"ডাক্তারকাকু, ডাক্তারকাকু, দেখো না, আমার মা না কেমন করছে। ওই গাড়িটা..."
চেম্বারে ঢোকার পথে প্রায়ই দেখতে পেতাম মা -
মেয়েকে। দুজনে মিলে ভিক্ষা করত রাস্তার মোড়ে। কোনোদিন দুপয়সা ফেলে দিতাম ভাঙা
থালাটার উপর, কোনোদিন কাজের ব্যস্ততায় তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়তাম নিজের জায়গায়। বাবা মা
বেচেঁ নেই। একটু বেশি বয়সে বিয়ে করলেও সন্তান সুখ কপালে জোটেনি। তাই দিনের
বেশিরভাগ সময়টায় এই হসপিটাল আর চেম্বার নিয়েই কাটিয়ে দিই। ভিখারি মেয়েটাকে
দেখে হিংসা হয় খুব। স্বামী কোথায় গেছে কেউ জানে না। অর্ধেক দিন পেটে হয়তো ভাতও
জোট না। অথচ এই বাইশ তেইশ বছর বয়সে দিব্যি একটা চার বছরের ফুটফুটে মেয়ের জন্ম
দিয়ে দিয়েছে। আর আমার কপাল দেখো! বাড়ি, গাড়ি টাকা পয়সা সব থেকেও একটা বাচ্চার মুখ দেখতে
পেলাম না। যাক গে। হনহন করে ঢুকে পড়ি নিজের গন্তব্যে। আর তার কিছুক্ষণ পরেই ছোট্ট
মেয়েটির ডাক। দৌড়ে গেলাম পথের উপর। নাহ, ততক্ষণে সব শেষ। একটা চারচাকা গাড়ির ধাক্কায়
মেয়েটি অনাথ হয়ে পড়ে। সত্যি, মানুষের জীবনের বোধহয় কোন দাম নেই। একটি জীবন
মুহূর্তে কিভাবে জানি মৃত হয়ে যায়। এবার বাচ্চাটার কি হবে! কে দেখবে ওকে। নাকি
পথে থাকতে থাকতে একদিন ওরও ওর মায়ের মতই অবস্থা হবে! না না, আর ভাবতে পারছি না। দুহাত
বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলাম শিশু কন্যাটিকে। আজ মহা ষষ্ঠীর দিনে এক দেবীর বিসর্জন হল
ঠিকই, কিন্তু
অপর এক দেবীর বোধন হল আজ। আয় মা লক্ষ্মী, তুই আমার ঘরে আলো করে থাক। আমার শুন্য বুকে তুইই
শিউলি হয়ে ফুটে ওঠ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন