কাব্য, ব্যাকরণ, দর্শনশাস্ত্রের মতো গণিতশাস্ত্রেও ভারতীয় মনীষীদের অবদান চিরস্মরণীয়। ভারতবর্ষে গণিতচর্চার বীজ নিহিত হয়েছে বৈদিক সাহিত্যে। বৈদিক ঋষিরা যাগযজ্ঞ করতে গিয়ে জ্যামিতি তথা গণিতের সূক্ষ্ম তত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং জ্যোতির্বিদ্যাকে উন্নত করতে গিয়ে গণিত-চর্চা শুরু করেন। ঋগ্বেদে ও যজুর্বেদে সংখ্যা গণনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
বৈদিক গণিত হল
পাটিগণিতের একটি প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতি। প্রাচীন পদ্ধতির মাধ্যমে গাণিতিক
সমস্যাগুলির সহজ সমাধান করার কৌশল এবং সূত্রের সংকলনই হল বৈদিক গণিত। ভারতীয় পাটিগণিতের সহজবোধ্যতা, এবং গভীর গাণিতিক সমাধানসূত্রের জন্য এটি বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য অধিকার করেছে। বেদের মূলে থাকা এই প্রাচীন পদ্ধতিটি গণিতের একটি অনন্য সাধারণ পদ্ধতি, যার প্রয়োগ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারিকভাবে উৎকৃষ্ট হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর আবেদন আজ অনস্বীকার্য।
ইতিহাস এবং উৎসঃ
বৈদিক গণিতের উদ্ভব হয়েছিল প্রাচীন ভারতে আনুমানিক ১৫০০ – ৫০০ অব্দে বৈদিক যুগে। "বৈদিক" যুগ অর্থাৎ যে যুগে বেদ রচনা হয়েছিল সেই সময়ে গণিতের উদ্ভাবন হয়েছিল বলে এই গাণিতিক পদ্ধতিকে বৈদিক গণিত বলা হয়। কুড়ি শতকের প্রাক্পর্বে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ শ্রী ভারতী কৃষ্ণা তীর্থজী এই বৈদিক গণিতের সমস্ত সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর এই কৌশল এবং সূত্রের সংকলন ‘বৈদিক ম্যাথামেটিক্স’ নামের একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গণিতবিদ চেয়েছিলেন, কঠিন অঙ্কের সমাধান শিক্ষার্থীরা যাতে সহজেই করতে পারেন। ‘বৈদিক ম্যাথামেটিক্স’ বইয়ের প্রথম পাতায় লেখক উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর সংকলনে যে সমস্ত সূত্র এবং কৌশলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সমস্ত বিষয়ের সঙ্গে ঋকবেদের কোনও সংযোগ নেই। পরবর্তীকালে, অধ্যাপক চন্দ্রকান্ত রাজু, জনপ্রিয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী একটি নিবন্ধে এই একই বিষয়ে সিলমোহর দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, গণিতের সাধারণ ক্ষেত্র, যেমন পাটিগণিতের জন্ম হয়েছিল ভারতবর্ষেই।
বিষয়বস্তু
বৈদিক গণিত প্রকৃতপক্ষে সাধারণ অঙ্কের থেকে একটু বেশি সৃজনশীল। এই ‘বিশেষ’ পদ্ধতি অবলম্বন করলে
সহজ ভাবে যে কোনও ধরনের অঙ্কের সমাধান করা সম্ভব। কারণ এই পদ্ধতিতে যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ-সহ শতকরা
হিসেব, অনুপাতের হিসেবের মত লম্বা এবং সময়সাপেক্ষ অঙ্কের
সমাধান খুব কম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব। ত্রিকোণমিতির সমস্যা
সমাধানের ক্ষেত্রেও এই গণিত প্রক্রিয়া সাহায্য করে।
যোগী স্বামী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থজী মহারাজ
বৈদিক গণিতের সূত্রপাত ঘটে হিন্দু পন্ডিত ও গণিতজ্ঞ যোগী স্বামী ভারতী কৃষ্ণ
তীর্থজী মহারাজের হাতে মাত্র বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। তীর্থজী মহারাজের জন্ম হয়
ভারতে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রভিন্সের এক ছোট্ট শহর তিরুনেলভেলিতে ১৮৮৪ সালের মার্চ
মাসে। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল বেঙ্কটরমণ শাস্ত্রী। তাঁর বাবা পি. নরসিমহা
শাস্ত্রী ছিলেন মাদ্রাজ প্রভিন্সের ডেপুটি কালেক্টর। বেঙ্কটরমণ শাস্ত্রী তাঁর
অনন্যসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে সংস্কৃত, দর্শন, ইংরাজী, গণিত, ইতিহাস ও বিজ্ঞান ইত্যাদি সাতটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী
লাভ করেন। সংস্কৃতে অসাধারণ দক্ষতা দেখাবার জন্য মাদ্রাজ সংস্কৃত অ্যাসোশিয়েশন
তাঁকে ‘সরস্বতী’ উপাধি প্রদান করে। ১৯০৫ সালে গোপালকৃষ্ণ গোখলের তত্ত্বাবধানে
জাতীয় শিক্ষা প্রসার কর্মসূচীতে কাজ করেন। কিন্তু ভারতীয় প্রাচীন অধ্যাত্মবিদ্যা
তাঁকে বেশী আকর্ষণ করত। ফলে ১৯০৮ সালে তিনি শৃঙ্গেরী শঙ্করাচার্যের কাছে
অধ্যাত্মবিদ্যা শিক্ষার জন্য মহীশূরের শৃঙ্গেরী মঠে যোগদান করেন। কিন্তু জাতীয়
নেতৃত্বের দাবীতে রাজামুন্দ্রীতে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসাবে
তিন বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯১১ সালে তিনি পুনরায় শৃঙ্গেরী মঠে ফিরে গিয়ে প্রাচীন
অধ্যাত্মবিদ্যার চর্চা শুরু করেন। ঐ বছর তিনি অথর্ব বেদের সূক্তগুলি পাঠ করতে গিয়ে
আবিষ্কার করেন যে, এর কয়েকটি অধ্যায়ে কতকগুলি গণিত সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।
আশ্চর্যজনকভাবে এগুলির কোনটিতেই সরাসরি গণিতের অবতারণা করা হয় নি। প্রফেসর
বেঙ্কটরমণ সরস্বতী কর্ণাটকের শৃঙ্গেরী মঠে এই বিষয়ে আরো গভীর অধ্যয়নের জন্য
মনোনিবেশ করেন ও সূক্তগুলির মর্মোদ্ধার করতে চেষ্টা করেন। ৮ বছর নিরলস সাধনার
ফলস্বরূপ ১৯১৯ সালে তিনি ১৬টি মৌলিক বৈদিক সূত্রের পাঠোদ্ধার করেন এবং বৈদিক গণিত
শাস্ত্রের সূত্রপাত ঘটে। তাঁর মতে এই সূত্রগুলির সাহায্যে মৌলিক ও জটিল গণিতের
সমস্ত সমাধানের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে বেনারসে তিনি সন্ন্যাসধর্মে
দীক্ষিত হলেন ও সন্ন্যাসাশ্রমে তাঁর নতুন নাম হল ‘স্বামী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থ’।
মাত্র দু’বছরের মধ্যে ১৯২১ সালে তিনি শৃঙ্গেরী মঠের সারদা পীঠ শঙ্করাচার্য
নির্বাচিত হলেন। এখানে তাঁর অন্য একটি উপাধিও জুটল। তিনি হলেন ‘জগৎগুরু’। এবার
তিনি ভারতবর্ষের কোণে কোণে পরিভ্রমণ করতে শুরু করলেন সনাতন ধর্ম ও ভক্তিবেদান্ত
তত্ত্বের প্রচারের কাজে। ১৯২৫ সালে পুরীর শঙ্করাচার্যের অনুরোধে তিনি পুরীর
গোবর্ধন মঠে শঙ্করাচার্যের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ১৯৫৩ সালে নাগপুরে শ্রী বিশ্ব
পূনর্নিমাণ সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বশান্তি ও বেদান্তের প্রচার কাজে তিনি ১৯৫৮
সালে প্রথম শঙ্করাচার্য হিসাবে প্রথমে আমেরিকা যুক্তরাজ্য ও পরে ব্রিটেন পরিভ্রমণ
করেন। এই সময়েই তাঁর ‘বৈদিক গণিত’ নামে ১৬ খন্ড পাণ্ডুলিপির রচনা যা পরে কোনভাবে
হারিয়ে যায় ও আগুনে নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৬০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী তাঁর মৃত্যুর আগে
পর্যন্ত তিনি মাত্র একটি খন্ডের পুনর্লেখনে সক্ষম হন।
বৈদিক গণিত প্রকৃতপক্ষে ১৬টি মৌলিক সূত্র সমন্বিত গণিতের এক উল্লেখনীয় পদ্ধতি।
এই ১৬টি সূত্রের মোট ১৩টি অনুসূত্র রয়েছে। অর্থাৎ ২৯টি সূত্র-অনুসূত্রের দ্বারা
গণিতের প্রায় সমস্ত দিক তিনি উদ্ভাসিত করে গেছেন। যদিও স্বামী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থজী
মহারাজ দাবী করেছেন যে, এই সূত্রগুলি তিনি অথর্ব বেদের পরিশিষ্ট সূক্ত থেকে উদ্ধার
করেছেন, তবে তাঁর মতের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। সূত্র-অনুসূত্রগুলির ভাষাও
বৈদিক বলে মনে হয় না। তবে বৈদিক যুগে অঙ্ক ও সংখ্যার বদলে বর্ণ ও অক্ষর ব্যবহার
করা হত। সেকারণে সূক্তগুলি থেকে সরাসরি গণিতের কোন অনুমান পাওয়া না গেলেও এটা মনে
রাখতে হবে যে, বেদের সূক্তগুলি প্রায়শঃই দ্ব্যর্থক ও গূঢ় অর্থবহ হত। তাই
স্বামী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থজী মহারাজ তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের সাহায্যে যে সূত্রগুলি
খুঁজে পেয়েছেন সেগুলি বেদে উল্লিখিত সূক্তের অন্য নিহিত অর্থ বা গূঢ় অর্থ ব্যতীত
বলেই মনে হয়। নীচে এই ১৬টি সূত্র অর্থসহ উল্লেখ করা হল।
সূত্র ও উপসূত্র সমূহঃ
বৈদিক গণিত ১৬টি সূত্র এবং ১৩টি উপসূত্রের উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা পাটিগণিতের মৌলিক নীতিগুলিকে একত্রিত করে গড়ে উঠেছে। এই সূত্রগুলি হল:
১. একাধিকেন পূর্বেন (একের অধিক ও পূর্ব অপেক্ষা এক বেশী)
২. নিখিল নবতশ্চরম দশতঃ (সকল নয় থেকে, শেষটি দশ থেকে)
৩. উর্ধ্বতির্যগ্ভ্যাম (উল্লম্ব ও কোণাকুণি গুণন)
৪. পরাবর্ত যোজয়েৎ (পরস্পর স্থান পরিবর্তন ও প্রয়োগ)
৫. শূন্য সাম্যসমুচ্চয়ে (সাধারণ উৎপাদক, গুণনীয়ক বা সংযুক্তি সমান হলে তা শূন্যের সমান হবে)
৬. আনুরূপ্যে শূন্যং অন্তৎ (যদি একটি অনুপাতে থাকে তবে অপরটি শূন্যের সমান)
৭. সংকলন ব্যবকলনাভ্যাম (সংযুক্ত ও ব্যবচ্ছেদকরণ দ্বারা)
৮. পূরণাপূরণাভ্যাম (সম্পূর্ণকরণ-অসম্পূর্ণকরণ দ্বারা)
৯. চলনকলনাভ্যাম (অন্তরকলন বিদ্যা)
১০. য্যাবদূনম্ (ন্যূনতা দ্বারা)
১১. ব্যাষ্টিসমষ্টি (সাধারণ ও সুনির্দিষ্ট)
১২. শেষাণ্যডেন চরমেণ (শেষ অঙ্ক দ্বারা অবশিষ্টাংশ)
১৩. সোপান্ত্যদময়ন্ত্যং (দ্বিসংখ্যক বীজগাণিতিক রাশির শেষ সংখ্যা ও শেষপূর্বের
দ্বিগুণ শূন্যের সমান)
১৪. একন্যূনেন পূর্বেন (একের ন্যূন ও পূর্ব অপেক্ষা এক কম)
১৫. গুণিতসমুচ্চয়ঃ (সমষ্টির গুণনফল)
১৬. গুণকসমুচ্চয়ঃ (সমস্ত গুণিতকগুলি)
ব্যবহারিক প্রয়োগ এবং কৌশলঃ
বৈদিক গণিতে বিভিন্ন গাণিতিক সমাধানের জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হয়। যথা -
১. গুণন: "ল্যাটিস পদ্ধতি" এবং "নিখিলাম পদ্ধতি", যা গুণকে সরল করে।
২. ভাগ: "পরাবর্ত্য পদ্ধতি" ভাগ পদ্ধতিকে সহজ করে।
৩. বর্গমূল: "দ্বাজাঙ্ক পদ্ধতি" বর্গমূল গণনা করতে
সাহায্য করে।
৪. ঘনমূল: "কুত্তাকা পদ্ধতি" ঘনমূল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
৫. বীজগণিত: বৈদিক গণিত রৈখিক এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানকে সরলীকৃত করে।
৬. জ্যামিতি: "ভুজঙ্গ মঞ্জরী পদ্ধতি" ত্রিভুজের
ক্ষেত্রফল এবং পরিধি গণনা করে।
সুবিধা এবং সুবিধা
বৈদিক গণিত বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে:
১. মানসিক গণনা: মানসিক গাণিতিক দক্ষতা বাড়ায়।
২. গতি এবং নির্ভুলতা: দ্রুত এবং সঠিক গণনার করতে সাহায্য
করে।
৩. প্যাটার্ন দক্ষতা: বিভিন্ন প্রকারের প্যাটার্ন এর সমাধানে দক্ষতা তৈরি করে।
৪. ধারণামূলক বোঝাপড়া: গাণিতিক ধারণাগুলি
গভীর ভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
৫. হ্রাসকৃত গণনা: চতুর কৌশলগুলির মাধ্যমে গণনা পদ্ধতিকে
হ্রাস করা যায়।
আধুনিককালে বৈদিক গণিতের প্রাসঙ্গিকতাঃ
বৈদিক গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ রয়েছে:
১. শিক্ষা: গাণিতিক সমাধানকে সহজবোধ্য সহজ করে তোলে।
২. গবেষণা: সংখ্যা তত্ত্ব, বীজগণিত এবং জ্যামিতিতে
অবদান রাখে।
৩. কম্পিউটার বিজ্ঞান: দক্ষ অ্যালগরিদম এবং কোডিং করার ক্ষেত্রেও
প্রয়োগ করা হয়।
৪. ক্রিপ্টোগ্রাফি: সুরক্ষিত এনক্রিপশন পদ্ধতি প্রদান করে।
5. মানসিক গণিত: চিন্তা ভাবনাকে
প্রসারিত করে জ্ঞান বৃদ্ধি করে ।
বিতর্কঃ
যদিও বৈদিক গণিত যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে কিন্তু তাও এই প্রসঙ্গে কিছু বিতর্ক বর্তমান। যেমন-
১. ঐতিহাসিক প্রমাণের অভাব: বৈদিক গণিতের প্রাচীন উৎস সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব।
২. সীমিত পরিধি: কেউ কেউ বলেন দেন যে
বৈদিক গণিত মৌলিক গাণিতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
৩. সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট: ভারতীয়
সাংস্কৃতিক উপযোগীতাকে উপেক্ষা করা এবং সঠিকরূপে উপস্থাপন না করা।
বৈদিক গণিতের কৌশলগুলি সাধারণের বোধের অতীত নয়। তবে সূত্রগুলির সঠিক উপলব্ধি ও
উপযুক্ত গাণিতিক দক্ষতা করায়ত্ত হলে বৈদিক গণিত অত্যন্ত সহজ বলে মনে হবে। বৈদিক
গণিতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ বিষয়সমূহ অতি সহজভাবে সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা
হয়। বিংশ শতকের প্রথম ভাগে বৈদিক গণিতের সূত্রপাত হয়। স্বামীজির
মৃত্যুর পরে দেশে-বিদেশে এই বিষয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে তাঁর বইটি প্রকাশ
পাওয়ার পরেই সারা পৃথিবীতে সাড়া পড়ে যায়। কেনেথ উইলিয়ামস, অ্যান্ড্রু নিকোলাস, জেরেমি পিকলস প্রভৃতি নামী গাণিতিক এ বিষয়ে উৎসাহ দেখান।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডনের সেন্ট জেমস স্কুল, কুইন্সগেটের মত স্কুলগুলিতে
বৈদিক গণিতের চর্চা শুরু হয়ে যায়। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অ্যান্ড্রু
নিকোলাসের চারবার ভারত
সফরের পরে ভারতীয় গাণিতিকগণ বৈদিক গণিত বিষয়ে চর্চা শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে এই তিনজন
গণিতজ্ঞের চেষ্টায় বৈদিক গণিত অনুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
১৯৮৮ সালে মহর্ষি মহেশ যোগী বৈদিক গণিতের গুরুত্ব ও আশ্চর্য গুণ উপলব্ধি করেই
সমস্ত মহর্ষি বিদ্যালয়গুলিতে বৈদিক গণিতের পাঠ আবশ্যিক পাঠক্রমে যুক্ত করেন। তিনি
বৈদিক গণিতের সূত্রগুলিকে ‘কসমিক কম্পিউটার’ আখ্যা দেন। এই সম্পর্কিত একটি পাঠক্রম
প্রস্তুত হয় ইংল্যাণ্ডের স্কেলমার্সডেল স্কুল, ল্যাঙ্কাশায়ারের
তত্ত্বাবধানে এবং ১৯৯৮ সালে সেটি The Cosmic Calculator নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৯১ সালে কেনেথ উইলিয়ামসের বৈদিক গণিতের উপর লেখা The Natural Calculator বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এটা খুবই পরিতাপের বিষয় যে জগৎগুরু
স্বামী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থজীর মত এতবড় একজন প্রতিভাশালী গাণিতিকের প্রকৃত মূল্যায়ন
আজও হয় নি।
1. Scripture E. W. (1891) American Journal of Psychology, Vol. IV pg. 1-59
2. Mitchell F.D. (1907) American Journal of Psychology, Vol. XVIII pg.
61-143
3. Williams K.R. (1991) The Natural Calculator, Motilal Banarasidass,
Baranasi
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন