সবটা মেলে না - চৈতন্য দাশ

জীবনের সাতরঙে ঋতুরাজ বসন্তকে পেলে রঙের সংখ্যা বেড়ে যায় বৈকি। অনেক রং আমরা দেখতে পেলেও মনের রং দেখতে পাই না। তেমনই এক না-দেখা রং মেলাতে চেয়েছিল আসাম রাজ্যের এক তরুণ জওয়ান। আসামে বসন্তের রঙ্গালি বিহু উৎসবে নাচের আসরে একটি মেয়ের গলায় সেই জওয়ান মালা পরিয়েছিল। রঙ্গালি বিহুর সময় কোনো যুবক কোনো যুবতীর গলায় মালা পরালে সে তার প্রেমিকা হয়ে যায় এবং তাকেই বিয়ে করতে হয়।

তবে রঙ্গালি বিহুর এ মালা যে সে মালা নয়। এ মালা কোনো যুবতীর গলায় পরানোর আগের মুহূর্ত থেকেই উক্ত যুবক-যুবতীর মধ্যে একটা প্রেমাবেশ তৈরি হতে থাকে। আর অদৃশ্য সে প্রেমাবেশে তারা নাচের তালে-তালে পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকে। সুযোগ বুঝে মালাটা পরাতে পারলেই কার্যসিদ্ধি।

বহুদিন বাদে দু-মাসের ছুটি পেয়ে তরুণ জওয়ান বাড়ি এসেছিল। বিয়ের জন্য তার মা-বোন চাপাচাপিও করছিল, কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। হঠাৎ করে রঙ্গালি বিহুটাই যেন কাজ অনেকটা আসান করে দিল।

তো বিহুর মেজাজ থাকতে-থাকতেই তাদের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়ে গেল। চলতি রবিবার মেয়েটির সঙ্গে জওয়ানের বিয়ে হল। মঙ্গলবার ফুলশয্যার দিন সকালেই হেডকোয়ার্টার থেকে জরুরি মেসেজ, “It’s very urgent. Join your duty immediately...”

বিপরীত মেরুর দুটি রং মেলার আগেই বিয়োজন ঘটে গেল। নতুন বউয়ের সঙ্গে ফুলশয্যা আর সম্ভব হলো না। ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিউটিতে জয়েন করার উদ্দেশ্য রওনা দিল। কর্মে যোগদান করার পর থেকে বউয়ের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। জওয়ান প্রতিদিন সকালে তার ব্যাংক-একাউন্টে ১০০ টাকা জমা করে আবার বিকেলে ১০০ টাকা তুলে নেয়।

প্রতিদিন ব্যাংক-একাউন্টে ১০০ টাকা জমা ও ১০০ টাকা তুলে নেওয়া তার দৈনন্দিন রুটিনে দাঁড়িয়ে গেল।

এ ঘটনাটা লক্ষ্য করে একদিন ব্যাংকের এক কর্মী জিগ্যেস করল, “কী ব্যাপার বলুনতো? প্রতিদিন সকালে ১০০ টাকা জমা করে আবার বিকেলে তুলে নিচ্ছেন, অবাস্তব লেনদেনের কারণটা জানতে পারি কি?”

হ্যাঁ স্যর, অবাস্তব তো বটেই”, বলে সে উক্ত ব্যাংককর্মীকে তার বিয়ের ঘটনা বিস্তারিত বলল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আসলে আমি যখন টাকা জমা দিই ও তুলি তখন আমার বউয়ের কাছে মেসেজ যায়। আর সে মেসেজই জানান দেয়, আমি এখনো বেঁচে আছি।” বলতে বলতে দু-চোখের কোনা ডান হাতের কবজির তলা দিয়ে নাটকীয় ঢঙে মুছে নেয়।

অথচ দু-চোখের কোনা চুঁইয়ে নামা হৃদয় গলা এ জলে সত্যিই কোনো নাটকীয়তা ছিল না।

এই জওয়ান-প্রেমিকের মনে জমে ওঠা রঙ্গালি বিহুর কত স্বপ্নরং যা রাঙিয়ে দিত তার প্রেমিকা-বধূর মনকে।রং মেলানোর মানসিকতা নিয়ে প্রেমিকাকে রঙ্গালি-মালা পরিয়েছিল ঠিকই কিন্তু রং মেলাতে ব্যর্থ হল দেশরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে।

সে জানে না সীমান্তযুদ্ধের সাফল্যলাভের পর নিজে অক্ষত থেকে জীবনের প্রকৃত রং মেলাতে সফল হবে কিনা!!

1 মন্তব্যসমূহ

  1. ভাবনাটা একটু অবাস্তবের দিকে হলেও পড়তে বেশ লাগল। জওয়ান রোজ ব্যাঙ্কে দু'বার করে যাচ্ছে এটা কতটা বাস্তবিক জানা নেই...

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন