আগুন - অরূপ কুমার পাল

 


 নগন্য একটা সংসার! সদস্য তার দুজননিখিল আর নিখিলের মা।  

 

তাচ্ছিল্য করার মতোও কিছু নেই। অন্যদের মতন তারাও মাথার ওপর ছাদ,পরনে কাপড় আর পেটে ভাতের চিন্তাকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। পার্থক্য শুধু সীমা আর পরিসীমারবাড়ি বলতে দরমার বেড়া ঘেরা কুটোর মতন আস্তানা। মাথার ওপর চিড়ধরা টালির অবিন্যস্ত বিন্যাস। সেখান থেকে সূর্যবিন্দু ঢুকে পড়ে নিখিলদের ঘরের মধ্যে। ঝুপসি হয়ে জমে থাকা জিনিসপত্রের মধ্যে কোনো এক অমূল্য সম্পদের খোঁজে উঁকিঝুঁকি মারে সারাটা দিন


মাঝেমাঝে আকাশের চোঁয়ানো জল ফাঁক পেয়ে ঢুকে পড়ে খানাতল্লাশি শুরু করে দেয়। নিখিলের অতিকষ্টে পড়াশুনার ফসল মার্কশীট আর সার্টিফিকেটগুলো মায়ের থালাবাসন আর পুরনো হওয়া ভালো কাপড়গুলোর মধ্যে গুটিসুটি মেরে নিখিলের সঙ্গে আশায় দিন গোনে। দিনে দিনে জমা হয় নিখিলের স্বপ্নমায়ের আশা। একটা কাজ। সামান্য। তুচ্ছ। একটা  রান্নাঘর। একটা গ্যাসের উনুন। নীল স্নিগ্ধ আগুন। ছোট্ট একটা জীবন-কিছুটা সুখের বাকিটা স্বপ্নের।   


গোনে নিখিলের মাও। একটাদুটো করে স্তূপীকৃত হয়-শুকনো পাতামরা ডালখবরের কাগজআরও অনেক। মা শুকনো পাতায় আগুন জেলে রান্না করে। আদিম মানুষের প্রথম দেখা সেই আগুন। ভাত ফোটে টগবগ টগবগ। লকলক করে আগুন। ছাদের টালি ফুঁড়ে আকাশ ছুঁতে চায়। নিখিলের খিদের সঙ্গে পাল্লা দেয় সে


রব ওঠে চারদিকে


- বাঁচাও! বাঁচাও!


- গেল গেল, সব শেষ হয়ে গেল!


বালতি বালতি জল গিলে নেয় সব স্বপ্ন। দমকলের গাড়ি হুড়মুড়িয়ে সবজল ঢেলে নিঃশেষ হয়ে যায়। ঘরের কালো কঙ্কালটা হেসে ওঠে হা হা করে। ঝামা হয়ে যাওয়া হলুদ সার্টিফিকেটগুলো  হাহাকার করে ওঠে। নিখিলের চোখের জলকে নিমেষে শুষে নেয় পোড়া ছাইগুলো।  




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন