বিভিন্ন পদ্ধতিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হয়। যে কোনও একটি পদ্ধতি
যখন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তখনই জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
হয়। তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে তার বিষয়ে বিশদে জেনে বুঝে নেওয়া একান্ত
দরকার।
যৌনভাবে
সক্রিয় হওয়া
সত্ত্বেও সন্তান না চাইলে জন্ম
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া উচিত। অনিরাপদ যৌন মিলন থেকে গর্ভাবস্থা ঘটতে পারে।
কোন
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সর্বোত্তম?
বর্তমান যুগে প্রত্যেকের
জন্মনিয়ন্ত্রণের সমস্ত পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে
বিস্তারিত জানা একান্তই দরকার। এর ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়
কোন পদ্ধতিটি নিজেদের জন্য উপযুক্ত ও সর্বোত্তম।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত:
১. নিজেদের জন্য সবথেকে
সহজ ও আরামদায়ক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
২. যে পদ্ধতিটি ব্যবহার
করা হবে সেটির সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া উচিত। যাতে তার থেকে কোনও সমস্যা
না তৈরি হয়।
৩. এর ফলে যৌন সংক্রমণ (STIs) থেকেও সুরক্ষা পাওয়া
যায়।
৪. ব্যবহারকারীর বয়স এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য যেন পদ্ধতিটির অনুকুল হয়।
৫. গর্ভাবস্থার
জন্য সঠিক পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে যেন উপযুক্ত হয়।
৬. পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি ( side effects ) যেন না থাকে।
৭. অন্যান্য
সুবিধা যেমন রজচক্র নিয়মিত করা এবং রজচক্রের দিনক্ষণের সঠিক ধারণা
রাখা।
কিভাবে
জন্ম নিয়ন্ত্রণ কাজ করে?
জন্মনিয়ন্ত্রণের
প্রতিটি পদ্ধতি
পৃথকভাবে কার্যকারী হয়। যেমন-
১. কিছু পদ্ধতি একটি শুক্রানুকে ডিম্বাণু অবধি পৌঁছানো থেকে প্রতিরোধ করে।
২. কোনও পদ্ধতি ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়াকে বিরত রাখে।
৩. কোনও পদ্ধতি শুক্রাণুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাতে এটির চলন ক্ষমতা লোপ পায়।
৪. কিছু পদ্ধতি সার্ভিকাল শ্লেষ্মাকে ঘন করে দেয়, ফলে
শুক্রাণু এর মধ্যে দিয়ে সাঁতার কাটতে পারে না।
৫. কোনো কোনো পদ্ধতি জরায়ুর আস্তরণকে পুরুত্ব প্রদান করে,
যাতে নিষেক সম্পন্ন না হয়।
জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকরী পদ্ধতিগুলি কি কি?
১. জন্মনিয়ন্ত্রণের
সবচেয়ে কার্যকরী রূপ হল যৌন মিলন না করা (বর্জন)। তবে এটি সম্ভবপর
না হওয়ায় অন্যান্য পদ্ধতি নির্বাচন করা দরকার।
২. জন্ম
নিয়ন্ত্রণ তখনই কাজ করে যখন তা সঠিকভাবে
এবং ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করা হয়।
৩. জন্মনিয়ন্ত্রণে
সাধারণত সর্বোত্তম পদ্ধতি হল কনডম ব্যবহার এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করা।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলি কি কি?
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নেওয়ার আগে,বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা একান্তই প্রয়োজন।
কোন পদ্ধতি কার জন্য উপযুক্ত, তা একজন বিশেষজ্ঞ সথিকভাবে জানিয়ে দিতে পারেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি
শুধুমাত্র কার্যকর হয় যদি তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা
হয়।
জন্ম
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:
১. বাধা
প্রদানকারী পদ্ধতি ( Barrier Methods):
এই পদ্ধতিতে শুক্রাণুকে জরায়ুতে প্রবেশ করতে
বাধা দেওয়া হয়। প্রতিবার যৌন মিলনের সময় এটি ব্যবহার করতে হয়। যেমন – কনডম।
২. হরমোনের
ওষুধ এবং যন্ত্রাদি ( hormonal medication and
devices): এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু তৈরি রোধ করতে বা জরায়ু এবং
সার্ভিক্সের অবস্থার পরিবর্তন করতে হরমোন ব্যবহার করা হয়।
এই পদ্ধতিতে হরমোন ওষুধ প্রতিদিন খেতে হয়। এছাড়া “কপার – টি” প্রভৃতি প্রকারের
যন্ত্র জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও নিষিক্তকরণ প্রতিহত
করা হয়।
৩. নির্বীজকরণ ( sterilization ):
স্থায়ীভাবে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করার
জন্য অস্ত্রোপচার করে নির্বীজকরণ
করা হয়। পুরুষ এবং মহিলা, উভয়েরই পৃথক
নির্বীজকরণ পদ্ধতি আছে। যথাক্রমে ভ্যাসেকটমি এবং টিউবেকটমি
পদ্ধতির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে গর্ভধারণ প্রতিহত করা হয়।
৪. জন্মনিয়ন্ত্রণ সচেতনতা (fertility awarness) : জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সচেতনতা তৈরি করে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করা
হয়। এই পদ্ধতিতে মাসের কিছু নির্দিষ্ট দিন সনাক্ত করে দেওয়া হয়। এই সেফ মেথড বা প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করাকে “প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা”- ও বলা হয়।
৫. আপতকালীন গর্ভনিরোধক ( emergency contraception):
অসুরক্ষিত যৌন মিলন
থেকে গর্ভ ধারণ প্রতিহত করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
৬. বিরত
থাকা (Abstinence):
গর্ভধারণ রোধ করার জন্য যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা।
যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের
আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া একান্ত বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য
ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে এই ব্যবস্থা গুলো নির্দিষ্ট করা হয়। যে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের
আগে ব্যবস্থাটি সম্পর্কে সঠিক ভাবে বিশদে জেনে নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে জন্ম
নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন