বাংলা সাহিত্যের গল্প বলিয়েরা - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

প্রাচীনকালে ভারতীয় সভ্যতার বিকাশের প্রাক্কালে গুরুমুখী বিদ্যার প্রচলন ছিল। বিদ্যালাভ গুরুর মুখ নিঃসৃত বাণী স্মৃতিতে সঞ্চয় করে রাখার মাধ্যমেই করা হত। বিদ্যার্জনের ক্ষেত্রে বিদ্যাকে স্থায়ীত্ব প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখার আবিষ্কার অনেক পরে হয়েছে। শৈশবেই ছাত্রকে বিদ্যালাভের আশায় কঠোর ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে গুরুগৃহে গমন করতে হত। আশ্রম জীবনে গুরুরা নিজ নিজ পারদর্শীতা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাদের জ্ঞান দান করতেন। এই পর্বে বহু গুরুই নিরস বিষয়কে বোধযোগ্য করে তোলার জন্য বা মনে রাখার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রকমের হিতোপদেশ নির্ভর গল্প বলতেন। যার নির্যাস ছাত্ররা সংগ্রহ করে জ্ঞান অর্জন করতেন। গুরুমুখী বিদ্যার এই প্রথাই কালের চক্রে পরিবর্তনের মাধ্যমে মানব সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে যুক্ত হয়। যা প্রাচীনকালে ছিল গুরু ও শিষ্যর বিদ্যার আদান প্রদানের মাধ্যম তাই পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের গল্প বলিয়ে চরিত্র হয়ে দাঁড়ায়।

শৈশবে মা – বাবা – দাদু – দিদিমা – ঠাকুমাসহ আত্মীয় পরিজনের থেকে গল্প শোনার অল্প বিস্তর অভিজ্ঞতা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি শিশুরই হয়। বাস্তব জীবনের এই সমস্ত গল্পবলিয়ে চরিত্ররাই সাহিত্যের জগতে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্টে গল্পের ডালা নিয়ে আমাদের কাছে ধরা দেন।

উগ্রশ্রবা সৌতিঃ


গাল্পিক বা গল্প বলিয়ে চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গেলে শুরুতেই মনে পড়ে মহাভারতের দুই বিখ্যাত গাল্পিকের নাম। সৌতি লোমহর্ষণ ও তাঁর পুত্ৰ উগ্রশ্রবা সৌতি। নিমখারবন বা নৈমিষারণ্যে কুলপতি শৌনকের বারো বচ্ছরের যজ্ঞ-প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রতিদিনের অভ্যস্ত প্রক্রিয়ায় শান্ত-সমাহিত ঋষিরাও হাঁপিয়ে ওঠেন।

তারওপরে নিজেদের বিশেষ বৈদিক কর্মটি সাঙ্গ হওয়ার পর তাঁদের অবসরও জুটে যায় অনেক। তবু তো তখন অন্য মুনি-ঋষিদের সঙ্গে গল্প জোড়া চলে না। কেন না, একজনের কাজ শেষ হলে অন্যজনের বৈদিক ক্রিয়া-কলাপ আরম্ভ হয়। এই একঘেয়েমিময় জীবনেই একদিন এসে উপস্থিত হয়েছিলেন সৌতি উগ্রশ্রবা। সেকালে লোমহর্ষণের মতো কথক ঠাকুর দ্বিতীয় ছিলেন না।তার প্রধান কাজ- রাজা, মুনি-ঋষিদের বংশগৌরব কীর্তন করা, সৃষ্টি-প্রলয়-মন্বন্তরের বিচিত্র কথা শোনানো। আর ঠিক এই কাজেই সূত লোমহর্ষণের ভারত-জোড়া নাম।

লোমহর্ষণের আসল নাম কী ছিল তা সবাই ভুলে গেছিল। তাঁর কথকতা, গল্প বলার ঢঙ ছিল এমনই উঁচু মানের যে তাঁর কথকতার আসরে শ্রোতাদের গায়ের লোম খুশিতে খাড়া হয়ে উঠত। তাই তাঁর নামই হয়ে গেল লোমহর্ষণ। স্বয়ং ব্যাসের তিনি প্রিয় শিষ্য। ব্যাস মহাকাব্য লিখেছেন, অষ্টাদশ পুরাণ লিখেছেন। তিনি ছিলেন শুধুমাত্র লেখক। লেখাকে গল্পাকারে বর্ণনা করে উপযুক্তভাবে পেশ করে শ্রোতাকে মুগ্ধ করার উপায় তাঁর জানা ছিল না। কিন্তু যেদিন তিনি দেখলেন, তাঁরই লেখা জমিয়ে গল্প করে যে মানুষ শ্রোতাদের লোম খাড়া করে দিতে পারেন, সেদিনই বোধহয় তিনি এই সূতজাতীয় মেধাবী মানুষটির নাম দিয়েছিলেন লোমহর্ষণ এবং তাঁকে শিষ্যরূপে বরণ করে নিজ মহাকাব্যের রসে দীক্ষা দিলেন।

সেই লোমহর্ষণের পুত্র উগ্রশ্রবাও পিতার অনুরূপ এক দক্ষ গাল্পিক হিসাবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। একদিন সূর্যাস্তকালে শৌনকের আশ্রমে উপস্থিত হলে উপস্থিত ঋষি – মুনিরা বেজায় খুশি হয়ে তাঁকে গল্প বলার অনুরোধ করলেন। সৌতি উগ্রশ্রবা আশ্রমের মুনিদের দ্বৈপায়ন ব্যাসের লেখা মহাভারতের গল্প বলা শুরু করলেন। শুরুতেই তিনি বলেছিলেন “ আমিই প্রথম কথক নই যিনি এই কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করছেন আবার আমিই শেষ কথকও হব না যার থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই কথা শুনবেন।“ অতঃপর মহাভারত প্রথমে শ্রুতিধরদের মাধ্যমে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন গল্পকারদের সাহায্যে মানবকূলে প্রচারিত হতে থাকল।

মহাভারতের কথকথা থেকে যে গল্পবলিয়েরা মঞ্চ দখল করতে শুরু করেছিলেন পরবর্তীকালে আধুনিক সাহিত্যে গল্পকাররাও একইভাবে বহু গাল্পিক চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। এঁদের কথা বলতে গেলেই মনের মধ্যে একসাথে অনেক প্রিয় - প্রিয়তম 'গল্প বলিয়ে' চরিত্র এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। টেনিদা, ঘনাদা,পিনডিদা, ব্রজদা, তারানাথ তান্ত্রিক, তারিণী খুড়ো, বরদা — সব্বাই।

টেনিদাঃ


নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট পটলডাঙ্গার ভজহরি মুখার্জি ওরফে টেনিদা। পটলডাঙার আশেপাশে ​​বসবাসরত চার তরুণ ছেলেদের একটি দলের নেতা টেনিদা পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না। সাত বারের চেষ্টাতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তিনি। টেনিদা বিখ্যাত ছিলেন তার খাঁড়ার মত নাকের জন্যে, গড়ের মাঠে গোরা পেটানোর জন্যে। আর তার বিখ্যাত সংলাপ, "ডি-লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক" বলার জন্য। টেনিদা সম্বন্ধে গল্পকথক প্যালারাম বলেছে,

"টেনিদাকে নইলে আমাদের যে একটি দিনও চলে না। যেমন চওড়া বুক - তেমনি চওড়া মন। পাড়ার কারও বিপদ-আপদ হলে টেনিদাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের আগে। লোকের উপকারে এক মুহুর্তের জন্য তার ক্লান্তি নেই - মুখে হাসি তার লেগেই আছে। ফুটবলের মাঠে সেরা খেলোয়াড়, ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন। আর গল্পের রাজা। এমন করে গল্প বলতে কেউ জানে না।"

টেনিদার গল্প দু'ধরণের। এক টেনিদা তার তথাকথিত বীরত্বের বানানো গল্প বর্ণনা করেন। দুই, টেনিদা ও প্যালা বা চার তরুণ দলের অত্যধিক উল্লসিত অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণীয় এবং শেষে রহস্যময় পরিস্থিতির মাধ্যমে সমাধানের গল্প বর্ণনা।

ঘনাদাঃ


প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট ঘনশ্যাম দাস বা ঘনাদা কলকাতার ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়িতে থাকতেন। ঘনাদার বক্তব্য অনুযায়ী ইউরোপিয়ান লোকেরা তাকে 'ডস' নামে চেনে। সেখানকার চার আবাসিক শিবু, শিশির, গৌর আার সুধীরকে গল্প বলতেন তিনি। বাগাড়ম্বর ভরা অথচ তথ্যে ঠাসা সেই সব গল্প।ঘনাদা লম্বা, শুঁটকো চেহারা, বয়সের গাছপাথর নেই, প্রচুর গড়গড়া টানেন এবং সিগারেটও খান, আবার ভয়ঙ্কর রকমের পেটুক। বলাই বাহুল্য, ঘনাদা এক জন বুদ্ধিমান ও চারচোখো ব্যক্তি এবং তাঁর জ্ঞান অপরিসীম। এত বিষয়ের খবর রাখেন, যা মেসবাড়ির সদস্যদের হতবুদ্ধি এবং প্রায় সম্মোহিত করে রাখে।নিজের জীবনের নানা অভিযান সম্পর্কে অবিশ্বাস্য ও আজগুবি গল্প মুখে মুখে বানিয়ে শোনান। ঘনাদার গল্পগুলি বানানো হলেও, এর অধিকাংশ তথ্যই বাস্তব ভিত্তিতে গৃহীত।এই সব গল্পে ঘনাদা নিজেই নায়ক – বিজ্ঞান থেকে অভিযান বা ইতিহাস থেকে পুরান – যেকোনো প্রেক্ষাপটেই গল্প বানাতে ঘনাদার কোনো জুড়ি নেই| বাস্তবের ঘনাদা মধ্যবয়স্ক ও সাধারণ চেহারার হলেও গল্পের ঘনাদা বুদ্ধিতে বা শক্তিতে অপরাজেয| আফ্রিকা থেকে আলাস্কা – পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই দুষ্টের দমন বা শিষ্টের পালন করার জন্য ঘনাদার ডাক পড়েছে|

শিবু, শিশির, গৌর বা সুধীর (কথক) ছাড়াও এই মেসের অন্যান্য চরিত্রদের মধ্যে আছে রামভুজ নামের রাধুনি ঠাকুর বা বনোয়ারী – মেসের বাবুদের ফাই-ফরমাস খাটিয়ে – মাঝে মাঝেই বনোয়ারীর ওপর দায়িত্ব পড়ে এক চ্যাঙ্গারি সুখাদ্য সরবরাহ করার। বিভিন্ন গল্পে এসে হাজির হন ঘনাদার পূর্বপুরুষরা – ঘনাদা এই সব গল্পগুলির নায়ক নন, পরিবর্তে পৃথিবী রক্ষার দায়িত্বে আসেন ‘তস্য তস্য’ ব্যক্তিরা। ইনকা সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে শিবাজীর আগ্রা থেকে পলায়ন – এইসব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনায় ঘনাদার পূর্বপুরুষ গানাদো বা ঘনরাম দাসের অবদান -মেসবাড়ির পাশের লেকের ধারের আড্ডা ছাড়া জানা কখনই সম্ভব ছিল না। ঘনাদা সমগ্রের সম্পাদক প্রয়াত সুরজিৎ দাশগুপ্তর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্রর ডাকনাম ছিল সুধীর। তাই বোধহয় এই সব গল্পের কথকও সুধীর, অর্থাৎ প্রেমেন্দ্র মিত্র নিজেই।


তারিণীখুড়োঃ


সত্যজিৎ রায় সৃষ্টি করেছেন এক অসাধারণ গল্প বলিয়ে তারিনীচরণ বন্দোপাধ্যায় ওরফে সবার প্রিয় তারিণীখুড়ো। কলকাতার বেনিয়াটোলার বাসিন্দা চিরকুমার তারিণীখুড়ো একজন মজলিশি বৃদ্ধ, যিনি নিজের জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প বলতে ভালোবাসেন। প্রথমে ঢাকায় বসবাস করতেন,গল্পের কথক পল্টুর বাবার সঙ্গে সেখানেই তাঁর পরিচয় হয়।তাঁর শ্রোতা পাঁচজন — পল্টু আর তার চার সঙ্গী ন্যাপলা, ভুলু, চটপটি আর সুনন্দ। খুড়োর গল্পগুলোতে বিভিন্ন বৈচিত্র্য রয়েছে - ভৌতিক গল্প থেকে (যার অনেকগুলিই তেমন ভয়াবহ গল্প নয়) হাসির গল্প সবই আছে তাঁর ঝোলায়। বেশিরভাগ গল্পেই আসন্ন সমস্যা বা বিপদের মুখে তারিণীখুড়োর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। তবে কিছু গল্পে বর্ণিত হয়েছে যে কীভাবে তিনি ভাগ্যের জোরে কিছু অদ্ভুত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তারিণীখুড়ো সারা ভারতের তেত্রিশটি শহরে ঘুরে ঘুরে প্রায় ছাপ্পান্ন রকমের চাকুরী বা ব্যবসা করেছেন।বিভিন্ন স্থানে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে গড়ে উঠেছে তাঁর যাবতীয় চমকপ্রদ গল্পের ভান্ডার।

তারানাথ তান্ত্রিকঃ



বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় সৃষ্ট এক অমর রহস্যময় ব্যক্তিত্ব, জ্যোতিষীর খোলসে একজন সিদ্ধ তান্ত্রিক হলেন তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ (বংশগত পদবি চক্রবর্তী) ওরফে তারানাথ তান্ত্রিক।মধ্য পঞ্চাশের তারানাথ তান্ত্রিক হাত দেখে আর কোষ্ঠী বানিয়ে দিন গুজরান করেন। সংসার তেমন স্বচ্ছল নয়। অভাব রয়েছে। কিন্তু অভাব কিছুতেই কাবু করতে পারে না মানুষটিকে। স্ত্রী-কন্যা-পুত্র নিয়ে দিব্যি আছেন। তারানাথের কাছে দুই বন্ধু আসেন গল্প শুনতে।তারানাথ খুব অল্প বয়সে ঘর ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে।তাঁর কথানুযায়ী, সমগ্র বাংলায় পরিভ্রমণের সময় অনেক অতিপ্রাকৃত শক্তির সাথে তিনি বারংবার মুখোমুখি হন। বীরভূমের এক শ্মশানে মাতু পাগলি নামের এক রহস্যময়ী সাধিকার কাছে মহাডামর সাধনা করেন তারানাথ। কিন্তু তাতে সফল হননি। পরে বরাকরের অরণ্যে তিনি লাভ করেন মধুসুন্দরী দেবীর বর।ভৌতিক ও তন্ত্র সাধনা ভিত্তিক সেই সমস্ত গল্প বৈঠকি ভঙ্গিমায় বলে পাঠকের মনে এক অজানা ভয়ের সঞ্চার করেন। বিভূতিভূষণের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র তারাদাস বন্দোপাধ্যায় তারানাথ তান্ত্রিককে নিয়ে নতুনভাবে আরো কিছু কাহিনী রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তন্ত্র সাধনা নিয়ে লেখা প্রথম গল্প এগুলো। নিঝুম রাতের অন্ধকারে এই গল্প পড়লে বেশ গা ছমছমে অনুভূতি আসে। গল্পের শুরুতে অলৌকিক আর অতিলৌকিক দুনিয়ায় ঢুকে পড়ে তারানাথ বলে ওঠেন,"মন দিয়ে শোনো, মন খারাপের গল্প।"

বরদাঃ

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট অন্যতম "ভুতান্বেষী" গল্প বলিয়ে চরিত্র বরদা। ভুতজ্ঞানী বরদা একজন প্রবাসী বাঙালী যুবক, বিবাহিত, পৈতৃক সম্পত্তির কৃপায় অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল, চেহারা "নৈনিতাল আলুর কথা স্মরণ করাইয়া দেয়।" তিনি নিজের সম্পত্তি দেখাশোনা করেন, ভুত নিয়ে নাড়াচাড়া করেন আর অবসর সময়ে ক্লাবে গিয়ে আড্ডা দেন। প্রেততত্ত্ব নিয়ে তাঁর অনেক পড়াশোনা আছে, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে বলেও দাবী করেন, ঝামেলা হয় তখনই, যখন তিনি ক্লাবে অত্যন্ত অনিচ্ছুক শ্রোতাদের জোর করে সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে চান - "বরদার আষাঢ়ে গল্পের আসর"। মজাদার বরদার চরিত্রের অন্যতম দিক হল তিনি নিজের গল্প শোনাতে নাছোড়বান্দা। জোর করে গল্প শোনানো থেকে শুরু করে প্ল্যানচেটে আত্মাকে ডেকে আনা সহ বিভিন্ন কার্যকলাপ তিনি করে থাকেন।

পিনডিদাঃ



আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সৃষ্ট প্রদীপ নারায়ণ দত্ত ওরফে পিনডিদা। টেনিদা, ঘনাদার একই সারিতে আছেন পিনডিদা। শুকতারা ও কিশোরভারতী পত্রিকাতে নিয়মিত পিনডিদার কাহিনী প্রকাশিত হত। গল্পবাগীশ পিনডিদা নাকি ব্রাজিল দলের ফুটবলার ছিলেন। বর্তমানে বর্ধমানে থাকেন। হাঁটুর মালাইচাকি ভেঙে ফুটবল থেকে রিটায়ার করে ব্রাজিল ছেড়ে দেশে ফেরেন পিনডিদা। সেখানে তার পাঁচ শাগরেদ সোনা, কার্তিক, চটপটি, হাবুল এবং কেবলু পিনডিদার বিরাট ভক্ত। আড্ডার ফাঁকে পিনডিদা ব্রাজিলের বিচিত্র অভিজ্ঞতার গল্প করেন। পিনডিদাদের আড্ডা বসত খেলার মাঠে। একটি উঁচু ঢিপিতে বসতেন পিনডিদা, আর চ্যালারা মাটিতে। মাঝে মাঝে পিনডিদা ও তার ভক্তরা জড়িয়ে পড়েছে রোমাঞ্চকর সব অ্যাডভেঞ্চারে এবং প্রতিবারই নেতার ভূমিকায় সকলকে উদ্ধার করেছেন পিনডিদা। তিনি প্রায়শই শাগরেদদের বুদ্ধির খেলায় ফাঁসাতেন আর বাজি ধরতেন।বলা বাহুল্য, প্রতিবারই শাগরেদদের হার হতো।তাঁর সেই সমস্ত মজার কাহিনী পড়তে শুরু করলে সময় কোথা দিয়ে পার হয়ে যায় খেয়াল থাকেনা।

ব্রজদাঃ

বাংলা সাহিত্যের দাদাদের দাদাগিরির দলে গৌরকিশোর ঘোষের সৃষ্ট ব্রজদা অন্যতম। গুল দিতে ওস্তাদ ব্রজদার কাহিনী সমগ্রের নাম তাই লেখক "গুল্প সমগ্র" নামে প্রকাশিত করেন। তবে এই গল্পবলিয়ে চরিত্রটি সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক নয়। ব্রজরঞ্জন রায় আনন্দবাজার পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক তিনি জড়িয়ে ছিলেন। নিজে খেলোয়াড় ছিলেন, পরে হয়েছিলেন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহরু এমন বহু নামীদামী লোকের সাথেই যোগাযোগ ছিল তার। সেসব যোগাযোগের গল্পকেই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে হাজির করতেন সহকর্মীদের কাছে। এই ব্রজরঞ্জন রায়কে নিয়ে অনুজ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষ যে চরিত্রটিকে বানিয়েছিলেন, তার নাম ছিল ব্রজরাজ কারফর্মা ওরফে ব্রজদা। গল্পে ব্যবহৃত ‘গুল’ অর্থাৎ মিথ্যাভাষণগুলি লেখকের সৃষ্ট নয়। যে ভদ্রলোককে নিয়ে গল্প তার মুখে সত্যি সত্যিই সেসব গুল শোনা যেত। ব্রজদা তাঁর গল্পের ঝুলি খুলে বসতেন অফিসের টেবিলে। ছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিক। ব্রজদার গল্পে কোনো জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস থাকতনা, সেগুলো হত নিখাদ গুল্প (গুল+গল্প)। ব্রজদা সেগুলো বলতেন সহকর্মীদের আনন্দ দিতেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ সেনাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছিলেন যে প্রবাদপ্রতিম সুন্দরী মাতাহারি, সেই মাতাহারিকে ধরতে নাকি ফ্রান্সেও পাড়ি দিয়েছিলেন ব্রজদা। ব্রজদার গল্পে অনেক বেশি উঠে এসেছে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী ব্রিটিশ সমাজ ও বাঙালি এলিট সমাজের মধ্যেকার সম্পর্ক। তার অবাধ চলাফেরা ছিল ভাইসরয়ের দপ্তরেও, এমনটাই দাবি ছিল তাঁর। ব্রজদাই নাকি রবীন্দ্রনাথের ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থ লেখার প্রেরণা ছিলেন। “কখনো এভারেস্টে বারো ফুট লাফ দিয়ে রাধানাথ শিকদারকে উচ্চতা গণনায় সাহায্য করছেন, আবার কখনো এমন এক বাঘের গল্প বলছেন, যে কিনা বেছে বেছে ধোপানীদের হাত খেয়ে যেত, আবার কখনো ক্রিকেট খেলায় ব্রজদা এমন শট মারেন যে বল অর্ধেক হয়ে গিয়ে একখণ্ড ফিল্ডারের হাতে পড়ে, একখণ্ড বাউন্ডারি পার হয়ে চলে যায়। “ বাঙালি সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত সমালোচনামূলক উক্তি হল — " যাই বলিস আর তাই বলিস, ল্যাং মারায় বাঙ্গালীর কাছে ওয়ার্ল্ডের কেউ দাঁড়াতে পারে না।"

ডোমরুধরঃ


ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় সৃষ্ট অত্যন্ত মজার চরিত্র ডোমরুধর। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর চারবছর পর তাঁর লেখা শেষ বই "ডোমরু চরিত" প্রকাশিত হয়।

ডমরু বসবাস করেন দক্ষিণ কলকাতার একটি গ্রামে। তাঁর জীবনের প্রথমার্ধ কাটে নিতান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে। কিন্তু পরবর্তী কালে তিনি বিচিত্র কৌশলে বেশ ধনী হয়ে ওঠেন। তাঁর সেই বিশেষ কৌশলগুলির মধ্যে একটি হলো 'কিপটেমি' - তিনি একটি পয়সাও বাজে খরচ করেন না। বিত্তবান হবার সাথে সাথে তাঁর নামেরও বদল ঘটে 'ডমরু' থেকে 'ডমরুধর' হয়ে যায়। ডমরু বাংলা সাহিত্যের অদ্ভুত এক চরিত্র। চুরি,জোচ্চুরি, স্বদেশী কোম্পানীর নামে অর্থ আত্মসাৎ এমন কোনো হীন কুকর্ম নাই, যা সে করে নি।ডোমরুধর বাবু অতঃপর পাকা ইমারতে বাস করেন। তিন বছর ধরেই তাঁর বাড়িতে দুর্গোৎসব হয়। কিন্তু কেন এই দুর্গাপুজো তাঁর বাড়িতে, সেই নিয়েই শুরু হয় তাঁর গপ্পো ! প্রতি বছর দুর্গা পঞ্চমীর সন্ধ্যাবেলায় বাড়ির দালানে বসে ডমরুধর তাঁর ইয়ারদোস্তদের সাথে করে চলেন অসম্ভব, অমূলক রসেভরা, অদ্ভুত জগতের গল্পগাছা। তাঁর দুই শ্রোতা বন্ধু হলেন লম্বোদর ও শংকর ঘোষ। ডমরুধরের গল্পগুলো এতটাই আজগুবি যে শ্রোতাদের মনের মধ্যে বিশ্বাসের ছিটেফোঁটা তৈরি করাও সম্ভব না। ডোমরুধর অবশ্য সেসব পাত্তা দেন না। তিনি নির্দ্বিধায় গল্পের গরুকে গাছে তুলে দেন। ডমরুধরের বিশ্বাস তিনি মনুষ্য নন। স্বয়ং পার্বতীপুত্র কার্তিক, দাদা গনেশের শাপ পেয়ে পৃথিবীতে পতিত হয়েছেন।ডমরুধর দাবী করেন 'মেঘনাদবধ কাব্য' নাকি তাঁর রচনা, মাইকেল সাহেব তার কাছ থেকে লেখাটি নিয়ে বাজারে নিজের নামে প্রকাশ করেন। শুধু তাই ই নয় বঙ্কিমের দুর্গেশনন্দিনীও তাঁর ই লেখা।তাঁর গল্পে কখনো তিনি যমালয়ে ভ্রমন করেছেন কখনো বা কার্তিক বহনে চড়ে ত্রিভুবন দর্শন করেছেন। এছাড়াও ভন্ড সাধু, ভালোমানুষ ভূত, বোগদাদী জ্বিন, সুন্দরবনের বাঘ কী নেই তাঁর গল্পে। কল্পিত এবং বিদ্রুপাত্মক কাহিনী, যা পড়ে হাসি আটকে রাখা যায়না।

কেদার চাটুজ্যেঃ


বাংলা সাহিত্যের হাস্যরসের অদ্বিতীয় স্রষ্টা পরশুরাম নিজের অল্প সংখ্যক ছোট গল্পে এক গল্পবলিয়ে চরিত্রের আবির্ভাব করেছিলেন। কেদার চাটুজ্যে। বঙ্গীয় পাঠককূলে তুলনামূলকভাবে কম জনপ্রিয় কেদার চাটুজ্যে বংশলোচনবাবুর বৈঠকখানার সান্ধ্য আড্ডায় হুঁকোতে সুখ টান দিয়ে নিজের অবিশ্বাসযোগ্য গল্পের ভাণ্ডার থেকে মজার মজার গল্প বলে আড্ডার সবার মনোরঞ্জন করতেন। যদিও গল্পগুলি সমস্তই নাকি তাঁর নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ সত্য ঘটনা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি— “গল্প আমি বলি না। যা বলি, সমস্ত নিছক সত্য কথা।” অধিকাংশ সময়েই তা সম্ভাব্যতার সীমা লঙ্ঘন করত। কিন্তু তাও তাঁর ব্যবহৃত উদ্ভট সংলাপ কখনওই বেমানান মনে হত না। সেগুলি চরিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যেত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাই বৈঠকি আড্ডার আবহে পাঠকও নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়তেন। দক্ষিণরায় গল্পে ‘বড় অলৌকিক, শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়’ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলেছেন –

ব্রাহ্মণবেশি বাবা দক্ষিণরায় নিজরূপ ধরে…

“তাঁর ল্যাজটি চট্‌ ক’রে বকুবাবুর সর্বাঙ্গে বুলিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতে বকুলাল ব্যাঘ্ররূপ ধারণ করলেন। বাবা বললেন— যাও বৎস, এখন চ’রে খাও গে।… পরদিন সকালে ক-জন চাষা দেখতে পেলে একটি বৃদ্ধ বাঘ পগারের ভেতর ধুঁকছে। চ্যাংদোলা ক’রে নিয়ে গেল ডেপুটিবাবুর বাড়ি। তিনি বললেন— এমন বাঘ তো দেখিনি, গাধার মতো রং। আহা, শেয়ালে কামড়েছে, একটু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিই। একটু চাঙ্গা হোক, তারপর আলিপুরে নিয়ে যেও, বকশিশ মিলবে।” এমন এক অলৌকিক লৌকিকদেবতার সত্যঘটনা বলার পর চাটুজ্যেবাবু নৈর্ব্যক্তিকভাবে বলেন— “বকুবাবু এখন আলিপুরেই আছেন। আর দেখা সাক্ষাৎ করিনে,— ভদ্রলোককে মিথ্যে লজ্জা দেওয়া।” এইভাবেই তিনি অলৌকিক, ভৌতিক গল্পই শুধু বলেননি, বলেছেন প্রেমের গল্পও। কিন্তু সমস্ত গল্পই পাঠককে অনাবিল হাসির খোরাক জুগিয়েছে।


নীললোহিতঃ

তুলনামূলকভাবে প্রচারের আলোর বাইরে আছেন প্রমথ চৌধুরী সৃষ্ট ‘নীললোহিত’। নীললোহিতের যেমন চেহারা তেমনি তাঁর চরিত্র, তিনি অভিজাত, অতি পরিশীলিত, বিদগ্ধ, রুচিসম্পন্ন, তা ছাড়া তিনি সুকুমার নারীশ্রী-মণ্ডিত লাবণ্যময় চেহারার অধিকারী ছিলেন, সেই কারণে প্রয়োজনে নিজেকে গোপন করার জন্য প্রমীলা বেশ ধারণ করে ফেলেন যখন-তখন। আর, প্রেমে পড়া ছিল তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি। নারীদের প্রতি তাঁর এক সহজাত আসক্তিবোধ ছিল। সহজ অবস্থায় তিনি কিন্তু আর পাঁচজনের মতোই। কিন্তু, বিপদে পড়লেই হয়ে উঠতেন একেবারে স্যুপারম্যান। নীললোহিত নিজে যেমন অভিজাত ছিলেন, তেমনি তিনি যাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তাঁরা সবাই তাঁর ভাষায় ‘Aristocrat’ হওয়ায় সংখ্যায় তাঁরা মুষ্টিমেয় ও নির্দিষ্ট ছিলেন। বনেদী ও সাবেকী কলকাতার মানুষ নীললোহিত বর্ণিত গল্পগুলি বিশ্বাস করা যতটা কষ্টের, বিশ্বাস না করে এর থেকে দুরে থাকা অনেক বেশি কষ্টের ছিল। তাঁর নিরীহ কথার অন্তরালে যে গুপ্তবান লুকিয়ে থাকত তা অনুধাবন করা একমাত্র পারদর্শী, সুশিক্ষিত ও অভিজাতদের দ্বারাই সম্ভব ছিল।

শ্রীশচন্দ্র ন্যায়বানঃ




ইদানিং কালের সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় গল্পবলিয়ে চরিত্র সম্ভবত শ্রীশচন্দ্র ন্যায়বান। লেখক তমোঘ্ন নস্করের সৃষ্টি এই গল্পবলিয়ে চরিত্র পেশায় চিকিৎসক, নেশায় শিকারী। পেশার সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন ব্রিটিশ ভারতবর্ষের বহুস্থানে। নাতি-নাতনিরা আড়লে-আবডালে বলে তাদের গল্পদাদুর গোঁফ গল্পের ভারে ঝুলে গেছে। যাইহোক তাঁর শৈশবও কম রোমাঞ্চকর নয়। নানাবিধ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় ভরপুর তাঁর গল্পের ঝুলিটি উপুড় করেন কখনও ছুটিতে বাড়ি ফিরে নাতি-নাতনীদের গল্পের আড্ডায়, কখনও পাড়ার চণ্ডীমণ্ডপে বয়স্যদের কাছে। তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু একটু পৃথক। গ্রাম বাংলার লৌকিক দেব – দেবী – অপদেবতাদের বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অলৌকিক ঘটনা ও সংস্কার নিয়ে গল্প রচনা করে ছোট থেকে বড় সকলকে মুগ্ধ করেন শ্রীশচন্দ্র ন্যায়বান। চিকিৎসক হলেও গুণিন, তান্ত্রিক, মাদুলি কবজ কোনও কিছুতেই তাঁর কোনও আপত্তি নেই। সব কিছুর মধ্যেই তিনি ইতিবাচক যুক্তিগ্রাহ্যতা দেখতে পান। তাঁর বলা সমস্ত গল্পগুলি অবশ্য অন্যান্য গল্পবলিয়েদের মত শিশুতোষ নয়। কিছু গল্প প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই রচিত। ক্ষেত্রসমীক্ষা ভিত্তিক গবেষণালব্ধ বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন ব্রত-প্রথাকে তিনি সুন্দর গল্পের মোড়কে মুড়ে পেশ করে পাঠককে এক অজানা জগতের সন্ধান দেন। একজন চিকিৎসকের মুখ থেকে প্রাচীন দেব – দেবীদের অবৈজ্ঞানিক তন্ত্র মন্ত্র নির্ভর কাহিনী শুনে মনে দ্বন্ধ আসা স্বাভাবিক। তাই তিনি নিজেই বলেছেন - "আমাদের পুঁথিপড়া বিদ্যা দিয়ে এই বিশ্বাসগুলোকে ঠিক চেনাজানা খোপে ধরানো যায় না রে।"

এই সমস্ত গল্পবলিয়ে চরিত্র ছাড়াও বাংলা সাহিত্যের আনাচে কানাচে আরও বহু গল্প বলিয়েরা আছেন। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন গাল্পিক তাঁদের গল্পের পসরা সাজিয়ে পাঠকদের মন মাতাতে আসবেন। ভিন্ন চরিত্র,মানসিকতা ও ভিন্ন পারিপার্শ্বিক আবহে রচিত এই চরিত্রদের দ্বারা কথিত গল্পসমূহ পাঠকরা অধিকাংশ সময়ে হজম করতে অসুবিধা বোধ করতেই পারেন। কিন্তু তখন “ কুম্ভীর বিভ্রাট' গল্পের লম্বোদরের মত যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন, “এত আজগুবি গল্প তুমি কোথায় পাও বল দেখি?” অনায়াসেই গাল্পিকরূপী লেখকগণ ডমরুধরের মত মুখের ওপর বলে দিতে পারেন, “এতক্ষণ হাঁ করিয়া এক মনে এক ধ্যানে গল্পটি শুনিতেছিলে, যেই হইয়া গেল, তাই এখন বলিতেছ যে, আজগুবি গল্প। কলির ধর্ম বটে।“





 

 

কলমে - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন