জনস্বার্থে জানানো হচ্ছে, মনকে শক্ত করুন, ক্ষোভের উদ্রেক ঘটলে তাকে প্রশমিত করার চেষ্টা করুন। আসছে "জওয়ান"এর চলচ্চিত্র পর্যালোচনা, যা কিনা অধিকাংশের জন্যই সেভাবে সুখকর হবে না। তবে এই ঘোষণা সাধারণ শাহরুখ-ভক্তদের জন্য নয়, কেবলমাত্র শাহরুখ খানের "অন্ধ" ভক্তদের জন্য। কেন? ক্রমশ প্রকাশ্য।
সত্যি বলতে
কী, বলিউডের বাদশার একের পর এক হিট ছবির সংখ্যা নেহাত কম
নয়। তাঁর অভিনীত অনেক চলচ্চিত্রের কাহিনী মনে যথেষ্ট দাগ কাটে। কিন্তু
"অনেক";
"সব"
নয়। তার জন্য দায়ী হয়তো আমরাই, দর্শকরাই।
উদাহরণসহ বলা যাক। "ম্যায় হুঁ না" সিনেমাটির কথা আমাদের সকলেরই মনে
আছে। ঝিনচ্যাক নাচগান, মন ভাসানো আবেগ, চোখ উপচানো জল আর রামায়ণের মিশেল – এই ফর্মুলায় ফেলা "ম্যায় হুঁ
না" ব্লকবাস্টার। কিন্তু "স্বদেশ"? নেহাতই সাদামাটা, সাধারণ
মানুষের জীবনের সুখ দুঃখকে কেন্দ্র করে তৈরি একটি চলচ্চিত্র। বক্স অফিসে
সুপারফ্লপ। দু'টোই কিন্তু বলিউডের কিং খান অভিনীত সিনেমা। কিন্তু
পার্থক্য অনেক। কারণ জগাখিচুড়ি মুভি আমাদের কাছে বেশি পছন্দের।
আর ঠিক সেই
কারণেই হয়তো "জওয়ান"ও অতি উত্তম একখানি জগাখিচুড়ি চলচ্চিত্র হিসাবে
গত ৭ই সেপ্টেম্বর প্রকাশ পেয়েছিল। বাকিটা ইতিহাস। জনগণ সাদরে বরণ করে নিয়েছে
তাকে। এতদিনে শাহরুখও বুঝে গেছেন সুপারহিট ছবি বানানোর রেসিপি। একটা সিনেমা তৈরির
পেছনে কতো লোকের পরিশ্রম মিশে থাকে, সেখান থেকে
উপার্জন না হলে চলবে! এইতো তার আগে প্রকাশিত "পাঠান"ও ওই পর্যায়েরই
আরেকখানা উদ্ভট কাহিনীসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র, যার সাথে
বাস্তবের কোনদিক থেকে কোনো সম্পর্ক নেই। এলিয়েন মুভি হলেও নাহয় মানা যায়, কারণ তারা বহির্জগতের জীব। কিন্তু বাস্তবের মানুষের সঙ্গে অবাস্তব কাহিনী!
ভাবলাম
হয়তো "পাঠান"এ ওরকম গুলগপ্পো শোনানোর পর "জওয়ান" কানে মধু
ঢালবে। ওরে বাপ্পো! এবার তো আমার বাদশার সিনেমা দেখতে রীতিমত ভয় করছে।
"জওয়ান" শুরু হলো। প্রথম দিকটা বেশ ভাল্লাগছে, মনে আশা জাগছে। দুর্দান্ত শাহরুখ, মনোমুগ্ধকর
নয়নতারা! অর্ধকাহিনীর পরই ধপাস! সত্যি বলছি, গায়ে ব্যথা না লাগলেও মনে বড়ো চোট পেয়েছি। এটা আবার কেমন গল্প! পুঁচকে
শাহরুখের নিজের মা বাবাকে মনে নেই, এদিকে বড়ো
হওয়ার পর তাদের আদর্শ বজায় রাখতে রবিন হুডের দায়িত্ব পালন করছে। কাহিনীর ভিলেন
বিনা বাক্যব্যয়ে বাধ্য ছেলের মতো সিনেমার হিরোর কথায় ফাঁসিকাঠে ঝুলে পড়লো।
নয়নতারাকে প্রথমে দেখে ভেবেছিলাম, এইতো এবার
অ্যাকশন দিয়ে সিনেমা ভরিয়ে দেবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়! নিজের মহিমা বজায়
রাখতে বলিউডের বাদশা নয়নতারাকে শুরুতে সামান্য একটু সুযোগ দিয়ে খানিকক্ষণ পর
থেকে নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে বসলেন, আর ঠিক তখনই
বাকি সময় ধরে সিনেমাটি প্রবলভাবে একপেশে বলে মনে হতে লাগলো। সবচেয়ে হাস্যকর
লেগেছে চলচ্চিত্রের শেষের দিকের মারপিটের দৃশ্যগুলি। ভিলেনের বেচারা সাগরেদরা!
একদম যেন পিংপং বল। একজনের ঘুষি খেয়ে স্প্রিংয়ের মতো ছিটকে গিয়ে আরেকজনের ঘুষি
খেয়ে আবার স্প্রিংয়ের মতো ছিটকে উড়ে গিয়ে পড়লো। যেন মানুষ নয়, ম্যানিকুইন।
না, আমি শাহরুখ খানের "অন্ধ" নিন্দুক নই। তাঁর "কাল হো না
হো" দেখে একইসঙ্গে হেসেছি এবং কেঁদেছি। আমি বিশ্বাস করি বিনয় মানুষের সম্মান
বৃদ্ধি করে, যার উদাহরণ শাহরুখ নিজেই। কিন্তু এই চলচ্চিত্রে তাঁর
একখানি উক্তি "বেটে কো হাথ লাগানে সে প্যাহলে বাপ সে বাত কর", এটি যদি তিনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যায় জনসাধারণের মনে তাঁর
"ইমেজ" "গ্লোরিফাই" করার জন্য ব্যবহার করে থাকেন তবে শাহরুখের
প্রতি আমার সে বিশ্বাস টলে যায় বৈকি! হ্যাঁ, শাহরুখ-পুত্র আরিয়ানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গেই বলছি। আর সঙ্গে
রয়েছে দীপিকা পাড়ুকোনের সামান্য ঝলক, ঠিক
যেমনভাবে শাহরুখের আগের সিনেমাগুলিতে রানী মুখার্জী বা কাজলকে দেখা যেত "লাকি
চার্ম" হিসাবে। তাঁদের ক্ষণিকের উপস্থিতি নাকি সিনেমাকে সুপারহিট বানাবেই
বানাবে, দীপিকা পাড়ুকোনের ক্ষেত্রেও সেরকমটা ভাবা হয়েছে কিনা
মনে প্রশ্ন থেকে গেল।
সম্প্রতি
শাহরুখ অভিনীত আরেকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। আমি এখনও "জওয়ান"এর
ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। কেউ "ডানকি" দেখে এলে অনুগ্রহ করে
চলচ্চিত্রটির যথাযথ পর্যালোচনা করে জানাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন