বদভ্যাস ত্যাগ - দীনেশ সরকার

নলিনীবাবু স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক। খুবই ছাত্রদরদী। সুনামের সাথে উনি শিক্ষকতা করেন। কিন্তু একটা বদভ্যাস আছে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে টিচার্স রুমে বসে উনি নস্যি টানেন। এক টিপ নস্যি না টানলে ক্লাসে মন খুলে পড়াতে পারেননা।

সারা দেশে লকডাউন। স্কুল-কলেজ বন্ধ। শিক্ষক-ছাত্র সবাই ঘরবন্দি। তার উপর নানান বিধিনিষেধ। বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সে এক দূর্বিসহ জীবন। নলিনীবাবু ঘরে থেকে হাঁপিয়ে উঠলেন। সবসময় প্রার্থনা করতেন, “করোনা বিদায় হোক, স্কুল-কলেজ তাড়াতাড়ি খুলুক। সবকিছু স্বাভাবিক হোক।”

করোনার দাপট কমতে স্কুল খুললো। নলিনীবাবুর খুশি দেখে কে। খুশির মাঝেও একটা কাঁটা খচখচ করছে। সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে হবে, মাস্ক পরে পড়াতে হবে। প্রথম দিন প্রথম ক্লাসের পর টিচার্সরুমে ঢুকে অভ্যাসমতো নস্যি নেবেন বলে যেই মাস্ক খুলতে যাচ্ছেন, অমনি সহশিক্ষকরা হই-হই করে উঠলেন, “কি করছেন নলিনীবাবু! মাস্ক খুলছেন কেন? আপনি কি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশিকা পড়েননি?”

নলিনীবাবু কাচুমাচু মুখ করে বললেন, “একটু নস্যি নেবো বলে খুলছিলাম ভাই।”

একজন সহশিক্ষক একটু রূঢ়ভাবেই বললেন, “নস্যি-টস্যি ঘরে গিয়ে নেবেন। স্কুলের মধ্যে মাস্ক খুলবেন না।”

নলিনীবাবুর আর মাস্ক খুলে নস্যি নেওয়া হল না। অপমানে মুখ লাল হয়ে গেল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, যার জন্য এই অপমান সেই নস্যি তিনি আর টানবেন না।

সারাদিন আর নস্যি নিলেন না। গা গুলিয়ে উঠছে, পেট ফুলে যাচ্ছে তবুও তিনি নস্যি টানলেন না।

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পরে আর মাস্ক পরতে হচ্ছে না। টিচার্সরুমে এক সহ শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন, “কি নলিনীবাবু, আপনি আর নস্যি নিচ্ছেন না?”

নলিনীবাবু হেসে জবাব দিলেন, “না ভাই। অনেক চেষ্টা করে যা পারিনি, করোনা আমার সেই বদভ্যাস দূর করে দিয়েছে।”

 

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন