রোমিও - সোমা লাই



 "…...সানডে দিলাম শীলাকে

মনডে দিলাম মনাকে

টিউসডে দিলাম টিনাকে

ওয়েডনেসডে ঐন্দ্রিলাকে


থার্সডে দিলাম রিয়াকে

ফ্রাইডে দিলাম দিয়াকে

স্যাটারডে টা প্রিয়াকে

দিল তো দি নি করোকে


আমি হলাম রোমিও

পাক্কা প্লেবয় রোমিও

ফ্লার্টিং মাস্টার রোমিও…… "-


এই গানটা রোমিতের খুউব প্রিয়! ওর স্বভাবের সাথে ভালো মিলও খায়! আরও একটা ডায়লগ মারে - 'বিয়ে করব বাপের ইচ্ছায়, আর প্রেম করব নিজের ইচ্ছায়!' যতদিন চালানো যায় কপাল ঠুকে চালিয়ে নিলে মন্দ কী! 

আজকাল একটা মস্ত হাবা মেয়েকে পটিয়েছে রোমিত! মেয়েটা পড়াশোনাতে ভালো, কিন্তু কমনসেন্স খুব কম! ঘর থেকে বেশি বের হয় না বলে মানুষও ভালো চিনতে পারে না! বন্ধুদের সংখ‍্যাও খুব কম! হাবাটা কারওকে কিছু বলতে লজ্জা পায়! রোমিতের পোয়া বারো! বেশ লেজে খেলানো যাবে! 


রিমলি হল সেই হাবা! ওর মাঝে মাঝে মনে হয় রোমিত ঠকাচ্ছে না তো! ঐরকম করলে সে মনের দিকে মরে যাবে! ওর প্রথম প্রেম যে! ওকেই বিয়ে করতে চায়! এইসব আকডুম বাগডুম ভেবে একদিন একটা মেসেজ পাঠিয়েছে - 'I may not be your first love, but I just want to be your last everything'. 


মেসেজটা দেখে রোমিতের খুব হাসি পেলো। হাবাটা জানে না যে কী করছে! দিয়ে রোমিতও একটা মাখো মাখো প্রত্যুত্তর দিল - 'আরে পুঁচকু তুমিই আমার প্রথম! তুমিই আমার শেষ! আগেও কেউ ছিলো না, আর পরেও কেউ আসবে না গো!' 

রিমলির মেসেজটা দেখে খুব আনন্দ হল! 


কিছুদিন পর রোমিত দুঃখের একটা পোস্ট করে। তাতে লেখা ছিল, 'It's just another day without you!' রিমলি ভাবে হয়তো ও কিছু ভুল করেছে। কিছু না করেও ক্ষমা চায়। রোমিত বলে, 'আরে তোমার জন‍্য নয়, ও এমনিই দিচ্ছি'! এইবার রিমলির সন্দেহ একটু বেশি হয়। ও নিজে উদ্দ‍্যোগী হয়ে খোঁজ খবর লাগাতে থাকে, তারপর যা পেলো তা রিমলির পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ভয় করছিল তাই হল! যা চায়নি তাই হল! এইবার কী করবে রিমলি? 


বাড়িতে কারওকে কিছু বলতেও পারছে না। সবাই জানে রিমলি পড়াশোনা নিয়ে থাকে, কোনো ছেলের চক্করে পড়ার মতো ওর সময় নেই। এদিকে দিন দিন হাসিখুশি রিমলির মুখের হাসি উড়ে গেল, চোখের নীচে কালি পড়ল! রেজাল্টও খারাপ হল! সবাই ভাবছে কোন কারণে রেজাল্ট খারাপ হয়েছে, যতই হোক এত ভালো মেয়ে, সেইজন‍্য চোখের নীচে কালি পড়েছে, আবার রেজাল্ট ভালো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে! 


কিছু দিন আগের কথোপকথন 


- আচ্ছা আলু ( রিমলি নাম দিয়েছে! ) তোমার কী রঙ পছন্দ? 

- লাল। 

- ওহ্! 

- তোমার? 

- সাদা। 

- ও। 

- প্রিয় সিনেমা? 

- আনজানা আনজানি। 

- ও, দেখি নি সিনেমাটা। কেন পছন্দ? 

- এমনি ভালো লাগে গল্পটা। তোমার? 

- মুঝ সে দোস্তি করোগে। ঐ সিনেমার গানগুলো খুব ভালো লাগে! বিশেষ করে 'জানে দিল মে কব সে হ্যায় তু' গানটা। আসলে আমার হৃতিককে খুব ভালো লাগে! 

- এ হে আমারও খুব পছন্দ! আমার  ঐ টুপি পরা ছবিটা হৃতিককে মনে করেই তোলা! 'কহো না প‍্যায়ার হ‍্যায়' সিনেমাটা ভেবে! 

- তাই? 

- হুউউম্! 

- বাহ্ খুব ভালো! 

 - ওকে বাই! কাল কলেজ আছে রিমলি বলে। 

- বাই বলতে নেই, টা টা বল। 

- কেন? 

- এমনি। বাই শুনতে ভালো লাগে না। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। টা টা। 

- টা টা পুঁচকু! 


আজ রিমলি ভাবে 


কেন এই রকম হল? ও কী এমন অপরাধ করল যে ওর সাথেই ঐরকম হল? সব ঐ বদমাস ছেলেটার দোষ! মিথ‍্যে কথা বলার কী দরকার ছিল? ওর মতো মেয়ের সাথে এটা না করতেই পারত রোমিত! আবার কিছুক্ষণ পর ভাবে, না এটা ওর নিজেরই দোষ! হয় তো অজ্ঞতাবশতই কোনো পাপ করেছিল বলে আজ ফল ভোগ করতে হয়েছে! মেনে নিতে হবে সব। সব মেনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে! অনেক কাজ করার বাকি যে! পৃথিবীতে ও কী শুধুমাত্র কাঁদতে এসেছে না কী? কিন্তু এখন যে কিছুইতে নিজেকে সামলাতে পারছে না! বলে, 'ওফ্! ভগবান! এই কষ্ট থেকে আমায় মুক্তি দাও!'


রিমলির অবস্থা খুব খারাপ। এই কাঁদছে তো এই হাসছে! মানসিক ভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরপর আর নিজেকে লুকাবে কী করে? একদিন ওর মা রিমলিকে জোর করে ওর এই রকম অবস্থার কারণ জানতে চায়। রিমলি সব বলে ফেলে। নিজেকে আর সামলাতে পারে না। ওর মা প্রথমে রেগে গিয়েছিলেন, কারণ, ওদের বাড়িতে মেয়েদের সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়। কেউ নিজে দেখে করবে - কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারে না, তারপর নিজেকে সামলে ভালো করে রিমলিকে বোঝান, ভরসা দেন। বলেন, 'সব ঠিক হয়ে যাবে। যা হয়েছে তা তো আর ফিরবে না। তবে এরপর থেকে যেন ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে।' দুদিন পর রিমলিকে ভালো মনোচিকিৎসক (Psychiatrist) দেখিয়ে নিয়ে আসেন। 


রোমিতের সাথে সম্পর্ক ইতি 


সেইদিন খুব ঝগড়া করে রিমলি। বুঝতে পারে ওর জীবন শৈলী ( Life style ) আলাদা। ওর সাথে মিলবে না। রোমিত এখন পুরো ফ্লাটিংবাজ রোমিও হয়ে গিয়েছে! আজ ওকে পছন্দ, কাল অন‍্য কারওকে! রিমলির পক্ষে যেটা মেনে নেওয়া কঠিন। ওদের সাথে তাল মিলিয়ে যে চলতে পারবে সেই ভালো। এই করতে করতে একদিন তাদের মধ‍্যে একজনকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে!


প্রথম প্রথম রিমলির রোমিতের উপর খুব রাগ হতো। তারসাথে শিপ্রার উপরও খুব রাগ হতোঁ। ও যদি রোমিতকে না ছেড়ে যেত তবে আজ রিমলির সাথে এমন কোনো ঘটনা ঘটত না! অবশ‍্য এখন আর রাগটাগ হয় না। ও বুঝতে পারছে বেশি ভাবলে ওর নিজেরই সমস্যা বাড়বে। রিমলি একদিন ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করে, ' হে ঠাকুর! রোমিত যেন ওর পছন্দের একটি মেয়ে পেয়ে যায়। যাতে আমার মতো কেউ আর না কষ্ট পায়!' 


এরপর রিমলি নিজেকে সময় দেয়। নিজের ব‍্যক্তিত্ব গঠনে জোর দেয়। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে সময় ব‍্যয় করে। 


রোমিত 


রোমিত ছেলে হিসাবে মোটেও খারাপ নয়। একমাত্র ছেলে সে। বন্ধুদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। দেখতেও ভালো, আর পড়াশোনাতেও খুব একটা খারাপ নয়। রোমিত সবার সামনে হাসিখুশি থাকে। সবাই ভাবে ও খোলা পাতার মতো! আসলে না নয়! ওর মধ‍্যেও একটা চাপা কষ্ট আছে। যেটা ও কারওকে বলে না। প্রথম প্রথম বলত, তখন সবাই ওর খিল্লি ওড়াত!


আগেই বলেছি, ওর প্রিয় গান কোনটা! আসলে এটারও একটা গোপন ব‍্যাপার আছে! ও সত্যিই একজনকে 'দিল' দিয়ে বসেছিল। সত্যিই মেয়েটাকে খুবই ভালোবাসত! সেইসময় সেও সরল সাধারণ ছেলে ছিল। উপর চালাকি কী তা জানত না! ভালোবাসা, মন দেওয়া - এইসবে খুব বিশ্বাস করত! কিন্তু শিপ্রার সাথে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ও ঐরকম হয়ে গেছে। রোমিত ভাবে, ও যা করছে বেশ করছে! আরও করবে! ওর ভালোবাসার মূল্য কেউ দেয়নি, তাহলে ও কেন দেবে? আসলে গানটা ওকে এনার্জি দেয়! 


রোমিতের মতো ছেলে হোক বা মেয়ে ওরা এমনিতে খুব ভালো হয়। কিন্তু যদি কোন কারণে বিশ্বাস ভেঙে যায় তবে আগেপিছু না ভেবে উলটোপালটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। দিয়ে নিজেরাও সমস্যাতে পরে আর অন‍্যদেরও ফেলে! 

 

অন‍্যদিকে, রিমলির মতো মানুষরা কিন্তু এর উলটো হয়। 


আজ চার বছর হল ওরা আলাদা আছে। রোমিত নিজের জীবনে খুব খুশি আছে। সে আজ সব দিকেই পূর্ণ। তবে জীবিকা হিসাবে যেটার স্বপ্ন দেখেছিল সেটা হয় নি। 


রিমলিও মোটামুটি ভালো আছে। সেও নিজের স্বপ্ন পূর্ণ করার লক্ষ্যে অবিচল।বিয়ে প্রেমই যে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, তা সে ভালো করে বুঝেছে। তাই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তপস্যারত।


যাইহোক, রোমিত আর রিমলি এখনও বিয়ে করে নি। রিমলির সম্বন্ধ দেখে চলছে ওর বাড়ির লোক। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা! অন‍্য দিকে রোমিও রোমিত আজ আর সেইরকম 'রোমিও' নেই! রিমলির পর ও আবার সত্যিই একজনের ভালোবাসা পেয়েছে। এখন দুজনেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার জন‍্য খুব খাটছে। সে বন্ধুদের আর প্রজ্ঞাকে নিয়ে ভালোই আছে! ভালো ব‍্যাপার হল, রোমিতের বিয়েটা শেষ পযর্ন্ত নিজের ইচ্ছেতেই হচ্ছে! 

    

      

      " জিন্দেগী কৈসী হৈ পহেলী হায় 

       কভী তো হঁসাএ, কভী যে রুলায়ে"


 

কলমে - সো মা  লা ই 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন