সন্ধ্যেবেলায় আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন বারান্দায়। মৃদুমন্দ বাতাসে জুড়িয়ে যাচ্ছে মন প্রাণ। সেই বাতাসেই খুশিতে দুলছে সামনে বাগানের রংবেরংয়ের ছোটবড় সঙ্গীরা — গোলাপ, টগর, গাঁদা, পাতাবাহার। আপনার হাতে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ। ঘরের মধ্যে বাজছে পছন্দের গান, অথবা হেডফোনে সে গান শুনতে আপনি মগ্ন। অবসর সময়টা এভাবে কাটাতে পারলে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ কমতে বাধ্য।
মুশকিলটা হলো বর্তমানে জায়গার বড়ো অভাব, বিশেষ
করে শহরগুলিতে অথবা জনবহুল শহরতলীতে। বেশিরভাগই সব ফ্ল্যাটবাড়ি, সেখানে
আলাদা করে নিজেদের মতো বাগান করারও ব্যবস্থা নেই। নয়তো বাগান করার শখ অনেকেই
রাখেন। বাড়ির সামনে থাকবে ছোট্ট একফালি সাজানো গোছানো বাগান। কিন্তু তা আর হচ্ছে
কই!
সেইজন্য একেবারেই নিরাশ হবেন না। ঘরের বাইরে
বাগান করতে না পারলেও ঘরের মধ্যে তো পারবেন, যেমন ধরুন ব্যালকনি গার্ডেন
অর্থাৎ বারান্দা-বাগান। রকমারি ফুল আর পাতাবাহার গাছে আপনার বারান্দাটি হয়ে উঠবে
রঙিন। সারাদিনের ব্যস্ততার পর বারান্দার সামনে বসার জায়গায় চা বা কফি সহযোগে
কোনো হালকা মেজাজের গান শুনতে পারেন অথবা পড়তে পারেন পছন্দের কোনো বই। অথবা
প্রিয় মানুষটির সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু সময় কথাবার্তা বললেন বা এমনিই নিজের
মনে দাঁড়িয়ে রইলেন খানিকক্ষণ। শুধুমাত্র তাই নয়, গাছ লাগানো এবং তার
পরিচর্যার মধ্য দিয়ে আমাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে, যত্নশীলতা প্রকাশ পায় এবং
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
২) ঠিকমতো আলো বাতাস আসতে পারে এমন জায়গা দেখে
গাছগুলি সেদিক করে লাগান। সব ঋতুর ফুলের গাছ লাগানোর চেষ্টা করবেন। এতে বছরজুড়ে
রঙিন থাকবে আপনার বারান্দা-বাগান।
৩) কিন্তু কী কী গাছ লাগাবেন? বলছি।
ফুলের মধ্যে বেছে নিতে পারেন জবা, গাঁদা, গোলাপ, রঙ্গন, জুঁই, অর্কিড, বেলি, গোলাপ, টগর, দোলনচাঁপা
ইত্যাদি। পাতাবাহারের মধ্যে স্নেক প্ল্যান্ট ও অ্যালোভেরা, মানিপ্লান্ট, সিঙ্গোনিয়াম, স্পাইডার
প্ল্যান্ট,
আফ্রিকান
ভায়োলেট, অ্যাসপারাগাস
ফান, চায়নিজ
এভারগ্রিন,
ট্রি
প্লান্ট ইত্যাদি লাগাতে পারেন। সবজি বা এইধরনের গাছও লাগানো যায়, যেমন
ধরুন ধনেপাতা,
পুদিনাপাতা, কারিপাতা, পালংশাক, পুঁইশাক
ইত্যাদি। বাজার থেকে গোড়াসহ পুদিনা কিনে এনে মাটিতে লাগালেই গাছ হয়। কাঁচালঙ্কা
আর লেবুও ফলে সামান্য পরিচর্যাতেই।
৪) সাজাবেন কীভাবে? ফুলের
গাছ বা পাতাবাহার তো এমনি টবেই লাগাতে পারেন। মানি প্লান্ট রাখুন দেয়াল বা গ্রিলের
কাছাকাছি। একসময় বেয়ে ওপরে উঠবে অথবা নীচে নামবে। বারান্দার গ্রিল সাজাতে বেছে নিন
ঝুলন্ত গাছ,
যেমন-
ফার্ন, পোলিয়োনিয়া
পুলক্রো ও অপরাজিতা। বারান্দার গ্রিলের সৌন্দর্য্য বেড়ে যাবে অনেকখানি। আগে যেমন
উল্লেখ করলাম দেওয়াল বরাবর তাকের ব্যাপারে, সেরকম ব্যবস্থাও বেশ ভালো।
এতে অল্প জায়গায় সুন্দর করে গাছ লাগানো যায়।
৫) এবার আসি টবের প্রসঙ্গে। ব্যবহার করতে পারেন
মাটি বা প্লাস্টিকের টব। গাছের ধরন অনুযায়ী টব নির্বাচন করতে হবে। বাহারি ডিজাইনের
মাটি, তামা, পিতল, প্লাস্টিক, সিরামিক
ও সিমেন্টের টব ব্যবহার করতে পারেন। বাতিল প্লাস্টিকের বোতল বা মিষ্টির বড়ো ভাঁড়
বা বালতিতেও চমৎকার গাছ লাগানো যায়। চাইলে সেগুলিকে রং করে নানারকম নকশা আঁকতে
পারেন, দেখতে
বেশ অন্যরকম লাগবে। ঝুলানো গাছের জন্য ব্যবহার করুন হ্যাঙ্গিং টব, বাঁশের
ঝুড়ি কিংবা পাটের তৈরি শিকা।
৬) গাছের পরিচর্যার কথা ভুললে চলবে না। বেলে ও
বেলে দোআঁশ মাটি গাছের জন্য বেশ উপযোগী। গাছের যত্নে সার ভীষণ প্রয়োজন। গাছগুলিতে
মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণে সার দেবেন। জৈব সার মাসে অন্তত একবার দিতে পারেন। সবজির
ছোটো ছোটো করে কাটা খোসা বা ব্যবহার করার পর যে চা পাতা থাকে তাও দিতে পারেন।
৭) বৃষ্টি ছাড়া অন্যান্য সময় প্রতিদিন গাছে জল
দিতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন টবের মাটি যেন খুব শুষ্ক কিংবা একেবারে ভেজা না থাকে।
দিনে একবার,
প্রয়োজনে
দু'বার
জল দিন। বিকালে রোদ কমে গেলে গাছে জল দিতে পারেন। এছাড়া সপ্তাহে দু'বার
জল স্প্রে করে গাছের পাতা ও ডালগুলো ধুয়ে দিন। টব ও ঝুড়ির ঝুলন্ত গাছের শুকনো
পাতাগুলো ছেঁটে ফেলে দিন।
৮) পোকামাকড় এবং রোগ-জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা
করার জন্য গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। আরেকটি সহজ উপায় আছে। আধ লিটার জলে
সাধারণ কোনো হ্যান্ডওয়াশ কয়েক ফোঁটা গুলে নিয়ে গাছের পাতা ও ডালে মাঝেমধ্যে
স্প্রে করুন।
৯) গাছ হয়ে গেল, টব হয়ে গেল, সাজানো
ও পরিচর্যাও হয়ে গেল। সাথেই ব্যবস্থা রাখুন বারান্দায় বসার জায়গার। বারান্দা ছোট
হলে একপাশে রেখে দিন দুখানি টুল বা কম আয়তনের চেয়ার, মোড়াও
রাখতে পারেন। বড় বারান্দা হলে ছোট দেখে সোফাও রাখতে পারেন সেখানে। অথবা একখানি
দোলনার ব্যবস্থা করলেন।
এই ক'খানা ব্যাপার খেয়াল রাখলেই
আপনার বারান্দা রঙে রঙে সেজে উঠবে। নিজের বারান্দাটিকে কিভাবে সুন্দর করে সাজাবেন
সেই প্রসঙ্গে কয়েকটি ছবি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। এগুলি কোনো বিজ্ঞাপনের ছবি
নয়, বাস্তবজীবনে
অতি যত্নশীলতার সঙ্গে নিজেদের মনের মতো করে সাজানো বাগানের ছবি।বারান্দা
বাগানের ছবি দিয়ে আমাদের পত্রিকাকে উন্নত করেছেন শাশ্বতী
মিত্র,পামী দেব চৌধুরী,কাবেরী মিত্র সর্বাধিকারী,অদিতি দাস,দেবলীনা চ্যাটার্জী অধিকারী, হৈমন্তী
মুখোপাধ্যায়।
কলমে - ত মা লি কা ঘো ষা ল ব্যা না র্জী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন