আয়না - রাহুল বর্মন


 

অফিস ফিরতি দুটো মানুষ পাশাপাশি হেঁটে আসছে। কেউ কাউকে চেনে না। দুজনেই ক্লান্ত, অবসন্ন। বেশ কিছুটা পথ দুজনে একসাথে পাশাপাশি আসছিল। তারপর কিছু মনে পড়তেই হঠাৎ একজনের হাঁটার গতি বেড়ে গেল।

ওই মানুষটার বাড়িতে তার দু'বছরের মেয়ে আর স্ত্রী অপেক্ষা করে আছে। মানুষটা তখন ভাবছে যে সে কতক্ষণে বাড়িতে পৌঁছাবে, আর মেয়ের মুখটা দেখবে। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে একটু জিরিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে স্ত্রীয়ের সাথে গল্প করতে করতে একসাথে রান্না করবে। রান্না করার ফাঁকেই মাঝে মাঝে দুজনে মিলে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করবে। ভাবনাগুলো তার ক্লান্তিকে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দূরে সরিয়ে দিল, তাকে চনমনে করে তুলল। সে দ্রুত বাড়ির পথে হাঁটতে লাগল।

অপর মানুষটা মাথা নিচু করে ধীর গতিতে হাঁটছিল। পাশের জন একটু এগিয়ে যেতে মুখ তুলে শূন্য দৃষ্টিতে একবার তার দিকে দেখল। তারপর আবার মুখ নামিয়ে নিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

তার বাড়ি ফেরার কোন তাড়া নেই। সেখানে তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে বসে নেই। তারও কোন প্রিয়জনকে দেখার আকুলতা নেই। শুধু একটা ঘর আছে। তার মতোই একা, নির্লিপ্ত, অন্ধকারে পড়ে থাকে। আলো জ্বালালে উদাসীনতা টের পাওয়া যায়। প্রিয়জনের প্রয়োজন ভাবটা বহুদিন হল সে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এ জীবনে সে মানুষ ধরে রাখতে ব্যর্থ। ধরে রাখার চেষ্টা করলেও তারা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন সে ভয় পায়। বন্ধনকে। মায়াকে। একাকিত্ব উদযাপনযোগ্য না হলেও সেটাকেই অভ্যাস করে বেঁচে থাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে চলেছে সে।

ওই মানুষ দুটো একটা আয়নার এপিঠ-ওপিঠ। একজন আয়নার মসৃণ দিক, অপরজন খসখসে দিক। তারা পাশাপাশি থাকে কিন্তু কোনদিন একে অপরকে ছুঁতে পারে না॥





 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন