পূর্বের
পর্বে আমরা রজোনিবৃত্তি পরবর্তী কিছু রোগের উল্লেখ করে ছিলাম। আজ
রইল অন্যান্য রোগ সমুহের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ।
অস্টিওপোরোসিসঃ
অস্টিওপোরোসিস
অর্থাৎ হাড়ের ক্ষয় হওয়ার দরুণ হাড় ক্ষণভঙ্গুর হয়ে যাওয়া। এর
কারণে পিঠে ব্যথা, ন্যূনতম আঘাতে হাড়ে
ফাটল, উচ্চতা হ্রাস এবং গতিশীলতা লক্ষণগুলি দেখা দেয় ।এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ একজন মহিলার হাড়ের খনিজ ঘনত্বের স্ক্রীনিং করানোর প্রয়োজন বোধ করে। এক্ষেত্রে
একজন মহিলার বয়স, জাতি, পারিবারিক ইতিহাস, দেহাকৃতি, পূর্বের হাড়ের ক্ষয় – ক্ষতির ইতিহাস, রজোনিবৃত্তির সূচনাকাল প্রভৃতিকে বিবেচনা করে দেখা হয়। কম
ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি এর স্বল্পতা, ধূমপান, মদ্যপান ও অন্যান্য নেশায় আসক্ততাসহ উচ্ছৃঙ্খল জীবনধারাকে ক্ষতিয়ে দেখা
হয়। অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রজননকালে ডিম্বাণু নিঃসরণ না হওয়া,
হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম,
দীর্ঘস্থায়ী প্রস্রাব জনিত সমস্যা এবং সিস্টেমিক
কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার প্রভৃতিও বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হরমোন
থেরাপি ও অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে হাড়ের ক্ষয় জনিত সমস্যাকে
নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তাঁর জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।
বিষণ্ণতাঃ
যদিও বেশিরভাগ মহিলারাই রজোনিবৃত্তিকালে কোনও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন না, কিন্তু আনুমানিক ২০% মহিলা এই সময়কালের কোনো না কোনো সময়ে বিষণ্নতায় ভোগেন।এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মানসিক সমস্যা বা জিনগত তথা পারিবারিক মানসিক সমস্যার ইতিহাস কারণ হয়। বিভিন্ন প্রজনন হরমোনের হ্রাস – বৃদ্ধির ফলে মেনোপজের সূচনাকালে বিষণ্ণতা অর্থাৎ ডিপ্রেশন জনিত সমস্যায় ভুগলেও পরবর্তীকালে তারা সুস্থ হয়ে যান। এছাড়া সামাজিক ও শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন কারনেও বিষণ্ণতা তৈরি হয়।
স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যাঃ
পেরিমেনোপজাল এবং সদ্য পোস্টমেনোপজাল সময়কালে মহিলাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে। হরমোনের হ্রাস বৃদ্ধি জনিত পরিবর্তনের কারণে রজোনিবৃত্তির আগে ও পরে কিছু মহিলা স্মৃতি হ্রাস হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। অনেকের এর ফলে অনিদ্রা ও উদ্বেগ জনিত সমস্যাও হয়।
এই কারণে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অ্যালঝাইমারস রোগে বেশি আক্রান্ত হন। যদিও হরমোন থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে ইস্ট্রোজেন হরমোনের সঠিক মাত্রার প্রয়োগেও এই রোগ নির্মূল হয় না। এছাড়া রজোনিবৃত্তির ফলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়।
স্বাভাবিক যৌন জীবন ব্যহত হওয়াঃ
বহু মহিলারই রজোনিবৃত্তিকালে স্বাভাবিক যৌন জীবন ব্যাহত হয়। যদিও এর সঠিক কারণ জানা যায় না। বহু নারীকে যৌন মিলনে অনীহা, উত্তেজনা বোধ না হওয়া, যোনী শুষ্কতা, তলপেটে যন্ত্রণা, যৌন মিলনে অক্ষমতা প্রভৃতি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। পূর্বের উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা জনিত সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, মানসিক যন্ত্রণা প্রভৃতি কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে। তবে বিভিন্ন থেরাপির সাহায্যে এই সব সমস্যার সমাধান করা যায়।
অনিদ্রাঃ
বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ফলে অধিকাংশ নারীই অনিদ্রা জনিত রোগে ভুগে থাকেন। ধীরে ধীরে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
কিছু
গুরুত্বপূর্ণ মানসিক রোগঃ
রজোনিবৃত্তি অধিকাংশ মহিলার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগ সৃষ্টি করে। যেমন বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, প্যানিক ডিসঅর্ডার, ও সি ডি প্রভৃতি। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সমস্ত কিছুর জন্যই প্রয়োজন রজোনিবৃত্তির আগে ও পরে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন