পরিচালক – বিকাশ বহেল
শ্রেষ্ঠাংশে – আর. মাধবন,
অজয় দেবগণ, জ্যোতিকা, জাঙ্কি বোড়িওয়ালা, অঙ্গদ রাজ
RHTDM
এর সারল্যে মাখা ম্যাডির সেই চোখজুড়ানো হাসি
থেকে 'শয়তান'-এ কুচুটে
মার্কা হাসি! হলো না, হলো না! মাধবন শত চেষ্টা করলেও রবি ঠাকুরের
গানের কলি মনের মধ্যে ভেসে ওঠে – আমার মন মানে না! মাধবনকে শয়তান হিসাবে মেনে
নিতে কিছুতেই মন মানে না! কিন্তু যদি সত্যিই বাস্তবে এমনটা হতো! যেকোনো বাবা
মায়ের যে বুকের ভেতরটা ভয়ে কেঁপে উঠবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্যাপারটা সংক্ষেপে বলা যাক। কবীর একজন ফ্যামিলি ম্যান। স্ত্রী জ্যোতি, মেয়ে জাহ্নবী আর ছেলে ধ্রুবকে নিয়ে তার সুখের সংসার। দৈনন্দিন জীবনে কাজের ব্যস্ততা থেকে দিনকয়েকের জন্য মুক্তির স্বাদ পেতে তারা তাদের ফার্ম হাউসে ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে ছোট সুখী এই পরিবারটির মোলাকাত হয়ে যায় বনরাজের সঙ্গে। দশম শ্রেণীর পড়ুয়া কন্যার পিতা বনরাজ আপাতদৃষ্টিতে নেহাতই সাধারণ চেহারার একজন মানুষ।
কিন্তু হঠাৎ করে কী যে হয়,
নতুন জেনারেশনের মেয়ে জাহ্নবী,
যারা নিজেদের পছন্দ অপছন্দ ইচ্ছা অনিচ্ছা নিয়ে
সদাসর্বদা স্পষ্টবক্তা, অন্যের ইশারায় চলা যাদের ধাতে সয় না,
সেই জাহ্নবী আক্ষরিকভাবে বনরাজের হাতের পুতুলে
পরিণত হয়। বনরাজ যা বলে, সে তাই করে। তার জন্য নিজের বাবা,
মা বা ভাইকে আঘাত করতেও সে পিছপা হয় না। সে
যেটা করছে ঠিক নয়, এই কথাটা জাহ্নবী মনে মনে জেনেও বনরাজের
নির্দেশ চাইলেও অমান্য করতে সে নিতান্তই নিরুপায়। কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো,
বনরাজের দাবীটা কী! এতো কিছু সে করছে কীভাবে!
তা সে দাবী যা-ই হয়ে থাকুক না কেন,
চলচ্চিত্রটি মুভি থিয়েটারে গিয়ে বড় পর্দায়
দেখে আসাই সমীচীন বলে মনে করি। হলফ করে বলতে পারি, "পরে OTT প্ল্যাটফর্মে এলে ঘরে বসে আরামে আরামে দেখে
নেওয়া যাবে" ভেবে অপেক্ষায় থাকলে ছোট পর্দায় মাধবনকে দেখে মন ভরবে না।
চলচ্চিত্রের টান টান উত্তেজনার মুহূর্তে মাধবনের রহস্যময় কিন্তু ক্রুর হাসি মনের
মধ্যে বিভিন্ন অজানা আশঙ্কার সম্ভাবনাকে তুলে ধরবে। চলচ্চিত্রটির ব্যাপারে অনেকেই
বলছেন যে এটি গুজরাটি চলচ্চিত্র Vash-কে কপি করেছে। আদপে মুভিটি কিন্তু Vash-এর অফিসিয়াল হিন্দি রিমেক।
অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলতে গেলে,
মাধবন ছাড়াও যথেষ্ট নামিদামি এবং যোগ্য
অভিনেতা অভিনেত্রীদের উপস্থিতি রয়েছে "শয়তান"এ। অজয় দেবগন কবীরের
চরিত্রে একজন নিরীহ ছাপোষা বাবার স্নেহ, রাগ, অসহায়তার অভিব্যক্তিকে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে
ফুটিয়ে তুলেছেন। মায়ের চরিত্রে জ্যোতিকা যথাযথ। জানকীকে দেখে মনে হয় জাহ্নবীর
চরিত্রটা একমাত্র তার কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছিল। কিন্তু তাও সবকিছুকে পিছনে
ফেলে সম্পূর্ণ মুভিতে ছেয়ে রয়েছেন মাধবন। তাঁর দু'চোখের ধূর্ত দৃষ্টি,
তাচ্ছিল্য মেশানো বাঁকা হাসি,
ডায়লগ পরিবেশনা দর্শককে মুহুর্মুহু মুগ্ধ করে।
কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে খলনায়ক হিসাবে তাঁকে দেখা গেলেও গোটা চলচ্চিত্র জুড়ে
নায়কোচিত গুরুত্ব ও প্রাধান্য পেয়েছেন তিনি।
সিনেমাটিতে খুব বেশি চরিত্রের ঘনঘটা নেই।
ছিমছাম কাহিনীতে অপ্রয়োজনীয় অপ্রাসঙ্গিকতার অনুপস্থিতি দর্শকের কাছে একে আরো
আকর্ষণীয় করে তোলে। যদিও এই চলচ্চিত্র সর্বগুনসম্পন্ন এবং মনে কোনো প্রশ্নের
উদ্রেক ঘটায় না, এমনটা বলা ভুল হবে। বনরাজ নিজের অপকীর্তির
উদ্দেশ্য এক লাইনে জানান দিয়ে গেলেও তার অতীত, সে কীভাবে এই পথে এলো, হঠাৎ তার মনে এমন ভাবনার উদয় হওয়ার কারণ কী এগুলো কিছুই
দেখানো হয়নি। অতি সংক্ষেপে হলেও দেখানো গেলে ভালো হতো বলেই মনে করি। তবে বলবো
মোটের উপর সিনেমাটি বেশ বানানো হয়েছে, বিশেষ করে শেষ চমকটি। তাহলে আর দেরি কীসের! থিয়েটারে গিয়ে
অবশ্যই দেখে আসুন!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন