বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠে পুলি - বাণী মিত্র

চিত্র সৌজন্যঃ https://gastronomad.net/

বঙ্গজীবনে বারোমাসে তেরো পার্বণের উদযাপনে ব্যঞ্জনের সমাহার সর্বজনবিদিত। মকরসংক্রান্তিতে ঐতিহ্য মেনে পিঠে পুলি পায়েস এই উদযাপনে এক অন্য মাত্রা যোগ করে। পিঠে কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল কিংবা কে আবিষ্কার করেছিলেন অথবা সথিকভাবে সূচনাকাল সম্পর্কে ইতিহাসে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও, বহু হিন্দু পৌরাণিক গল্পে পিষ্টক অর্থাৎ পিঠের উল্লেখ পাওয়া যায়।  প্রাচীনকালে “পুরোডাশ” নামে এক প্রকারের মিষ্টি জাতীয় খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি মূলত যজ্ঞের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হত। মহাভারতেও এই মিষ্টির উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, যজ্ঞের আচারে যব অথবা ব্রীহি ধানের  চালের গুঁড়োকে মদন্তী নামক তামার পাত্রে ভিজিয়ে রাখা হত। এরপর এই সিক্ত গুঁড়ো থেকে পিণ্ড তৈরি করা হত। এই পিণ্ড যজ্ঞের আহবণীয় অগ্নিতে অর্ধপক্ব করে কাছিমের আকার দেওয়া হত। সেঁকার সময় মাটির ছোট খোলা বা কপাল ব্যবহৃত হত। এই পিণ্ডকে ১১টি কপাল (খণ্ড)-এ বিভক্ত করা হত। পরে এই পিণ্ডগুলোকে ঘিয়ে ভেজে পুরোডাশ তৈরি করে ইষ্ট যজ্ঞে অগ্নিতে আহুতি দেওয়া হতপরবর্তীকালে ঐতিহাসিকরা এই পুরোডাশ কেই পিঠে রূপে অভিহিত করেন। কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতা -দুর্গাদাস লাহিড়ী, দ্বিতীয় কাণ্ড। চতুর্থ প্রপাঠক)

তাই যুগ যুগ ধরে চলে আসা সেই আচার অনুষ্ঠান আজও অব্যাহত আমাদের জীবনে। প্রতি বছর মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতে অল্প বিস্তর পিঠে তৈরি হয়। বর্তমানের ব্যস্তময় জীবনে আগের মত সমস্ত বিধি নিষেধ মেনে পৌষপার্বণ উৎসব পালন করা সম্ভব না হলেও পিঠে অবশ্যই বানানো হয়। আসন্ন পৌষ পার্বণের জন্য রইল কিছু হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন বাংলার পিঠে পায়েসের হদিশ।

 

দোলে পিঠেঃ

 

 

উপকরণঃ

দুধ -  ১ লিটার

চালের গুঁড়ো – ২৫০ গ্রাম

পাটালি গুড় – ২৫০ গ্রাম

ছোট এলাচ- ২/৩ টে

উষ্ণ জল – পরিমাণ মত

 

পদ্ধতিঃ

১. চালের গুঁড়োর মধ্যে অল্প জল মিশিয়ে মেখে ছোট ছোট গোলাকৃতি বল বানিয়ে নিতে হবে।

২. দুধে এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে অর্ধেক করে নিয়ে এর মধ্যে গুড় দিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে।

৩. গুড় পুরো গলে গিয়ে মিশে গেলে এর মধ্যে চালের বল দিয়ে অল্প ফুটিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

৪. ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করতে হবে।

 

চন্দ্রকাঠ পিঠেঃ

 

 

উপকরণঃ

দুধ – ১ লিটার

গোবিন্দ ভোগ চাল – ৫০০ গ্রাম

নারকোল কোরা – ২৫০ গ্রাম

পাটালি / আখের গুড় – ২০০ গ্রাম

ছোট এলাচ – ২/৩ টে

বাদাম কুচি – ৫০ গ্রাম

কিশমিশ – ৫০ গ্রাম

 

প্রণালীঃ

১. চাল ধুয়ে পরিস্কার করে জল ঝড়িয়ে কাপড়ে মেলে আধা শুকিয়ে নিতে হবে।

২. আধা শুকনো চাল বেটে নিতে হবে। এমন ভাবে বাটতে হবে যাতে মিহি গুঁড়ো না হয়। বরং আধা চাল থাকা জরুরী।

৩. বড় পাত্রে দুধ ফুটিয়ে ৭৫০ মিলি করে ফেলতে হবে।

৪. এর মধ্যে এলাচ ও নারকোল কোরা মিশিয়ে ফোটাতে হবে।

৫. ৫ মিনিট ফোটানোর পর এর মধ্যে আধা ভাঙ্গা চাল মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে চাল নরম হওয়া অবধি ফোটাতে হবে।

৬. চাল নরম হয়ে গেলে কিশমিশ, বাদাম কুচো ও গুড় মিশিয়ে দুধ শুকিয়ে মাখা মাখা লেই তৈরি হওয়া অবধি জাল দিতে হবে।

৭. একটা কানা উঁচু থালায় ঘী মাখিয়ে তার মধ্যে পুরো লেই ঢেলে সমানভাবে ছড়িয়ে ঠাণ্ডা হতে দিতে হবে। দরকারে ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।

৮. ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে কেটে সমান টুকরো বানিয়ে নিতে হবে।

৯. প্রত্যেক টুকরোর উপর একটি করে গোটা বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন