রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি



 সিরিজ রিভিউ : রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি

"হইচই" অ্যাপে হইহই করে চলছে REKKA অর্থাৎ "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি" সিরিজটি। লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন রচিত "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি" উপন্যাসটির উপর ভিত্তি করে পরিচালক সৃজিত মুখার্জীর বানানো এই সিরিজ।

নাম শুনলে এটাই মনে আসে, এমন অদ্ভুত নাম কেন রে বাবা! কোনো রেস্টুরেন্ট বা হোটেলকে কেন্দ্র করে যে এটি নির্মিত তা যদিও স্পষ্ট। একরাশ কৌতূহল দেখতে বাধ্য করবেই এই সিরিজকে।

সিরিজের কাহিনী? সংক্ষেপে বলি, অবশ্যই যথাসম্ভব স্পয়লার না দিয়ে।

মফস্বল শহর সুন্দরপুর। মহাসড়কের পাশে বিশাল এক রেস্তোঁরা যার নামটি বড়ো অদ্ভুত, "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি"। নাম অদ্ভুত হলেও এখানকার রান্নার খুবই সুনাম। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন এই রেস্তোঁরার খাবারের স্বাদের টানে। স্বাদের পাশাপাশি থাকে নিত্যনৈমিত্তিক রান্নার ফিউশন। আর সেই বিশেষ ফিউশন রান্নার দায়িত্বভার নিয়েছে স্বয়ং রেস্তোঁরার মালকিন মুশকান জুবেরি।

এরকমই একদিন এখানে আগমন ঘটে এক ভদ্রলোকের। রেস্তোঁরায় খেয়ে মুগ্ধ হন। বাইরে বেরিয়ে তাঁর পরিচয় হয় এক গ্রামবাসী আতর আলির সঙ্গে। আতর আলি গ্রামের সবার নাড়ি নক্ষত্রের খবর রাখে, আর সেইকারণে সকলের কাছে সে পরিচিত 'বিবিসি' নামে।

এই আতর আলির কাছ থেকে তিনি রেস্তোঁরার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। কাহিনী একটু এগোলেই দেখা যায়, ভদ্রলোকের আগ্রহ যতো না রেস্তোঁরার প্রতি, তার চাইতেও বেশি আগ্রহ মুশকান জুবেরির প্রতি। আচ্ছা, মুশকান জুবেরি কি তাহলে ভদ্রলোকের পূর্ব পরিচিত? নয়তো এমন হঠাৎ কৌতূহলের কারণ কী?

তারপরেই জানা যায় আগন্তুক ভদ্রলোক একজন সাংবাদিক। মুশকান জুবেরির সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, মুশকান জুবেরি সুন্দরপুর গ্রামের প্রয়াত জমিদারের নাতবউ পরিচয়ে জমিদারবাড়িতেই বসবাস করেন। তিনি নিজেকে এক রহস্যের মায়াজালে আবৃত করে রেখেছেন। স্থানীয় পুলিশ থেকে এম পি, সকলের সঙ্গেই এই ভদ্রমহিলার জানাশোনা। সেই কারণেই হয়তো গ্রামের মানুষজন এই রহস্যময়ীর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলে।

সাংবাদিক ভদ্রলোক এবং আতর আলি মুশকান জুবেরির উপর নজর রাখতে শুরু করে। কাহিনী এগোনোর সঙ্গে রহস্য ঘনাতে থাকে যখন জানতে পারা যায় রাতের বেলায় দু'জন লোক দ্বারা মুশকান মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করান। শুধু তাই নয়, তাঁর পুকুরে বেশ কয়েকগুলো কুমির। কুমির কোন কাজে লাগবে!

এমনসময় চিত্রে আসে ফালু নামক এক গোর খননকারী। তার আবার অদ্ভুত ক্ষমতা। সে নাকি আগাম মৃত্যুর খবর জানতে পেরে কবরের জন্য গর্ত খুঁড়ে তৈরী রাখে।

নুরে ছফা আর আতর আলির এই অনুসন্ধানের ব্যাপারে পুলিশ জানতে পারে। ফলস্বরূপ আতর আলিকে থানায় তলব করে ধমকধামক দেওয়া হয়। ওদিকে নুরে ছফা নামক সাংবাদিক ভদ্রলোককে রিক্সা থেকে নামিয়ে একপ্রকার টেনে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।

আবার দর্শকদের অবাক হওয়ার পালা।সাংবাদিক প্রক্রিতপক্ষে সাংবাদিক নন। তাঁর প্রকৃত নাম নিরুপম চন্দ। তাহলে কে এই ভদ্রলোক? কেন এসেছেন সুন্দরপুরে? রেস্তোঁরার মালকিন মুশকান জুবেরির প্রতি তাঁর এতো আগ্রহই বা কিসের?

কাহিনী এগোতে থাকে। এর মধ্যে জানতে পারা যায় বহুপূর্বের এক বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে মুশকান জুবেরি অদ্ভুতভাবে সম্পর্কিত, যদিও সেটি তার জন্মের বহুযুগ আগে হওয়ার কথা। সামনে আসে সাম্প্রতিক কালের একের পর এক মানুষের অন্তর্ধান তথ্য, যোগসূত্র মুশকান জুবেরির সঙ্গে।

অবশেষে প্রকাশ পায় মুশকান জুবেরির জীবনের এক গোপন রহস্য। কী সেই রহস্য? জানতে চাইলে দেখে ফেলুন সিরিজটি।

এবার আসি সিরিজের অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রসঙ্গে। সিরিজটি নির্মাণের শুরুতে বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীদের প্রাধান্য থাকার কথা ছিল। উপন্যাসের লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন মুশকান জুবেরি হিসাবে জয়া আহসানের নাম পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাব হিসাবে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর জানা যায় জয়া আহসানের বদলে থাকবেন পরীমনি।

করোনা মহামারীর কারণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভারতীয় বাঙালি অভিনয়শিল্পীদের নিয়েই সিরিজটি নির্মিত হবে। মুশকান জুবেরি চরিত্রে পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন পাওলি দাম। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর সিডিউল নিয়ে সমস্যা হলে বেছে নেওয়া হয় বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকে।

আতর আলি চরিত্রে প্রথমে চঞ্চল চৌধুরীর নাম আলোচনায় এসেছিল। পাশাপাশি ফজলুর রহমান বাবুর কথাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ভারতের অভিনয়শিল্পীদের সমন্বয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্তের পর সকলের আগে সামনে আসে আতর আলি চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের নাম।

আছেন নুরে ছফা চরিত্রে রাহুল বোস, পুলিশ কর্মকর্তা তপন শিকদার চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং খরাজ খাসনবিশ তথা মূল বইয়ের কে এস খান বা খোদাদাদ শাহবাজ খান চরিত্রে অঞ্জন দত্ত।

অভিনয় প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা যাক। কাহিনীর মূল চরিত্র মুশকান জুবেরি হিসাবে আজমেরী হক বাঁধনকে যথাযথ লেগেছে। তবে রাহুল বোসের অভিনয় তাঁর চরিত্র হিসাবে কিছুটা স্তিমিত মনে হয়েছে। অন্যদিকে আতর আলির ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য একটু অতিরঞ্জিত। অঞ্জন দত্তের অভিনয়ও যথাযথ।

এখানে একটা কথা বলি, কাহিনী ও অভিনয়ের লাভক্ষতি পরিমাপ করে সিরিজটি দেখতে বসবেন না। মনে কোনোরকম নেগেটিভিটি নিয়ে দেখা শুরু না করাই ভালো। এতে আপনার ভাবনাচিন্তা বিচারবিবেচনার উপর অন্য ব্যক্তির ভাবনাচিন্তার প্রভাব পড়ে যায়। সেই কারণে বলবো আগে থাকতে কোনো ধারণার বশবর্তী হয়ে সিরিজটি দেখবেন না।

তবে "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি" উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে এই সিরিজ নির্মিত হলেও সামান্য কিছু রদবদল ঘটেছে। জানতে হলে উপন্যাসটি পড়ে ফেলুন এবং তার সঙ্গে সিরিজটিও দেখে ফেলুন। কাহিনী কিন্তু টান টান উত্তেজনার।

                                        ______________________________

কলমে - তমালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী


চিত্রসৌজন্যঃ গুগল

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন