অনেক
দিন পর পাশের পাড়ায় দত্তদের বাড়িতে ভোজ খেতে গেছি। দোল উপলক্ষে দত্তবাবু ও তার
ছেলেরা খাওন-দাওনের আয়োজন করেছে। পোলাও মাংস আরও কত কি। মনোরম গন্ধে গোটা পাড়া রমরম
করছে। আমরাও বেশ কয়েকজন দল বেঁধে গেছি। এত বড় বাড়ি, এত আয়োজন, আর দত্তবাবু শুনেছি দিল দরিয়া মানুষ। নিশ্চয়ই আমাদের জন্যও কিছু ভেবে
রেখেছেন। বেলা অনেক হয়ে এল, বেছেবেছে উদরপূর্তি
করে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে এল। নিজের পাড়ায় ঢুকতে ঢুকতেই কেমন যেন থমথমে ভাব। বাকি
বন্ধুরা পিছু নিল। পুকুর ধারে আর বাকি তিনজন আমাকে দেখতে পেয়েই ছুটে এল আর
স্তন্যপান করতে লাগলো। ওহ সারাদিন আমায় না পেয়ে বেচারারা ব্যাকুল হয়ে ছিল। কিন্তু
সবচেয়ে ছোট কেলটিটা কই ! সে কোথায় গেল? খোঁজ পরতেই লেলো বলল, মা পাড়ার
কতগুলো দুষ্টু ছেলেপিলে কেলটিকে ধরে রঙ মাখিয়ে ছেড়েছে। কেলটি খুব চিৎকার করছিল আর ওরা তত মজা পাচ্ছিল, জানো মা। শেষে
কেলটি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। ওরা ওর গলায় দড়ি বেঁধে টানতে
থাকে। কেলটি আর পেরে ওঠে না। ছোট্ট শরীর। ঐ গাছ তলায় দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। ছেলেগুলো
চলে যেতেই ও বেরিয়ে আসে আর চেটে চেটে গা পরিস্কার করে। কিন্তু জানো মা তারপরই ওর
আরও কষ্ট হতে থাকে আর ছটপট করতে থাকে। তোমার আসতে দেরি হচ্ছে
দেখে আমরা পাড়ার মোড়ে অপেক্ষা করি মা। চলো মা ওইখানে কেলটি
শুয়ে আছে। আমি গিয়ে যখন দেখি তখন কেলটির চোখ দুটো স্থির আকাশের দিকে, যেন কত কষ্ট আর অপেক্ষা নিয়ে
চলে গেছে।
আমি তো
সামান্য সারমেয়। আমার কি আর দুঃখ করতে হয়! বছর বছর আমার ছ’-আটটা করে বাচ্চা হয়। কতকগুলো বাঁচে, কতক মরে যায়। কিন্তু বলুন তো ওই ভদ্দরলোকেরা
আমাদের রঙ মাখিয়ে কি সুখ পায়? আমরা তো এসব বুঝি না,এসব চাইও না। আমার কেলটি কে ওরা মেরে ফেলল।
বিষক্রিয়ায় ওর ছোট্ট প্রাণটা চলে গেল। কোন এক সিনেমার নায়ক বলেছিলেন কামড়াতে না পারো ঘেউ করে
প্রতিবাদ তো করা যায়। জানেন
তো সেদিন খুব রাগ হয়েছিল। ওদের দেখে তেড়ে গিয়েছিলাম একটু দাঁত খিঁচিয়ে ভয়
দেখাতে, ব্যাস্! আমাকেও ওরা পাগল ভেবে
দিল লাঠির বাড়ি, আর পরদিন মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ি
তুলে নিয়ে চলে এল আমায় এখানে, নাকি
কোন এন জি ও। ভাই কেউ খবর দেবে আমার বাকি তিনটে ছানা কেমন আছে? ওদের কেউ খেতে দিচ্ছে কিনা!
ভাই
তোমাদের বসন্ত উৎসব আমাদের চেয়েও দামী? আমরা
পথের অপাংক্তেয়, শুধু জানেন অন্তর্যামী!!
চিত্র সৌজন্যঃ আন্তর্জাল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন