দুর্ঘটনার অন্তরালে সত্যঃ P.I. Meena - শ্রীমতী বিনোদিনী


পরিচালক - দেবালয় ভট্টাচার্য 

শ্রেষ্ঠাংশে - তানিয়া মানিকতালা, হর্ষ ছায়া, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, ডেনজিল স্মিথ, অক্ষয় কাপুর, বিপিন শর্মা, সমীর সোনি, সুজন মুখার্জি, বিনয় পাঠক


আর পাঁচটা দিনের মতোই সাধারণ একটা দিন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া, বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা। হঠাৎই চকিতের মধ্যে ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা যার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে না কেউই। মীনার সাথেও হয়েছিল সেদিন। চোখের সামনে এক বাইক আরোহীকে একনিমেষে শেষ করে দেয় একটি ট্রাক। নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। মীনা শেষ চেষ্টা করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যদি কোনোভাবে বাঁচানো যায়। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়েও সেই যুদ্ধে হেরে যায় ছেলেটি। নাম পার্থ।


একটা দুর্ঘটনা, একটা জীবন শেষ। শহরের পথেঘাটে এরকম কতই তো হয়! দু'পক্ষের যেকোনো একজনের অসাবধানতায় অহরহ ঘটে চলেছে এই কাণ্ড। তদন্ত শুরু করার পর একসময় case closed-ও হয়ে যায়। পার্থর ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না। কিন্তু মীনার মনে কেন কেজানে একটা খটকা রয়েই যায়। পার্থর মা বারবার বলতে থাকেন, এটা দুর্ঘটনা নয়। খুন করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে। কিন্তু সত্যিই কি তাই! মা-বাবারা তো সাধারণত সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে পারেন না। দুর্ঘটনাকে খুন বলা হয়তো তারই প্রতিফলন। পুলিশ এই আশঙ্কা হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়। তা সত্ত্বেও কোন এক অমোঘ আকর্ষণে পার্থর মৃত্যুর গুপ্ত তদন্ত করতে জড়িয়ে পড়ে মীনা। সে কি প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হওয়ার কারণে, নাকি অন্য কিছু! সেই উত্তর মীনার জানা নেই। মনকে প্রবোধ দেয় পার্থর মায়ের জন্য সে সত্য খুঁজে বার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কয়েকদিন পর পার্থর মা পুত্রশোকে কাহিল হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিলেও মীনা এই তদন্ত থেকে নিজেকে কিছুতেই সরিয়ে আনতে পারে না আর তারপর থেকেই সাক্ষ্য হয় একের পর এক মৃত্যুর, খুনের। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে শুধু কেউটে নয়, বেরোতে থাকে গোখরো, কালনাগিনীরা। সন্ধান মেলে বিশ্বকাঁপানো সাংঘাতিক এক গুপ্ত ভাইরাসের। এর শেষ কোথায়!

মোটের উপর সিরিজটি বেশ ভালোই। দেখা শুরু করার পর বাঙালি হিসাবে চমকের পর চমক। যীশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাঘা বাঘা সব অভিনেতাদের মন জয় করা অভিনয়। শুধু এঁরাই নন, রয়েছেন একের পর এক বাঙালি অভিনেতা অভিনেত্রী যাঁদের আমরা হামেশাই দেখে থাকি টিভির পর্দায়। বাঙালিদের হিন্দি বলা নিয়ে অনেক দুর্নাম শোনা যায়। কিন্তু এই সিরিজে কী সাবলীলভাবে হিন্দিতে কথা বলেছেন সকলে! কোনো বাংলা টান নেই। নেহাত হিন্দি সিরিজ, নয়তো এতজন বাঙালি রয়েছেন, দেখতে দেখতে বাংলা সিরিজ বলে মনে হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। টানটান উত্তেজনা ও রহস্যে মোড়া P.I. Meena-র কাহিনী। অভিনয় নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে সকলে নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মস্ত বড় গলদ থেকে গেছে সিরিজের সমাপ্তি পর্বে। মনে হবে দেখতে দেখতে যেন হঠাৎ করেই সিরিজটি শেষ হয়ে গেল। এতো নিপুণতার সঙ্গে প্রত্যেক পর্বের প্রতিটি দৃশ্য আঁকা যে এর শেষটুকু মনে অনেকখানি আক্ষেপ রেখে দেবে। তবে এমনটা হতেই পারে এই সিরিজের দ্বিতীয় season প্রকাশ পেল। অন্তিম অংশটি সেভাবে মনোগ্রাহী না লাগলেও P.I. Meena একবার অন্তত দেখে ফেলাই যায়।





Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন