ঘরোয়া উপায়ে শিশুর জন্য সেরেল্যাক তৈরির পদ্ধতি

 


 একজন শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাস একমাত্র খাবার হওয়া উচিত মাতৃদুগ্ধ।ছয়মাস বয়েসের পর থেকে সাধারণত তাকে মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি অন্যান্য হালকা খাবার দেওয়া শুরু করা হয়। সাধারণত ৯/১০ মাস বয়স থেকে স্তনদুগ্ধের পাশাপাশি সেরেল্যাক, খিচুড়ি, সুজি এসব দেওয়া হয় শিশুদের। এর ভিতর সবচেয়ে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার হিসাবে সেরেল্যাকের নাম সবার আগে মনে আসে। এই সময় অনেকেই বাজারজাত সেরেল্যাকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সহজে উপলব্ধ হওয়ার সাথে সাথে এটি তৈরি করাও খুব সহজ। তাই এর আকর্ষণ উপেক্ষা করা নতুন বেশিরভাগ মায়েদের পক্ষেই অসম্ভব হয়ে ওঠে। 

তবে বাজারজাত সামগ্রী শিশুকে যত কম দেওয়া যায় ততই ভালো।কারণ -

·        বাজারজাত খাবারকে সংরক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ( preservative) ব্যবহার করা হয়।প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে শিশুর শরীরে এই সমস্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যও প্রবেশ করে। সোডিয়াম লৌরিল সালফেট (SLS)-এর মতো রাসায়নিক পদার্থগুলি ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি করে; খনিজ তেল ত্বকের ছিদ্র বড় করে দেয় এবং আরও বিভিন্ন ধরণের আভ্যন্তরীণ ক্ষতিসাধন হতে থাকে যা সহজে বোঝা যায় না।

·        প্যাকেটজাত শিশুর খাবার কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল তা সম্পর্কে কেউই স্পষ্টভাবে অবগত নন।তাই  শিশুর খাদ্য  নিরাপদ তা মনে করা ভুল হবে। এটির উৎপাদন প্রক্রিয়া, সংগ্রহস্থল বা বহন করার প্রক্রিয়ার সময় বিভিন্ন কারনবশত এই খাবার দূষিত হতে পারে।যার থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। 

·        কিছু উপাদানে কিছু শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। দুধ, বাদাম, গ্লুটেন এবং ডিম এমন উপাদান যাতে শিশুদের সাধারণত অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এই উপাদানগুলি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেকসময়েই পেটের অসুখ, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হাঁচি-সর্দি বা অন্য কোনো অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হতে পারে।

 

এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করার জন্য শিশুকে বাজারজাত খাবার কম দেওয়া বা না দেওয়াই ভালো। তাই স্বাস্থ্যসম্মত উপায় বাড়িতেই আমরা সেরল্যাক বানাতে পারি। ঘরে তৈরি এই খাবারটি শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এটি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই সেরেল্যাক বানানোর সময় উপাদানগুলো শিশুর শারীরিক চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কমবেশি করে নেওয়া যায়।

মজার বিষয় হল এই নরম, থকথকে খাবারে নিজের মতো উপাদান মেশানো যায়। কখনও ফল কখনও সব্জি বা অন্য কিছু। ফলের ভিতর আসতে পারে কলা, আপেল, সবেদা, আম প্রভৃতি। মিষ্টি করতে চাইলে অল্প মধু মেশানো যেতে পারে। তবে চিনি বাদ দেওয়াই ভালো।নোনতা স্বাদ আনতে হলে আলু, রাঙা আলু, টমেটো, কুমড়ো প্রভৃতি সব্জি মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

 

বাচ্চার জন্য ঘরোয়া সেরেল্যাক বানানোর প্রণালী -

উপকরণ:

·        লালচাল বা আতপ চাল- দেড় কাপ

·        বিউলি ডাল- এক কাপ

·        সবুজ ছোলার ডাল- এক কাপ

·        মুগ ডাল- এক কাপ

·        খোলায় ভেজে নেওয়া ছোলা- এক কাপ

·        মসুর ডাল- এক কাপ

·        ভাঙা গম- এক কাপ

·        সাবুদানা- আধ-কাপ

·        ছোলার ডাল- আধ-কাপ

·        ভুট্টাদানা- আধ-কাপ

·        কাঠবাদাম- আধ-কাপ

·        কাজুবাদাম- আধ-কাপ

·        এলাচদানা- ২/৩ টা

·         

 

প্রণালী:

·        কাঠবাদাম, কাজুবাদাম আর এলাচ বাদ দিয়ে বাকি উপাদানগুলো সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন এগুলো ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে

·        এরপর নীচের নিয়মানুযায়ী একে একে সবগুলো উপাদান শুকনো কড়াইতে ভাজতে হবে

·        চালগুলো কিছুটা ফুলে ওঠা পর্যন্ত ভাজতে হবে

·        ডাল আর গমের গুঁড়ো বাদামী আর কিছুটা মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে

·        সবুজ ছোলার ডাল সবুজ থেকে বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে

·        সাবুদানা কিছুটা কুড়মুড়ে ও শুকনো করে ভেজে নিতে হবে

·        ছোলা ভেজে মুচমুচে করতে হবে।

·        ভুট্টা মুচমুচে হয়ে ফুটতে শুরু করা পর্যন্ত ভাজতে হবে

·        এলাচদানা ও কাঠবাদাম গন্ধ বের হওয়া অবধি ভাজতে হবে।

·        কাজুবাদাম সোনালি করে ভেজে নিতে হবে

·        এবার সমস্ত  ভাজা উপাদানগুলোকে ঠান্ডা করে নিয়ে ভালো করে মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে

·   প্রয়োজনে গুঁড়োকে চালুনিতে চেলে নিলে ভালো হয়। এতে শিশুর গলায় শক্ত দানা আটকে যাবার সুযোগ থাকেনা।ব্যাস, তৈরি পুষ্টিকর ঘরোয়া সেরেল্যাক।

 

ঘরে সেরেল্যাক প্রস্তুতির সময় কিছু সতর্কতা নেওয়া দরকার –

·    প্রতিটি উপাদান ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। প্রয়োজনমত ধুয়েও নেওয়া যেতে পারে। কাঁকড়, পাথর বা অন্য কোনো ময়লা যেন একবারেই না থাকে।

·   কোন ভেজা বাসনপত্র ব্যবহার করা যাবে না। কোনো উপাদান ভাজার আগে , তা সম্পূর্ণরূপে যেন শুষ্ক হয়।

·    প্রতিটি উপাদান যেন ভালভাবে ভাজা হয়

·  একই আকারের উপকরণগুলি একসঙ্গে রোস্ট করা যেতে পারে কারণ সেগুলি রান্না করতে একই পরিমাণ সময় লাগবে।

·      গুঁড়ো করার আগে মিশ্রণটি ঠান্ডা করতে হবে


 

 শিশুর জন্য সেরেল্যাক প্রস্তুত প্রণালীঃ 

·        একটি পাত্রে তৈরি করা ১/২ চামচ গুঁড়ো মিশ্রণে পরিমাণমত দুধ মেশাতে হবে।

·        আগুনে বসিয়ে অল্প আঁচে গরম করতে হবে।

·        চামচ দিয়ে অনবরত মিশ্রণকে নাড়তে হবে, নাহলে লেগে শক্ত ডেলা পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

·        নরম থকথকে লেই তৈরি হলে আঁচ বন্ধ করে, এর মধ্যে স্বাদ অনুযায়ী মিষ্টি, বিভিন্ন ফল বা সব্জী মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

·        ফল বা সব্জীও বেটে মিহি করে মেশাতে হবে।

·        মিষ্টির জন্য মধুর ব্যবহার করা উচিত। নুন না চিনি শিশুকে না দেওয়াই ভালো। 

 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-

·        নতুন খাবার শুরু  করার সময় ৩ দিনের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। এইভাবে কোন শিশুর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া থাকলে সনাক্ত করা সহজ হয়। প্রথম দিনে, একবার নতুন  খাবারের এক টেবিল চামচ খাওয়ান। দ্বিতীয় দিনে, একদিনে দুইবার দুই টেবিল-চামচ দিন। তৃতীয় দিনে, একদিনে তিনবার তিন টেবিল চামচ দিন। এটি নতুন খাবারের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া বুঝতে একটি খুব ধীর প্রক্রিয়া। যদি এই তিনদিনের মধ্যে শিশুর কোনো প্রকারের শারীরিক অসুবিধা লক্ষ্য করা যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামুলক।



·    বাড়িতে প্রস্তুত গুঁড়ো সেরেল্যাক একটি শীতল, শুষ্ক জায়গায় একটি চাপা মুখবন্ধ পাত্রের (airtight container) মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে।

·     দুধে প্রস্তুতির দুই ঘন্টা পর সেই খাবার বাতিল করা আবশ্যক। 

·    এই মিশ্রণটি হেলথ ড্রিঙ্কে পরিণত করার জন্য, এক টেবিল চামচ মিশ্রণ ১০০ মিলিমিটার   দুধের সাথে মিশ্রিত করা যায়। এটি পরিবেশন করার আগে ভালভাবে রান্না করা হবেযাতে   প্রতিটি উপাদান রান্না হয়ে পাচনক্ষম হয়।

·     খাবারের ঘনত্ব শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে। সেই ভাবে এতে জল বা দুধ মিশিয়ে    নিতে হবে।


  কলমে  - পা র মি তা  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন