁধারে,

মুখের ওড়না সরালেই, আলোর চাবুক চলত অন্ধকারের শরীরে।

সেও গেছে নিরুদ্দেশে। প্রিয়মুখ সমস্ত স্বজন আমার

তোমাদের সঙ্গে যদি বেদুইন যাযাবর হতে পারতাম, ভাল হ’ত,

প্রদীপের কান্না আর আকাশের নিভে যাওয়া তারাদের রূপকথা

শোনাতে হ’ত না। ঘরের ভিতরে এই আদিম জঙ্গল আর

দুঃসহ আঁধার। সক্রেটিসের সেই হেমলক খুঁজেই চলেছি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন